ষড়যন্ত্র: ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
রাজনীতিবিদদের
এ এক আশ্চর্য ক্ষমতা। তাদের কোনো ক্লান্তি নেই। অবসাদ নেই। তারা বলে যান
অবিরাম। একই কথা, একই তত্ত্ব। যে শিবিরেরই হোন না কেন অসুবিধা নেই। মুখ
একই, চেহারা শুধু আলাদা। যন্ত্রটি দেখতে কেমন? জন্ম তারিখই বা কবে? হলফ করে
বলা কঠিন। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি বয়সী- এটা নিশ্চিত। যদিও
দুনিয়ার আর কোথাও সম্ভবত এ যন্ত্র অতোটা তৎপর নয়।
কানাকানি। দিনের আলো। রাতের অন্ধকার। অমুক ভবন। তমুক ভবন। বৈঠক। ষড়যন্ত্র। কোথায় কী হচ্ছে সব জানি। পত্রিকার ফাইল উল্টালেই দেখা যায়। দিন-তারিখ আলাদা। রাজনীতিবিদের নামও হয়তো আলাদা। কিন্তু তারা বলে যান একই কথা। ষড়যন্ত্র চলছে। সবসময়ই এটা চলে আসছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলো। আন্দোলনকারী নেতাদের বেশিরভাগই সরকারি দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা ছিলেন। বলা হলো ষড়যন্ত্র চলছে।
কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে সরকার উৎখাতের চেষ্টা চলছে। আন্দোলনকারীরা একবারও সরকারের এমনকি সরকারের কোনো মন্ত্রীরও পদত্যাগ চাইলেন না। তবুও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার থামেনি। তারপর শুরু হলো শিশু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। দাবি নিরাপদ সড়ক। ন্যায় বিচার। ইনসাফ। হ্যাঁ, কিছু স্লোগান রাজনৈতিক ছিল। রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলেছে ওরা। আন্দোলনে যৎসামান্য অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু মোটাদাগে এটা শিশু-কিশোরদের আন্দোলনই। এবারও হাজির ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। যথারীতি কাঠগড়ায় বিএনপি-জামায়াত। সঙ্গে নাগরিক সমাজও বাদ গেল না। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট দাওয়াত খেতে গেলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাসায়। ফেরার পথে আক্রান্ত হলো তার গাড়িবহর। দাওয়াতকে ঘিরে উত্থাপিত হলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। সর্বশেষ আলোচনায় আনা হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। বলা হয়েছে, আরেকটি ওয়ান ইলেভেন আনার ষড়যন্ত্র চলছে। বিরোধী শিবিরও বসে নেই। নিত্য-নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করেন তারাও। প্রায়ই শোনা যায় খালেদা জিয়াকে রাজনীতি-নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এখন আবার বলা হচ্ছে, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এরআগে বিরোধীদের আন্দোলনের সময় পেট্রলবোমার পেছনেও ষড়যন্ত্রকেই দায়ী করেছেন তারা। দায় নিতে যেন তারা রাজি নন।
শুরুতেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে সবসময় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। কখনো কখনো এ ষড়যন্ত্র বাস্তবেও ছিল। যে কারণে বেশকিছু মর্মান্তিক আর দুঃখজনক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট। একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। কয়েক বছর পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার পেছনেও ছিল ষড়যন্ত্র।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনীতিতে যে ষড়যন্ত্র থাকে না এটা সত্য নয়। আবার সবকিছুর পেছনেই যে রাজনীতিবিদেরা ষড়যন্ত্র খোঁজেন তাও ঠিক নয়। তত্ত্ব হিসেবে ষড়যন্ত্র পরে এলেও ক্ষমতার ইতিহাসের শুরু থেকেই এটা চলে আসছে। রাজাদের ঘরে এবং ঘরের বাইরের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়েছে। এ লড়াইয়ে নিহত আর বন্দির সংখ্যাও বহু। উইকিপিডিয়া বলছে, অক্সফোর্ড অভিধান অনুযায়ী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হচ্ছে ‘কোনো ঘটনা ঘটার পেছনে বিদ্যমান জটিল কোনো ষড়যন্ত্র, যা নির্দিষ্ট কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের মিলিত চক্রান্তের ফসল, বিশেষত যেখানে ধরে নেয়া হয় যে, কতিপয় গুপ্ত তবে প্রভাবশালী গোষ্ঠী (যাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ও শোষণমূলক) একটি ব্যাখ্যাহীন ঘটনার পেছনে দায়ী। অক্সফোর্ড সর্বপ্রথম এই পদটির ব্যবহারকারী হিসেবে দি আমেরিকান হিস্ট্রিকাল রিভিউর ১৯০৯ সালের একটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দেয়।
এই লেখা যখন তৈরি হচ্ছে তখন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে চোখ বুলিয়ে দেখা গেল, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পুরোমাত্রায় জীবিত। একটি শিরোনাম এমন, কিশোর-কিশোরীদের ঘাড়ে চড়ে ষড়যন্ত্র। এতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ বাংলাদেশে সবসময়ই ষড়যন্ত্র জীবিত। সত্য এ দেশে বেশিরভাগ সময় নিহত হয়েছে। এমনকি সংসদও কখনও কখনও বিলুপ্ত থেকেছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র কখনও মারা যায় নি। অবিরাম সে তার কাজ করে চলছে।
বৃটিশ আমলেও এ ভূমিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উচ্চারিত হয়েছে। বহু মানুষকে বৃটিশরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান আমলেও পুরোমাত্রায় সক্রিয় ছিল ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তো ইতিহাসেই ঠাঁই নিয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশা করা হয়েছিল, হয়তো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মারা যাবে। কিন্তু না দিনকে দিন ষড়যন্ত্র নামক বৃক্ষের ডাল-পালা আরো বড় হয়েছে। এইসব ষড়যন্ত্রে উচ্চারিত হয়েছে নানা ভিনদেশি নামও। সব তত্ত্বই মিথ্যা, অসাড়। বাংলাদেশে যেন একমাত্র ষড়যন্ত্র তত্ত্বই সত্য। রাজনীতিবিদদের কথা শুনলে অন্তত তাই মনে হয়।
কানাকানি। দিনের আলো। রাতের অন্ধকার। অমুক ভবন। তমুক ভবন। বৈঠক। ষড়যন্ত্র। কোথায় কী হচ্ছে সব জানি। পত্রিকার ফাইল উল্টালেই দেখা যায়। দিন-তারিখ আলাদা। রাজনীতিবিদের নামও হয়তো আলাদা। কিন্তু তারা বলে যান একই কথা। ষড়যন্ত্র চলছে। সবসময়ই এটা চলে আসছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলো। আন্দোলনকারী নেতাদের বেশিরভাগই সরকারি দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা ছিলেন। বলা হলো ষড়যন্ত্র চলছে।
কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে সরকার উৎখাতের চেষ্টা চলছে। আন্দোলনকারীরা একবারও সরকারের এমনকি সরকারের কোনো মন্ত্রীরও পদত্যাগ চাইলেন না। তবুও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার থামেনি। তারপর শুরু হলো শিশু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। দাবি নিরাপদ সড়ক। ন্যায় বিচার। ইনসাফ। হ্যাঁ, কিছু স্লোগান রাজনৈতিক ছিল। রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলেছে ওরা। আন্দোলনে যৎসামান্য অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু মোটাদাগে এটা শিশু-কিশোরদের আন্দোলনই। এবারও হাজির ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। যথারীতি কাঠগড়ায় বিএনপি-জামায়াত। সঙ্গে নাগরিক সমাজও বাদ গেল না। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট দাওয়াত খেতে গেলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাসায়। ফেরার পথে আক্রান্ত হলো তার গাড়িবহর। দাওয়াতকে ঘিরে উত্থাপিত হলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। সর্বশেষ আলোচনায় আনা হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। বলা হয়েছে, আরেকটি ওয়ান ইলেভেন আনার ষড়যন্ত্র চলছে। বিরোধী শিবিরও বসে নেই। নিত্য-নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করেন তারাও। প্রায়ই শোনা যায় খালেদা জিয়াকে রাজনীতি-নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এখন আবার বলা হচ্ছে, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এরআগে বিরোধীদের আন্দোলনের সময় পেট্রলবোমার পেছনেও ষড়যন্ত্রকেই দায়ী করেছেন তারা। দায় নিতে যেন তারা রাজি নন।
শুরুতেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে সবসময় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। কখনো কখনো এ ষড়যন্ত্র বাস্তবেও ছিল। যে কারণে বেশকিছু মর্মান্তিক আর দুঃখজনক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট। একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। কয়েক বছর পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার পেছনেও ছিল ষড়যন্ত্র।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনীতিতে যে ষড়যন্ত্র থাকে না এটা সত্য নয়। আবার সবকিছুর পেছনেই যে রাজনীতিবিদেরা ষড়যন্ত্র খোঁজেন তাও ঠিক নয়। তত্ত্ব হিসেবে ষড়যন্ত্র পরে এলেও ক্ষমতার ইতিহাসের শুরু থেকেই এটা চলে আসছে। রাজাদের ঘরে এবং ঘরের বাইরের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়েছে। এ লড়াইয়ে নিহত আর বন্দির সংখ্যাও বহু। উইকিপিডিয়া বলছে, অক্সফোর্ড অভিধান অনুযায়ী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হচ্ছে ‘কোনো ঘটনা ঘটার পেছনে বিদ্যমান জটিল কোনো ষড়যন্ত্র, যা নির্দিষ্ট কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের মিলিত চক্রান্তের ফসল, বিশেষত যেখানে ধরে নেয়া হয় যে, কতিপয় গুপ্ত তবে প্রভাবশালী গোষ্ঠী (যাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ও শোষণমূলক) একটি ব্যাখ্যাহীন ঘটনার পেছনে দায়ী। অক্সফোর্ড সর্বপ্রথম এই পদটির ব্যবহারকারী হিসেবে দি আমেরিকান হিস্ট্রিকাল রিভিউর ১৯০৯ সালের একটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দেয়।
এই লেখা যখন তৈরি হচ্ছে তখন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে চোখ বুলিয়ে দেখা গেল, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পুরোমাত্রায় জীবিত। একটি শিরোনাম এমন, কিশোর-কিশোরীদের ঘাড়ে চড়ে ষড়যন্ত্র। এতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ বাংলাদেশে সবসময়ই ষড়যন্ত্র জীবিত। সত্য এ দেশে বেশিরভাগ সময় নিহত হয়েছে। এমনকি সংসদও কখনও কখনও বিলুপ্ত থেকেছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র কখনও মারা যায় নি। অবিরাম সে তার কাজ করে চলছে।
বৃটিশ আমলেও এ ভূমিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উচ্চারিত হয়েছে। বহু মানুষকে বৃটিশরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান আমলেও পুরোমাত্রায় সক্রিয় ছিল ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তো ইতিহাসেই ঠাঁই নিয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশা করা হয়েছিল, হয়তো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মারা যাবে। কিন্তু না দিনকে দিন ষড়যন্ত্র নামক বৃক্ষের ডাল-পালা আরো বড় হয়েছে। এইসব ষড়যন্ত্রে উচ্চারিত হয়েছে নানা ভিনদেশি নামও। সব তত্ত্বই মিথ্যা, অসাড়। বাংলাদেশে যেন একমাত্র ষড়যন্ত্র তত্ত্বই সত্য। রাজনীতিবিদদের কথা শুনলে অন্তত তাই মনে হয়।
No comments