ঈদ ছুটিতে হাম হাম ট্রেকিং by প্রীতম সাহা
পরীক্ষা
শেষ। ঈদের ছুটি শুরু। একবারেই ঝামেলা মুক্ত। তাই আর দেরি না করে ছুট দিলাম
চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল বাছাইয়ের উদ্দেশ্য একটাই তা হলো হাম হাম
ঝরনা দেখা। হাম হাম যাওয়ার পথটা বেশ কষ্টদায়ক হওয়ায় বন্ধুরা কেউ রাজি হয়নি।
কিন্তু মাথায় যখন এসেছে তখন যাওয়া তো চাই। হোক না সেটা একা। কবিগুরু বলেছেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ নাই আসে তবে একলা চলো রে। আমাকে কে ঠেকায়? তাই ৯টার দিকে সকালের নাস্তা করেই বের হয়ে পড়লাম হাম হামের উদ্দেশে।
সোয়া ৯টার দিকে শ্রীমঙ্গল পানসি হোটলের বিপরীতে কিছু সিএনজি আছে যারা কমলগঞ্জ উপজেলা যায়, ভাড়া জনপ্রতি ৩৫ টাকা।
আমি সিএনজিতে চেপে বসলাম। ড্রাইভার নাকি পাঁচ জন না হলে গাড়ি ছাড়বে না। তাই কি আর করার। অগত্যা, বসে বসে গান শোনা শুরু করলাম। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর যাত্রীরা সবাই এলে যাত্রা শুরু হলো। শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছের পথটা এক কথায় অসাধারণ। যাবার সময় রাস্তার দুপাশের চা বাগান, কিছুদূও যেতেই গ্র্যান্ড সুলতান হোটেল, তারপরে বেশিরভাগ পথ লাউয়াছড়া জঙ্গলের ভেতরে চলে গেছে। দেখলেই প্রশান্তি অনুভব হয়।
সিএনজি কমলগঞ্জ উপজেলা বাজারে এসে নামলে মনে মনে চিন্তা করছিলাম শ্রীমঙ্গল থেকে হামহামের স্পটে যেতে মনে হয় সময় তেমন একটা লাগবে না। বড়জোর ১ ঘণ্টাই লাগবে! ভাবনা পর্যন্তই থেকে গেলো সব, আর যা হলো বাকিটা ইতিহাস।
কমলগঞ্জ নেমে কলাবন পাড়ার উদ্দেশে একটা সিএনজি রিজার্ভ করলাম। কারণ লোকাল কোন সিএনজি ওই জায়গায় যায় না। মজার ব্যাপার যেটা, ড্রাইভার মামা প্রথমে আমাকে ৭০০ টাকা বলে শুরু করেছিল, পরে আমি অনেক দর কষাকষি করে ৭০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় নামিয়ে রিজার্ভ করি।
কমলগঞ্জ থেকে কলাবন পাড়ার রাস্তা অনেক কষ্টকর ছিল। কিছুতেই যেন পথ শেষ হতে চাচ্ছিল না। প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে অবশেষে কলাবন পাড়ায় পৌঁছালাম।
সিএনজি চালক আমাকে বাবুল তুংরা নামের একজন গাইড ঠিক করে দিলেন। আমি অবশ্য গাইডের পিছনে খরচ করতে ইচ্ছুক ছিলাম না। তবে কিছু করার ছিলো না। কারন গাইড নিতেই হবে না হলে নাকি ডাকাতির সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনারাও অবশ্যই গাইড নিয়ে নিবেন। যাইহোক বাবুল মামা অনেক ভাল মানুষ ছিলেন। কলাবনপাড়ায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই একঝাঁক শিশু আমার দিকে লাঠি নিয়ে এগিয়ে এলো। দৃশ্যটা দেখে প্রথমে ভড়কে গিয়েছিলাম। তারা সামনে এসে বলে, ভাই আমি আগে এসেছি। আমার লাঠি কিনেন , একটা ৫ টাকা।
আমি আবার তাদের অবাক করে দিয়ে সবাইকেই ৫টাকা করে দিয়ে দিলাম। কারণ সবাই তো চেষ্টা করেছিল। যাইহোক, কলাবনপাড়াই এলে সেখানে কিছু হোটেল চোখে পড়বে। আমি আর আমার গাইডের খাবার খেয়ে নিলাম।
এখন হচ্ছে আসল খেলা। মূল ট্রেকিং শুরু কলাবনপাড়া থেকে। এটি কমলগঞ্জ উপজেলার শেষ গ্রাম। এর একদম পাশে ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত। ভারতের রাস্তা, মানুুষ সব পরিষ্কার দেখা যায়। বনের শুরুতে দুটা রাস্তাদেখা পেলে গাইড আমাকে ডান পাশেরটা দিয়ে নিয়ে গেলো। গাইড বলে দিলো প্রায় ২৩টির মত বড় বড় পাহাড়, দূর্গম উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ, খাল, গভীর বনের সরু আঁকাবাঁকা ঝিরিপথ পাড়ি দিতে হবে। ট্রেকিং করে পৌঁছাতে সময় লাগবে নাকি তিন থেকে চার ঘন্টা। আমার যে এক্সট্রিম কিছুই ভাল লাগে তা গাইডের জানা ছিলো না।
রাস্তা দিয়ে ঢুকেই জানা-অজানা অনেক ধরনের বড়বড় গাছ ও বাঁশের দেখা পাই। আর মাঝে মাঝে সাঁকো তো আছেই। আচমকা দেখা হয়ে গেলো চশমা পড়া হনুমান, বানর ও বন্য শুকুরের সঙ্গে। মনে হচ্ছিল আমি যেন আফ্রিকার কোন সাফারিতে ঢুকে পড়েছি।
অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পাহাড়ি পথ একসময় আমাকে স্বচ্ছ জলের স্রোতে নামিয়ে দিলো। এই শীতল জল যেন মনে এক অদ্ভুত রকম প্রশান্তির কথা বলতে চাচ্ছিল। আর গিরিপথটি দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। দুদিকে বিশাল বিশাল বাঁশজাড় অনেকটা অভ্যর্থনার ভঙিমায় আমাকে স্বাগত জানাচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝরনার পানি পড়ার শব্দ কানে আসে।
অপূর্ব এই বনে ঝরনার পানি পড়ার শব্দ এক অভূতপূর্ব বোধের সঞ্চার ঘটায়। মনে হয় কানে কানে কেউ ইনিগমার গান ফিস ফিস করে গেয়ে যাচ্ছে।
কিছুদূর হেঁটে আসতেই অবশেষে দেখা মেলে পাহাড়ি বন্য সুন্দরীর। যার জন্য এতোটা পথ আসা। কাক্সিক্ষত সেই হাম হাম ঝরনা। হাম হাম ঝরনার সৌন্দর্যের কথা যত বলবো তত শব্দ কম পড়ে যাবে। এ যেন এক ভয়াবহ রূপের মায়াবী চাঁদর জড়িয়ে বসে আছে। নৈসর্গিক এক অনুভূতি নিয়ে বসে পড়লাম পানিতে। আহা কি সুখ, এই তো জীবন। এতক্ষণের কষ্ট যেন সার্থক হল। কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা পাহাড়ের বুকে চীড়ে আছড়ে পড়ছে পাথরের গায়ে।
সেখান থেকে সৃষ্টি হচ্ছে কুয়াশার আভা। দেড়শ ফুট উপর থেকে গড়িয়ে পড়া পানির সেই স্রোতধারা পাথরের পর পাথর কেটে এগিয়ে গিয়ে তৈরি করছে স্রোতস্বিনী জলধারা। সে এক বুনো পরিবেশে। বর্ষায় এই ছোয়ায় বন্য সুন্দরী মেতে উঠেছে তার সেই আদি রুপে। সুন্দরীর এই প্রবল বর্ষণে পুরো জংগল যেন ফিরে পায় প্রাণের ছোঁয়া। ঝিরিগুলো হয়ে উঠে কর্মচঞ্চল। ঝিরির সেই মাতাল জলরাশি সাই-সাই বেগে ধেয়ে আসে পথিকের পথে। স্বচ্ছ শীতল জলের স্রোত শরীর জুড়িয়ে, মনজুড়ানি এক স্বর্গীয় অনুভূতি এনে দেয় মনে। চারদিকে শীতল শান্ত পরিবেশ। ঝর্ণার জলধারা এক অদ্ভূত ছন্দের তৈরি করে৷ এ যেন কোন পাহাড়ি সঙ্গীত। ঘন্টার পর ঘন্টা শুনতেও কোন ক্লান্তি নেই। ঝর্ণার দিক থেকে যেন চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না।
অনেকটা মেডুসার মতো তার দিকে তাকিয়ে স্থির হয়েছিলাম বেশ অনেকক্ষণ। প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু থেকে গড়িয়ে আসা শীতল পানিতে যখন দেহ ভাসালাম, সেটা এক অবর্ণনীয় অনুভূতি। শীতল জলে শরীর দিয়ে বসে চারপাশের দিকে তাকালে মনে হয়, এটাই বুঝি স্বর্গ।
চারপাশে সবুজে ঘেরা। মুখোমুখি বাঁশ ঝাড়ের ঝোপ। কয়েক কদম পর পর পাথরের খন্ড। সেই খন্ডের উপর পা রেখে এগিয়ে গেলে ঝর্ণার কাছে যাওয়া যায়। মনে হয় ইন্ডিয়ানা জোনসের গুপ্তধন খোঁজার মতো অ্যাডভেঞ্চার। স্বর্গের মতো জায়গায় চারপাশ দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এলো টেরই পাই নি। মনে হচ্ছিল পার্থিব কোণ যোগতে চোলে এসেছি যেখানে সময়য়ের কোন হিসেব নেই। অবশেষে গাইডের ডাকে হুঁশ হয়। মন চেয়েছিল আরও কিছুক্ষণ থেকে আসি। ফেরার সময় ঝর্ণার শব্দ আর চারপাশের সৌন্দর্য পুঁজি করেই রওনা দিলাম।
কিন্তু দুটি কথা মনে রাখবেন এই ট্যুরের সময়। এক, আপনি কিন্তু জোঁকের রাজ্যে যাচ্ছেন। তাই শরীরে লবণ মেখে নিবেন। বিশেষ করে হাতে আর পায়ে। আর দুই, পরিবেশ কিংবা প্রকৃতি নষ্ট করবেন না। প্লাস্টিক বা পানির বোতল যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
কিন্তু মাথায় যখন এসেছে তখন যাওয়া তো চাই। হোক না সেটা একা। কবিগুরু বলেছেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ নাই আসে তবে একলা চলো রে। আমাকে কে ঠেকায়? তাই ৯টার দিকে সকালের নাস্তা করেই বের হয়ে পড়লাম হাম হামের উদ্দেশে।
সোয়া ৯টার দিকে শ্রীমঙ্গল পানসি হোটলের বিপরীতে কিছু সিএনজি আছে যারা কমলগঞ্জ উপজেলা যায়, ভাড়া জনপ্রতি ৩৫ টাকা।
আমি সিএনজিতে চেপে বসলাম। ড্রাইভার নাকি পাঁচ জন না হলে গাড়ি ছাড়বে না। তাই কি আর করার। অগত্যা, বসে বসে গান শোনা শুরু করলাম। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর যাত্রীরা সবাই এলে যাত্রা শুরু হলো। শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছের পথটা এক কথায় অসাধারণ। যাবার সময় রাস্তার দুপাশের চা বাগান, কিছুদূও যেতেই গ্র্যান্ড সুলতান হোটেল, তারপরে বেশিরভাগ পথ লাউয়াছড়া জঙ্গলের ভেতরে চলে গেছে। দেখলেই প্রশান্তি অনুভব হয়।
সিএনজি কমলগঞ্জ উপজেলা বাজারে এসে নামলে মনে মনে চিন্তা করছিলাম শ্রীমঙ্গল থেকে হামহামের স্পটে যেতে মনে হয় সময় তেমন একটা লাগবে না। বড়জোর ১ ঘণ্টাই লাগবে! ভাবনা পর্যন্তই থেকে গেলো সব, আর যা হলো বাকিটা ইতিহাস।
কমলগঞ্জ নেমে কলাবন পাড়ার উদ্দেশে একটা সিএনজি রিজার্ভ করলাম। কারণ লোকাল কোন সিএনজি ওই জায়গায় যায় না। মজার ব্যাপার যেটা, ড্রাইভার মামা প্রথমে আমাকে ৭০০ টাকা বলে শুরু করেছিল, পরে আমি অনেক দর কষাকষি করে ৭০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় নামিয়ে রিজার্ভ করি।
কমলগঞ্জ থেকে কলাবন পাড়ার রাস্তা অনেক কষ্টকর ছিল। কিছুতেই যেন পথ শেষ হতে চাচ্ছিল না। প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে অবশেষে কলাবন পাড়ায় পৌঁছালাম।
সিএনজি চালক আমাকে বাবুল তুংরা নামের একজন গাইড ঠিক করে দিলেন। আমি অবশ্য গাইডের পিছনে খরচ করতে ইচ্ছুক ছিলাম না। তবে কিছু করার ছিলো না। কারন গাইড নিতেই হবে না হলে নাকি ডাকাতির সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনারাও অবশ্যই গাইড নিয়ে নিবেন। যাইহোক বাবুল মামা অনেক ভাল মানুষ ছিলেন। কলাবনপাড়ায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই একঝাঁক শিশু আমার দিকে লাঠি নিয়ে এগিয়ে এলো। দৃশ্যটা দেখে প্রথমে ভড়কে গিয়েছিলাম। তারা সামনে এসে বলে, ভাই আমি আগে এসেছি। আমার লাঠি কিনেন , একটা ৫ টাকা।
আমি আবার তাদের অবাক করে দিয়ে সবাইকেই ৫টাকা করে দিয়ে দিলাম। কারণ সবাই তো চেষ্টা করেছিল। যাইহোক, কলাবনপাড়াই এলে সেখানে কিছু হোটেল চোখে পড়বে। আমি আর আমার গাইডের খাবার খেয়ে নিলাম।
এখন হচ্ছে আসল খেলা। মূল ট্রেকিং শুরু কলাবনপাড়া থেকে। এটি কমলগঞ্জ উপজেলার শেষ গ্রাম। এর একদম পাশে ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত। ভারতের রাস্তা, মানুুষ সব পরিষ্কার দেখা যায়। বনের শুরুতে দুটা রাস্তাদেখা পেলে গাইড আমাকে ডান পাশেরটা দিয়ে নিয়ে গেলো। গাইড বলে দিলো প্রায় ২৩টির মত বড় বড় পাহাড়, দূর্গম উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ, খাল, গভীর বনের সরু আঁকাবাঁকা ঝিরিপথ পাড়ি দিতে হবে। ট্রেকিং করে পৌঁছাতে সময় লাগবে নাকি তিন থেকে চার ঘন্টা। আমার যে এক্সট্রিম কিছুই ভাল লাগে তা গাইডের জানা ছিলো না।
রাস্তা দিয়ে ঢুকেই জানা-অজানা অনেক ধরনের বড়বড় গাছ ও বাঁশের দেখা পাই। আর মাঝে মাঝে সাঁকো তো আছেই। আচমকা দেখা হয়ে গেলো চশমা পড়া হনুমান, বানর ও বন্য শুকুরের সঙ্গে। মনে হচ্ছিল আমি যেন আফ্রিকার কোন সাফারিতে ঢুকে পড়েছি।
অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পাহাড়ি পথ একসময় আমাকে স্বচ্ছ জলের স্রোতে নামিয়ে দিলো। এই শীতল জল যেন মনে এক অদ্ভুত রকম প্রশান্তির কথা বলতে চাচ্ছিল। আর গিরিপথটি দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। দুদিকে বিশাল বিশাল বাঁশজাড় অনেকটা অভ্যর্থনার ভঙিমায় আমাকে স্বাগত জানাচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝরনার পানি পড়ার শব্দ কানে আসে।
অপূর্ব এই বনে ঝরনার পানি পড়ার শব্দ এক অভূতপূর্ব বোধের সঞ্চার ঘটায়। মনে হয় কানে কানে কেউ ইনিগমার গান ফিস ফিস করে গেয়ে যাচ্ছে।
কিছুদূর হেঁটে আসতেই অবশেষে দেখা মেলে পাহাড়ি বন্য সুন্দরীর। যার জন্য এতোটা পথ আসা। কাক্সিক্ষত সেই হাম হাম ঝরনা। হাম হাম ঝরনার সৌন্দর্যের কথা যত বলবো তত শব্দ কম পড়ে যাবে। এ যেন এক ভয়াবহ রূপের মায়াবী চাঁদর জড়িয়ে বসে আছে। নৈসর্গিক এক অনুভূতি নিয়ে বসে পড়লাম পানিতে। আহা কি সুখ, এই তো জীবন। এতক্ষণের কষ্ট যেন সার্থক হল। কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা পাহাড়ের বুকে চীড়ে আছড়ে পড়ছে পাথরের গায়ে।
সেখান থেকে সৃষ্টি হচ্ছে কুয়াশার আভা। দেড়শ ফুট উপর থেকে গড়িয়ে পড়া পানির সেই স্রোতধারা পাথরের পর পাথর কেটে এগিয়ে গিয়ে তৈরি করছে স্রোতস্বিনী জলধারা। সে এক বুনো পরিবেশে। বর্ষায় এই ছোয়ায় বন্য সুন্দরী মেতে উঠেছে তার সেই আদি রুপে। সুন্দরীর এই প্রবল বর্ষণে পুরো জংগল যেন ফিরে পায় প্রাণের ছোঁয়া। ঝিরিগুলো হয়ে উঠে কর্মচঞ্চল। ঝিরির সেই মাতাল জলরাশি সাই-সাই বেগে ধেয়ে আসে পথিকের পথে। স্বচ্ছ শীতল জলের স্রোত শরীর জুড়িয়ে, মনজুড়ানি এক স্বর্গীয় অনুভূতি এনে দেয় মনে। চারদিকে শীতল শান্ত পরিবেশ। ঝর্ণার জলধারা এক অদ্ভূত ছন্দের তৈরি করে৷ এ যেন কোন পাহাড়ি সঙ্গীত। ঘন্টার পর ঘন্টা শুনতেও কোন ক্লান্তি নেই। ঝর্ণার দিক থেকে যেন চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না।
অনেকটা মেডুসার মতো তার দিকে তাকিয়ে স্থির হয়েছিলাম বেশ অনেকক্ষণ। প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু থেকে গড়িয়ে আসা শীতল পানিতে যখন দেহ ভাসালাম, সেটা এক অবর্ণনীয় অনুভূতি। শীতল জলে শরীর দিয়ে বসে চারপাশের দিকে তাকালে মনে হয়, এটাই বুঝি স্বর্গ।
চারপাশে সবুজে ঘেরা। মুখোমুখি বাঁশ ঝাড়ের ঝোপ। কয়েক কদম পর পর পাথরের খন্ড। সেই খন্ডের উপর পা রেখে এগিয়ে গেলে ঝর্ণার কাছে যাওয়া যায়। মনে হয় ইন্ডিয়ানা জোনসের গুপ্তধন খোঁজার মতো অ্যাডভেঞ্চার। স্বর্গের মতো জায়গায় চারপাশ দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এলো টেরই পাই নি। মনে হচ্ছিল পার্থিব কোণ যোগতে চোলে এসেছি যেখানে সময়য়ের কোন হিসেব নেই। অবশেষে গাইডের ডাকে হুঁশ হয়। মন চেয়েছিল আরও কিছুক্ষণ থেকে আসি। ফেরার সময় ঝর্ণার শব্দ আর চারপাশের সৌন্দর্য পুঁজি করেই রওনা দিলাম।
কিন্তু দুটি কথা মনে রাখবেন এই ট্যুরের সময়। এক, আপনি কিন্তু জোঁকের রাজ্যে যাচ্ছেন। তাই শরীরে লবণ মেখে নিবেন। বিশেষ করে হাতে আর পায়ে। আর দুই, পরিবেশ কিংবা প্রকৃতি নষ্ট করবেন না। প্লাস্টিক বা পানির বোতল যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
No comments