সব অভ্যুত্থান ট্যাঙ্কে চেপে আসে না : -দ্য গার্ডিয়ানে বিশেষজ্ঞদের মত
প্রধানমন্ত্রীর
‘ক্যু’ নিয়ে বিলাতের বিখ্যাত দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা দেশটির পাঁচ নামকরা
বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদের মতামত ছেপেছে। এদের মধ্যে বরিস জনসনের দলের একজন
বাদে বাকি সবাই নিন্দায় মুখর। তারা সংসদ বন্ধের সিদ্ধান্তকে সংসদীয়
গণতন্ত্র দুমড়ানোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের কথায় ওঠে এসেছে, যা ঘটেছে তা
ক্যু। সব অভ্যুত্থান ট্যাঙ্কে চড়ে আসে না। এরা হলেন- রবার্ট স্যান্ডার্স,
পিটার বোন, মার্গারেট বেকেট, মাইকেল চেসাম এবং মেগ রাসেল।
রবার্ট স্যান্ডার্স, ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার: বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বৃটিশ সংবিধান নয়। কোনো একটি বইয়ের দোকানে গিয়ে কিংবা অনলাইনে বৃটিশ সংবিধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর কোনো ম্যানুয়াল নেই।
কিংবা নেই কোনো হ্যান্ডবুক। বরং এটা বলাই ভালো যে, এটি হলো হরেক রকমের আইন, প্র্যাকটিস এবং প্রাতিষ্ঠানিক রীতিনীতি, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গড়ে উঠেছে, তারই একটা গ্রন্থনা। কাস্টমস, কনভেনশনস এবং বোঝাপড়ার গ্রন্থি দিয়ে এটা বাধা। এই বন্ধন যদিও ভঙ্গুর কিন্তু তাকে এভাবেই বাধা হয়েছে।
এর ভিত্তি হলো বিশ্বাস এবং অগণিত বিধিবিধানের প্রতি একটি অভিন্ন অঙ্গীকার। আরে এসবের বিবর্তন, এর উৎস থেকে এভাবেই এগুলোকে ধারণ করে রেখেছে। তবে এটা নিশ্চিত যে, এটা ভয়ঙ্করভাবে ভঙ্গুর যখন আপনি এই ব্যবস্থাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের কাজে লাগান। বরিস জনসনের যারা পূর্বসূরি, তারা সংবিধানের প্রতি অসতর্ক ছিলেন বটে। কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের কেউই এই সংবিধানের মূলনীতির প্রতি এতটা অবজ্ঞা প্রদর্শন করেননি। সংসদীয় গণতন্ত্র যেখানে জনগণের অভিপ্রায় পরিস্ফুট হয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্য দিয়ে।
নিজেদের যারা গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত রাষ্ট্র বলে দাবি করে, তার মূলমন্ত্র হলো একটি সচল সজিব পার্লামেন্ট। সর্বক্ষণ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অঙ্গুলি নির্দেশ বহন করবে। এখন রাজকীয় বিশেষাধিকার প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে যেভাবে বৃটিশ পার্লামেন্টকে স্তব্ধ করা হলো, তাতে প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের ভিত্তিমূলে আঘাত হেনেছেন। সম্ভবত বৃটিশ ইতিহাসের তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি পার্লামেন্ট কিংবা একটি সংসদীয় নির্বাচনের অস্তিত্বই স্বীকার করলেন না। প্রধানমন্ত্রী ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটকে নামিয়ে এনেছেন, তার দলের মাত্র ৯০ হাজার কর্মীর পদতলে, যাদের মোট সংখ্যা একটি একক সংসদীয় আসনের ভোটারদের চেয়ে বেশি নয়।
ডেইলি টেলিগ্রাফে লেখা কলামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দলীয় কর্মীদের সমর্থন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী দোমিনিক কামিনসকে তার সরকারের হৃৎপিণ্ডে বসিয়েছেন। দোমিনিক এমন একজন ব্যক্তি, যাকে কয়েক মাস আগেও পার্লামেন্টের প্রতি অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। একসময়, শুধু একারণেই তার কোনো একটি অফিসে আসীন হওয়ার পথ রুদ্ধ হতো। অথচ আজ এটাই (সংসদের অবমাননা) সরকারের জন্য একটি কর্মসূচি।
প্রধানমন্ত্রী আজ পার্লামেন্টের চেয়েও একটি উচ্চমার্গীয় দাবি করে বসবেন। বলে বসবেন, তিনি রেফারেন্ডেমের (ব্রেক্সিট) মাধ্যমে ‘জনগণের অভিপ্রায়’ মুঠোবন্দি করে ফেলেছেন। যদিও গণভোট ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের কোনো শর্ত নির্দিষ্ট করে দেয়নি। যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে পার্লামেন্ট ছাড়া অন্য কেউ রেফারেন্ডাম ব্যাখ্যা করবে, আর তখন সেই ধরনের নায়কোচিত নেতাই সেই মহাসত্যটা জানবেন যে, ভোটাররা তাকে বাগে পেলে তার কি দশাটাই না করতো। আসলে আমরা একটা ভয়ঙ্কর সড়কে হাঁটছি।
সংক্ষিপ্ত মেয়াদে সংসদ মুলতবির সিদ্ধান্ত সফল হতে পারে। ব্রেক্সিট যদি ‘নো ডিল’ বা সমঝোতাহীন হয়, তাহলে এমপিদের পক্ষে তাকে থামানো কঠিনতর হতে পারে। তবে যদি তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে কিছু একটা প্যাকেজ আদায় করে নিতে পারেন, তাহলে কিছুটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সবটাই যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে একটি জনগণ বনাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এর মূল্য কতটা হবে? ব্রাজিলের রেইনফরেস্ট যেভাবে পুড়ছে, তেমনি করে জনসন এবং তার উপদেষ্টা দোমিনিক রাষ্ট্রের বিধ্বংসী কাঠামোগত ক্ষতির বিনিময়ে স্বল্পমেয়াদি লাভ উসুল করার ধান্দায় আছেন। তারা মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা অন্যরা অনুসরণ করবে। এবং আমাদের গণতন্ত্রের ভঙ্গুর ইকোসিস্টেমকে ছারখার করে দেবে। কনজারভেটিভরা একদা সংবিধান সুরক্ষার দায়িত্ব অনুভব করেছিলেন। সময়ে কিভাবে সেটা বদলে গেছে।
পিটার বোন, কনজারভেটিভ এমপি এবং লিভ মিন্স লিভের উপদেষ্টা: হাঁ অবশ্যই একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা সরকার করেনি। এটা করেছে একদল কট্টরপন্থী, যারা বৃটিশ জনগণের অভিপ্রায় গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। এই অগণতান্ত্রিক শক্তি বরিস জনসনের বৈধ সরকার থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন এবং তার পরিবর্তে জেরেমি কর্বিনের নেতৃত্বে একটি তথাকথিত জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।
বরিস জনসনের দ্বারা সংসদ মুলতবি সভার সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘকাল ধরে এমন পদক্ষেপ অনুভূত হয়েছিল। সত্যি বলতে কি হাউজ অব কমন্সের শ্যাডো নেতা এবং অন্যান্য বিরোধীদলীয় এমপিরা মাসের পর মাস ধরে এমনটাই দাবি করেছিলেন। সংসদের বর্তমান অধিবেশন তিনটি ক্যালেন্ডার বছর কাভার করেছিল এবং গৃহযুদ্ধের পরে এটাই কোনো সংসদের দীর্ঘমেয়াদি অধিবেশন চলছিল। প্রত্যেকটি অধিবেশন সাধারণত এক বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। যা রানীর ভাষণ দিয়ে শুরু। এতে পরবর্তী বর্ষে সরকার কি করবে তার রূপরেখা দেয়া হয় এবং এই সময়ের মধ্যে যদি তারা সেটা না করে দেখাতে পারেন, তাহলে তাদের নির্বাচনে হারার ঝুঁকি বাড়ে। এরপর বিরোধী দল সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে। বিতর্ক করে। বিস্তারিতভাবে সরকারের কর্মসূচি খুঁটিয়ে দেখে। বিতর্কের শেষে তারা রানীর ভাষণ সংশোধন কিংবা তাকে পরাস্ত করার চেষ্টা করতে পারে। যদি রানীর ভাষণ পরাস্ত হয়, তাহলে সেটা অবধারিতভাবেই সাধারণ নির্বাচন ডেকে আনে।
সংসদ মুলতবি করার মধ্য দিয়ে স্পষ্টতই সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনে ঘটে এবং তা সংবিধানগতভাবে স্ট্যান্ডার্ড। এটা ব্রেক্সিট প্রক্রিয়াকে ব্লক করে দিতে পার্লামেন্টের গতিরোধ করা নয়। প্রধানমন্ত্রী যদি নভেম্বর পর্যন্ত সংসদ মুলতবি করে দিতেন, তাহলে সেটা একটি সাংবিধানিক উম্মাদীয় কাণ্ড হতো। সাধারণের পক্ষে তখন এর প্রথম বিরোধিতাকারী আমিই হতাম। জেরেমি কর্বিন যদি একটি নোডিল ব্রেক্সিট বন্ধ করে দিতে চান, তাহলে তাকে একটি সাধারণ পথ অনুসরণ করতে হবে। মঙ্গলবার তার পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সুযোগ থাকতো। বুধবারের ভোটাভুটিতে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি সেটা করবেন না। কারণ তিনি জানেন তার জন্য যা ভোট দরকার সেটা তার নেই। উপরন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য যতগুলো ভোট দরকার, সেটা তার নেই। জেরেমি করবিনের প্রতি আমার একটা ক্ষুদ্র বার্তা: হয় আপনি ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরুন অথবা আপনার মুখটা বন্ধ করুন মার্গারেট বেকেট, ডার্বি সাউথ থেকে নির্বাচিত লেবার এমপি: হা। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের এই সুখ্যাতি রয়েছে যে তারা ধূর্ত। এবং তাদের এমন সুনামও আছে যে তারা নিষ্ঠুর এবং অযথার্থ। সমর্থকরা দাবি করেছিলেন, সংসদের একটা হেমন্তকালীন বিরতি কিংবা মুলতবি এবং সাধারণত রানীর নতুন ভাষণ, এসবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই হেমন্তে আমরা যা দেখলাম তা ৪০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যকার নতুন উপাখ্যান।
আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সরকার দেখছি, যার প্রকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। অথচ সেই প্রধানমন্ত্রী কিনা ৭০ বছরের ইতিহাসের বৃহত্তম মুলতবি চাইলেন। এটা ‘স্বাভাবিক’ নয়।
আমার বিবেচনায় এটা হলো সবথেকে ভয়ঙ্কর একটি ঘটনা। ২০১৬ সাল থেকে যে লড়াইটা চলছিল সেখানে এখন একটা অভ্যুথান ঘটানো হলো।
শুরু থেকেই তেরেসা মে এটাই চেয়েছিলেন যে ক্ষমতা সংসদের কাছে নয়, নির্বাহী বিভাগের কাছে ন্যস্ত থাকবে এবং নির্বাহী ক্ষমতা তারাই হল্লা করে অনুশীলন করবে।
তিনি আদালতের সিদ্ধান্তের কারণেই এটা মানতে বাধ্য হয়েছিলেন যে আর্টিকেল ৫০ ট্রিগার করতে হলে এমপিদের সমর্থন লাগবে। যখন তাতে বিস্তারিত সংসদীয় পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়লো, ঠিক তখনই মন্ত্রীদের জন্য একচ্ছত্র প্রস্তাব তোলা হলো। এ বিষয়ে যত তথ্য এমপিরা চেয়েছে, যত পেপার প্রকাশের অনুরোধ করেছে, সবটাই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এই সুপারিশও ছিল যে, সংসদ-সদস্যদেরকে একটি অর্থপূর্ণ ভোটে অংশ নিতে দিতে হবে। কিন্তু সেটাকে প্রবলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে।
গত তিন বছর ধরে সরকার বিরোধীদলীয় এমপিদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। বাধা দিয়েছে। ব্রেক্সিট নিয়ে সরকার কি করছে, সে নিয়ে যখনই আলোচনা এসেছে তাতেই তারা বাধা দিয়েছে। আর যখন চূড়ান্ত প্রস্তাবের সময় ঘনিয়ে এল এবং কি হতে যাচ্ছে তা জানাজানি হলো, তখন খড়গ নেমে এল। আলোচনা ঠেকাতে সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করা হলো সপ্তাহের পর সপ্তাহ। কেটে গেল মাসের পর মাস।
যারা বড় গলায় চিৎকার করে সংসদীয় সার্বভৌমত্ব পুনরুজ্জীবিত করার শোর তুলল, তারাই সংসদকে অপমান করল। প্রথমে সংসদকে সাইডলাইনে পাঠানো হলো। এরপর অবজ্ঞা করা হলো। শেষ পর্যন্ত তার কণ্ঠনালি চেপে ধরা হলো।
সুতরাং এটি একটি অভ্যুত্থান। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আমাদের অলিখিত সংবিধানকে নস্যাৎ করার পথে এটা হলো সর্বশেষ পদক্ষেপ মাত্র। দীর্ঘদিনের অনুসৃত কনভেনশনকে উপেক্ষা করলো তারাই। সংসদের মর্যাদা ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হলো। এভাবে ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হচ্ছে।
মাইকেল চেসাম, জাতীয় সংগঠক, অ্যানাদার ইউরোপ ইজ পসিবল: একজন অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সংসদের বৈঠক যাতে বসতে না পারে, সে লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কারণ তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন, এই পার্লামেন্ট তার সঙ্গে একমত হবে না। তার লক্ষ্য হলো ব্রেক্সিট থেকে চোখ সরানো। অক্টোবরের শেষ দিকে একতরফা একটা তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব করার মধ্য দিয়ে তিনি আশা করছেন, তিনি একটা চকিত নির্বাচনে যাবেন। আর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নতুন সংসদ গঠন করবেন। তার মুখে ঝরবে দক্ষিণপন্থী স্লোগান, বিদেশি হটাও। তিনি সেই শক্তির প্রতিভু, যারা বিদেশিদেরকে খাটো করে দেখে এবং তিনি আমাদের পলিটিক্যাল এলিট বনে যাবেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনর ২০তম ইটোনিয় প্রধানমন্ত্রী।
জনসনের দীর্ঘমেয়াদি যাত্রার লক্ষ্য সম্ভবত আরো গভীরতর। ব্রেক্সিট সফল হওয়ার পরে বৃটেন হবে একটি অনিয়ন্ত্রিত দোষে দুষ্ট রাষ্ট্রযন্ত্র। যা দেশটিকে ট্রাম্পের আমেরিকার কাছাকাছি নিয়ে যাবে। শ্রমিকদের অধিকার, খাদ্যের মান, পরিবেশগত সুরক্ষা অগ্রাহ্য করা হবে। পাবলিক বা সরকারি সেবাসমূহ, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের অবস্থা এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে, যেমনটা ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার করে চলেছে। সরকারি খাতের সেবাসমূহের সবটাই বিক্রির যোগ্য করে তোলা হবে। স্বাভাবিকভাবেই এসব সম্ভাব্য কর্মসূচির প্রতি জনগণের সমর্থন সামান্য মিলতে পারে অথবা থাকবেই না।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর কাজ হলো জনগণ থেকে দূরে থাকা। এমপিরা যাতে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা। তিনি অবশ্য জানেন এমন করে তো বেশিদিন তাদের থামিয়ে রাখা যাবে না, সুতরাং যত বেশি পারো বিলম্ব ঘটাও। এটা মন্দের ভালো।
পার্লামেন্ট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়নি। সংবাদপত্র এখনো মুক্ত স্বাধীন। কিন্তু সব অভ্যুত্থান ট্যাঙ্কে চেপে আসে না। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়েও আসে না।
হাঁ। এখনো আমাদের নাগরিক অধিকার আছে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ অভিবাসীকে বলা হচ্ছে তোমাদের সামনে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তোমাদেরকে বিতাড়ন করা হতে পারে। এমনকি সরকার চাইলে হঠাৎ করে তাদের চলাচল সীমিত করে দিতে পারে। পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে নির্বাহী বিভাগ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং আমরা যদি এটা বন্ধ করতে ঐক্যবদ্ধ না হই, তাহলে জয়ী হতে পারে।
এটা এমন একটা সরকার, যারা যুক্তির শক্তির কাছে মাথা নত করতে রাজি নয়। তাই তাদের চলতি বেপরোয়া প্রবণতা উল্টে দিতে হলে, অবশ্যই শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
আশাবাদের জায়গা হলো যে বিরোধী দলগুলো কমন্সে এই সপ্তাহে জয়ের মুখ দেখবে। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে যে, আমরা কেবলই সংসদীয় প্রক্রিয়া কিংবা বিচার বিভাগের উপর নির্ভর করতে পারি না।
গণতন্ত্র যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তাকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে লড়তে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ব্যাপক আন্দোলন করতে হবে। প্রতিবাদকারীদের আন্দোলনগুলো যদি সরকারি নিলনকশা বন্ধ করতে আগ্রহী না হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে তারা নখদন্তহীন।
সংসদ স্থগিত করে দেয়া বিরাট ঘটনা। এটা একটা শুধু এক ধরনের খেয়ালিপনা নয়। এটা তো গণতন্ত্রই বন্ধ করে দেয়ার শামিল। এটা অধিকারের উপর আক্রমণ চালানো । অথচ তারা নিজেদের জনগণের প্রতিনিধি দাবি করছে। এটা হাস্যকর। কারণ তারা জনগণকে প্রত্যাখ্যান করছে। জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণকে প্রত্যাখ্যান করছে। আর এর সবটাই হলো ক্ষমতা জবরদখল করে রাখার ফন্দি। তারা মানুষকে এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে বিভক্ত করবে। লেলিয়ে দেবে। আসলে ব্রেক্সিট বৃটেনকে এসবই এনে দেবে। এটাই ব্রেক্সিটের স্বাভাবিক উপসংহার। এটাই সত্য।
আমরা গণতন্ত্রের স্বপক্ষে একটি ব্যাপক আন্দোলন দানাবাঁধতে দেখছি। সোমবার থেকে প্রতিদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটায় দেশব্যাপী প্রতিরোধ আন্দোলন দেখা যাবে। আমাদের সঙ্গে যোগ দিন।
মেগ রাসেল, পরিচালক, সংবিধান ইউনিট, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন: বরিস জনসনের সংসদ মুলতবি করে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে যে আন্দোলন চলছে, তার ব্যানার হচ্ছে, অভ্যুত্থান বন্ধ করুন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো কি ঠিক হচ্ছে? আমাকে ভুল বুঝবেন না। এভাবে সংসদ মুলতবি করে দেয়া স্বাভাবিক ঘটনা নয় মোটেই। কয়েকদিনের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার রীতি আছে। একটি বার্ষিক সংসদীয় অধিবেশন এবং তার পরের অধিবেশনের মধ্যবর্তী সময়ে কয়েকদিনের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়াটা বৃটিশ সংসদীয় গণতন্ত্রে আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ১৯৩০ সালের পরে কোনো প্রধানমন্ত্রী সংসদকে টানা পাঁচ সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন, তার কোনো নজির নেই। তাও আবার কোনো সাধারণ অবস্থার মধ্যে নয়। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ একটা গভীর রাজনৈতিক সংকটের মাঝখানে এই পথ বেছে নেয়া হয়েছে। যখন ঘড়ির কাঁটা ধীরে ধীরে ৩১ অক্টোবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আর তখনই টানা পাঁচ সপ্তাহ একটা গ্রীষ্মকালীন বিরতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হলো। অথচ এই সময়ে যদি সংসদ খোলা থাকত, তাহলে এমপিরা সরকারের নীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারতেন।
আর আশ্চর্যের বিষয় এই যে প্রধানমন্ত্রী হবার পরে শুধু একদিন, আমাদের এই তিনি সংসদের ফ্লোরে প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এখন যদি সংসদের মুলতবি সিদ্ধান্ত চলতে থাকে, তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াবে এই যে, একজন প্রধানমন্ত্রী টানা ৯০ দিনের মধ্যে মাত্র এক সপ্তাহ সংসদে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবেন। ১৪ অক্টোবরের মধ্যে যখন কিনা এমপিদের সংসদে ফিরে আসার তারিখ, তখন সেই সময়টিতে ৩১ তারিখের ব্রেক্সিট ডেডলাইন থেকে মাত্র তিন সপ্তাহের কম সময় হাতে থাকবে। চালাকিটা হলো জনসনকে যাতে বিরোধী দলের এমপিদের ধুন্দুমার প্রশ্নের মুখে তোপের মুখে না পড়তে হয়, সেজন্য তাকে আড়াল করা।
এইযে অবস্থা তৈরি হলো তার পেছনে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট কি যুক্তি দিচ্ছে ? তারা বলছে, পার্টি কনফারেন্সের জন্য কয়েক সপ্তাহের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়া দরকার ছিল। কিন্তু সেটা সঠিক নয়। বরং এটা ভয়ঙ্কর এবং সেটা প্রধানত দুই কারণে। প্রথমত, পার্টি কনফারেন্স কখন হবে তা-ই স্থির হয়নি এবং দ্বিতীয়ত এমপিদের মধ্যে এই প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছিল যে, সম্ভবত তারা প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট ডিল প্রত্যাখ্যান করবে। এই প্রবণতাটাই পরিষ্কার হয়ে উঠছিল। তাই সংসদ মুলতবি করার মধ্য দিয়ে এই বিষয়ে সরকার যাতে সংসদে ভোটের কবলে না পড়ে, সেই সম্ভাবনাকে নাকচ করা হলো। এমনকি একটি অনাস্থা ভোট হতে পারতো আসন্ন। সেটা তাদের জানা ছিল। আর সেটা এড়ানোর জন্যই এই কৌশলটা বেশ কাজে দেবে বলেই তাদের ধারণা। আমরা জানতাম যে বিরোধী দলগুলো অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিল। কিন্তু তারা বিকল্প নেতা নির্বাচনে একমত হতে পারছিল না। তাদেরকে তো একজন বিকল্প প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারেও একমত হতে হবে। সেই বিষয়েই তারা একমত হতে পারছিলেন না। বৃটিশ পার্লামেন্টের শর্ত হলো, একটি বিকল্প সরকার গঠন করতে হলে তারা ১৪ দিন সময় পাবে। কিন্তু সংসদ মুলতবি করে দেয়ায় তাদের এই সময়টা কমে গেল। এবং এ ধরনের একটি অনাস্থা ভোটের পরে তারা বিকল্প সরকার গঠনের জন্য তাদের হাতে সময় থাকবে মাত্র ২৪ ঘণ্টা।
সুতরাং জনসন যে পদক্ষেপটি নিয়েছেন তা নজিরবিহীন এবং দৃশ্যত এটা পরিষ্কার যে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার, তাকে পরীক্ষা করার যে সুযোগ সংসদীয় গণতন্ত্রে রয়েছে, তা এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করার যে চিন্তাভাবনা চলছিল, সেখানে একটা দেয়াল তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হলো। একটি সংসদীয় গণতন্ত্রে যেখানে সরকার সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে, যেখানে সরকার টিকে থাকে। কারণ হচ্ছে সে পার্লামেন্টের আস্থা অর্জন করে থাকে। সুতরাং এভাবে সংসদ মুলতবি করে দেয়াটা গভীরভাবে একটা গোলমেলে বিষয়। আর সে কারণেই আমরা আদালতে বিভিন্ন ধরনের মোকদ্দমা দেখছি, যার লক্ষ্য হচ্ছে এই মুলতবির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা।
প্রশ্নটা খাসা যে প্রধানমন্ত্রী যে উপায় বাতলে দিয়েছেন, সেটা কি একটি সাংবিধানিক অভ্যুত্থান? এর সমতুল্য কিছু অভিধা, সংক্ষেপে যাকে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। একটি অলিখিত সংবিধানের আওতায় অসাংবিধানিক কথা বলতে আসলে আমরা কি বুঝব?
জনসনের সর্মথকরা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী আইনের আক্ষরিক চেতনা ভঙ্গ করেননি। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের সংবিধান শুধু আইনের উপরে দাঁড়ানো নয়। আমাদের সংবিধানের শক্ত ভিত্তি হচ্ছে কনভেনশন। আর কোনো সন্দেহ নেই, সবগুলো নর্মস এক্ষেত্রে ভঙ্গ করা হয়েছে। একটি রাজনৈতিক সংবিধান, যা সর্বদাই ভঙ্গুর। এটা তাই সবসময়ই মুখ্য খেলোয়াড়রা কিভাবে রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেন। তার উপরে এর কার্যকরতা নির্ভর করবে। তারা যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে সংবিধানকে অবমাননা করা হবে।
সারা বিশ্বে সংসদীয় মুলতবির ধারণাকে যেভাবে অনুশীলন করা হয়, সেখানে এটা একটা ভয়ঙ্কর নজির হয়ে থাকবে। সরকারগুলোর অবশ্যই এই সক্ষমতা থাকা উচিত নয়, যাতে তারা গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টকে বন্ধ করে দেয়। নিজের জন্য অসুবিধাজনক কোন প্রশ্ন বা অবস্থার মুখোমুখি হতে না হয়, সেজন্য সংসদেই তালা ঝোলানো কোনো কাজের কথা নয়। এটা অবশ্যই নির্বাহী বিভাগের দ্বারা একটা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়। মঙ্গলবার এমপিরা ফিরে আসবেন তখন তাদের উচিত হবে জনসনের এই পদক্ষেপকে বড় গলায় প্রত্যাখ্যান করা। আর তা খুবই স্পষ্ট ভাষায়।
রবার্ট স্যান্ডার্স, ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার: বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বৃটিশ সংবিধান নয়। কোনো একটি বইয়ের দোকানে গিয়ে কিংবা অনলাইনে বৃটিশ সংবিধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর কোনো ম্যানুয়াল নেই।
কিংবা নেই কোনো হ্যান্ডবুক। বরং এটা বলাই ভালো যে, এটি হলো হরেক রকমের আইন, প্র্যাকটিস এবং প্রাতিষ্ঠানিক রীতিনীতি, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গড়ে উঠেছে, তারই একটা গ্রন্থনা। কাস্টমস, কনভেনশনস এবং বোঝাপড়ার গ্রন্থি দিয়ে এটা বাধা। এই বন্ধন যদিও ভঙ্গুর কিন্তু তাকে এভাবেই বাধা হয়েছে।
এর ভিত্তি হলো বিশ্বাস এবং অগণিত বিধিবিধানের প্রতি একটি অভিন্ন অঙ্গীকার। আরে এসবের বিবর্তন, এর উৎস থেকে এভাবেই এগুলোকে ধারণ করে রেখেছে। তবে এটা নিশ্চিত যে, এটা ভয়ঙ্করভাবে ভঙ্গুর যখন আপনি এই ব্যবস্থাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের কাজে লাগান। বরিস জনসনের যারা পূর্বসূরি, তারা সংবিধানের প্রতি অসতর্ক ছিলেন বটে। কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের কেউই এই সংবিধানের মূলনীতির প্রতি এতটা অবজ্ঞা প্রদর্শন করেননি। সংসদীয় গণতন্ত্র যেখানে জনগণের অভিপ্রায় পরিস্ফুট হয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্য দিয়ে।
নিজেদের যারা গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত রাষ্ট্র বলে দাবি করে, তার মূলমন্ত্র হলো একটি সচল সজিব পার্লামেন্ট। সর্বক্ষণ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অঙ্গুলি নির্দেশ বহন করবে। এখন রাজকীয় বিশেষাধিকার প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে যেভাবে বৃটিশ পার্লামেন্টকে স্তব্ধ করা হলো, তাতে প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের ভিত্তিমূলে আঘাত হেনেছেন। সম্ভবত বৃটিশ ইতিহাসের তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি পার্লামেন্ট কিংবা একটি সংসদীয় নির্বাচনের অস্তিত্বই স্বীকার করলেন না। প্রধানমন্ত্রী ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটকে নামিয়ে এনেছেন, তার দলের মাত্র ৯০ হাজার কর্মীর পদতলে, যাদের মোট সংখ্যা একটি একক সংসদীয় আসনের ভোটারদের চেয়ে বেশি নয়।
ডেইলি টেলিগ্রাফে লেখা কলামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দলীয় কর্মীদের সমর্থন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী দোমিনিক কামিনসকে তার সরকারের হৃৎপিণ্ডে বসিয়েছেন। দোমিনিক এমন একজন ব্যক্তি, যাকে কয়েক মাস আগেও পার্লামেন্টের প্রতি অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। একসময়, শুধু একারণেই তার কোনো একটি অফিসে আসীন হওয়ার পথ রুদ্ধ হতো। অথচ আজ এটাই (সংসদের অবমাননা) সরকারের জন্য একটি কর্মসূচি।
প্রধানমন্ত্রী আজ পার্লামেন্টের চেয়েও একটি উচ্চমার্গীয় দাবি করে বসবেন। বলে বসবেন, তিনি রেফারেন্ডেমের (ব্রেক্সিট) মাধ্যমে ‘জনগণের অভিপ্রায়’ মুঠোবন্দি করে ফেলেছেন। যদিও গণভোট ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের কোনো শর্ত নির্দিষ্ট করে দেয়নি। যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে পার্লামেন্ট ছাড়া অন্য কেউ রেফারেন্ডাম ব্যাখ্যা করবে, আর তখন সেই ধরনের নায়কোচিত নেতাই সেই মহাসত্যটা জানবেন যে, ভোটাররা তাকে বাগে পেলে তার কি দশাটাই না করতো। আসলে আমরা একটা ভয়ঙ্কর সড়কে হাঁটছি।
সংক্ষিপ্ত মেয়াদে সংসদ মুলতবির সিদ্ধান্ত সফল হতে পারে। ব্রেক্সিট যদি ‘নো ডিল’ বা সমঝোতাহীন হয়, তাহলে এমপিদের পক্ষে তাকে থামানো কঠিনতর হতে পারে। তবে যদি তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে কিছু একটা প্যাকেজ আদায় করে নিতে পারেন, তাহলে কিছুটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সবটাই যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে একটি জনগণ বনাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এর মূল্য কতটা হবে? ব্রাজিলের রেইনফরেস্ট যেভাবে পুড়ছে, তেমনি করে জনসন এবং তার উপদেষ্টা দোমিনিক রাষ্ট্রের বিধ্বংসী কাঠামোগত ক্ষতির বিনিময়ে স্বল্পমেয়াদি লাভ উসুল করার ধান্দায় আছেন। তারা মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা অন্যরা অনুসরণ করবে। এবং আমাদের গণতন্ত্রের ভঙ্গুর ইকোসিস্টেমকে ছারখার করে দেবে। কনজারভেটিভরা একদা সংবিধান সুরক্ষার দায়িত্ব অনুভব করেছিলেন। সময়ে কিভাবে সেটা বদলে গেছে।
পিটার বোন, কনজারভেটিভ এমপি এবং লিভ মিন্স লিভের উপদেষ্টা: হাঁ অবশ্যই একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা সরকার করেনি। এটা করেছে একদল কট্টরপন্থী, যারা বৃটিশ জনগণের অভিপ্রায় গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। এই অগণতান্ত্রিক শক্তি বরিস জনসনের বৈধ সরকার থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন এবং তার পরিবর্তে জেরেমি কর্বিনের নেতৃত্বে একটি তথাকথিত জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।
বরিস জনসনের দ্বারা সংসদ মুলতবি সভার সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘকাল ধরে এমন পদক্ষেপ অনুভূত হয়েছিল। সত্যি বলতে কি হাউজ অব কমন্সের শ্যাডো নেতা এবং অন্যান্য বিরোধীদলীয় এমপিরা মাসের পর মাস ধরে এমনটাই দাবি করেছিলেন। সংসদের বর্তমান অধিবেশন তিনটি ক্যালেন্ডার বছর কাভার করেছিল এবং গৃহযুদ্ধের পরে এটাই কোনো সংসদের দীর্ঘমেয়াদি অধিবেশন চলছিল। প্রত্যেকটি অধিবেশন সাধারণত এক বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। যা রানীর ভাষণ দিয়ে শুরু। এতে পরবর্তী বর্ষে সরকার কি করবে তার রূপরেখা দেয়া হয় এবং এই সময়ের মধ্যে যদি তারা সেটা না করে দেখাতে পারেন, তাহলে তাদের নির্বাচনে হারার ঝুঁকি বাড়ে। এরপর বিরোধী দল সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে। বিতর্ক করে। বিস্তারিতভাবে সরকারের কর্মসূচি খুঁটিয়ে দেখে। বিতর্কের শেষে তারা রানীর ভাষণ সংশোধন কিংবা তাকে পরাস্ত করার চেষ্টা করতে পারে। যদি রানীর ভাষণ পরাস্ত হয়, তাহলে সেটা অবধারিতভাবেই সাধারণ নির্বাচন ডেকে আনে।
সংসদ মুলতবি করার মধ্য দিয়ে স্পষ্টতই সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনে ঘটে এবং তা সংবিধানগতভাবে স্ট্যান্ডার্ড। এটা ব্রেক্সিট প্রক্রিয়াকে ব্লক করে দিতে পার্লামেন্টের গতিরোধ করা নয়। প্রধানমন্ত্রী যদি নভেম্বর পর্যন্ত সংসদ মুলতবি করে দিতেন, তাহলে সেটা একটি সাংবিধানিক উম্মাদীয় কাণ্ড হতো। সাধারণের পক্ষে তখন এর প্রথম বিরোধিতাকারী আমিই হতাম। জেরেমি কর্বিন যদি একটি নোডিল ব্রেক্সিট বন্ধ করে দিতে চান, তাহলে তাকে একটি সাধারণ পথ অনুসরণ করতে হবে। মঙ্গলবার তার পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সুযোগ থাকতো। বুধবারের ভোটাভুটিতে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি সেটা করবেন না। কারণ তিনি জানেন তার জন্য যা ভোট দরকার সেটা তার নেই। উপরন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য যতগুলো ভোট দরকার, সেটা তার নেই। জেরেমি করবিনের প্রতি আমার একটা ক্ষুদ্র বার্তা: হয় আপনি ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরুন অথবা আপনার মুখটা বন্ধ করুন মার্গারেট বেকেট, ডার্বি সাউথ থেকে নির্বাচিত লেবার এমপি: হা। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের এই সুখ্যাতি রয়েছে যে তারা ধূর্ত। এবং তাদের এমন সুনামও আছে যে তারা নিষ্ঠুর এবং অযথার্থ। সমর্থকরা দাবি করেছিলেন, সংসদের একটা হেমন্তকালীন বিরতি কিংবা মুলতবি এবং সাধারণত রানীর নতুন ভাষণ, এসবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই হেমন্তে আমরা যা দেখলাম তা ৪০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যকার নতুন উপাখ্যান।
আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সরকার দেখছি, যার প্রকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। অথচ সেই প্রধানমন্ত্রী কিনা ৭০ বছরের ইতিহাসের বৃহত্তম মুলতবি চাইলেন। এটা ‘স্বাভাবিক’ নয়।
আমার বিবেচনায় এটা হলো সবথেকে ভয়ঙ্কর একটি ঘটনা। ২০১৬ সাল থেকে যে লড়াইটা চলছিল সেখানে এখন একটা অভ্যুথান ঘটানো হলো।
শুরু থেকেই তেরেসা মে এটাই চেয়েছিলেন যে ক্ষমতা সংসদের কাছে নয়, নির্বাহী বিভাগের কাছে ন্যস্ত থাকবে এবং নির্বাহী ক্ষমতা তারাই হল্লা করে অনুশীলন করবে।
তিনি আদালতের সিদ্ধান্তের কারণেই এটা মানতে বাধ্য হয়েছিলেন যে আর্টিকেল ৫০ ট্রিগার করতে হলে এমপিদের সমর্থন লাগবে। যখন তাতে বিস্তারিত সংসদীয় পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়লো, ঠিক তখনই মন্ত্রীদের জন্য একচ্ছত্র প্রস্তাব তোলা হলো। এ বিষয়ে যত তথ্য এমপিরা চেয়েছে, যত পেপার প্রকাশের অনুরোধ করেছে, সবটাই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এই সুপারিশও ছিল যে, সংসদ-সদস্যদেরকে একটি অর্থপূর্ণ ভোটে অংশ নিতে দিতে হবে। কিন্তু সেটাকে প্রবলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে।
গত তিন বছর ধরে সরকার বিরোধীদলীয় এমপিদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। বাধা দিয়েছে। ব্রেক্সিট নিয়ে সরকার কি করছে, সে নিয়ে যখনই আলোচনা এসেছে তাতেই তারা বাধা দিয়েছে। আর যখন চূড়ান্ত প্রস্তাবের সময় ঘনিয়ে এল এবং কি হতে যাচ্ছে তা জানাজানি হলো, তখন খড়গ নেমে এল। আলোচনা ঠেকাতে সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করা হলো সপ্তাহের পর সপ্তাহ। কেটে গেল মাসের পর মাস।
যারা বড় গলায় চিৎকার করে সংসদীয় সার্বভৌমত্ব পুনরুজ্জীবিত করার শোর তুলল, তারাই সংসদকে অপমান করল। প্রথমে সংসদকে সাইডলাইনে পাঠানো হলো। এরপর অবজ্ঞা করা হলো। শেষ পর্যন্ত তার কণ্ঠনালি চেপে ধরা হলো।
সুতরাং এটি একটি অভ্যুত্থান। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আমাদের অলিখিত সংবিধানকে নস্যাৎ করার পথে এটা হলো সর্বশেষ পদক্ষেপ মাত্র। দীর্ঘদিনের অনুসৃত কনভেনশনকে উপেক্ষা করলো তারাই। সংসদের মর্যাদা ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হলো। এভাবে ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হচ্ছে।
মাইকেল চেসাম, জাতীয় সংগঠক, অ্যানাদার ইউরোপ ইজ পসিবল: একজন অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সংসদের বৈঠক যাতে বসতে না পারে, সে লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কারণ তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন, এই পার্লামেন্ট তার সঙ্গে একমত হবে না। তার লক্ষ্য হলো ব্রেক্সিট থেকে চোখ সরানো। অক্টোবরের শেষ দিকে একতরফা একটা তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব করার মধ্য দিয়ে তিনি আশা করছেন, তিনি একটা চকিত নির্বাচনে যাবেন। আর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নতুন সংসদ গঠন করবেন। তার মুখে ঝরবে দক্ষিণপন্থী স্লোগান, বিদেশি হটাও। তিনি সেই শক্তির প্রতিভু, যারা বিদেশিদেরকে খাটো করে দেখে এবং তিনি আমাদের পলিটিক্যাল এলিট বনে যাবেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনর ২০তম ইটোনিয় প্রধানমন্ত্রী।
জনসনের দীর্ঘমেয়াদি যাত্রার লক্ষ্য সম্ভবত আরো গভীরতর। ব্রেক্সিট সফল হওয়ার পরে বৃটেন হবে একটি অনিয়ন্ত্রিত দোষে দুষ্ট রাষ্ট্রযন্ত্র। যা দেশটিকে ট্রাম্পের আমেরিকার কাছাকাছি নিয়ে যাবে। শ্রমিকদের অধিকার, খাদ্যের মান, পরিবেশগত সুরক্ষা অগ্রাহ্য করা হবে। পাবলিক বা সরকারি সেবাসমূহ, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের অবস্থা এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে, যেমনটা ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার করে চলেছে। সরকারি খাতের সেবাসমূহের সবটাই বিক্রির যোগ্য করে তোলা হবে। স্বাভাবিকভাবেই এসব সম্ভাব্য কর্মসূচির প্রতি জনগণের সমর্থন সামান্য মিলতে পারে অথবা থাকবেই না।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর কাজ হলো জনগণ থেকে দূরে থাকা। এমপিরা যাতে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা। তিনি অবশ্য জানেন এমন করে তো বেশিদিন তাদের থামিয়ে রাখা যাবে না, সুতরাং যত বেশি পারো বিলম্ব ঘটাও। এটা মন্দের ভালো।
পার্লামেন্ট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়নি। সংবাদপত্র এখনো মুক্ত স্বাধীন। কিন্তু সব অভ্যুত্থান ট্যাঙ্কে চেপে আসে না। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়েও আসে না।
হাঁ। এখনো আমাদের নাগরিক অধিকার আছে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ অভিবাসীকে বলা হচ্ছে তোমাদের সামনে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তোমাদেরকে বিতাড়ন করা হতে পারে। এমনকি সরকার চাইলে হঠাৎ করে তাদের চলাচল সীমিত করে দিতে পারে। পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে নির্বাহী বিভাগ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং আমরা যদি এটা বন্ধ করতে ঐক্যবদ্ধ না হই, তাহলে জয়ী হতে পারে।
এটা এমন একটা সরকার, যারা যুক্তির শক্তির কাছে মাথা নত করতে রাজি নয়। তাই তাদের চলতি বেপরোয়া প্রবণতা উল্টে দিতে হলে, অবশ্যই শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
আশাবাদের জায়গা হলো যে বিরোধী দলগুলো কমন্সে এই সপ্তাহে জয়ের মুখ দেখবে। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে যে, আমরা কেবলই সংসদীয় প্রক্রিয়া কিংবা বিচার বিভাগের উপর নির্ভর করতে পারি না।
গণতন্ত্র যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তাকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে লড়তে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ব্যাপক আন্দোলন করতে হবে। প্রতিবাদকারীদের আন্দোলনগুলো যদি সরকারি নিলনকশা বন্ধ করতে আগ্রহী না হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে তারা নখদন্তহীন।
সংসদ স্থগিত করে দেয়া বিরাট ঘটনা। এটা একটা শুধু এক ধরনের খেয়ালিপনা নয়। এটা তো গণতন্ত্রই বন্ধ করে দেয়ার শামিল। এটা অধিকারের উপর আক্রমণ চালানো । অথচ তারা নিজেদের জনগণের প্রতিনিধি দাবি করছে। এটা হাস্যকর। কারণ তারা জনগণকে প্রত্যাখ্যান করছে। জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণকে প্রত্যাখ্যান করছে। আর এর সবটাই হলো ক্ষমতা জবরদখল করে রাখার ফন্দি। তারা মানুষকে এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে বিভক্ত করবে। লেলিয়ে দেবে। আসলে ব্রেক্সিট বৃটেনকে এসবই এনে দেবে। এটাই ব্রেক্সিটের স্বাভাবিক উপসংহার। এটাই সত্য।
আমরা গণতন্ত্রের স্বপক্ষে একটি ব্যাপক আন্দোলন দানাবাঁধতে দেখছি। সোমবার থেকে প্রতিদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটায় দেশব্যাপী প্রতিরোধ আন্দোলন দেখা যাবে। আমাদের সঙ্গে যোগ দিন।
মেগ রাসেল, পরিচালক, সংবিধান ইউনিট, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন: বরিস জনসনের সংসদ মুলতবি করে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে যে আন্দোলন চলছে, তার ব্যানার হচ্ছে, অভ্যুত্থান বন্ধ করুন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো কি ঠিক হচ্ছে? আমাকে ভুল বুঝবেন না। এভাবে সংসদ মুলতবি করে দেয়া স্বাভাবিক ঘটনা নয় মোটেই। কয়েকদিনের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়ার রীতি আছে। একটি বার্ষিক সংসদীয় অধিবেশন এবং তার পরের অধিবেশনের মধ্যবর্তী সময়ে কয়েকদিনের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়াটা বৃটিশ সংসদীয় গণতন্ত্রে আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ১৯৩০ সালের পরে কোনো প্রধানমন্ত্রী সংসদকে টানা পাঁচ সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন, তার কোনো নজির নেই। তাও আবার কোনো সাধারণ অবস্থার মধ্যে নয়। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ একটা গভীর রাজনৈতিক সংকটের মাঝখানে এই পথ বেছে নেয়া হয়েছে। যখন ঘড়ির কাঁটা ধীরে ধীরে ৩১ অক্টোবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আর তখনই টানা পাঁচ সপ্তাহ একটা গ্রীষ্মকালীন বিরতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হলো। অথচ এই সময়ে যদি সংসদ খোলা থাকত, তাহলে এমপিরা সরকারের নীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারতেন।
আর আশ্চর্যের বিষয় এই যে প্রধানমন্ত্রী হবার পরে শুধু একদিন, আমাদের এই তিনি সংসদের ফ্লোরে প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এখন যদি সংসদের মুলতবি সিদ্ধান্ত চলতে থাকে, তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াবে এই যে, একজন প্রধানমন্ত্রী টানা ৯০ দিনের মধ্যে মাত্র এক সপ্তাহ সংসদে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবেন। ১৪ অক্টোবরের মধ্যে যখন কিনা এমপিদের সংসদে ফিরে আসার তারিখ, তখন সেই সময়টিতে ৩১ তারিখের ব্রেক্সিট ডেডলাইন থেকে মাত্র তিন সপ্তাহের কম সময় হাতে থাকবে। চালাকিটা হলো জনসনকে যাতে বিরোধী দলের এমপিদের ধুন্দুমার প্রশ্নের মুখে তোপের মুখে না পড়তে হয়, সেজন্য তাকে আড়াল করা।
এইযে অবস্থা তৈরি হলো তার পেছনে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট কি যুক্তি দিচ্ছে ? তারা বলছে, পার্টি কনফারেন্সের জন্য কয়েক সপ্তাহের জন্য সংসদ মুলতবি করে দেয়া দরকার ছিল। কিন্তু সেটা সঠিক নয়। বরং এটা ভয়ঙ্কর এবং সেটা প্রধানত দুই কারণে। প্রথমত, পার্টি কনফারেন্স কখন হবে তা-ই স্থির হয়নি এবং দ্বিতীয়ত এমপিদের মধ্যে এই প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছিল যে, সম্ভবত তারা প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট ডিল প্রত্যাখ্যান করবে। এই প্রবণতাটাই পরিষ্কার হয়ে উঠছিল। তাই সংসদ মুলতবি করার মধ্য দিয়ে এই বিষয়ে সরকার যাতে সংসদে ভোটের কবলে না পড়ে, সেই সম্ভাবনাকে নাকচ করা হলো। এমনকি একটি অনাস্থা ভোট হতে পারতো আসন্ন। সেটা তাদের জানা ছিল। আর সেটা এড়ানোর জন্যই এই কৌশলটা বেশ কাজে দেবে বলেই তাদের ধারণা। আমরা জানতাম যে বিরোধী দলগুলো অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিল। কিন্তু তারা বিকল্প নেতা নির্বাচনে একমত হতে পারছিল না। তাদেরকে তো একজন বিকল্প প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারেও একমত হতে হবে। সেই বিষয়েই তারা একমত হতে পারছিলেন না। বৃটিশ পার্লামেন্টের শর্ত হলো, একটি বিকল্প সরকার গঠন করতে হলে তারা ১৪ দিন সময় পাবে। কিন্তু সংসদ মুলতবি করে দেয়ায় তাদের এই সময়টা কমে গেল। এবং এ ধরনের একটি অনাস্থা ভোটের পরে তারা বিকল্প সরকার গঠনের জন্য তাদের হাতে সময় থাকবে মাত্র ২৪ ঘণ্টা।
সুতরাং জনসন যে পদক্ষেপটি নিয়েছেন তা নজিরবিহীন এবং দৃশ্যত এটা পরিষ্কার যে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার, তাকে পরীক্ষা করার যে সুযোগ সংসদীয় গণতন্ত্রে রয়েছে, তা এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করার যে চিন্তাভাবনা চলছিল, সেখানে একটা দেয়াল তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হলো। একটি সংসদীয় গণতন্ত্রে যেখানে সরকার সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে, যেখানে সরকার টিকে থাকে। কারণ হচ্ছে সে পার্লামেন্টের আস্থা অর্জন করে থাকে। সুতরাং এভাবে সংসদ মুলতবি করে দেয়াটা গভীরভাবে একটা গোলমেলে বিষয়। আর সে কারণেই আমরা আদালতে বিভিন্ন ধরনের মোকদ্দমা দেখছি, যার লক্ষ্য হচ্ছে এই মুলতবির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা।
প্রশ্নটা খাসা যে প্রধানমন্ত্রী যে উপায় বাতলে দিয়েছেন, সেটা কি একটি সাংবিধানিক অভ্যুত্থান? এর সমতুল্য কিছু অভিধা, সংক্ষেপে যাকে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। একটি অলিখিত সংবিধানের আওতায় অসাংবিধানিক কথা বলতে আসলে আমরা কি বুঝব?
জনসনের সর্মথকরা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী আইনের আক্ষরিক চেতনা ভঙ্গ করেননি। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের সংবিধান শুধু আইনের উপরে দাঁড়ানো নয়। আমাদের সংবিধানের শক্ত ভিত্তি হচ্ছে কনভেনশন। আর কোনো সন্দেহ নেই, সবগুলো নর্মস এক্ষেত্রে ভঙ্গ করা হয়েছে। একটি রাজনৈতিক সংবিধান, যা সর্বদাই ভঙ্গুর। এটা তাই সবসময়ই মুখ্য খেলোয়াড়রা কিভাবে রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেন। তার উপরে এর কার্যকরতা নির্ভর করবে। তারা যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে সংবিধানকে অবমাননা করা হবে।
সারা বিশ্বে সংসদীয় মুলতবির ধারণাকে যেভাবে অনুশীলন করা হয়, সেখানে এটা একটা ভয়ঙ্কর নজির হয়ে থাকবে। সরকারগুলোর অবশ্যই এই সক্ষমতা থাকা উচিত নয়, যাতে তারা গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টকে বন্ধ করে দেয়। নিজের জন্য অসুবিধাজনক কোন প্রশ্ন বা অবস্থার মুখোমুখি হতে না হয়, সেজন্য সংসদেই তালা ঝোলানো কোনো কাজের কথা নয়। এটা অবশ্যই নির্বাহী বিভাগের দ্বারা একটা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়। মঙ্গলবার এমপিরা ফিরে আসবেন তখন তাদের উচিত হবে জনসনের এই পদক্ষেপকে বড় গলায় প্রত্যাখ্যান করা। আর তা খুবই স্পষ্ট ভাষায়।
No comments