মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে by বিভুরঞ্জন সরকার
২৭,
২৮ ও ২৯ অক্টোবর টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের পর আবার ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর ৬০
ঘণ্টার হরতাল দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। নির্দলীয়
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচির কথা
বলা হলেও আজকাল বেশির ভাগ হরতালই শান্তিপূর্ণ থাকে না। এখন হরতাল মানেই
বোমাবাজি, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, নিরীহ মানুষ হত্যা, রক্তারক্তি,
হানাহানি ইত্যাদি। ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবরের ৬০ ঘণ্টার হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে
পালিত হয়নি। ওই হরতালকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০ জনের মতো
মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ’। ককটেল বিস্ফোরণে কারও কারও শরীর
ঝলসে গেছে, কারও বা চোখ নষ্ট হয়েছে। আবার ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বরের হরতালও যে
শান্তিপূর্ণ হবে না, তা আগে থেকে বলা যায়। এখন হরতাল মানেই যে লাশ সেটা
নিশ্চিত করেই বলা যায়। বিরোধী দল কর্মসূচি দেবে, সরকার ও সরকারি দল প্রতিহত
করার ঘোষণা দেবে, আর মানুষের লাশ পড়বে। হিংসা-হানাহানি-রক্তপাতের ধারা
থেকে দেশের রাজনীতি কবে মুক্ত হবে সেটা কেউ বলতে পারে না। যারা রাজনীতি
করেন তারা মানুষের জন্যই রাজনীতি করেন বলে দাবি করে থাকেন, অথচ রাজনীতির
নামে মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে খেলা করতে তারা একটুও দ্বিধা করেন না।
আমাদের দেশের রাজনীতি থেকে মানবিকতা দূর হয়েছে, নিষ্ঠুরতা গ্রাস করেছে
রাজনীতিকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন পর ফোনালাপ হওয়ায় আশা করা গিয়েছিল যে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনীতিতে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তা দূর হবে, সংঘাতের পথ থেকে সংলাপের পথে অগ্রসর হবে রাজনীতির ধারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন করবেন- এ সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পর মানুষের মধ্যে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, তা হতাশায় পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। দুই নেত্রীর ফোনালাপের বিস্তারিত বিবরণ গণমাধ্যমে প্রচারের পর মানুষ বুঝতে পেরেছেন, দুই নেত্রীর মধ্যে যে দুস্তর ব্যবধান তা সহজে দূর হওয়ার নয়। বিভিন্ন মহল থেকে অনেক দিন ধরেই এটা বলা হচ্ছিল যে, দুই নেত্রী একসঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করলেই দেশের রাজনৈতিক সংকট দূর হয়ে যাবে। কিন্তু এ ধারণাটা যে বাস্তবভিত্তিক নয়, দুই নেত্রীর রাজনৈতিক অবস্থান যে দুই বিপরীত মেরুতে সেটা বুঝতে না পারার জন্যই দুই নেত্রীর বৈঠকের ওপর কেউ কেউ এতদিন অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করে এসেছেন। ২৬ অক্টোবর অনেক নাটকীয়তার শেষে সন্ধ্যা ৬টার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। তাদের ৩৭ মিনিটের ফোনালাপ মোটেও সুখকর ছিল না। শুরু থেকেই বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আক্রমণাত্মক এবং কিছুটা উত্তেজিত। তার ভাষা ছিল রূঢ় ও অসৌজন্যমূলক। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তাকে সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করেছেন। অথচ পাল্টা কুশল জিজ্ঞাসা করার সৌজন্য বিরোধীদলীয় নেতা দেখাননি। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর জন্য যে টেলিফোন তা শেষ পর্যন্ত তপ্ত বিতর্কে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী নমনীয়তা দেখালেও বিরোধীদলীয় নেতা একের পর এক আক্রমণাত্মক মন্তব্য করতে থাকলে প্রধানমন্ত্রীও পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। এ পুরো ফোনালাপ যারা টিভিতে শুনেছেন কিংবা সংবাদপত্রে পড়েছেন, তারা এটা স্বীকার করবেন যে, দুই নেত্রীর ফোনালাপ সমঝোতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার বদলে আনুষ্ঠানিক ঝগড়াঝাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। কেউ কেউ সেজন্য এমন মন্তব্যও করছেন যে, দুই নেত্রীর এই ফোনালাপটি না হলেই বরং ভালো হতো। এ ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী যে খুশি হতে পারেননি, বরং যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন, সেটা বোঝা যায় তার বক্তব্য থেকে। তিনি গণভবনে এক বৈঠকে বলেছেন, ‘যেসব কথা আমাকে শুনতে হল, আমার ঠিক ওই ঝগড়া বা ওই ধরনের ইচ্ছা ছিল না। অনেক অপমান সহ্য করেও আমাকে চুপ থাকতে হয়েছে। দেশের মানুষের কথা ভেবেই এসব অবাস্তব কথা সহ্য করেছি।’ এরপর শেখ হাসিনা সহসা আর খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবেন বলে যারা আশা করেন, তাদের অতি আশাবাদী বলা গেলেও বাস্তববাদী বলা যাবে না। দুই নেত্রীর ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কারা এ ফোনালাপ প্রকাশ বা প্রচার করলেন সেটা জানা না গেলেও বুঝতে কষ্ট হয় না যে, সরকারি তরফেই এটা প্রচার-প্রকাশে সহযোগিতা করা হয়েছে। অবশ্য একটি দৈনিকে এটা ফাঁস হওয়ার পেছনে বিরোধীদলীয় নেতার তথ্য সচিবের হাত আছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ফোনালাপ প্রকাশ করা হয়নি। তবে এটা জানার অধিকার জনগণের আছে। কারণ এটা রাষ্ট্রীয় ফোনালাপ, জনগণের অধিকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপির তরফ থেকেই প্রথম এটার অনেক কিছু পেপারে ছাপিয়ে দেয়। কাজেই পেপারে দিয়ে দেয়ার পর পুরোটাই মানুষের শোনা ভালো। আমি কী শুনলাম, উকি কী বললেন?’ অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশের ঘটনাকে শিষ্টাচার ও নীতিবহির্ভূত বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটা করা হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। ফোনালাপের আংশিক বিবরণ যখন সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়, তখন অবশ্য বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বা ক্ষুব্ধ হয়নি। পুরোটা প্রকাশের পর হয়তো তাদের অস্বস্তি বেড়েছে। কারণ তাদের নেত্রীর বাচনভঙ্গি যে খুব শোভন ছিল না, একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় যে সাধারণ শিষ্টাচার মেনে চলতে হয়, রাগের কারণে তিনি সেটা সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন। আবার এমনও হতে পারে তিনি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকারই করেন না। একপর্যায়ে কিন্তু তিনি বলে ফেলেছেন, ‘আপনি তো প্রধানমন্ত্রী নন। দলের প্রধানমন্ত্রী। আপনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। নিরপেক্ষতার ঊর্ধ্বে আপনি যেতে পারেননি। ...’
ফোনালাপ প্রকাশের ব্যাপারে কেউ কেউ তুলেছেন নৈতিকতার প্রশ্ন অর্থাৎ তারা মনে করেন নীতিগতভাবে এটা ঠিক হয়নি। আবার কেউ তুলেছেন আইনি প্রশ্ন। তবে এসব বিতর্ক এ ইস্যুতে এ কারণেই গৌণ যে, এটা ছিল একটি রাষ্ট্রীয় সংলাপ। দুই নেত্রী কোনো গোপন আলাপে অংশ নেননি। তারা পরস্পর কী কথা বলেছেন, দেশের সংকট সমাধানে তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছেন কিনা সেটা জানার আগ্রহ ও কৌতূহল ছিল দেশবাসীর। বলা যায় রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় ছিল গোটা জাতি। কাজেই তথ্য জানার যে অধিকার নাগরিকদের আছে, সে অনুযায়ী দুই নেত্রীর ফোনালাপ পুরো প্রকাশ করা অনেকের কাছেই অসমীচীন বলে মনে হয়নি। তবে এটাও ঠিক যে, দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এবং দুই নেত্রীর মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন মহলের উদ্যোগ-তৎপরতার কথা বিবেচনা করে ফোনালাপের বিস্তারিত বিবরণ এখনই প্রকাশ না করলেই হয়তো ভালো হতো। তাহলে হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো না। অবশ্য দুই পক্ষ থেকে যদি আলাদা আলাদাভাবে নিজ নিজ পছন্দের অংশটুকু গণমাধ্যমে ফাঁস করা হতো, তাহলে বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি যে মাত্রায় হতো, এখন পুরোটা প্রকাশ হওয়ায় তা থেকে অন্তত রেহাই পাওয়া গেছে। এখন যারা দুই নেত্রীর বক্তব্য পড়েছেন, শুনেছেন, তারা সবাই বিবেচনা করার সুযোগ পেয়েছেন, কোন নেত্রী সমস্যা সমাধানে কতটা আন্তরিক।
৩৭ মিনিটের ফোনালাপে দুই নেত্রীর মধ্যে কাজের কথা হয়েছে খুব সামান্য সময়ই। অথচ এ দীর্ঘ সময় যদি তারা নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতেন, তাহলে হয়তো পরিবেশটা ভিন্ন হতে পারত। এতদিন যারা মনে করতেন যে খোঁচা দিয়ে কথা বলতে কিংবা কটাক্ষ করতে শেখ হাসিনার জুড়ি নেই- তারা এবার বিস্মিত হয়েছেন খালেদা জিয়ার কথা শুনে। খালেদা জিয়া যে বাঁকা কথায় এত পটু এটা এ ফোনালাপ প্রকাশ না পেলে অনেকেরই অজানা থেকে যেত। বিরোধীদলীয় নেতার ‘রেড টেলিফোন’ ডেড হওয়া নিয়ে দুই নেত্রীর মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বাহাস হয়েছে। আলোচনার প্রায় শুরুতেই খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আপনারা গভর্নমেন্ট চালান, কী খবর রাখেন? গভর্নমেন্ট চালাচ্ছেন, এ খবর রাখেন না যে বিরোধীদলীয় নেতার ফোন ঠিক আছে কিনা।’ এরপর শেখ হাসিনা যখন বলেন, ‘আমি যখন ফোন করেছিলাম, সেটা ভালো ছিল’, তার উত্তরে বেগম জিয়া বলেছেন, ‘হঠাৎ করে মৃত টেলিফোন জেগে উঠবে? আপনার টেলিফোন এত পাওয়ারফুল যে ডেড অবস্থায় জেগে উঠবে?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতাকে ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় গণভবনে আলাপ-আলোচনার জন্য দাওয়াত দিলে খালেদা জিয়া হরতালের কারণে সেদিন যাওয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা ‘জাতির স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার’ করে দেয়ার অনুরোধ জানালে বেগম জিয়া হরতাল প্রত্যাহার করবেন না উল্লেখ করে উল্টো বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থেই আমি এ হরতাল দিয়েছি।’ ‘হরতালের নামে মানুষ খুন করা অব্যাহত রাখবেন’- প্রধানমন্ত্রীর এ জিজ্ঞাসার জবাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, ‘আমি মানুষ খুন করতে চাই না, আপনারা মানুষ খুন করছেন। ... আপনাদের তো পুরনো অভ্যাস। আপনারা সেই স্বাধীনতার পর থেকে ’৭১-এ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখনও এ হত্যা করেছেন...।’ শেখ হাসিনা জানতে চান, ‘একাত্তরে আমরা হত্যা করেছি?’ খালেদার জবাব, ‘হ্যাঁ অবশ্যই।’ একপর্যায়ে শেখ হাসিনা ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন’ বললে খালেদা জিয়া জবাব দেন, ‘দেখেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আপনারা করিয়েছেন। আপনাকে হত্যা করতে কেউ চায়নি। ... আপনি যত থাকবেন, তত আমাদের জন্য ভালো। ... আপনি যত এ রকম অশ্লীল ভাষায় কথা বলবেন, তত আমাদের জন্য ভালো।’ শেখ হাসিনা নামাজ পড়েন বলে উল্লেখ করায় জবাবে খালেদা জিয়া বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, ‘আপনি নামাজ পড়েন, কোরআন পড়েন... আরও কত কী পড়েন। সব জানি।’
১৫ আগস্ট কেক কাটা, জন্মদিন পালন করার প্রসঙ্গ শেখ হাসিনা উঠালে বেগম জিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে জবাব দেন, ‘... এটা বলবেন না। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কোনো মানুষের জন্ম হবে না? কোনো মানুষ পালন করবে না? এগুলো বাদ দেন। ... অনেক কথা বলেন জিয়াউর রহমানকে। আরে জিয়াউর রহমান তো আপনাদের নতুন জীবন দান করেছেন। ... আপনারা তো বাকশাল দিলেন। ... আপনারা জিয়াউর রহমানের বদৌলতে বাকশাল হতে পেরেছেন।’ এখানে বেগম জিয়ার বক্তব্যে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটেছে বলে সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত তার একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর খন্দকার মোশতাক প্রথম রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন এবং ২০ আগস্টেই বাকশাল এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলো বাতিল করেছিলেন। মোশতাক ২৪ আগস্ট জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দান করেছিলেন। বাকশাল বাতিল করার পর স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগসহ বাকশালে অঙ্গীভূত রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুজ্জীবন ঘটেছিল, এখানে জিয়ার কোনো অবদান বা ভূমিকা নেই। শেখ হাসিনা ৬০ ঘণ্টার হরতাল প্রত্যাহারের জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে বারবার অনুরোধ করলে খালেদা জিয়া একপর্যায়ে বলেন, ‘না আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। এটা তো আমার ডিসিশন নয়। এটা ১৮ দলের ডিসিশন। আমি এটা কী করে একলা করব।’ অথচ একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বলেন যে, এখন আপনি নিরপেক্ষ সরকারের জন্য রাজি আছেন, তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করে নেব।’ এ ক্ষেত্রে ১৮ দলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি ভুলে গেলেন কেন?
দুই নেত্রী আলোচনায় বসলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে যারা মনে করেন, তারা দুই নেত্রীর ৩৭ মিনিটের ফোনালাপে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছেন বলেই মনে হয়। এ ফোনালাপ দুই নেত্রীর দূরত্ব ঘোচাতে সহায়ক হয়নি। এ ফোনালাপটি না হলেই ভালো হতো বলে যারা মনে করছেন, তাদের এ মনে করাটি একেবারে বেঠিক নয়। কারণ এ ফোনালাপে দুই নেত্রীর মুখোমুখি বসে সংলাপ করার পরিবেশ তৈরি না হয়ে বরং তা বিঘিœত হয়েছে বলেই মনে হয়। সংলাপ নিয়ে সরকারপক্ষ আর নতুন কোনো উদ্যোগ না নেয়ার কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দলও নিজেরা কোনো উদ্যোগ নেবে না। অথচ দেশের মানুষ দুই নেত্রীর সংলাপের জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। কারণ সংলাপ না হওয়ার পরিণতি যে অনিবার্য সংঘাত, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সংঘাত কারও কাম্য নয়। সবাই সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ না দেখে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা না কমে বরং বাড়ছে।
বিভুরঞ্জন সরকার : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন পর ফোনালাপ হওয়ায় আশা করা গিয়েছিল যে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনীতিতে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তা দূর হবে, সংঘাতের পথ থেকে সংলাপের পথে অগ্রসর হবে রাজনীতির ধারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন করবেন- এ সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পর মানুষের মধ্যে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, তা হতাশায় পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। দুই নেত্রীর ফোনালাপের বিস্তারিত বিবরণ গণমাধ্যমে প্রচারের পর মানুষ বুঝতে পেরেছেন, দুই নেত্রীর মধ্যে যে দুস্তর ব্যবধান তা সহজে দূর হওয়ার নয়। বিভিন্ন মহল থেকে অনেক দিন ধরেই এটা বলা হচ্ছিল যে, দুই নেত্রী একসঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করলেই দেশের রাজনৈতিক সংকট দূর হয়ে যাবে। কিন্তু এ ধারণাটা যে বাস্তবভিত্তিক নয়, দুই নেত্রীর রাজনৈতিক অবস্থান যে দুই বিপরীত মেরুতে সেটা বুঝতে না পারার জন্যই দুই নেত্রীর বৈঠকের ওপর কেউ কেউ এতদিন অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করে এসেছেন। ২৬ অক্টোবর অনেক নাটকীয়তার শেষে সন্ধ্যা ৬টার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। তাদের ৩৭ মিনিটের ফোনালাপ মোটেও সুখকর ছিল না। শুরু থেকেই বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আক্রমণাত্মক এবং কিছুটা উত্তেজিত। তার ভাষা ছিল রূঢ় ও অসৌজন্যমূলক। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তাকে সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করেছেন। অথচ পাল্টা কুশল জিজ্ঞাসা করার সৌজন্য বিরোধীদলীয় নেতা দেখাননি। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর জন্য যে টেলিফোন তা শেষ পর্যন্ত তপ্ত বিতর্কে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী নমনীয়তা দেখালেও বিরোধীদলীয় নেতা একের পর এক আক্রমণাত্মক মন্তব্য করতে থাকলে প্রধানমন্ত্রীও পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। এ পুরো ফোনালাপ যারা টিভিতে শুনেছেন কিংবা সংবাদপত্রে পড়েছেন, তারা এটা স্বীকার করবেন যে, দুই নেত্রীর ফোনালাপ সমঝোতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার বদলে আনুষ্ঠানিক ঝগড়াঝাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। কেউ কেউ সেজন্য এমন মন্তব্যও করছেন যে, দুই নেত্রীর এই ফোনালাপটি না হলেই বরং ভালো হতো। এ ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী যে খুশি হতে পারেননি, বরং যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন, সেটা বোঝা যায় তার বক্তব্য থেকে। তিনি গণভবনে এক বৈঠকে বলেছেন, ‘যেসব কথা আমাকে শুনতে হল, আমার ঠিক ওই ঝগড়া বা ওই ধরনের ইচ্ছা ছিল না। অনেক অপমান সহ্য করেও আমাকে চুপ থাকতে হয়েছে। দেশের মানুষের কথা ভেবেই এসব অবাস্তব কথা সহ্য করেছি।’ এরপর শেখ হাসিনা সহসা আর খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবেন বলে যারা আশা করেন, তাদের অতি আশাবাদী বলা গেলেও বাস্তববাদী বলা যাবে না। দুই নেত্রীর ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কারা এ ফোনালাপ প্রকাশ বা প্রচার করলেন সেটা জানা না গেলেও বুঝতে কষ্ট হয় না যে, সরকারি তরফেই এটা প্রচার-প্রকাশে সহযোগিতা করা হয়েছে। অবশ্য একটি দৈনিকে এটা ফাঁস হওয়ার পেছনে বিরোধীদলীয় নেতার তথ্য সচিবের হাত আছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ফোনালাপ প্রকাশ করা হয়নি। তবে এটা জানার অধিকার জনগণের আছে। কারণ এটা রাষ্ট্রীয় ফোনালাপ, জনগণের অধিকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপির তরফ থেকেই প্রথম এটার অনেক কিছু পেপারে ছাপিয়ে দেয়। কাজেই পেপারে দিয়ে দেয়ার পর পুরোটাই মানুষের শোনা ভালো। আমি কী শুনলাম, উকি কী বললেন?’ অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশের ঘটনাকে শিষ্টাচার ও নীতিবহির্ভূত বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটা করা হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। ফোনালাপের আংশিক বিবরণ যখন সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়, তখন অবশ্য বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বা ক্ষুব্ধ হয়নি। পুরোটা প্রকাশের পর হয়তো তাদের অস্বস্তি বেড়েছে। কারণ তাদের নেত্রীর বাচনভঙ্গি যে খুব শোভন ছিল না, একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় যে সাধারণ শিষ্টাচার মেনে চলতে হয়, রাগের কারণে তিনি সেটা সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন। আবার এমনও হতে পারে তিনি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকারই করেন না। একপর্যায়ে কিন্তু তিনি বলে ফেলেছেন, ‘আপনি তো প্রধানমন্ত্রী নন। দলের প্রধানমন্ত্রী। আপনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। নিরপেক্ষতার ঊর্ধ্বে আপনি যেতে পারেননি। ...’
ফোনালাপ প্রকাশের ব্যাপারে কেউ কেউ তুলেছেন নৈতিকতার প্রশ্ন অর্থাৎ তারা মনে করেন নীতিগতভাবে এটা ঠিক হয়নি। আবার কেউ তুলেছেন আইনি প্রশ্ন। তবে এসব বিতর্ক এ ইস্যুতে এ কারণেই গৌণ যে, এটা ছিল একটি রাষ্ট্রীয় সংলাপ। দুই নেত্রী কোনো গোপন আলাপে অংশ নেননি। তারা পরস্পর কী কথা বলেছেন, দেশের সংকট সমাধানে তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছেন কিনা সেটা জানার আগ্রহ ও কৌতূহল ছিল দেশবাসীর। বলা যায় রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় ছিল গোটা জাতি। কাজেই তথ্য জানার যে অধিকার নাগরিকদের আছে, সে অনুযায়ী দুই নেত্রীর ফোনালাপ পুরো প্রকাশ করা অনেকের কাছেই অসমীচীন বলে মনে হয়নি। তবে এটাও ঠিক যে, দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এবং দুই নেত্রীর মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন মহলের উদ্যোগ-তৎপরতার কথা বিবেচনা করে ফোনালাপের বিস্তারিত বিবরণ এখনই প্রকাশ না করলেই হয়তো ভালো হতো। তাহলে হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো না। অবশ্য দুই পক্ষ থেকে যদি আলাদা আলাদাভাবে নিজ নিজ পছন্দের অংশটুকু গণমাধ্যমে ফাঁস করা হতো, তাহলে বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি যে মাত্রায় হতো, এখন পুরোটা প্রকাশ হওয়ায় তা থেকে অন্তত রেহাই পাওয়া গেছে। এখন যারা দুই নেত্রীর বক্তব্য পড়েছেন, শুনেছেন, তারা সবাই বিবেচনা করার সুযোগ পেয়েছেন, কোন নেত্রী সমস্যা সমাধানে কতটা আন্তরিক।
৩৭ মিনিটের ফোনালাপে দুই নেত্রীর মধ্যে কাজের কথা হয়েছে খুব সামান্য সময়ই। অথচ এ দীর্ঘ সময় যদি তারা নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতেন, তাহলে হয়তো পরিবেশটা ভিন্ন হতে পারত। এতদিন যারা মনে করতেন যে খোঁচা দিয়ে কথা বলতে কিংবা কটাক্ষ করতে শেখ হাসিনার জুড়ি নেই- তারা এবার বিস্মিত হয়েছেন খালেদা জিয়ার কথা শুনে। খালেদা জিয়া যে বাঁকা কথায় এত পটু এটা এ ফোনালাপ প্রকাশ না পেলে অনেকেরই অজানা থেকে যেত। বিরোধীদলীয় নেতার ‘রেড টেলিফোন’ ডেড হওয়া নিয়ে দুই নেত্রীর মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বাহাস হয়েছে। আলোচনার প্রায় শুরুতেই খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আপনারা গভর্নমেন্ট চালান, কী খবর রাখেন? গভর্নমেন্ট চালাচ্ছেন, এ খবর রাখেন না যে বিরোধীদলীয় নেতার ফোন ঠিক আছে কিনা।’ এরপর শেখ হাসিনা যখন বলেন, ‘আমি যখন ফোন করেছিলাম, সেটা ভালো ছিল’, তার উত্তরে বেগম জিয়া বলেছেন, ‘হঠাৎ করে মৃত টেলিফোন জেগে উঠবে? আপনার টেলিফোন এত পাওয়ারফুল যে ডেড অবস্থায় জেগে উঠবে?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতাকে ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় গণভবনে আলাপ-আলোচনার জন্য দাওয়াত দিলে খালেদা জিয়া হরতালের কারণে সেদিন যাওয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা ‘জাতির স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার’ করে দেয়ার অনুরোধ জানালে বেগম জিয়া হরতাল প্রত্যাহার করবেন না উল্লেখ করে উল্টো বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থেই আমি এ হরতাল দিয়েছি।’ ‘হরতালের নামে মানুষ খুন করা অব্যাহত রাখবেন’- প্রধানমন্ত্রীর এ জিজ্ঞাসার জবাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, ‘আমি মানুষ খুন করতে চাই না, আপনারা মানুষ খুন করছেন। ... আপনাদের তো পুরনো অভ্যাস। আপনারা সেই স্বাধীনতার পর থেকে ’৭১-এ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখনও এ হত্যা করেছেন...।’ শেখ হাসিনা জানতে চান, ‘একাত্তরে আমরা হত্যা করেছি?’ খালেদার জবাব, ‘হ্যাঁ অবশ্যই।’ একপর্যায়ে শেখ হাসিনা ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন’ বললে খালেদা জিয়া জবাব দেন, ‘দেখেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আপনারা করিয়েছেন। আপনাকে হত্যা করতে কেউ চায়নি। ... আপনি যত থাকবেন, তত আমাদের জন্য ভালো। ... আপনি যত এ রকম অশ্লীল ভাষায় কথা বলবেন, তত আমাদের জন্য ভালো।’ শেখ হাসিনা নামাজ পড়েন বলে উল্লেখ করায় জবাবে খালেদা জিয়া বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, ‘আপনি নামাজ পড়েন, কোরআন পড়েন... আরও কত কী পড়েন। সব জানি।’
১৫ আগস্ট কেক কাটা, জন্মদিন পালন করার প্রসঙ্গ শেখ হাসিনা উঠালে বেগম জিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে জবাব দেন, ‘... এটা বলবেন না। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কোনো মানুষের জন্ম হবে না? কোনো মানুষ পালন করবে না? এগুলো বাদ দেন। ... অনেক কথা বলেন জিয়াউর রহমানকে। আরে জিয়াউর রহমান তো আপনাদের নতুন জীবন দান করেছেন। ... আপনারা তো বাকশাল দিলেন। ... আপনারা জিয়াউর রহমানের বদৌলতে বাকশাল হতে পেরেছেন।’ এখানে বেগম জিয়ার বক্তব্যে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটেছে বলে সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত তার একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর খন্দকার মোশতাক প্রথম রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন এবং ২০ আগস্টেই বাকশাল এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলো বাতিল করেছিলেন। মোশতাক ২৪ আগস্ট জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দান করেছিলেন। বাকশাল বাতিল করার পর স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগসহ বাকশালে অঙ্গীভূত রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুজ্জীবন ঘটেছিল, এখানে জিয়ার কোনো অবদান বা ভূমিকা নেই। শেখ হাসিনা ৬০ ঘণ্টার হরতাল প্রত্যাহারের জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে বারবার অনুরোধ করলে খালেদা জিয়া একপর্যায়ে বলেন, ‘না আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। এটা তো আমার ডিসিশন নয়। এটা ১৮ দলের ডিসিশন। আমি এটা কী করে একলা করব।’ অথচ একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বলেন যে, এখন আপনি নিরপেক্ষ সরকারের জন্য রাজি আছেন, তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করে নেব।’ এ ক্ষেত্রে ১৮ দলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি ভুলে গেলেন কেন?
দুই নেত্রী আলোচনায় বসলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে যারা মনে করেন, তারা দুই নেত্রীর ৩৭ মিনিটের ফোনালাপে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছেন বলেই মনে হয়। এ ফোনালাপ দুই নেত্রীর দূরত্ব ঘোচাতে সহায়ক হয়নি। এ ফোনালাপটি না হলেই ভালো হতো বলে যারা মনে করছেন, তাদের এ মনে করাটি একেবারে বেঠিক নয়। কারণ এ ফোনালাপে দুই নেত্রীর মুখোমুখি বসে সংলাপ করার পরিবেশ তৈরি না হয়ে বরং তা বিঘিœত হয়েছে বলেই মনে হয়। সংলাপ নিয়ে সরকারপক্ষ আর নতুন কোনো উদ্যোগ না নেয়ার কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দলও নিজেরা কোনো উদ্যোগ নেবে না। অথচ দেশের মানুষ দুই নেত্রীর সংলাপের জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। কারণ সংলাপ না হওয়ার পরিণতি যে অনিবার্য সংঘাত, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সংঘাত কারও কাম্য নয়। সবাই সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ না দেখে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা না কমে বরং বাড়ছে।
বিভুরঞ্জন সরকার : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
No comments