মন্ত্রী-সাংসদদের ব্যবসায় বেআইনি
জসেলিনো কুবিতচেক ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৫৬ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত। ওই দেশে সেনাশাসন আসে ১৯৬৪-তে, বহাল থাকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। মাঝে ১৯৭০-এর দশকে রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়। কুবিতচেক নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন ব্রাজিলে, রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হন। কিন্তু হঠাৎ ১৯৭৬ সালের ২২ আগস্ট গাড়িতে যাওয়ার সময় পেছন থেকে একটা বাস তাঁর গাড়িকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।
অর্ধশতাব্দী আগে ব্রাজিলের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৭৬-এর ‘দুর্ঘটনা’র পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৪০ বছর। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সন্দেহ হয়েছিল দুর্ঘটনা নয়, সেনাশাসকেরা তাঁকে হত্যা করেছিল। এখন তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, সম্ভবত এটা ছিল হত্যা। তদন্ত শেষ হয়নি, বিচারও শুরু হয়নি। তবে অচিরেই সম্ভবত হবে। এর আগে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে, যেমন চিলি, আর্জেন্টিনাসহ অনেক দেশে বহু দশক আগের সেনাশাসন ও অন্যান্য অপরাধ-অপকর্মের বিচার শুরু হয়েছে। ওসব দেশে এখন গণতন্ত্র পাকাপোক্ত হচ্ছে। গণতন্ত্র পাকাপোক্ত হওয়া মানেই আইন-বিচার ইত্যাদি পাকাপোক্ত হওয়া। আমাদের এখনো হয়নি। তবে আজ হোক, কাল হোক গণতন্ত্র অর্থাৎ আইনের শাসন অবশ্যই পাকাপোক্ত হবে।
দুই তিন-চার দিন ধরে বিভিন্ন পত্রিকায় মন্ত্রী-সাংসদদের গত পাঁচ বছরে ফুলে-ফেঁপে ওঠার অনেক রসাল খবর ছাপা হচ্ছে। এর আগে এক-এগারোর পর ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে অনেক রসাল খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছিল। এখানে ভবন, ওখানে বাড়ি, খুঁটি-খাম্বা, হরিণ-সেতু, ভর্তি ভর্তি বাক্স বিমানে করে বিদেশে যাওয়া—এ রকম অনেক খবর ভাসা ভাসা মনে পড়ছে। সেযাত্রায় অনেকেই চলে গিয়েছিলেন বিদেশে। এখনো কেউ কেউ ফিরে আসেননি। কারও কারও হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না, যেমন হারিছ চৌধুরী। মন্ত্রী-সাংসদদের ফুলে-ফেঁপে ওঠার প্রথম খবর নজরে পড়েছিল ১৯ ডিসেম্বরের দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রথম পাতায়। প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খানের ধন বেড়েছে ১০৭ গুণ, অন্য এক মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সম্পদ বেড়েছে পাঁচ বছরে ৪০ গুণ। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার এই তালিকায় ছিলেন আরও ছয়জন। পরের দিন ২০ ডিসেম্বরের প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম ছিল ‘ফুলে-ফেঁপে উঠেছে সম্পদ’। এখানে শ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন সেই আব্দুল মান্নান খান, মন্ত্রীগোত্রীয় জাহাঙ্গীর কবির নানক, দীপংকর তালুকদার, অধমের এলাকার সাংসদ ফজলে নূর তাপস ও অন্যরা। প্রথম আলো বলছে, সাংসদ আবদুর রহমান বদির আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। বাপের ব্যাটা! ২১ ডিসেম্বরের প্রথম আলো বলছে, মাহবুব উল আলম হানিফ মন্ত্রীও নন, সাংসদও নন, তবু পাঁচ বছরেই সম্পদের পাহাড়। ২১ ডিসেম্বর যুগান্তর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্রধান শিরোনাম ছিল ‘সেনা নামছে ২৬ ডিসেম্বর’। যুগান্তর-এর প্রতিবেদনের হিরো নয়জন, যাঁদের অনেকেই নামই জায়গা পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলোতেও। ২১ ডিসেম্বরের কালের কণ্ঠ দেখলাম ঝুঁকেছে আঞ্চলিকতার দিকে। পত্রিকাটির শিরোনাম ‘অর্থ-সম্পদ বেশ বেড়েছে চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিদের’। সম্পাদকীয়ও হয়েছে প্রত্যাশিত শিরোনামে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ (কালের কণ্ঠ ২১ ডিসেম্বর)। সব পত্রিকা তো আর পড়া হয় না, তবু ধরেই নিচ্ছি, অন্যান্য পত্রিকাও সম্পদের কেচ্ছায় আকৃষ্ট হবে, খবর ছাপিয়েছে বা ছাপাবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরাবরের মতো নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পদ, আয়-ব্যয় ইত্যাদির তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণ করে অচিরেই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
তিন মন্ত্রী-সাংসদেরা কি ধনী হতে পারেন না? যদি বৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সম্পদ বাড়ান? আইন বলে, মন্ত্রীরা তাঁদের বেতন-ভাতাদি ছাড়া আর কোনো উপায়-অর্জন করতে পারবেন না। কোনো বৈধ ব্যবসাও করতে পারবেন না। এটা সংবিধান নিষেধ করে দিয়েছে। সবার পুরো সংবিধান পড়া জরুরি নয়। তবে যাঁরা সাংবিধানিক পদ পেয়ে যান, তাঁদের তো সংবিধানে লেখা শপথবাক্য পাঠ করতে হয়। সেই সঙ্গে সংবিধানে যে যেই পদ পেয়েছেন, সে পদ বা দায়িত্ব সম্পর্কে কী বলা আছে, অন্তত সেটুকু তো পড়া উচিত। এমনটিও না যে ওই পদগুলো সম্পর্কে সংবিধানে অনেক অনেক কথা বলা আছে। পড়তে পড়তে গুলিয়ে ফেলার ভয় নেই। যেমন অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা বলা আছে, শুধু ৬৪ অনুচ্ছেদে। ৬৪ অনুচ্ছেদে সর্বসাকল্যে বাক্য আছে চারটি। কঠিন বা জটিল কিছুই নেই। ৬৪টি অনুচ্ছেদে বলা আছে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা। দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারের নয়; ঠিক যেমন প্রধান বিচারপতি। অন্য সব বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, কিন্তু প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের। অর্থাৎ শুধু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নন, সংবিধানবলে তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। যা হোক, মন্ত্রীদের বৈধ আয়-উপার্জনের কথায় ফিরে আসি। আট ধরনের সাংবিধানিক পদের বেতন-ভাতাসংক্রান্ত বড় একটা অনুচ্ছেদ আছে সংবিধানে।
দুই তিন-চার দিন ধরে বিভিন্ন পত্রিকায় মন্ত্রী-সাংসদদের গত পাঁচ বছরে ফুলে-ফেঁপে ওঠার অনেক রসাল খবর ছাপা হচ্ছে। এর আগে এক-এগারোর পর ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে অনেক রসাল খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছিল। এখানে ভবন, ওখানে বাড়ি, খুঁটি-খাম্বা, হরিণ-সেতু, ভর্তি ভর্তি বাক্স বিমানে করে বিদেশে যাওয়া—এ রকম অনেক খবর ভাসা ভাসা মনে পড়ছে। সেযাত্রায় অনেকেই চলে গিয়েছিলেন বিদেশে। এখনো কেউ কেউ ফিরে আসেননি। কারও কারও হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না, যেমন হারিছ চৌধুরী। মন্ত্রী-সাংসদদের ফুলে-ফেঁপে ওঠার প্রথম খবর নজরে পড়েছিল ১৯ ডিসেম্বরের দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রথম পাতায়। প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খানের ধন বেড়েছে ১০৭ গুণ, অন্য এক মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সম্পদ বেড়েছে পাঁচ বছরে ৪০ গুণ। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার এই তালিকায় ছিলেন আরও ছয়জন। পরের দিন ২০ ডিসেম্বরের প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম ছিল ‘ফুলে-ফেঁপে উঠেছে সম্পদ’। এখানে শ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন সেই আব্দুল মান্নান খান, মন্ত্রীগোত্রীয় জাহাঙ্গীর কবির নানক, দীপংকর তালুকদার, অধমের এলাকার সাংসদ ফজলে নূর তাপস ও অন্যরা। প্রথম আলো বলছে, সাংসদ আবদুর রহমান বদির আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। বাপের ব্যাটা! ২১ ডিসেম্বরের প্রথম আলো বলছে, মাহবুব উল আলম হানিফ মন্ত্রীও নন, সাংসদও নন, তবু পাঁচ বছরেই সম্পদের পাহাড়। ২১ ডিসেম্বর যুগান্তর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্রধান শিরোনাম ছিল ‘সেনা নামছে ২৬ ডিসেম্বর’। যুগান্তর-এর প্রতিবেদনের হিরো নয়জন, যাঁদের অনেকেই নামই জায়গা পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলোতেও। ২১ ডিসেম্বরের কালের কণ্ঠ দেখলাম ঝুঁকেছে আঞ্চলিকতার দিকে। পত্রিকাটির শিরোনাম ‘অর্থ-সম্পদ বেশ বেড়েছে চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিদের’। সম্পাদকীয়ও হয়েছে প্রত্যাশিত শিরোনামে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ (কালের কণ্ঠ ২১ ডিসেম্বর)। সব পত্রিকা তো আর পড়া হয় না, তবু ধরেই নিচ্ছি, অন্যান্য পত্রিকাও সম্পদের কেচ্ছায় আকৃষ্ট হবে, খবর ছাপিয়েছে বা ছাপাবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরাবরের মতো নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পদ, আয়-ব্যয় ইত্যাদির তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণ করে অচিরেই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
তিন মন্ত্রী-সাংসদেরা কি ধনী হতে পারেন না? যদি বৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সম্পদ বাড়ান? আইন বলে, মন্ত্রীরা তাঁদের বেতন-ভাতাদি ছাড়া আর কোনো উপায়-অর্জন করতে পারবেন না। কোনো বৈধ ব্যবসাও করতে পারবেন না। এটা সংবিধান নিষেধ করে দিয়েছে। সবার পুরো সংবিধান পড়া জরুরি নয়। তবে যাঁরা সাংবিধানিক পদ পেয়ে যান, তাঁদের তো সংবিধানে লেখা শপথবাক্য পাঠ করতে হয়। সেই সঙ্গে সংবিধানে যে যেই পদ পেয়েছেন, সে পদ বা দায়িত্ব সম্পর্কে কী বলা আছে, অন্তত সেটুকু তো পড়া উচিত। এমনটিও না যে ওই পদগুলো সম্পর্কে সংবিধানে অনেক অনেক কথা বলা আছে। পড়তে পড়তে গুলিয়ে ফেলার ভয় নেই। যেমন অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা বলা আছে, শুধু ৬৪ অনুচ্ছেদে। ৬৪ অনুচ্ছেদে সর্বসাকল্যে বাক্য আছে চারটি। কঠিন বা জটিল কিছুই নেই। ৬৪টি অনুচ্ছেদে বলা আছে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা। দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারের নয়; ঠিক যেমন প্রধান বিচারপতি। অন্য সব বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, কিন্তু প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের। অর্থাৎ শুধু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নন, সংবিধানবলে তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। যা হোক, মন্ত্রীদের বৈধ আয়-উপার্জনের কথায় ফিরে আসি। আট ধরনের সাংবিধানিক পদের বেতন-ভাতাসংক্রান্ত বড় একটা অনুচ্ছেদ আছে সংবিধানে।
১৪৭ অনুচ্ছেদ। অবশ্য অ্যাটর্নি জেনারেল বা সাংসদ এই ১৪৭ অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত নন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী, বিচারপতি, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি আট ধরনের পদ ১৪৭ অনুচ্ছেদের আওতায় পড়ে। পাঠক যদি শপথ নিয়ে মন্ত্রী বনে যান, তাহলে ১৪৭ অনুচ্ছেদটি আপনাকে জানতে হবে। জানাই— মন্ত্রী ‘...কোন লাভজনক পদ কিংবা বেতন-ভাতাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হইবেন না কিংবা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোন কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনায় কোনরূপ অংশগ্রহণ করিবেন না।’ ১৪৭ অনুচ্ছেদে আরও একটু জটিল একটি বিধান আছে। আপাতত আমাদের দরকার নেই। তবে কোনো পাঠক যদি সত্যি সত্যি মন্ত্রী বনে যান, তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন, বিশদ বয়ান করা যাবে তখন। ১৪৭-এর ওপরে যতটুকু উদ্ধৃত করেছি, সেটাতেই ফিরে আসি। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিকেল পাঁচটায় আপনার সচিবালয়ের অফিস থেকে বেরিয়ে গুলিস্তান সিনেমা হলে গিয়ে সেখানে সন্ধ্যাকালীন পার্টটাইম ম্যানেজারের পদ গ্রহণ করতে পারবেন না। কারণ, ১৪৭ অনুচ্ছেদ বলছে, কোনো লাভজনক বা বেতন-ভাতাযুক্ত পদে মন্ত্রী মশাই বহাল হতে পারবেন না। দিনের বেলা বিমানের মন্ত্রী আর রাতে বিমান চালিয়ে অর্থাৎ পাইলটগিরি করে টু পাইস বাড়তি কামাবেন, সেই রাস্তা বন্ধ। মন্ত্রীর পদের পাশাপাশি অন্য কোনো পার্টটাইম চাকরি (পদ বা মর্যাদা) না হলে না-ই করলেন, তাই বলে কি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় কোনো ব্যবসা থেকে লাভ বা আয় হতে পারবে না?
অধমের কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু বাধা দিচ্ছে তো সংবিধান। সংবিধান ব্যাখ্যায় অগ্রসর হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যদি দুর্ভাগ্যবশত অধমের ব্যাখ্যার সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যা না মেলে, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা বাহুল্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যাই সঠিক ব্যাখ্যা। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সংবিধান বলছে, ‘মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যযুক্ত’ কোনো কিছুর ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশ নেওয়া যাবে না। এখানে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো, ‘কোনরূপ অংশগ্রহণ’। ইংরেজি অংশে আছে, Take any part whatsoever। গুরুত্ব দেব whatsoever শব্দটির ওপর। অনেক মন্ত্রীর সাফসুতরো আয়ের বিবরণে লেখা আছে, কৃষি থেকে আয় অত টাকা। অথবা মৎস্য চাষ থেকে আয় লাখ লাখ টাকা। অবশ্য কোনো কোনো মন্ত্রীর মাছগুলো এতই ভালো যে আয় দিয়েছে কোটি টাকার বেশি। কৃষিকাজ বা মৎস্য চাষ করা হয়েছে মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে। হলফনামা অনুযায়ী মুনাফাও হয়েছে। পরিমাণ বেশি হোক আর কমই হোক। আর কৃষি বা মৎস্য থেকে মুনাফা অর্জনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নিশ্চয় কোনো না কোনো ভূমিকা ছিল—সংবিধানের ভাষায়, ‘পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনা’য় নিঃসন্দেহে ভূমিকা ছিল। অর্থাৎ কোনো দুই নম্বরি হয়নি, সেটা ধরে নিলেও মন্ত্রী মশাইদের ব্যবসা করাটাই ছিল সংবিধানের পরিপন্থী। মন্ত্রী হলে অন্য কোনো চাকরি বা ব্যবসা করতে পারবেন না। একই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য বিচারপতি বা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য সাংবিধানিক পদের জন্য। কেন? এই নিষেধাজ্ঞা না থাকলে আমি, আপনি বা আমরা সবাই হয়ে যেতে পারতাম বিচারপতিদের ‘বিজনেস পার্টনার’। তখন হয়তো বিচার-আচারে কিছু বাড়তি সুবিধা হলেও হয়ে যেতে পারত!
অথবা যে এলাকা থেকে নির্বাচন করব, সে এলাকায় বিরাট মৎস্য খামার বা বিশাল আমবাগানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে করে নিতাম পার্টনার। ইত্যাদি, ইত্যাদি। অতএব সংবিধান কেন এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা বোঝা মোটেও দুষ্কর নয়। সাংসদদের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলনামূলকভাবে একটু হালকা। নির্বাচনসংক্রান্ত আমাদের মূল আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ১২ ধারায় বলা আছে, কোনো সংসদ সদস্য সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার বস্তু বা সেবাদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন না। অর্থাৎ সাংসদের ঠিকাদারি ফার্ম বা কোম্পানি সরকারি রাস্তা বা ব্রিজ বানানোর কন্ট্রাক্ট বা কার্যাদেশ পেতে পারে না। অনেক অ্যাডভোকেট-সাংসদকে গত পাঁচ বছরে দেখেছি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে ওকালতি করতে। অর্থাৎ আইনি সেবার বিনিময়ে সরকারি অর্থ গ্রহণ করেছেন। আইনের চোখে সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তবে মন্ত্রীরা যেরূপ সংবিধান পড়েন না, স্পিকারও সেরূপ আইন পড়েন না। কারণ, সংসদ সদস্যরা যোগ্যতা হারিয়েছেন কি না, সে ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব স্পিকারের। অন্য কারও সেই ক্ষমতা নেই। ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে সাহসও জরুরি। সম্পদের পাহাড় গড়তে কেউ দুর্নীতি করেছেন কি করেন না, সেটা বলতে পারবে দুদক। দুর্নীতি না করলেও ব্যবসা করে, বেতন-ভাতার বাইরে উপরি আয় করে মন্ত্রীরা স্পষ্টতই সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধান লঙ্ঘনের সাজা মন্ত্রী-সাংসদেরাই নির্ধারণ করে দিয়েছেন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। আপনাদের সংশোধিত সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদে। সাজার বিধানটা আছে ৭ক(৩)-এ, দয়া করে পড়ে নেবেন। শেষের কথা: ২৩ ডিসেম্বরের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় আছে, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর পাঁচ বছরে ‘...ব্যাংকে টাকা বেড়েছে ৫৮৬ গুণ, জমি বেড়েছে ১৪৩ গুণ এবং বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭৯ গুণ’। শাবাশ!
No comments