ফাঁসির আসামির প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রক্রিয়া কি
মুক্তিযুদ্ধের
সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সালাউদ্দিন কাদের
চৌধুরী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ আজ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা
চেয়েছেন। তবে রাষ্ট্রপতি তা নামঞ্জুর করেছেন। এর আগে ১৯৭১এর মানবতাবিরোধী
অপরাধের জন্য দুজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। এর হলেন জামায়াতে ইসলামীর
দুই নেতা আবদুল কাদের মোল্লা এবং অপরজন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। এরা কেউই
প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন নি। তাই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায়
রাষ্ট্রপতির কাছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদই প্রথম
প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেন - যদিও মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আগে শেষ সাক্ষাতের
পরও তাদের পরিবারের লোকেরা দাবি করেছেন, এ খবর সঠিক নয়। কিন্তু ফাঁসির
আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন ঠিক কিভাবে করতে হয়? এ নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী
শফিক আহমেদের সাথে কথা বলেন বিবিসি বাংলার মিজানুর রহমান খান। প্রশ্ন:
প্রাণভিক্ষা চাওয়ার আবেদন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কিভাবে করেন? শফিক
আহমেদ: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির কাছে কারা কর্তৃপক্ষ জানতে চাইবে যে তিনি
প্রাণভিক্ষা চেয়ে কোনো আবেদন করতে চান কীনা। তারপর সেই আবেদন দেওয়া হবে
কারাগারের প্রধান কর্মকর্তা অর্থাৎ জেলারের কাছে। জেলার সেই দরখাস্তটি
পাঠিয়ে দেবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। এবিষয়ে মতামত চেয়ে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি পাঠাবে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে। যে অপরাধের
জন্যে আসামির ফাঁসি হয়েছে সেসব অপরাধের ব্যাপারে আসামি কোনো ধরনের
অনুকম্পা পেতে পারেন কীনা সেবিষয়ে মতামত দিয়ে আবেদনটি পাঠাবে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের কাছে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার নোটসহ ফাইলটি পাঠাবে
প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সে ফাইল যাবে রাষ্ট্রপতির
কাছে। প্রশ্ন: কিন্তু প্রাণভিক্ষার আবেদনটা করা হয় রাষ্ট্রপতির বরাবরে..
শফিক আহমেদ: রাষ্ট্রপতির বরাবরে কিন্তু সাবমিট করতে হবে জেলারের কাছে। কারণ
ওই আসামি জেলখানায়, জেলারের হেফাজতে রয়েছেন। প্রশ্ন: আসামির কাছ থেকে এই
মৃত্যুদণ্ড কে সংগ্রহ করেন? এজন্যে কি তার কাছে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাতে
হয়? শফিক আহমেদ: ম্যাজিস্ট্রেট লাগবে না। জেলারই তার কাছে এটা চাইবেন।
এজন্যে তিনি আসামীকে একটা সময় বেঁধে দেবেন। প্রশ্ন: আবেদন করার জন্যে কি
নির্দিষ্ট কোনো ফর্ম আছে? শফিক আহমেদ: হ্যাঁ, ফর্মও আছে। আবার কেউ ইচ্ছে
করলে তিনি নিজেও আলাদা কাগজে আবেদন করতে পারেন। যদি শিক্ষিত হন তাহলে কাগজ
কলম চাইতে পারেন। সাধারণত যারা শিক্ষিত আসামি তারা নিজেরাই কাগজ কলম চেয়ে
নিজেরাই আবেদন করে থাকেন। প্রশ্ন: এই আবেদন করার সময় কি আসামিকে অপরাধ
স্বীকার করতেই হয়? শফিক আহমেদ: হ্যাঁ, তাকে অপরাধ স্বীকার করতে হবে। তাকে
সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে যে অভিযোগে আমি অভিযুক্ত হয়েছি সেগুলো প্রমাণিত
হয়েছে এবং আমি এসব অপরাধ করেছি। সেজন্যে আমাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছে
এবং এখন আমি প্রাণভিক্ষা চাইছি। প্রশ্ন: একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির যদি কিছু
বলার থাকে, বিচার প্রক্রিয়াসহ যেকোনো বিষয়ে, সেসব বলার কোনো সুযোগ আছে?
শফিক আহমেদ: না, কোনো সুযোগ নেই। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রেসিডেন্টের
কাছে কোনো প্রশ্ন তোলা বা কোনো রকমের মন্তব্য করার অধিকারও তার নেই। করলে
এই আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রশ্ন: আসামি আবেদন করছেন রাষ্ট্রপতির কাছে
কিন্তু সেটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হচ্ছে কেনো? শফিক আহমেদ: কারণ
সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছা অনুসারে দুটো
কাজ করতে পারেন। ১. দেশে নির্বাচনের পর বিজয়ী দলের নেতাকে তিনি সরকার গঠন
করতে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। ২. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ। এছাড়া সমস্ত কাজ
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে করতে হবে। প্রশ্ন: তাহলে কখন কার ফাঁসি কার্যকর
করা হবে সেই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির নয়.. শফিক আহমেদ: না, সরকার প্রধানের
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে পরামর্শ দেবেন রাষ্ট্রপতিকে
ঠিক সেভাবেই কাজ করতে হবে। তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
No comments