এটা কি সাম্প্রদায়িকতা? by বদরুদ্দীন উমর
আওয়ামী ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী ও
সংবাদপত্রের কথাবার্তা, বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রচারণার দিকে তাকালে মনে হবে
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও
নির্যাতন এখন ব্যাপক আকারে হচ্ছে এবং তারা শুধু বাড়িঘর ছেড়েই নয়, দেশ ছেড়েও
পালাচ্ছেন। এ পরিস্থিতির জন্য তারা ধর্মীয় রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী
এবং বিএনপিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগকে সংখ্যালঘুদের রক্ষক হিসেবে প্রচার
করেন। ভারতের সাম্প্রদায়িক মহলও এ প্রচারণার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের
সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে ভারতের সাম্প্রদায়িকতাকে লঘুভাবে দেখানোর চেষ্টা
করে এবং দুই দেশেই সাম্প্রদায়িকতা আছে এ কথা বলে সেমিনার, আলোচনা সভা
ইত্যাদির ব্যবস্থা করে।
>>ছবিঃ সাথিয়া ঘটনার মুল নায়ক মিঠু (লাল গোল চিহ্ন) স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকুর সাথে মিছিলে
এ
কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, সম্প্রতি হিন্দুসহ ধর্র্মীয়
সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সব থেকে মারাত্মক
দৃষ্টান্ত হল, কক্সবাজারে ২০১২ সালে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর ওপর আক্রমণ। কিন্তু
দেখা যাবে, সেই আক্রমণ বাস্তবত কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ছিল না।
সাম্প্রদায়িকতার কারণ ও রাজনৈতিক চরিত্র বিষয়ে যারা অজ্ঞ, তারাই কোনো
সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর যে কোনো ধরনের আক্রমণকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে
থাকে। মতলববাজরা যে এ কাজ করে থাকে এটা সবারই জানা। সাম্প্রদায়িকতা আকাশ
থেকে পড়ে না, তার সুনির্দিষ্ট সামাজিক ভিত্তি থাকে, যে ভিত্তি ব্রিটিশ
ভারতে ছিল এবং স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের প্রথমদিকে থাকলেও তা ধীরে ধীরে
অপসারিত হতে থাকে। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকশিত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র
সৃষ্টির মাধ্যমে তার সামাজিক ভিত্তি বিনষ্ট হয়।
কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার সামাজিক ভিত্তি বিনষ্ট হলেও যে শাসকশ্রেণী ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন হয়েছে, তাদের অধীনে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ হয়নি। কাজেই ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের নতুন রূপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল মৌলবাদ, যার ধারক-বাহক ছিল জামায়াতে ইসলামী। এই প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় রাজনৈতিক দলটিকে মুসলিম লীগের মতো হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো সময়ে বিষোদগার করতে অথবা তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রচার করতে দেখা যায়নি। তাদের প্রতিক্রিয়াশীল আক্রমণ প্রথম থেকেই পরিলক্ষিত ছিল এবং এখনও আছে সব ধরনের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে। দেশে ইসলামী শাসন ও ইসলামী আইন কায়েম করার আওয়াজ তুলে তারা আগেও সক্রিয় ছিল, এখনও সক্রিয় আছে। কাজেই ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান কেউই তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নয়। যারা তাদের এই আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু তাদের বিপুল অধিকাংশই মুসলমান পরিবারের সদস্য, যারা মুসলমান পরিবারের সদস্য হলেও দেশে ইসলামী শাসন এবং ইসলামী আইন প্রবর্তন ও কার্যকর করার বিরোধী।
কক্সবাজারে বৌদ্ধদের ওপর আক্রমণ যারা করেছিল, তারা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের লোক ছিল না। তার মধ্যে অধিকাংশই ছিল আওয়ামী লীগ-বিএনপির লোক। এ ছাড়া ছিল জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলের লোক এবং অরাজনৈতিক লোক। ফেসবুকের মাধ্যমে এক মিথ্যা ব্যাপারকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধদের ওপর হামলা সংঘটিত করার মুখ্য হোতারা কোনো ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক কারণে এটা করেনি। তারা সেটা করেছিল বৌদ্ধদের মন্দির লুটপাট এবং তাদের ঘরছাড়া করে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে। বেসরকারি যেসব তদন্ত তখন হয়েছিল, তার মাধ্যমে এ সত্যই উদ্ঘাটিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই আক্রমণ সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগের দ্বারা পরিচালিত না হলেও যারা এ কাজ করেছিল তার মধ্যে আওয়ামী লীগের লোকদেরই প্রাধান্য ছিল। স্থানীয় বৌদ্ধ এবং অন্যরা এটা স্বচক্ষে দেখেছিলেন। এ কারণে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বছরের মধ্যে ভাঙা বৌদ্ধ মন্দিরগুলো পুনর্নির্মাণ করে সেগুলো উদ্বোধন করার সময় সেই আক্রমণকারীদেরই তার আশপাশে দেখে এবং তাদের কোনো বিচার ও শাস্তি হতে না দেখে বৌদ্ধরা সরকারের সেই বদান্যতায় খুশি হতে পারেননি। উদ্বোধনের সময় যা কিছু তারা করেছিলেন সেটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
বাংলাদেশে এখন হিন্দুদের ওপর কোনো কোনো জায়গায় যে আক্রমণ হচ্ছে, তার কোনো সামাজিক ভিত্তি না থাকলেও যে পরিস্থিতিতে এসব ঘটনা ঘটছে তা লক্ষ্য করার মতো। এ পরিস্থিতির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, বিপজ্জনক ও দৃশ্যমান দিক হল দেশজুড়ে আবার লুটপাট। ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশে শুরু হয় লুণ্ঠনজীবীদের শাসন। আওয়ামী লীগ ও পরে বাকশাল নামক এই শ্রেণীর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের প্রথমদিকে লুটপাটকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে গঠন করেছিল লুণ্ঠনজীবী শ্রেণীর শাসন ব্যবস্থা। এ শাসন ব্যবস্থায় লুটপাট পরিণত হয়েছে শাসকশ্রেণী ও তাদের প্রত্যেকটি সরকারের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। এ কারণে এদের কোনো অপরাধের শাস্তির কোনো নিশ্চিত ব্যবস্থা নেই। দু-চার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে অপরাধীর কিছু শাস্তি হলেও বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে ক্রিমিনালদের অভয়ারণ্যে। সেটা যদি না হতো তাহলে যে সামান্যসংখ্যক ক্রিমিনাল উচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়, তাদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মাধ্যমে রেহাই দেয়া হতো না। জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময় এ ধরনের সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের সব থেকে বেশিসংখ্যককে মুক্তিদান করা হয়েছিল। অপরাধের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার এর থেকে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে?
যাই হোক, সাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে ফিরে এসে এটা আবার বলা দরকার যে, হিন্দু অথবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের লোকের ওপর আক্রমণ মাত্রকেই সাম্প্রদায়িকতা আখ্যা দেয়ার থেকে রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তির ব্যাপার খুব কমই আছে। আসলে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করার যে চেষ্টা বিভিন্ন জায়গায় এখন দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্ক নেই। এই আক্রমণকে দেশে বিরাজমান লুটপাট, ভূমিদস্যুতা এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতেই বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এ ধরনের আক্রমণ শুধু হিন্দুদের ওপরই হচ্ছে না, এটা আরও বড় আকারে হচ্ছে মুসলমানদের ওপর, যার রিপোর্ট প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় দেখা যায়। হিন্দুরা বাংলাদেশের সমগ্র জনসংখ্যার একটি অংশ। কাজেই দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে জনগণের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে, তার অংশ হিসেবে হিন্দুদের ওপরও আক্রমণ হচ্ছে।
লুটপাটকারী-ভূমিদস্যুদের এসব আক্রমণ শুধু হিন্দুদের ওপরই হচ্ছে না। আরও অনেক বেশি করে হচ্ছে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিসত্তার লোকজনের ওপর। উত্তর বাংলার সাঁওতালদের ওপর এই আক্রমণ হচ্ছে। এছাড়া রাখাইন, গারো থেকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তার লোকদের ওপরও এটা হচ্ছে। ভারত হিন্দুদের প্রতি বিশেষভাবে দরদি- এ কারণে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে যত প্রতিবাদ ও কথাবার্তা হয়, অন্যদের ক্ষেত্রে তা হয় না। কিন্তু বাস্তবত অন্যদের ওপর এই আক্রমণ হয় আরও নির্মমভাবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, সাঁওতাল, চাকমা, মার্মা, ত্রিপুরা, রাখাইন ইত্যাদি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর ওপর যে আক্রমণ এখন হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অবশ্যই দরকার। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে মনে রাখা দরকার, যে ক্রিমিনালরা এ কাজ করছে তারা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বা রাজনৈতিকভাবে সাম্প্রদায়িকতার দ্বারা প্রভাবিত বা উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কাজ করছে না, এরা এসব করছে ভূমিদস্যু ও লুটপাটকারী ক্রিমিনাল হিসেবে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই হিন্দুদের ওপর হামলাকে দেখতে হবে। এভাবে না দেখে একে সাম্প্রদায়িকতা আখ্যা দিয়ে অর্থাৎ এর সঙ্গে সাধারণ মানুষকে জড়িত করে যদি পরিস্থিতি বিচার করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন সাধারণ অসাম্প্রদায়িক জনগণকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হবে, তেমনি এভাবে বিষয়টি দেখলে এ হামলার বিরুদ্ধে কোনো প্রকৃত প্রতিরোধ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে না। কারণ এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে অসাম্প্রদায়িক জনগণের বিরুদ্ধে নয়, এটা করতে হবে ভূমিদস্যু ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে। এই দস্যুরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেই দুর্বৃত্তগিরি করে থাকে। এর দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। বিগত নির্বাচনের আগে পাবনা জেলার সাঁথিয়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ির ওপর যে আক্রমণ হয়, সেটা যে আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকুর লোকজনদের দ্বারা হয়েছিল সেটা প্রমাণিত হয়েছে। টুকুর মিছিলে চিহ্নিত এই দস্যুদের দেখা গেছে এবং সংবাদপত্রে তার ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের দস্যুরা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীতেও আছে। সুযোগ বুঝে তারাও এ কাজ করে থাকে, যেমন ২০০১-এ বিএনপি নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের পর দেখা গিয়েছিল। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ আমলে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ্য করার বিষয় যে, এসব আক্রমণের ঘটনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ ও তাদের বুদ্ধিজীবীরা অন্যদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করলেও এগুলোর কোনোটির পুলিশি তদন্ত ও বিচার তারা করেনি। এ নিয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সোসাইটি পর্যন্ত তাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে ব্যক্ত করেছে।
শ্রেণীবিভক্ত সমাজে সাধারণভাবে গরিব ও শ্রমজীবী লোকদের ওপর শোষণ-নির্যাতন হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও তা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। কিন্তু এই নির্যাতন সব ধরনের সংখ্যালঘুদের ওপর তুলনায় বেশি হয়। তাছাড়া হিন্দুদের বাড়িঘরের ওপর হামলা এই মনে করে করা হয় যে, তারা উৎখাত হয়ে ভারতে চলে যাবে এবং তাদের জায়গা দখল করা সম্ভব হবে। এ উদ্দেশ্যেই ভূমিদস্যু ও লুটপাটকারীরা হিন্দুদের ওপর হামলা করে। এর সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্ক নেই। এ কাজের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ কাজকে যখন সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেয়া হয়, তখন এর সঙ্গে সাধারণ মুসলমানদেরও যুক্ত করা হয়। তাদের সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হয়। এ কাজের মাধ্যমে হিন্দুদের ওপর হামলাকারী প্রকৃত ক্রিমিনালদের আড়াল করে সাধারণ লোকদের ঘাড়ে এর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়। এভাবে ভূমিদস্যু ও লুটপাটকারীদের কাজকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন ও তাদের ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের প্রচারণা যে দুরভিসন্ধিমূলক এতে সন্দেহ নেই। নারায়ণগঞ্জে বিগত ২৭ এপ্রিল সাতজনকে খুন করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাংগঠনিক লোকজন ও সরকার নিয়ন্ত্রিত র্যাবের সম্পৃক্ততা কোনো গোপন ব্যাপার নয়। এই সাতজনের মধ্যে আছেন হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত নারায়ণগঞ্জের সুপরিচিত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার। এটা কি বলা যাবে যে, অন্য ছয়জনকে হত্যার ব্যাপারটি সাম্প্রদায়িক না হলেও চন্দন সরকারের হত্যা একটি সাম্প্রদায়িক ব্যাপার? এটা কি বলা যাবে যে, এটা কোনো হিন্দুর ওপর আক্রমণের ঘটনা? না, তা বলা যাবে না। প্রকৃতপক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে দস্যুবৃত্তি ও লুটপাটের।
বাংলাদেশে এখন হিন্দুসহ অন্য প্রকার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ চলছে এবং আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাকে দেখতে হবে এই পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতেই। মনে রাখতে হবে, শুধু হিন্দু বা অন্য সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণই বৃদ্ধি পায়নি, সারা দেশে এখন এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে সাধারণভাবে অপরাধের বৈচিত্র্য ও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কারণ সরকারের ওপরই আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব আছে এবং এর জন্য তাদের হাতে আছে অর্থবল, প্রশাসন এবং সব ধরনের সশস্ত্র বাহিনী। কিন্তু সরকার এমনই নৈতিক চরিত্রহীন এবং তাদের বুদ্ধিজীবীরা এত বেশি মতলববাজ জনশত্র“ যে, এভাবে বিষয়টিকে না দেখে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গঠন না করে তারা বাইরের শক্তি, প্রধানত পাকিস্তানের ওপর এবং দেশের ভেতরে বিরোধী দলের ও তাদের জোটের ওপর এর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে অসাম্প্রদায়িকতার মালা নিজেদের গলায় ঝুলিয়ে উচ্চকণ্ঠে প্রচার চালাচ্ছে!! লুণ্ঠনকারী ও ভূমিদস্যুদের এই পৃষ্ঠপোষকতা সরকার যত করছে, সংখ্যালঘু থেকে নিয়ে সংখ্যালঘুর জনগণের ওপর নির্যাতন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এখন বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কোনো কোনো জায়গায় যে আক্রমণ হচ্ছে তাকে দেখতে হবে। তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুধু সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণের কথা বলে শক্তিশালী করা যাবে না। এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বর্তমান লুণ্ঠনজীবী শাসকশ্রেণী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক সরকার কর্তৃক ভূমিদস্যু থেকে নিয়ে সব ধরনের লুটপাটকারী এবং ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে।
২৪.০৫.২০১৪
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার সামাজিক ভিত্তি বিনষ্ট হলেও যে শাসকশ্রেণী ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন হয়েছে, তাদের অধীনে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ হয়নি। কাজেই ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের নতুন রূপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল মৌলবাদ, যার ধারক-বাহক ছিল জামায়াতে ইসলামী। এই প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় রাজনৈতিক দলটিকে মুসলিম লীগের মতো হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো সময়ে বিষোদগার করতে অথবা তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রচার করতে দেখা যায়নি। তাদের প্রতিক্রিয়াশীল আক্রমণ প্রথম থেকেই পরিলক্ষিত ছিল এবং এখনও আছে সব ধরনের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে। দেশে ইসলামী শাসন ও ইসলামী আইন কায়েম করার আওয়াজ তুলে তারা আগেও সক্রিয় ছিল, এখনও সক্রিয় আছে। কাজেই ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান কেউই তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নয়। যারা তাদের এই আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু তাদের বিপুল অধিকাংশই মুসলমান পরিবারের সদস্য, যারা মুসলমান পরিবারের সদস্য হলেও দেশে ইসলামী শাসন এবং ইসলামী আইন প্রবর্তন ও কার্যকর করার বিরোধী।
কক্সবাজারে বৌদ্ধদের ওপর আক্রমণ যারা করেছিল, তারা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের লোক ছিল না। তার মধ্যে অধিকাংশই ছিল আওয়ামী লীগ-বিএনপির লোক। এ ছাড়া ছিল জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলের লোক এবং অরাজনৈতিক লোক। ফেসবুকের মাধ্যমে এক মিথ্যা ব্যাপারকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধদের ওপর হামলা সংঘটিত করার মুখ্য হোতারা কোনো ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক কারণে এটা করেনি। তারা সেটা করেছিল বৌদ্ধদের মন্দির লুটপাট এবং তাদের ঘরছাড়া করে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে। বেসরকারি যেসব তদন্ত তখন হয়েছিল, তার মাধ্যমে এ সত্যই উদ্ঘাটিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই আক্রমণ সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগের দ্বারা পরিচালিত না হলেও যারা এ কাজ করেছিল তার মধ্যে আওয়ামী লীগের লোকদেরই প্রাধান্য ছিল। স্থানীয় বৌদ্ধ এবং অন্যরা এটা স্বচক্ষে দেখেছিলেন। এ কারণে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বছরের মধ্যে ভাঙা বৌদ্ধ মন্দিরগুলো পুনর্নির্মাণ করে সেগুলো উদ্বোধন করার সময় সেই আক্রমণকারীদেরই তার আশপাশে দেখে এবং তাদের কোনো বিচার ও শাস্তি হতে না দেখে বৌদ্ধরা সরকারের সেই বদান্যতায় খুশি হতে পারেননি। উদ্বোধনের সময় যা কিছু তারা করেছিলেন সেটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
বাংলাদেশে এখন হিন্দুদের ওপর কোনো কোনো জায়গায় যে আক্রমণ হচ্ছে, তার কোনো সামাজিক ভিত্তি না থাকলেও যে পরিস্থিতিতে এসব ঘটনা ঘটছে তা লক্ষ্য করার মতো। এ পরিস্থিতির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, বিপজ্জনক ও দৃশ্যমান দিক হল দেশজুড়ে আবার লুটপাট। ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশে শুরু হয় লুণ্ঠনজীবীদের শাসন। আওয়ামী লীগ ও পরে বাকশাল নামক এই শ্রেণীর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের প্রথমদিকে লুটপাটকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে গঠন করেছিল লুণ্ঠনজীবী শ্রেণীর শাসন ব্যবস্থা। এ শাসন ব্যবস্থায় লুটপাট পরিণত হয়েছে শাসকশ্রেণী ও তাদের প্রত্যেকটি সরকারের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। এ কারণে এদের কোনো অপরাধের শাস্তির কোনো নিশ্চিত ব্যবস্থা নেই। দু-চার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে অপরাধীর কিছু শাস্তি হলেও বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে ক্রিমিনালদের অভয়ারণ্যে। সেটা যদি না হতো তাহলে যে সামান্যসংখ্যক ক্রিমিনাল উচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়, তাদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মাধ্যমে রেহাই দেয়া হতো না। জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময় এ ধরনের সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের সব থেকে বেশিসংখ্যককে মুক্তিদান করা হয়েছিল। অপরাধের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার এর থেকে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে?
যাই হোক, সাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে ফিরে এসে এটা আবার বলা দরকার যে, হিন্দু অথবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের লোকের ওপর আক্রমণ মাত্রকেই সাম্প্রদায়িকতা আখ্যা দেয়ার থেকে রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তির ব্যাপার খুব কমই আছে। আসলে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করার যে চেষ্টা বিভিন্ন জায়গায় এখন দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্ক নেই। এই আক্রমণকে দেশে বিরাজমান লুটপাট, ভূমিদস্যুতা এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতেই বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এ ধরনের আক্রমণ শুধু হিন্দুদের ওপরই হচ্ছে না, এটা আরও বড় আকারে হচ্ছে মুসলমানদের ওপর, যার রিপোর্ট প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় দেখা যায়। হিন্দুরা বাংলাদেশের সমগ্র জনসংখ্যার একটি অংশ। কাজেই দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে জনগণের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে, তার অংশ হিসেবে হিন্দুদের ওপরও আক্রমণ হচ্ছে।
লুটপাটকারী-ভূমিদস্যুদের এসব আক্রমণ শুধু হিন্দুদের ওপরই হচ্ছে না। আরও অনেক বেশি করে হচ্ছে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিসত্তার লোকজনের ওপর। উত্তর বাংলার সাঁওতালদের ওপর এই আক্রমণ হচ্ছে। এছাড়া রাখাইন, গারো থেকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তার লোকদের ওপরও এটা হচ্ছে। ভারত হিন্দুদের প্রতি বিশেষভাবে দরদি- এ কারণে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে যত প্রতিবাদ ও কথাবার্তা হয়, অন্যদের ক্ষেত্রে তা হয় না। কিন্তু বাস্তবত অন্যদের ওপর এই আক্রমণ হয় আরও নির্মমভাবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, সাঁওতাল, চাকমা, মার্মা, ত্রিপুরা, রাখাইন ইত্যাদি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর ওপর যে আক্রমণ এখন হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অবশ্যই দরকার। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে মনে রাখা দরকার, যে ক্রিমিনালরা এ কাজ করছে তারা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বা রাজনৈতিকভাবে সাম্প্রদায়িকতার দ্বারা প্রভাবিত বা উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কাজ করছে না, এরা এসব করছে ভূমিদস্যু ও লুটপাটকারী ক্রিমিনাল হিসেবে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই হিন্দুদের ওপর হামলাকে দেখতে হবে। এভাবে না দেখে একে সাম্প্রদায়িকতা আখ্যা দিয়ে অর্থাৎ এর সঙ্গে সাধারণ মানুষকে জড়িত করে যদি পরিস্থিতি বিচার করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন সাধারণ অসাম্প্রদায়িক জনগণকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হবে, তেমনি এভাবে বিষয়টি দেখলে এ হামলার বিরুদ্ধে কোনো প্রকৃত প্রতিরোধ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে না। কারণ এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে অসাম্প্রদায়িক জনগণের বিরুদ্ধে নয়, এটা করতে হবে ভূমিদস্যু ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে। এই দস্যুরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেই দুর্বৃত্তগিরি করে থাকে। এর দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। বিগত নির্বাচনের আগে পাবনা জেলার সাঁথিয়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ির ওপর যে আক্রমণ হয়, সেটা যে আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকুর লোকজনদের দ্বারা হয়েছিল সেটা প্রমাণিত হয়েছে। টুকুর মিছিলে চিহ্নিত এই দস্যুদের দেখা গেছে এবং সংবাদপত্রে তার ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের দস্যুরা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীতেও আছে। সুযোগ বুঝে তারাও এ কাজ করে থাকে, যেমন ২০০১-এ বিএনপি নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের পর দেখা গিয়েছিল। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ আমলে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ্য করার বিষয় যে, এসব আক্রমণের ঘটনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ ও তাদের বুদ্ধিজীবীরা অন্যদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করলেও এগুলোর কোনোটির পুলিশি তদন্ত ও বিচার তারা করেনি। এ নিয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সোসাইটি পর্যন্ত তাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে ব্যক্ত করেছে।
শ্রেণীবিভক্ত সমাজে সাধারণভাবে গরিব ও শ্রমজীবী লোকদের ওপর শোষণ-নির্যাতন হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও তা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। কিন্তু এই নির্যাতন সব ধরনের সংখ্যালঘুদের ওপর তুলনায় বেশি হয়। তাছাড়া হিন্দুদের বাড়িঘরের ওপর হামলা এই মনে করে করা হয় যে, তারা উৎখাত হয়ে ভারতে চলে যাবে এবং তাদের জায়গা দখল করা সম্ভব হবে। এ উদ্দেশ্যেই ভূমিদস্যু ও লুটপাটকারীরা হিন্দুদের ওপর হামলা করে। এর সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্ক নেই। এ কাজের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ কাজকে যখন সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেয়া হয়, তখন এর সঙ্গে সাধারণ মুসলমানদেরও যুক্ত করা হয়। তাদের সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হয়। এ কাজের মাধ্যমে হিন্দুদের ওপর হামলাকারী প্রকৃত ক্রিমিনালদের আড়াল করে সাধারণ লোকদের ঘাড়ে এর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়। এভাবে ভূমিদস্যু ও লুটপাটকারীদের কাজকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন ও তাদের ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের প্রচারণা যে দুরভিসন্ধিমূলক এতে সন্দেহ নেই। নারায়ণগঞ্জে বিগত ২৭ এপ্রিল সাতজনকে খুন করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাংগঠনিক লোকজন ও সরকার নিয়ন্ত্রিত র্যাবের সম্পৃক্ততা কোনো গোপন ব্যাপার নয়। এই সাতজনের মধ্যে আছেন হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত নারায়ণগঞ্জের সুপরিচিত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার। এটা কি বলা যাবে যে, অন্য ছয়জনকে হত্যার ব্যাপারটি সাম্প্রদায়িক না হলেও চন্দন সরকারের হত্যা একটি সাম্প্রদায়িক ব্যাপার? এটা কি বলা যাবে যে, এটা কোনো হিন্দুর ওপর আক্রমণের ঘটনা? না, তা বলা যাবে না। প্রকৃতপক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে দস্যুবৃত্তি ও লুটপাটের।
বাংলাদেশে এখন হিন্দুসহ অন্য প্রকার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ চলছে এবং আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাকে দেখতে হবে এই পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতেই। মনে রাখতে হবে, শুধু হিন্দু বা অন্য সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণই বৃদ্ধি পায়নি, সারা দেশে এখন এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে সাধারণভাবে অপরাধের বৈচিত্র্য ও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কারণ সরকারের ওপরই আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব আছে এবং এর জন্য তাদের হাতে আছে অর্থবল, প্রশাসন এবং সব ধরনের সশস্ত্র বাহিনী। কিন্তু সরকার এমনই নৈতিক চরিত্রহীন এবং তাদের বুদ্ধিজীবীরা এত বেশি মতলববাজ জনশত্র“ যে, এভাবে বিষয়টিকে না দেখে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গঠন না করে তারা বাইরের শক্তি, প্রধানত পাকিস্তানের ওপর এবং দেশের ভেতরে বিরোধী দলের ও তাদের জোটের ওপর এর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে অসাম্প্রদায়িকতার মালা নিজেদের গলায় ঝুলিয়ে উচ্চকণ্ঠে প্রচার চালাচ্ছে!! লুণ্ঠনকারী ও ভূমিদস্যুদের এই পৃষ্ঠপোষকতা সরকার যত করছে, সংখ্যালঘু থেকে নিয়ে সংখ্যালঘুর জনগণের ওপর নির্যাতন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এখন বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কোনো কোনো জায়গায় যে আক্রমণ হচ্ছে তাকে দেখতে হবে। তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুধু সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণের কথা বলে শক্তিশালী করা যাবে না। এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বর্তমান লুণ্ঠনজীবী শাসকশ্রেণী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক সরকার কর্তৃক ভূমিদস্যু থেকে নিয়ে সব ধরনের লুটপাটকারী এবং ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে।
২৪.০৫.২০১৪
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments