শৈশবের স্কুলে গিয়ে আপ্লুত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত
পিতার কর্মসূত্রের কারণে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের শৈশব ও কৈশোর কাটে যশোরে। এ সময় তিনি যশোর জিলা স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯৫৮ সালে পিতার বদলিজনিত কারণে তিনি জিলা স্কুল ছেড়ে চলে যান। তারপর কেটে গেছে ৬৬ বছর। গত শুক্রবার রাষ্ট্রীয় কাজে যশোর আসেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। ওঠেন যশোর সার্কিট হাউসে। সার্কিট হাউসের দক্ষিণ প্রাচীর ঘেঁষা যশোর জিলা স্কুল। সার্কিট হাউসে প্রবেশ করেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম শেষ করে স্কুলে বেড়াতে যাবেন। ফলে শুক্র ও শনিবারের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রোগ্রাম শেষ করে তিনি গতকাল সকালে বিমানবন্দরে যাওয়ার আগেই বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ছুটে যান নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুলের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের রুমে ভিড় করতে থাকেন। এ সময় উপদেষ্টা নিজে উঠে গিয়ে উপস্থিত সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতাকর্মী ছুটে যান জিলা স্কুলে এবং উপদেষ্টার কাছে তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধে তাদের কী করণীয় সে সম্পর্কে উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করেন। উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবিলা করতে আমাদের সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভারত ভিসা বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি; ক্ষতি যা হওয়ার তা তো ভারতের হচ্ছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু ভারতের যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে তা সে পুষিয়ে নেবে কি করে। তিনি ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবিলায় সর্বস্তরের ছাত্র জনতাকে সরব হওয়ার আহ্বান জানান।
পরে তিনি বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বইতে তার মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন। এর আগের দিন রাতে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন সব রাষ্ট্রীয় প্রটোকল উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের বেশে যশোর শহরের কালেক্টরেট চত্বর, প্যারিস রোড় খ্যাত বই মার্কেট, পিঠা পুলির দোকান ও ধর্মতলায় গরুর খাঁটি দুধের চায়ের দোকান ঘুরে ঘুরে দেখেন। এক পর্যায়ে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন প্যারিস রোড়ের রাস্তার পাশে টুলে বসে যান এবং যশোরের স্মৃতিবিজড়িত চিতই পিঠা, কুলি পিঠা, ভাপা পিঠা, ছিটরুটি ও হাঁসের মাংসের স্বাদ গ্রহণ করেন। পরে তিনি ধর্মতলায় যান এবং রাস্তার পাশের ফুটপাতে বসে গরুর খাঁটি দুধের চা পান করেন। এ সময় তার সঙ্গে ২/১ জন সরকারি অফিসার ছাড়া কোনো পুলিশ প্রোটেকশন বা সরকারি কোনো প্রটোকল ছিলো না এবং তিনি তা নিতে চাননি। এ সময় উপদেষ্টা রাস্তার পাশে বসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের নানা সমস্যা ও তার সমাধানের নানা দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। এবং বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ মানুষকে তিনি পরামর্শ প্রদান করেন।
এ সময় সাধারণ মানুষকে বলতে শোনা যায়, সাবেক মন্ত্রী বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম মন্ত্রী থাকাকালীন এভাবেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে চায়ের দোকানে বা রাস্তার পাশের ওষুধের দোকানে বা গাড়ি খানা রোডের মানবাধিকার সংগঠনের অফিসে বা দৈনিক মানবজমিন পত্রিকা অফিসে বসে সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিতেন। তাদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। আজ ১৫ বছর পর সরকারের একজন মন্ত্রী বা উপদেষ্টা ঠিক সেইভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলেন। এটাই পরিবর্তন। এর জন্যই ছাত্র-জনতা জুলাই বিপ্লবে অকাতরে প্রাণ দিয়ে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে দিয়েছে। আজ দেশে সত্যিকারের গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
No comments