আনোয়ার ইব্রাহিমের মুক্তির জন্য ছিনতাই হয়েছে নিখোঁজ বিমান!
ব্ল্যাক
বক্সের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সঙ্কেত পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানের
অনুসন্ধানকারী দল গতকাল এ কথা নিশ্চিত করেছে। তারা এখন নিশ্চিতভাবে ধরে
নিচ্ছেন ওই সঙ্কেত কোন ব্ল্যাক বক্স থেকে আসা। তবে তা যে নিখোঁজ ফ্লাইট
এমএইচ ৩৭০-এর ব্ল্যাক বক্স থেকে আসছে কিনা সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারেন
নি। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ওই সঙ্কেত নিখোঁজ বিমানের ব্ল্যাক
বক্সের।
এমনটা
নিশ্চিত হওয়ার পর ওই ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারে শুরু হয়েছে জোর তৎপরতা। গতকাল
পর্যন্ত নিখোঁজ বিমানের কোন ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় নি। ওদিকে সিএনএন ও
লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মেইল এমন একটি ই-মেইল পেয়েছে যাতে বলা হয়েছে
মালয়েশিয়ার ওই বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছিল। ছিনতাইকারীরা বিমানটিকে রাডার
ফাঁকি দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার আকাশসীমা বা এর আশপাশে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা
আটকে রেখে তাদের দাবি আদায় করতে চেয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে তারা মালয়েশিয়ার
বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার শর্ত দেয়ার কথা
ছিল। এ জন্য বিমানটিকে মালয়েশিয়ার দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের দিকে নিয়ে যাওয়া
হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। ফলে তা বিধ্বস্ত
হয়। এমন ই-মেইল মালয়েশিয়ার সরকারের একটি সূত্র থেকে পাঠানো হয়েছে বলে
জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন সূত্র তা পাঠিয়েছে তা শনাক্ত করা যায় নি। ফলে এর
যথার্থতা নিশ্চিত করা যায় নি। ওদিকে নতুন করে ব্ল্যাক বক্সের সঙ্কেত পাওয়ার
পর অনুসন্ধান অভিযান আরও জোরালো হয়েছে। এখন নির্দিষ্ট এলাকায় ওই অনুসন্ধান
চলছে। ওই এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে অস্ট্রেলিয়ার জাহাজ ওশিন শিল্ড।
বৃটিশ জাহাজ এইচএমএস ইকো’র সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে এটির। এরই মধ্যে যে
এলাকায় ব্ল্যাক বক্সের সঙ্কেত পাওয়া গেছে সেখানে সাগরের গভীরতা ৫.৬ মাইল। এ
তথ্য অনুসন্ধান দলকে নতুন ভাবে উদ্দীপ্ত করছে। এখনও ওই এলাকায় ১২টি বিমান ও
১৩টি জাহাজ অনুসন্ধান অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯টি সামরিক
বিমান। ৩টি বেসামরিক বিমান। তবে গতকাল ছিল ৭ই এপ্রিল। এ সময়ে বিমানটি
নিখোঁজ হওয়ার এক মাস পূর্ণ হয়েছে। ফলে ব্ল্যাক বক্সের কার্যকারিতা খুব অল্প
সময়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে। ব্ল্যাক বক্স থেকে আসা সঙ্কেতের বিষয়টিকে
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন অনুসন্ধান অভিযানের নেতৃত্বে থাকা
সমন্বয়কারী অস্ট্রেলিয়ার বিমান বাহিনীর প্রধান মার্শাল অঙ্গাস হাউজটন।
তিনি বলেছেন, গত তিন দিনের মধ্যে ওই এলাকায় তিনবার সিগন্যাল পাওয়া গেছে। এর
মধ্যে একটি সিগন্যাল ছিল দু’ঘণ্টা ২০ মিনিটেরও বেশি। দ্বিতীয়টির স্থায়িত্ব
ছিল প্রায় ১৩ মিনিট। এমন তথ্যের ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত পরিবহন
মন্ত্রী হিশামউদ্দিন হোসেন সাংবাদিকদের গতকাল বলেছেন, আমাদেরকে সতর্কতার
সঙ্গে আশাবাদী হতে হচ্ছে যে, আগামী দু’একদিনের মধ্যে আমরা একটি ফল পেতে
পারি। ওদিকে বিমানটি ছিনতাই হওয়া নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সিএনএন
রিপোর্টে বলেছে, বিমানটি একেবারে হারিয়ে যাওয়ার আগে ইন্দোনেশিয়ার চারপাশ
দিয়ে চক্কর দিচ্ছিল। এতে প্রথম দিকে যেমন আন্দাজ করা হচ্ছিল বিমানটি ছিনতাই
হয়েছে সেই আশঙ্কাকে আবার প্রবল করে দিয়েছে। সিএনএন বলেছে, তাদেরকে বলা
হয়েছে, বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি রাডারকে ফাঁকি দিতে ইন্দোনেশিয়ার আকাশে এভাবে
চক্কর দিচ্ছিল। সিএনএন-এর এই রিপোর্টকে সমর্থন করে ডেইলি মেইলের আরেকটি
খবর। ডেইলি মেইল বলেছে, গত সপ্তাহে তারা মালয়েশিয়া সরকারের একটি সূত্র থেকে
একটি ই-মেইল পেয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছিল। এরপর
পাইলটকে বলা হয়েছিল মালয়েশিয়ার কাছাকাছি থেকে আকাশে চক্কর দিতে। এ সময়ে
সরকারের সঙ্গে ছিনতাইকারীরা সমঝোতা করে নেবে। ডেইলি মেইলের পাওয়া ই-মেইলে
বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমকে সমকামিতার
অভিযোগে ৫ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। ওই শাস্তি প্রত্যাহারের দাবি তুলবে তারা। এ
জন্য ৫ ঘণ্টা সময় চাওয়া হয়েছিল। তবে ওই ই-মেইল কতটুকু সত্য তা যাচাই করা
যায় নি। সরকারের কোন সূত্র ওই ই-মেইল পাঠিয়েছে তা শনাক্ত করা যায় নি।
সিএনএন-ও একই রকম কথা বলেছে। তারা বলেছে, ছিনতাইকারীরা পাইলটকে তাদের কথা
মানতে বাধ্য করে। বলা হয় আনোয়ার ইব্রাহিমকে মুক্তি দেয়া হলে বিমানটি
নিরাপদে অবতরণ করতে দেয়া হবে। কিন্তু ৫ ঘণ্টার মধ্যে যদি মালয়েশিয়া সরকারের
সঙ্গে কোন সমঝোতা না হয় তাহলে বিমানটি ধ্বংস করা হবে। এমন হুমকি ছিল।
কিন্তু বিমানের মূল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ায় কিভাবে ওই সমঝোতা
সম্ভব? এব্যাপারে ওই ই-মেইলের প্রেরক বলেছে, তখন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে
অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ চ্যানেল ব্যবহার করে যোগাযোগের পরিকল্পনা থাকতে পারে।
লন্ডনের ডেইল মেইল এক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার
বিষয়ে ঘোষণা দিতে মালয়েশিয়া সরকার ৫ ঘণ্টা সময় নেয়। কারণ, এই ৫ ঘণ্টার
মধ্যে সমঝোতার সময় পেরিয়ে যায়। তখন সরকার বুঝতে পারে বিমানটি আর আকাশে ফিরে
আসবে না। ওই ৫ ঘণ্টায় বিমানটি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পাশ দিয়ে উড়ছিল।
তবে বোয়িং প্রস্তুতকারী কোম্পানি বলেছে, ৫ ঘণ্টা পরেও বিমানটি আরও দু’এক
ঘণ্টা বেশি সময় আকাশে থাকার সামর্থ্য রাখে। এসব তথ্য নিয়ে এখন নানা জট
পাকাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকেই ধরে নিয়েছেন, যেহেতু ব্ল্যাক বক্সের উপস্থিতি
পাওয়া গেছে তাই এমএইচ-৩৭০ বিমানটি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পাশ দিয়ে আকাশে
উড়ছিল। এরপর বিমানের জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। ফলে তা বিধ্বস্ত হয় ভারত
মহাসাগরে।
No comments