১৮ বছর পর সন্তান হলেও বাবা ডাক শোনা হলো না মিছরাফের by আব্দুর রহমান সোহেল

দীর্ঘ ১৮ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুনাটিকি গ্রামের মিছরাফ খাঁ (৪৫)। বিয়ে করলেও গত ১৮ বছরে কোনো সন্তান জন্ম নেয়নি তার। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও বিফল হয়ে ছিলেন। অবশেষ দেড় বছর আগে স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ২য় বিবাহ করেছিলেন। বিয়ের পরেই স্ত্রীর কোল জুড়ে আসে ছেলে সন্তান। নাম রাখেন মাহের খাঁ। তার বয়স এখন ১ বছর। ১৮ বছর পর সন্তান পেয়েছিলেন তাই খুশিতে ছিলেন আত্মহারা। একদিন বাবা ডাক শুনবেন। কিন্তু সেই ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনার আগেই নির্মমভাবে খুন হলেন মিছরাফ খাঁ।

সরজমিন মিছরাফ খাঁ’র বাড়িতে গিয়ে দেখ যায় করুণ দৃশ্য। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মিছরাফ খাঁর মা ও স্ত্রী জেসমিন বেগম। কথা বলতে না পারা ছেলেটা লোকজনের ভিড় দেখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছে চারিদিকে। হয়তো মানুষের ভিড়ে খুঁজছে তার বাবা মিছরাফ খাঁ’কে। অবুঝ শিশুটি কীভাবে বুঝবে তার বাবা আর নেই। ঘাতকের এক আঘাতেই চলে গেছেন না ফেরা দেশে। গ্রামের খাঁ ও সৈয়দ গোষ্ঠীর বিরোধে নিভে গেল মিছরাফ খাঁ’র জীবন প্রদীপ।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন থেকে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল সুনাটিকি গ্রামের খাঁ ও সৈয়দ গোষ্ঠীর মাঝে। গত বৃহস্পতিবার এনিয়ে সালিশ বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও মধ্যস্থতাকারীর অনুপস্থিতিতে তা হয়নি। গত ৬ই ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর বিরোধপূর্ণ জমির ডোবায় মাছ ধরতে যান সৈয়দ জুয়েল আলী ও তার লোকজন। সালিশ বৈঠকে যেহেতু সমাধান হবে তাই মাছ না ধরার জন্য আপত্তি জানান খাঁ গোষ্ঠীর নূরুল আমিন খাঁ। কিন্তু সৈয়দ গোষ্ঠীর লোকজন আপত্তি আমলে না নিয়ে মাছ ধরতে থাকে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে দুই গোষ্ঠীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সৈয়দ মহরম খাঁ’র ছেলে মিছরাফ খাঁ (৪৫) প্রতিপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ সময় অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত মিছরাফ খাঁ’র লাশ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত পরবর্তী গত শনিবার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। দাফন শেষে ওইদিন রাতেই   ইউপি সদস্য নূরুল আমিন বাদী হয়ে ৪৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৫০/৬ কে আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় আটককৃতরা হলো- সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলী, সৈয়দ মনসুর আলী, সৈয়দ লিয়াকত আলী, সৈয়দ আবদার আলী।
রাজনগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) শাহ মোবাশ্বীর হোসেন বলেন, সৈয়দ গোষ্ঠী ও খাঁ গোষ্ঠী একে অপরের আত্মীয়। বিরোধপূর্ণ ডোবাতে মাছ ধরতে গিয়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ঘটনার স্থলে মিছরাফ খাঁ নিহত হয়েছেন। মামলা হয়েছে, পুলিশ ৪ জনকে আকট করেছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.