পার্টিগার্ল থেকে আত্মঘাতী
হাসনা আইতবুলাচেন (২৬) কখনও ধর্মের ধারেকাছেও ছিল না। কোরআন পড়া তো দূরের কথা আরবি হরফ সম্বন্ধে তার ধারণাই ছিল না। সারাক্ষণ ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপ, অ্যালকোহল নিয়ে মজে থাকত। পরনে থাকত জিন্স প্যান্ট আর গায়ে শর্ট টি-শার্ট। মাথায় পরত বড় ‘কাউবয় হ্যাড’। যার কারণে তার নাম হয়ে গিয়েছিল ‘কাউগার্ল’। সেই ‘কাউগার্ল’ই হয়ে গেল ইউরোপের প্রথম নারী আত্মঘাতী জিহাদি। হাসনার কয়েকজন বন্ধু ও তার চাচাতো ভাই ইউসুফের বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি ডেইলি মেইলের শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে এসব খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। প্যারিস হামলার মূলহোতা আহমেদ আবাউদকে ধরতে ফ্রান্সের সেইন্ট দেনিস এলাকায় হামলায় আত্মঘাতী বোমায় নিজেকে উড়িয়ে দেয় হাসনা। সেও প্যারিস হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জানায় ফরাসি পুলিশ। হাসনা আইতবুলাচেন প্যারিস হামলার মূলহোতা হিসেবে পরিচিত আবদেল হামিদ আবাউদের চাচাতো বোন। তাকে তার প্রেমিকা বলেও ধারণা করা হচ্ছে। হাসনা আইত মরক্কো বংশোদ্ভূত বেলজিয়ান। ১৯৭৩ সালে তার বাবা-মা ফ্রান্সে আসেন। ১৯৮৯ সালে প্যারিসেই তার জন্ম। এরপর বাবা-মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। হাসনা মায়ের সঙ্গে প্যারিসেই থাকত।
তবে বাবার সঙ্গেও সম্পর্ক নিবিড় ছিল তার। বুধবার পুলিশি অভিযানের সময় সে তার ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে মাথা বের করে দিয়েছিল। ছুড়তে যাচ্ছিল বোমা। গায়ে বিস্ফোরকভরা সুইসাইড ভেস্ট পরে বোমা ডিটোনেট করতে গিয়েছিল। বিস্ফোরিত হওয়ার আগে তার চিৎকার শোনা গিয়েছিল, ‘প্লিজ হেল্প মি!’ এরপরই বিস্ফোরিত হয়ে তার মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা জানালা দিয়ে লম্বা সোনালি চুলের এক নারীকে দেখেছেন। হাসনার বন্ধুরা জানিয়েছেন, সে খুবই উদার প্রকৃতির মেয়ে ছিল। সব সময় কাউবয় হ্যাড পরত। কিন্তু অল্পদিন আগেই সে আচমকা দৃষ্টির আগোচরে চলে যায় এবং সর্বশেষ প্যারিসে ফরাসি পুলিশের অভিযানের সময় আÍঘাতী বোমায় নিজেকে উড়িয়ে দেয়। হাসনার ভাই ইউসুফ আইতবুলাচেন বলেন, ‘ধর্মের প্রতি তার কোনো আগ্রহই ছিল না। মাত্র এক মাস আগে থেকে সে তার মুখ ঢেকে রাখা শুরু করে। তিনি বলেন, ‘সব কিছু সমালোচনা করেই সে তার সময় কাটাত। বসবাসের জন্য তার একটা নিজস্ব ভুবন ছিল। নিজের ধর্মের প্রতি তার কোনো আগ্রহই ছিল না।
আমি তাকে কখনোই কোরআন খুলতে দেখিনি। সে সবসময়ই তার ফোনে ফেসবুক দেখতে অথবা হোয়াটসঅ্যাপে থাকত।’ ইউসুফ বলেন, আমি তাকে ওসব করতে নিষেধ করতাম। কিন্তু আমাদের কোনো আদেশ-নিষেধই শুনতো না। হাসনা পাঁচ বছর বয়স থেকেই গাড়ি ব্যবহার করত এবং প্রচুর ছেলে বন্ধুর সঙ্গে চলাফেরা করত। হাসনার প্রতিবেশী হাসানি তাকে ‘গেছো মেয়ে’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘পার্টিগার্লের বেশে থাকা হাসনা সব সময় জিন্স, রেইনার, শর্ট টি-শার্ট ও কালো হ্যাট পরত। কিন্তু এক মাস আগে থেকে সে নেকাব পরা শুরু করে।’ হাসানি আরও জানান, সে কাউকে ভয় করত না। নিজে ছোটখাটো একজন সৈন্যের মতো ছিল। সবসময় শপিং করতে পছন্দ করত। অন্য যারা হাসনাকে চিনতেন তারা জানান, সে খুবই বহির্মুখী ছিল। প্রচুর অ্যালকোহল পান করত এবং সবসময় কাউ হ্যাড পরত। কাউ হ্যাড পরার কারণে তার ডাক নাম হয়ে যায় ‘কাউগার্ল’। হাসনার প্রতিবেশী এক কৃষক বলেন, ‘আমরা তাকে খুব ভালো করেই চিনতাম। সে আমাদের কাছে কাউগার্ল নামেই পরিচিত ছিল। কারণ সবসময় এক বড় কাউ হ্যাড পরে থাকত সে। কিন্তু পরে জানা গেল অল্পদিন আগে সে গভীর মৌলবাদে ঢুকে পড়ে।’ দ্য টেলিগ্রাফ
No comments