নিয়ন্ত্রণহীন সরকারি দল
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজন যেভাবে নিজেরা নিজেরা খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ছেন, তাতে মনে হচ্ছে যে দলটি কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় রয়েছে। সরকারি দলের লোকজনের বিরুদ্ধে যখন খুনের অভিযোগ ওঠে বা তাঁরা যখন এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েন, তখন সমাজে চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের নির্বিকার মনোভাব হতাশাজনক। নারায়ণগঞ্জে দিনদুপুরে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি নূর হোসেন সরকারি দলের স্থানীয় নেতা ও সিটি কাউন্সিলর। আবার এ ঘটনার অন্যতম শিকার নজরুল ইসলামও ছিলেন সরকারি দলের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর। মূল অভিযুক্ত নূর হোসেনের সঙ্গে স্থানীয় সরকারি দলের সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠতা কতটুকু, সেটা অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর তঁাদের টেলিফোন আলাপের মধ্য দিয়ে আরও পরিষ্কার হয়েছে। হত্যা মামলার প্রধান আসামি যখন সরকারি দলের সাংসদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় পান, তখন আইন নিজের মতো চলতে পারে না৷ ফেনীতে আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা দেশবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হিসেবে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর নাম এসেছে। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত হিসেবে এ পর্যন্ত যাঁরা চিহ্নিত ও আটক হয়েছেন, তাঁরাও সরকারি দলের সঙ্গে জড়িত। যিনি একরামকে গুলি করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত হয়েছেন,
তিনি ফেনী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছেলে এবং সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো ভাই। খুনোখুনি চলছে লক্ষ্মীপুরেও। সাড়ে পাঁচ মাসে খুন হয়েছেন ৩৪ জন, সম্প্রতি খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগের দুজন নেতা এবং ছাত্রলীগের এক নেতা। খুন, হত্যার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও। এসবের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সরকারি দলের লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক এসব কর্মকাণ্ডে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে সরকারি দলটি কার্যত একটি নিয়ন্ত্রণহীন সংগঠনে পরিণত হয়েছে। দল বা দলের শৃঙ্খলা—এসব দেখার যেন কেউ নেই। হয় দুর্বৃত্ত চক্র সংগঠনটির নানা পর্যায়ে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না দলটি অথবা এ ধরনের লোকজনকেই পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এসব নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও তাঁদের মনোনয়ন দিয়ে, কাউকে সাংসদ, কাউকে কাউন্সিলর বানানো হয়েছে৷ এটি দলের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি দেশের জন্যও বিপজ্জনক৷ সরকারকে পরিচালনা করে সরকারি দল। দলের লোকজনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সরকার পরিচালনা বা আইনশৃঙ্খলাজনিত ব্যর্থতার দায় চূড়ান্ত বিচারে সরকারকেই নিতে হয়। দলের মধ্যে এ ধরনের লোকজনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এবং অভিযোগ থাকার পরও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সরকারি দল যে তাদেরই ক্ষতি করছে, সে বোধোদয় দলটির আদৌ হবে কি?
No comments