কুকুরের এমবিএ ডিগ্রি ও অন্যান্য
একটা কুকুর লাভ করেছে এমবিএ ডিগ্রি। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে। বিবিসি নিউজনাইট এই তথ্য উন্মোচন করেছে। আবার একটা কুকুরকেও যে একটা বিশ্ববিদ্যালয় এমবিএ ডিগ্রি দিতে পারে, সেই নাটকটা সাজিয়েছেও তারাই। তারা এইউওএল নামের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএর জন্য আবেদন করেছে কুকুরের নামে। বলেছে, এমবিএ ডিগ্রি চাই।
তারা একটা জীবনবৃত্তান্ত বানিয়েছে, সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম হলো, পুরোনো ডিগ্রির কপি, শিক্ষার্থীর ফটো জমা দিতে হবে। যেহেতু আবেদনকারী একটা কুকুর, কাজেই তারা তা জমা দিতে পারেনি। ‘তাই বলে কি আমি ডিগ্রি পাব না?’ ফোনে জানতে চাওয়া হয়েছে। ‘কেন নয়? আপনাকে ৪৫০০ পাউন্ড জমা দিতে হবে।’ ওই পরিমাণ পাউন্ড দেওয়া হয়ে গেলে কুকুরের নামে চলে এসেছে এমবিএ ডিগ্রি। কুকুরটির নাম পিট। সে থাকে ব্যাট্রেরেসা কুকুর-সদনে। সম্প্রতি এই খবর প্রকাশিত হয়েছে, হইচই পড়ে গেছে বিলেতে। সবচেয়ে লজ্জায় আছেন তাঁরা, যাঁরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি তাঁদের নামের শেষে ব্যবহার করে মুখ-উজ্জ্বল করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। ডিগ্রি নিয়ে নানা ধরনের রসিকতা চালু আছে। যাঁদের ডিগ্রি অকৃত্রিম; পরিশ্রম, মেধা আর সময় বিনিয়োগের মাধ্যমে পাওয়া, তাঁরা আশা করি ক্ষমার চোখেই দেখেন এই সব রসিকতাকে। ছোটবেলায় একটা গল্প শুনেছিলাম। পাঠশালার সামনে দিয়ে যাচ্ছে এক ধোপা। সে শুনতে পেল, ক্লাসরুমে একজন শিক্ষক তার কোনো ছাত্রের উদ্দেশে বলছে, ‘কত গাধা পিটিয়ে মানুষ করলাম, আর তোকে মানুষ করতে পারব না?’ শুনে ধোপা তার গাধাটিকে নিয়ে এসে হাজির: ‘মাস্টার সাব, আমার গাধাটাকেও পিটিয়ে মানুষ করে দিন না?’ ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে একটা নির্মম কৌতুক প্রচলিত আছে।
এক লোক যাচ্ছে ঘোড়ার পিঠে চড়ে। পথে শুনতে পেল, এখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে টাকার বিনিময়ে ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হয়। পথিকের সঙ্গে টাকা ছিল। কাজেই সে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বলল, ‘ডিগ্রি দিন। কত টাকা লাগবে?’ টাকাপয়সার লেনদেন হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করল। ডক্টরেট ডিগ্রি সঙ্গে নিয়ে লোকটা ফিরছে ঘোড়ার পিঠে চড়ে। তার মনে হলো, টাকা দিলেই যদি ডিগ্রি পাওয়া যায়, তাহলে আমার ঘোড়াটার জন্যও তো একটা ডিগ্রি কেনা যায়। সে আবার গেল বিশ্ববিদ্যালয়ে, বলল, ‘এই নিন টাকা, আমার ঘোড়াটাকেও একটা পিএইচডি ডিগ্রি দিন।’ তখন কর্তৃপক্ষ জবাব দিল, ‘স্যরি, আমরা শুধু গাধাদেরই ডিগ্রি দিই, ঘোড়াদের দিই না।’ একবার একটা কুকুরের প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছিল আদালতে। ঘটনা তানজানিয়ার। কুকুরটিকে দেওয়া হয় প্রাণদণ্ড, আর তার মালিককে কারাদণ্ড। কারণ, কুকুরের মালিক কুকুরের নাম রেখেছিলেন ‘ইমিগ্রেশন’। তানজানিয়ার বহিরাগত পুনর্বাসন বা ইমিগ্রেশন বিভাগ তাতে চটে যায়। তারা মামলা করে দিলে এই নাম ধারণ করার অপরাধে কুকুরটির মৃত্যুদণ্ড আর তার মালিকের কারাদণ্ডের রায় দেন মাননীয় আদালত। আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। চারদিক থেকে লোকজন আসতে লাগল তাঁর কাছে। তারা বলতে লাগল, ‘আমরা বিপ্লবের জন্য অনেক কিছু করেছি। অনেক ত্যাগ করেছি। আমাদের মূল্যায়ন করুন। আমাদেরকে পদ দিন।’ লিংকন তখন একটা গল্প বলেছিলেন: এক রাজা বেরিয়েছেন শিকারে। তিনি তাঁর মন্ত্রীদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আজকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কী? ঝড়বৃষ্টি কি হবে?’
মন্ত্রীরা বলল, ‘জি না হুজুর, আজ আবহাওয়া চমৎকার। ঝড়বৃষ্টি হবে না।’ রাজা চলেছেন। পথে দেখা একজন ধোপার সঙ্গে। রাজাকে সে বলল, ‘রাজামশাই, আপনি যে সামনে এগোচ্ছেন, সামনে তো ঝড়বৃষ্টি হবে।’ রাজা তার কথা শুনলেন না। এগোতে লাগলেন। খানিক পরে সত্যি সত্যি ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। রাজা ফিরে এলেন। বললেন, ‘আবহাওয়ামন্ত্রীকে বরখাস্ত করো। ধরে নিয়ে এসো ওই ধোপাকে। ওকেই মন্ত্রী করব।’ রাজা ধোপাকে মন্ত্রী করলেন। রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, তুমি কেমন করে বললে, সামনে ঝড়বৃষ্টি হবে?’ ধোপা বলল, ‘যখন ঝড়বৃষ্টি আসন্ন, তখন আমার গাধার কান নড়ে। তখন আমার গাধার কান নড়ছিল। সেটা দেখে আমি বুঝলাম, একটু পরেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হবে।’ রাজা বললেন, ‘তাহলে আর তোমাকে মন্ত্রী করব কেন? তুমি বরখাস্ত। যাও, নিয়ে এসো সেই গাধাকে। তাকেই আমি মন্ত্রী বানাব।’ রাজা গাধাকেই মন্ত্রী বানালেন। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক তখন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। একজন চাষি নিজের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বললেন, ‘হুজুর, ছেলেকে চাকরি দিন।’
‘লেখাপড়া কত দূর?
‘লেখাপড়া কত দূর?
‘ম্যাট্রিক ফেল।’
‘তাহলে চাষবাসের কাজে ওকে লাগাও না কেন?’
‘হুজুর, লেখাপড়া শিখেছে, ওকে কী করে হালচাষ করতে লাগাই?’
‘তাহলে ওকে একটা দোকান করে দাও।’ ‘দোকানের কাজে ওর মন নাই।’ ‘তাহলে তো তোমার ছেলের আর কোনো উপায় নাই। ওকে মন্ত্রী করেই নিতে হয়।’ শেরেবাংলাকে নিয়ে আরেকটা গল্প। তখনো তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কাছে একটা আবেদন এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদের মালটানা গাড়ির বলদের জন্য খড় কেনা বাবদ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দের আবেদন। শেরেবাংলা খড়ের দাম জানতেন। তিনি ওই দরখাস্তে লিখলেন, ‘এত খড় কি কেবল বলদে খাবে?’
আজকের এই লেখায় কোনো সিরিয়াস বিষয়ে গেলাম না; কারণ, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যা চলছে, তা নিয়ে রসিকতা ছাড়া আর কীই-বা করার আছে?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
‘তাহলে চাষবাসের কাজে ওকে লাগাও না কেন?’
‘হুজুর, লেখাপড়া শিখেছে, ওকে কী করে হালচাষ করতে লাগাই?’
‘তাহলে ওকে একটা দোকান করে দাও।’ ‘দোকানের কাজে ওর মন নাই।’ ‘তাহলে তো তোমার ছেলের আর কোনো উপায় নাই। ওকে মন্ত্রী করেই নিতে হয়।’ শেরেবাংলাকে নিয়ে আরেকটা গল্প। তখনো তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কাছে একটা আবেদন এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদের মালটানা গাড়ির বলদের জন্য খড় কেনা বাবদ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দের আবেদন। শেরেবাংলা খড়ের দাম জানতেন। তিনি ওই দরখাস্তে লিখলেন, ‘এত খড় কি কেবল বলদে খাবে?’
আজকের এই লেখায় কোনো সিরিয়াস বিষয়ে গেলাম না; কারণ, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যা চলছে, তা নিয়ে রসিকতা ছাড়া আর কীই-বা করার আছে?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments