‘পাশার’ কিকে ‘ড্রাগন’ কুপোকাত by আনোয়ার পারভেজ
প্রাণপণে
লড়ছে দুটি মোরগ। একটির নাম ড্রাগন, অন্যটি পাশা। ড্রাগন এই পাশাকে উড়ুক্কু
লাথি (ফ্লাইং কিক) মারছে তো পাশা ফের পাল্টা আঘাত হানছে। কেহ কারে নাহি
ছাড়ে সমানে সমান। ডানা ঝাপটে ধুলো উড়িয়ে মোরগ দুটি লড়াইয়ে মগ্ন। দর্শকেরাও
উত্তেজনার তুঙ্গে। ‘শাবাশ’ বলে বাহবা দিচ্ছেন, চলছে হাততালি আর শিস। লড়াই
শেষে ‘ড্রাগনের’ হার, ‘পাশার’ জিত। বগুড়ার শহরের
প্রাণকেন্দ্র সাতমাথার অদূরে ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়
ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই।
লড়াই শেষে চ্যাম্পিয়ন হয় সাদা রঙের পাশা নামের মোরগটি। মোরগের মালিক নয়নের হাতে তুলে দেওয়া হয় ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন। রানার আপ লাল–কালো রঙের ড্রাগন নামের মোরগের মালিক পারভেজ পেলেন সাউন্ডবক্স। ‘বাংলার মুখ’ বগুড়া শাখার উদ্যোগে এই মাঠেই বসে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। মেলায় প্রতিদিনই লাঠিখেলা, সাপখেলা, বানর খেলাসহ লোকজ ঐতিহ্যের নানা খেলার আয়োজন থাকছে।
মোরগ লড়াইয়ে অংশ নেয় নানা রঙের ২০টি তেজি আসিল মোরগ। গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই দেখতে মেলার মাঠে ভিড় করেন হাজারো দর্শক।
কারাতে, কুংফু ও মার্শাল আর্টের নানা কায়দা-কানুনের মতো এ লড়াইয়ে একেকটি দুর্ধর্ষ লড়াকু মোরগ নিজস্ব স্টাইলের ফ্লাইং কিক করছিল। কয়েক শতকের পুরোনো এই মোরগ লড়াই এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। এই খেলায় পালানোর কোনো পথ নেই। জিততে হলে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হয়।
মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়ার বৈশাখী মেলায় মোরগ লড়াইয়ের আয়োজন এখন রীতিমতো ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। ৩৮ বছর ধরে বৈশাখী মেলায় মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈশাখী মেলায় এই লড়াইকে সামনে রেখে কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয় মোরগকে তেজি করে তোলার তোড়জোড়। লড়াইয়ের জন্য অনেকেই তেজি মোরগ পুষে প্রশিক্ষণ দেন। লড়াকু মোরগকে পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত গোসল এবং চিকিৎসাও দেওয়া হয়।
আয়োজকেরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের দেওয়ান বংশ একসময় ভারত থেকে এই আসিল মোরগ নিয়ে আসে। আগেকার দিনের রাজা-বাদশাহরা এটিকে পুষতেন বলে একে রাজকীয় মোরগও বলা হয়।
শোনা যায়, টিপু সুলতান, সম্রাট আকবরসহ অনেক রাজা এই মোরগ শখ করে পুষতেন। এদের লড়াই দেখাটাকে বিনোদনের অংশ হিসেবে নিতেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, জাপানেও এই খেলার প্রচলন রয়েছে।
লড়াই শেষে চ্যাম্পিয়ন হয় সাদা রঙের পাশা নামের মোরগটি। মোরগের মালিক নয়নের হাতে তুলে দেওয়া হয় ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন। রানার আপ লাল–কালো রঙের ড্রাগন নামের মোরগের মালিক পারভেজ পেলেন সাউন্ডবক্স। ‘বাংলার মুখ’ বগুড়া শাখার উদ্যোগে এই মাঠেই বসে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। মেলায় প্রতিদিনই লাঠিখেলা, সাপখেলা, বানর খেলাসহ লোকজ ঐতিহ্যের নানা খেলার আয়োজন থাকছে।
মোরগ লড়াইয়ে অংশ নেয় নানা রঙের ২০টি তেজি আসিল মোরগ। গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই দেখতে মেলার মাঠে ভিড় করেন হাজারো দর্শক।
কারাতে, কুংফু ও মার্শাল আর্টের নানা কায়দা-কানুনের মতো এ লড়াইয়ে একেকটি দুর্ধর্ষ লড়াকু মোরগ নিজস্ব স্টাইলের ফ্লাইং কিক করছিল। কয়েক শতকের পুরোনো এই মোরগ লড়াই এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। এই খেলায় পালানোর কোনো পথ নেই। জিততে হলে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হয়।
মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়ার বৈশাখী মেলায় মোরগ লড়াইয়ের আয়োজন এখন রীতিমতো ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। ৩৮ বছর ধরে বৈশাখী মেলায় মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈশাখী মেলায় এই লড়াইকে সামনে রেখে কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয় মোরগকে তেজি করে তোলার তোড়জোড়। লড়াইয়ের জন্য অনেকেই তেজি মোরগ পুষে প্রশিক্ষণ দেন। লড়াকু মোরগকে পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত গোসল এবং চিকিৎসাও দেওয়া হয়।
আয়োজকেরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের দেওয়ান বংশ একসময় ভারত থেকে এই আসিল মোরগ নিয়ে আসে। আগেকার দিনের রাজা-বাদশাহরা এটিকে পুষতেন বলে একে রাজকীয় মোরগও বলা হয়।
শোনা যায়, টিপু সুলতান, সম্রাট আকবরসহ অনেক রাজা এই মোরগ শখ করে পুষতেন। এদের লড়াই দেখাটাকে বিনোদনের অংশ হিসেবে নিতেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, জাপানেও এই খেলার প্রচলন রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মোরগ লড়াইয়ের জন্য ১২ ফুট বাই ১২ ফুট স্কয়ার জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝখানে ছয়টি মোরগ নিয়ে বসেছেন তাদের মালিকেরা। লড়াইয়ে এক মোরগকে অন্য মোরগের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ করে তুলে মল্লযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিচ্ছিলেন মালিকেরা। এ পর্যায়ে হার-জিতের মধ্য দিয়ে খেলা শেষ হয়।
লড়াইয়ে কোনো মোরগ যখন কুলিয়ে উঠতে পারছে না, তখন সে দৌড়ে পালায়। এভাবে তিনবার দৌড়ে সীমানার বাইরে চলে গেলে সেই মোরগ পরাজিত ধরা হচ্ছে। কোনো কোনো মোরগ খুব জেদি। লড়াইও করে না, আবার পালিয়েও যায় না। মাঠেই মোরগটি বসে থাকে। নিয়মানুযায়ী, কোনো মোরগ হাঁটু গেড়ে বসলে এবং সেই বসার সময় এক মিনিট অতিক্রম করলে সেই মোরগ পরাজিত বলে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো মোরগ দৌড় দিচ্ছে না, বসেও পড়ছে না এবং লড়াইও করছে না। ওই মোরগকে প্রতিদ্বন্দ্বী মোরগ আক্রমণ করছে। নিয়মানুযায়ী, আক্রমণের শিকার কোনো মোরগের মাথার ঝুঁটি ১০ সেকেন্ডের বেশি নুয়ে থাকলে, তাকে পরাজিত ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। পরপর তিনবার পরাজিত হলে লড়াইয়ে অন্য মোরগটিকে বিজয়ী বলে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।
বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী এই মোরগ লড়াইয়ের আয়োজক ও বৈশাখী মেলা কমিটির আহ্বায়ক জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান বলেন, এবার আসিল মোরগ লড়াইয়ে ২০টি মোরগ অংশ নিয়েছে। সব কটি লড়াকু মোরগের জাত ভারতীয়। দাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। প্রতিটি রাউন্ডে লড়াই সময় ১৫ মিনিট। ফাঁকে ৫ মিনিট করে বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়েছে লড়াকুদের। পরে সর্বোচ্চ পয়েন্টের ভিত্তিতে চূড়ান্ত লড়াইয়ে পাশা ও ড্রাগন ফাইনালে ওঠে। খেলা শেষে পাশা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ‘টাইগার’ ও রানার আপ ‘সুলতান’ এবার প্রথম রাউন্ডেই ধরাশায়ী হয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন পাশার মালিক নয়ন বলেন, বৈশাখী মেলায় মোরগ লড়াই দেখেই তাঁর লড়াকু মোরগ পোষার ইচ্ছে জাগে। বছরখানেক আগে সাদা জাভা ভারতীয় জাতের এই মোরগ কেনেন। নাম দেন পাশা। এক বছর ধরে দুর্ধর্ষ লড়াইয়ে পারদর্শী করে তোলেন পাশাকে। তাঁর মোরগটির বাজারমূল্য এখন ৩০ হাজার টাকা বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে রানার আপ ড্রাগনের মালিক পারভেজ বলেন, আট হাজার টাকায় এক বছর আগে ড্রাগনকে কেনেন তিনি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হয়েছে ড্রাগন। এ কারণে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও আফসোস নেই তাঁর।
No comments