দূতকে হুমকি অস্বীকার দিল্লির, বিষিয়ে উঠছে সম্পর্ক
রোববার বিকালে তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। তাছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে পৃথক বিবৃতিও প্রচার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় দিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের বরাতে প্রেসনোটও ইস্যু করা হয়েছে। যেখানে এ সংক্রান্ত বাংলাদেশি মিডিয়ার রিপোর্টকে অতিরঞ্জন বলে দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি দিল্লি অস্বীকার করেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দিল্লির প্রেসনোটকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই বিক্ষোভ নিয়ে ভারতের দাবি দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশ্ন রাখেন দিল্লির সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতের বাসভবন পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করতে পারলো কীভাবে? এটাকে গুরুতর নিরাপত্তা ঘাটতি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন- হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা শুধু বাংলাদেশে একজন হিন্দু নাগরিক হত্যার ঘটনায় স্লোগান দেয়নি বরং অন্যান্য বক্তব্যও দিয়েছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সঠিক দাবি করে উপদেষ্টা বলেন ২৫ বা ৩০ জনের একটা হিন্দু চরমপন্থি সংগঠনের একটা দল এতদূর পর্যন্ত আসতে পারবে কেন একটা স্যানিটাইজড এলাকার মধ্যে। তার মানে তাদের আসতে দেয়া হয়েছে। তাহলে যেভাবে তারা আসছে, আসতে পারার কথা না কিন্তু নরমালি এবং তারপরে সেখানে তারা দাঁড়িয়ে শুধু ওই হিন্দু নাগরিকের হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিয়ে চলে গেছে তা না, তারা অনেক কিছু বলেছে সেটা আমরা জানি এবং আমাদের পত্রপত্রিকায় যে রিপোর্টটা আসছে সেটাকে তারা বলছে মিসলিডিং এটাও সত্য না। আমাদের পত্রপত্রিকায় মোটামুটি সঠিক রিপোর্টই এসেছে। আমরা যেটুকু তথ্য পেয়েছি আমার কাছে প্রমাণ নেই যে, হাইকমিশনারকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু আমরা এটাও শুনেছি, তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, সেটা কেউ একজন কথা বললো, সেটার মধ্যে হতে পারে। কিন্তু আমার কথা হলো যে, এ পর্যন্ত আসতে পারবে কেন? এসে এখানে হুমকি দিতে পারবে কেন? সাধারণত আমরা যখন কোনো প্রটেস্ট গ্রুপ যখন যায় সেটা আগে থেকে ইনফর্ম করা হয় এবং পুলিশ তাদেরকে একটু দূরে এক জায়গাতে আটকে দেয়। কখনো যদি কোনো কাগজপত্র দেয়ার থাকে দুইজন এসে দিয়ে যায়। এটা হলো নর্ম। সবখানেই এটা হয় আমাদের দেশেও হয়। এটা আমরা গ্রহণ করি না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দ্বিতীয়ত বিষয় হচ্ছে যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক নৃশংসভাবে খুন হয়েছে। এটার সঙ্গে মাইনরিটিজের নিরাপত্তাকে একসঙ্গে করে ফেলার কোনো মানে হয় না। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক যাকে হত্যা করা হয়েছে এবং অবিলম্বে বাংলাদেশের সরকার এই ব্যাপারে অ্যাকশন নিয়েছে। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন যে বেশ কিছু অ্যারেস্ট করা হয়েছে। তো এ ধরনের ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশে ঘটে তা নয়। এই অঞ্চলের সব দেশেই ঘটে এবং প্রত্যেক দেশের দায়িত্ব হচ্ছে সেক্ষেত্রে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া। বাংলাদেশ নিচ্ছে অন্যদেরও উচিত সেরকম ব্যবস্থা নেয়া। প্রতিবাদে কীভাবে জানাবে ঢাকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন ফরমেট নিয়ে বরং আমরা আলাপ না করাই ভালো কারণ তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, আমরাও যোগাযোগ রাখি, যোগাযোগ আছে এবং আমরা যেটাকে বলার সেটা বলি, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই যে প্রেস নোট এসেছে, যে কারণে আমাদেরও এখন এটা একইভাবে ওপেনলি যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ভরসা রাখছি যে ভারত যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখানে ব্যাপারটা শুধু কিন্তু যে তারা এখানে এসেছে দুটো স্লোগান দিয়েছে তা না। এর ভেতরে কিন্তু একটা পরিবার বাস করে, হাইকমিশনার এবং তার পরিবার ওখানে বাস করে তারা থ্রেটেন ফিল করেছে এবং তারা কিন্তু আতঙ্কিত হয়েছে যে কারণ এডিকুয়েট সিকিউরিটি অফ ছিল, দুইজন গার্ড ছিল তারা চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। কাজেই এটাকে আমরা মনে করি যে আরেকটু পৃথক করাটা সত্যিকারই ওই দেশের দায়িত্ব।
দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা হয়নি: ভারত সরকার
এদিকে দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভকারীরা সেখানকার নিরাপত্তা বেষ্টনী (ফেন্স) লঙ্ঘন করেনি বলে দাবি করেছে দেশটির বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০শে ডিসেম্বর রাতে বিক্ষোভের যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে মিডিয়ার প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ওই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের কিছু মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর প্রপাগান্ডার বিষয়টি আমরা জেনেছি। প্রকৃত সত্য হলো, ২০শে ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক সমবেত হয়। তারা ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশে সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা রক্ষার আহ্বান জানায়। কোনো সময়ই তারা নিরাপত্তা বেষ্টনী বা নিরাপত্তা পরিস্থিতি লঙ্ঘন করার উদ্যোগ নেয়নি। কয়েক মিনিট পরেই সেখানে থাকা পুলিশ ওই গ্রুপকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সবার দেখার জন্য এ বিষয়ে ভিজ্যুয়াল প্রমাণ আছে। ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে বিদেশি মিশন/পোস্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত। একই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আবর্তিত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছে ভারত। জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন আমাদের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে আমাদের দৃঢ় উদ্বেগের কথা অবহিত করেছেন তারা। (দীপু চন্দ্র) দাসের বর্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাই আমরা।
হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ নিয়ে দিল্লির দাবি প্রত্যাখ্যান ঢাকার: ওদিকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শনিবার বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাসভবনের সামনে সংঘটিত বিক্ষোভের ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত, অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘বিভ্রান্তিকর প্রচার’ চালানো হচ্ছে বলে ভারত যে দাবি করেছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। রোববার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের বক্তব্যের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিক্রিয়া জানায়। শনিবার রাতে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র ব্যানারে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনে এসে বিক্ষোভ করেছে একদল লোক। তারা প্রায় ২০ মিনিট ব্যানার নিয়ে বাংলাদেশ হাউসের সামনে অবস্থান করে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়। এ সময় ২০ থেকে ২৫ জনের ওই বিক্ষোভকারীরা ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকিও দেয়। এ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হচ্ছে বলে রোববার বিকালে দাবি করে ভারত। দিল্লিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ওই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ দূতাবাসের জন্য কোনো নিরাপত্তা ঝুঁঁকি তৈরি হয়নি।
ঢাকার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুষ্কৃতকারীদের হাইকমিশনের সীমানার ঠিক বাইরে তাদের কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ দেয়া হয়। ফলে কমপ্লেক্সের ভেতরে অবস্থানরত কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ ধরনের একটি সংঘটিত কর্মসূচি সম্পর্কে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে আগাম কোনো তথ্য জানানো হয়নি। তবে আমরা ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে ভারত সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা লক্ষ্য করেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু দাসকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন হামলা’ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘ভারত এ ঘটনাকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে। আমরা তাদের এমন প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করছি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজনদের বাংলাদেশ সরকার দ্রুত গ্রেপ্তার করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সামপ্রদায়িক পরিস্থিতি ভালো। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এ অঞ্চলের সব সরকারেরই দায়িত্ব।

No comments