প্রেম করে বিয়ে, অত:পর? by অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা তাদের ভালোবাসাকে
বাস্তবে রূপ দিতে একে অপরকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক
ছেলে-মেয়ের এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও আইনগত অধিকার আছে।
সেই অধিকারের ভিত্তিতে তারা স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
এতে বাঁধ সাধে উভয় পরিবারের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন। শেষমেশ বিষয়টি অনেক সময় থানা-কোর্ট কাচারীতে গিয়ে পৌঁছায়। তাতে কার কি লাভ হয়-এ নিয়েই একটি বাস্তব কেইস স্টাডি বলছি।
গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের পরিপাটি চেহারার ভদ্রলোক মামলা করেছেন থানায় একজন তরুণ স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ হচ্ছে, শিক্ষক বেচারা ভদ্রলোকের স্কুল পড়ুয়া নাবালিকা মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অপরাধ খুবই গুরুতর।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় যুবক শিক্ষক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সহসা জামিনের আশা নেই। কারণ, প্রথমত জামিন অযোগ্য ধারার অপরাধ, দ্বিতীয়ত এ মামলায় জামিন শুনানী করার এখতিয়ার নিম্ন আদালতের নেই।
সে কারণে অভিযোগকারী ভদ্রলোক মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন আসামীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে শিক্ষক বেচারা গা-ঢাকা দিয়েছেন।
বাড়িতে আছেন কেবল যুবক স্কুল শিক্ষকের মা-বাবা এবং কথিত অপহরণ করা কিশোরী মেয়েটি। মামলার এফ.আই.আর সহ মামলাটি আদালতে দাখিল করা হয়েছে। সরকার পক্ষে কোর্ট ইন্সপেক্টর (পুলিশ) আদালতকে বলছেন, হুজুর আসামী খুবই দুর্দান্ত ও প্রভাবশালী। সে ভিকটিম তথা কিশোরী মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে অপহরণ করে নিজের বাড়িতে আটকে রেখেছে।
কোর্ট ইন্সপেক্টর আদালতের কাছে ফৌজদারী র্কাযবিধির ১০০ ধারার বিধান মতে, আসামির বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে বে-আইনীভাবে আটক মেয়েটিকে উদ্ধারের অনুমতি প্রার্থণা করেন।
আদালত কোর্ট ইন্সপেক্টরের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আসামীর বাড়িতে তল্লাশীর পরোয়ানা ইস্যু করেন। পুলিশ অবিলম্বে এ পরোয়ানার ভিত্তিতে ওই আসামীর বাড়িতে তল্লাশী চালায় এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালতের কাঠগড়ায় এক দিকে উদ্ধারকৃত মেয়েটি এবং তার সঙ্গে কথিত অপহরণকারীর পিতা-মাতা। অন্য দিকে মেয়েটির পিতা-মাতা।
মেয়ের পিতা-মাতার দাবী তাদের মেয়ে অপরিণত বয়সের। ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা মেয়েটির হয়নি। তাই তারা মেয়েটিকে তাদের জিম্মায় দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। পুলিশ অফিসারও তাদের আবেদনে সমর্থন করেন। মেয়েটির বয়স কম সে বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য সরকার পক্ষ তথা মেয়ের বাবা মেয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সত্যায়িত একটি সনদপত্র এবং মেয়ের মায়ের একটি এফিডেভিট আদালতে দাখিল করেন।
অন্যদিকে মেয়ের কথিত অপহরণকারী শিক্ষকের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীরা বলছেন, মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্কা, মুসলিম শরিয়াহ মোতাবেক তার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।
এ অবস্থায় মেয়েকে তার ইচ্ছানুযায়ী স্বামীর গৃহে যেটি এখন তার নিজেরই ঘর অবস্থানের অনুমতি দেয়া হোক এবং তার শ্বশুর-শাশুড়ির জিম্মায় মুক্তি দেয়া হোক।
উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে মন স্থির করতে পারেন না কি সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত তো তাকে দিতেই হবে। মেয়েটি কোথায় যাবে? পিতার গৃহে নাকি কথিত অপহরণকারীর বা স্বামীর গৃহে? এ পর্যায়ে তিনি মেয়েটির বক্তব্য শুনতে চান।
মেয়েটি আদালতকে জানায়, আসামী তার স্বামী। তাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ে কাজী অফিসে রেজিস্ট্রি হয়েছে। সে তার স্বামীকে ভালবাসে। তাদের বিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিতে করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার স্বামী পারিবারিকভাবে তার পিতা-মাতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।
কিন্তু তার অহংকারী পিতা-মাতা স্বল্প আয়ের শিক্ষকের সাথে বিয়েতে রাজি হয়নি। তারা বাধ্য হয়ে নিজেরাই বিয়ে করেছে। মেয়েটি জানায়, তাকে তার পিতা-মাতার কাছে যেতে বাধ্য করলে তারা তাকে মারধর করবে, তার উপর অমানসিক নির্যাতন চালাবে এবং তাকে বাধ্য করবে স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে। একবার তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার স্বামীর জেল হবে।
এ অবস্থায় তার পিতা-মাতার সাথে যাওয়ার চেয়ে তার মৃত্যু হওয়ায় ভালো। এ ধরণের বক্তব্য আদালতে মেয়েটি উপস্থাপন করে।
মেয়েটির এ বক্তব্য শোনার পর বিচারক কিছুটা বিভ্রান্ত হন। কি আদেশ দেয়া যায়? অবশেষে তিনি আদেশ দেন ভিকটিমের (মেয়েটির) বয়স প্রমাণের পরীক্ষা করার জন্য ভিকটিমকে সিভিল সার্জনের কাছে প্রেরণ করা হোক। ভিকটিমের বয়স প্রমাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জুডিশিয়াল কাস্টোডিতে তথা বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখা হোক।
বয়স প্রমাণের পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর এবং এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে। দুদিন পর মেয়েটির বয়স সম্পর্কে প্রতিবেদন পাওয়া গেল।
মেডিকেল রিপোর্টে দেখা গেল মেয়েটির বয়স ১৫ হতে ১৬ বৎসরের মধ্যে, অন্যদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক যে সনদপত্র দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটির বয়স ১৫ বৎসর। আর মেয়েটির মা এফিডেভিট করে বলেছেন, তার মেয়ের বয়স ১৩ বছর। সব মিলিয়ে মেয়েটির বয়স যে কত তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় উভয় পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবীরা তাদের নিজ নিজ দাবীর পক্ষে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিচারক যে আদেশ দেন তা নিম্নরুপঃ উভয় পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের বক্তব্য ভিকটিমের বয়স সম্পর্কিত প্রমাণাদি পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করা হলো।
বিয়ের কাবিননামা দেখা গেল, সমাগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এবং ভিকটিমের বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করে আদালতের কাছে মনে হচ্ছে যে, ভিকটিমের বয়স ১৬ বছর অতিক্রম করেছে স¤ভাবনা বাদ দেয়া যায় না।
তদুপরি তার বয়স নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং ঘটনা ও পারিপার্শি¦ক অবস্থা বিবেচনা করে আদালতের কাছে এটিও প্রতীয়মান হয়, ভিকটিম মেয়েটি নিজের ইচ্ছায় তার পিতা-মাতার ঘর ত্যাগ করেছে এবং ফিরে আসার কোন ইচ্ছা তার মধ্যে আপাততঃ দেখা যাচ্ছে না, তাই তাকে জুডিশিয়াল হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়া হলো।
তিনি স্বেচ্ছায় যেখানে যেতে চান সেখানে যেতে পারেন, স্বামীর গৃহে কিংবা পিতা-মাতার বাড়িতে।
মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি একজন বিজ্ঞ আইনজীবী এবং একজন উপযুক্ত স্থানীয় জামিনদারের জিম্মায় জামিনে থাকবেন। অবশেষে মামলার অভিযোগ গঠনের সময় বিচারক মহোদয় আদেশ দেন, আসামি উল্লিখিত ধারায় কোনো প্রকার অপরাধ সংঘটন করেনি।
নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের বিধান বর্ণিত ও দণ্ডবিধি মতে, অপহরণ মামলার কোনো উপাদান এখানে বিদ্যমান নেই। তাই আসামির বিরুদ্ধে ওই মামলা চলতে পারে না এবং সে মতে আসামীকে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫ (গ) ধারা মতে অত্র মামলার দায় হতে অব্যহতি দেয়া হলো।
লেখকঃ সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, এম.ফিল গবেষক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।
এতে বাঁধ সাধে উভয় পরিবারের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন। শেষমেশ বিষয়টি অনেক সময় থানা-কোর্ট কাচারীতে গিয়ে পৌঁছায়। তাতে কার কি লাভ হয়-এ নিয়েই একটি বাস্তব কেইস স্টাডি বলছি।
গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের পরিপাটি চেহারার ভদ্রলোক মামলা করেছেন থানায় একজন তরুণ স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ হচ্ছে, শিক্ষক বেচারা ভদ্রলোকের স্কুল পড়ুয়া নাবালিকা মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অপরাধ খুবই গুরুতর।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় যুবক শিক্ষক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সহসা জামিনের আশা নেই। কারণ, প্রথমত জামিন অযোগ্য ধারার অপরাধ, দ্বিতীয়ত এ মামলায় জামিন শুনানী করার এখতিয়ার নিম্ন আদালতের নেই।
সে কারণে অভিযোগকারী ভদ্রলোক মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন আসামীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে শিক্ষক বেচারা গা-ঢাকা দিয়েছেন।
বাড়িতে আছেন কেবল যুবক স্কুল শিক্ষকের মা-বাবা এবং কথিত অপহরণ করা কিশোরী মেয়েটি। মামলার এফ.আই.আর সহ মামলাটি আদালতে দাখিল করা হয়েছে। সরকার পক্ষে কোর্ট ইন্সপেক্টর (পুলিশ) আদালতকে বলছেন, হুজুর আসামী খুবই দুর্দান্ত ও প্রভাবশালী। সে ভিকটিম তথা কিশোরী মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে অপহরণ করে নিজের বাড়িতে আটকে রেখেছে।
কোর্ট ইন্সপেক্টর আদালতের কাছে ফৌজদারী র্কাযবিধির ১০০ ধারার বিধান মতে, আসামির বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে বে-আইনীভাবে আটক মেয়েটিকে উদ্ধারের অনুমতি প্রার্থণা করেন।
আদালত কোর্ট ইন্সপেক্টরের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আসামীর বাড়িতে তল্লাশীর পরোয়ানা ইস্যু করেন। পুলিশ অবিলম্বে এ পরোয়ানার ভিত্তিতে ওই আসামীর বাড়িতে তল্লাশী চালায় এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালতের কাঠগড়ায় এক দিকে উদ্ধারকৃত মেয়েটি এবং তার সঙ্গে কথিত অপহরণকারীর পিতা-মাতা। অন্য দিকে মেয়েটির পিতা-মাতা।
মেয়ের পিতা-মাতার দাবী তাদের মেয়ে অপরিণত বয়সের। ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা মেয়েটির হয়নি। তাই তারা মেয়েটিকে তাদের জিম্মায় দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। পুলিশ অফিসারও তাদের আবেদনে সমর্থন করেন। মেয়েটির বয়স কম সে বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য সরকার পক্ষ তথা মেয়ের বাবা মেয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সত্যায়িত একটি সনদপত্র এবং মেয়ের মায়ের একটি এফিডেভিট আদালতে দাখিল করেন।
অন্যদিকে মেয়ের কথিত অপহরণকারী শিক্ষকের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীরা বলছেন, মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্কা, মুসলিম শরিয়াহ মোতাবেক তার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।
এ অবস্থায় মেয়েকে তার ইচ্ছানুযায়ী স্বামীর গৃহে যেটি এখন তার নিজেরই ঘর অবস্থানের অনুমতি দেয়া হোক এবং তার শ্বশুর-শাশুড়ির জিম্মায় মুক্তি দেয়া হোক।
উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে মন স্থির করতে পারেন না কি সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত তো তাকে দিতেই হবে। মেয়েটি কোথায় যাবে? পিতার গৃহে নাকি কথিত অপহরণকারীর বা স্বামীর গৃহে? এ পর্যায়ে তিনি মেয়েটির বক্তব্য শুনতে চান।
মেয়েটি আদালতকে জানায়, আসামী তার স্বামী। তাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ে কাজী অফিসে রেজিস্ট্রি হয়েছে। সে তার স্বামীকে ভালবাসে। তাদের বিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিতে করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার স্বামী পারিবারিকভাবে তার পিতা-মাতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।
কিন্তু তার অহংকারী পিতা-মাতা স্বল্প আয়ের শিক্ষকের সাথে বিয়েতে রাজি হয়নি। তারা বাধ্য হয়ে নিজেরাই বিয়ে করেছে। মেয়েটি জানায়, তাকে তার পিতা-মাতার কাছে যেতে বাধ্য করলে তারা তাকে মারধর করবে, তার উপর অমানসিক নির্যাতন চালাবে এবং তাকে বাধ্য করবে স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে। একবার তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার স্বামীর জেল হবে।
এ অবস্থায় তার পিতা-মাতার সাথে যাওয়ার চেয়ে তার মৃত্যু হওয়ায় ভালো। এ ধরণের বক্তব্য আদালতে মেয়েটি উপস্থাপন করে।
মেয়েটির এ বক্তব্য শোনার পর বিচারক কিছুটা বিভ্রান্ত হন। কি আদেশ দেয়া যায়? অবশেষে তিনি আদেশ দেন ভিকটিমের (মেয়েটির) বয়স প্রমাণের পরীক্ষা করার জন্য ভিকটিমকে সিভিল সার্জনের কাছে প্রেরণ করা হোক। ভিকটিমের বয়স প্রমাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জুডিশিয়াল কাস্টোডিতে তথা বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখা হোক।
বয়স প্রমাণের পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর এবং এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে। দুদিন পর মেয়েটির বয়স সম্পর্কে প্রতিবেদন পাওয়া গেল।
মেডিকেল রিপোর্টে দেখা গেল মেয়েটির বয়স ১৫ হতে ১৬ বৎসরের মধ্যে, অন্যদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক যে সনদপত্র দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটির বয়স ১৫ বৎসর। আর মেয়েটির মা এফিডেভিট করে বলেছেন, তার মেয়ের বয়স ১৩ বছর। সব মিলিয়ে মেয়েটির বয়স যে কত তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় উভয় পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবীরা তাদের নিজ নিজ দাবীর পক্ষে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিচারক যে আদেশ দেন তা নিম্নরুপঃ উভয় পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের বক্তব্য ভিকটিমের বয়স সম্পর্কিত প্রমাণাদি পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করা হলো।
বিয়ের কাবিননামা দেখা গেল, সমাগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এবং ভিকটিমের বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করে আদালতের কাছে মনে হচ্ছে যে, ভিকটিমের বয়স ১৬ বছর অতিক্রম করেছে স¤ভাবনা বাদ দেয়া যায় না।
তদুপরি তার বয়স নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং ঘটনা ও পারিপার্শি¦ক অবস্থা বিবেচনা করে আদালতের কাছে এটিও প্রতীয়মান হয়, ভিকটিম মেয়েটি নিজের ইচ্ছায় তার পিতা-মাতার ঘর ত্যাগ করেছে এবং ফিরে আসার কোন ইচ্ছা তার মধ্যে আপাততঃ দেখা যাচ্ছে না, তাই তাকে জুডিশিয়াল হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়া হলো।
তিনি স্বেচ্ছায় যেখানে যেতে চান সেখানে যেতে পারেন, স্বামীর গৃহে কিংবা পিতা-মাতার বাড়িতে।
মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি একজন বিজ্ঞ আইনজীবী এবং একজন উপযুক্ত স্থানীয় জামিনদারের জিম্মায় জামিনে থাকবেন। অবশেষে মামলার অভিযোগ গঠনের সময় বিচারক মহোদয় আদেশ দেন, আসামি উল্লিখিত ধারায় কোনো প্রকার অপরাধ সংঘটন করেনি।
নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের বিধান বর্ণিত ও দণ্ডবিধি মতে, অপহরণ মামলার কোনো উপাদান এখানে বিদ্যমান নেই। তাই আসামির বিরুদ্ধে ওই মামলা চলতে পারে না এবং সে মতে আসামীকে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫ (গ) ধারা মতে অত্র মামলার দায় হতে অব্যহতি দেয়া হলো।
লেখকঃ সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, এম.ফিল গবেষক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।
No comments