আবুজর গিফারী এবং ওমর আলী। ২০১৫ সালের ৮ই ডিসেম্বর। জয়পুরহাট থেকে হানিফ বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা। পরের দিন সকাল ৬টার দিকে আব্দুল্লাহপুরে নামেন তারা। হঠাৎ তাদেরকে সাদা পোশাকে র্যাব পরিচয়ে দু’জনকেই মাইক্রোবাসে উঠিয়ে উত্তরা র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে ১৫ তারিখ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। ১৫ই ডিসেম্বর সকাল ১১টার দিকে তাদেরকে হাত এবং চোখ বেঁধে রাজশাহী র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুইদিন আবারো চালানো হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। ১৬ই ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে রাজশাহী থেকে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় পাঁচবিবি থানায় শিমলতলী এলাকায়। অতঃপর সেখান থেকে তাদের দেহে বোমা ও অস্ত্র দিয়ে দেয়া হয়। এরপর তাদেরকে রাত ৪টার দিকে জয়পুরহাট র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৭ই ডিসেম্বর সকাল ৭টায় আবারো শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্মম নির্যাতন। এরপর সকাল ১০টার দিকে তাদেরকে অস্ত্র এবং বোমাসহ উপস্থিত করে সংবাদ সম্মেলন করে জয়পুরহাট র্যাবের তৎকালীন মিডিয়া উইং। দুপুরে পাঁচবিবি থানায় অস্ত্র মামলা দিয়ে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। অতঃপর সেখানে রাত ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশ নির্যাতন চালায়। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তাদেরকে হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় আওলায় ইউনিয়নের একটি পরিত্যক্ত এলাকায়। একপর্যায়ে পুলিশ দু’জনের হাঁটুতে গুলি করে ঝাঁজরা করে দেয় পা। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে রেফার করে দেয়। সেখানেও তাদের চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করে দেয়। সেখানে অপারেশন করে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রেফার করা হয়। ২ জনেরই প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় মাংস ৭৫ শতাংশ পচে যাওয়ায় দু’জনের অনুমতি সাপেক্ষে ২টি পা কেটে ফেলা হয়। হাসপাতাল থেকে রিলিজ হলে ঢাকা থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঠানো হয় জয়পুরহাট কারাগারে।
আরেকটি ঘটনা। মো. রুহুল আমিন এবং ইস্রাফিল হোসেন। ২০১৬ সালের ৩রা আগস্ট। দলের কাজ শেষ করে তারা বাড়ি যাওয়ার পথে বন্দুলীতলা শফি মল্লিকের ইটভাটার মোড় থেকে চৌগাছা থানার ১ জন এসআই এবং ২ জন এএসআই তাদেরকে গ্রেপ্তার করে চৌগাছা থানায় নিয়ে যায়। ৪ঠা আগস্ট তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে আবার চৌগাছা থানায় নিয়ে আসার পথে কয়ারপাড়া এলাকায় আসামাত্র দু’জনেরই দুই হাত পেছন মোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। চোখ বেঁধে ফেলা হয়। গভীর রাতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বন্দুলিতলার নির্জন মাঠে। সেখানে নিয়ে দু’জনের হাঁটুতে পুলিশ গুলি করে তাদের পাও ঝাঁজরা করে দেয়।
নথি থেকে জানা যায়, আবুজর গিফারী ছিলেন ছাত্রশিবিরের জয়পুরহাট জেলার তৎকালীন জেলা সভাপতি। আর ওমর আলী ছিলেন তৎকালীন জেলা সেক্রেটারি। মো. রুহুল আমিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের যশোর জেলা পশ্চিমের চৌগাছা উপজেলা সাহিত্য সম্পাদক। ইস্রাফিল ছিলেন থানা সেক্রেটারির দায়িত্বে। মঙ্গলবার শিবিরের এই চার নেতা গুম করার পর গভীর রাতে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে র্যাব-ডিবি ও পুলিশের ২১ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসন আমলে ছাত্রশিবিরের ওপর সর্বোচ্চ বর্বরতা চালানো হয়। অভিযোগ দায়েরকারী চার শিবির নেতা এই বর্বরতার শিকার। পুলিশের বর্বর নির্যাতনের কারণে তাদের পা কেটে ফেলা হয়েছে। কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে।
No comments