বাড়ছে কিশোর অপরাধ by শাহনেওয়াজ বাবলু
সারা
দেশে ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে কিশোর অপরাধের ঘটনা। স্কুলের গণ্ডি পেরুনোর আগেই
অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে, যোগ দিচ্ছে ছোট ছোট অপরাধী চক্রেও। কম বয়সেই
ঘটাচ্ছে ভয়ঙ্কর নানা অপরাধ। দেশের বিভিন্ন স্থানে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব,
রাজনৈতিক গ্রুপিং, প্রেম, মুঠোফোন আসক্তি ও প্রতিহিংসার কারণে হামলা,
নির্যাতন, হত্যা, অপহরণ, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ করছে এসব কিশোররা। এসবের
বাইরেও ইভটিজিং কিংবা মহল্লাভিত্তিক বখাটে গ্রুপ তৈরি করে পরিকল্পিত হত্যা
এবং সহপাঠীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে তারা। কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র ও
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর সারা দেশে কিশোর অপরাধের মতো ঘটনায় প্রায়
পাঁচ শতাধিক মামলা দায়ের হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মামলার সংখ্যা কমলেও
বেড়েছে কিশোরদের অপরাধের মাত্রা ও ধরন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খোদ রাজধানীর উত্তরাতেই আছে কয়েকটি সক্রিয় কিশোর গ্যাং।
এসব গ্রুপের নামেরও নানা বাহার। নাইন স্টার, ডিস্কো বয়েজ, বিগ বস ইত্যাদি। এরকম আরো একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রাজধানীসহ ও দেশের অন্যত্র। এগুলোর বেশিরভাগই কিশোর বয়সী- নবম-দশম শ্রেণি থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এসব গ্রুপের আবার গ্যাং লিডারও রয়েছে, যারা অপেক্ষাকৃত অল্প শিক্ষিত এবং মাস্তান প্রকৃতির।
উত্তরার নাইন স্টার ও ডিস্কো বয়েজ নামের গ্যাং দুটির গডফাদারেরও সন্ধান মিলেছে। তাদের নামেও রয়েছে মামলা, গ্রেপ্তার এবং জামিনের খবরও। পুলিশের তথ্য অনুযাযী, এই দুই গ্রুপের মধ্যে গত কয়েক মাসে সংঘাত-সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে পাঁচটি। এরমধ্যে তিনটি মারামারি, একটি ছুরিকাঘাত এবং একটি খুনের। রাজধানীর মতো ভয়ঙ্কর সব গ্রুপ গজিয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও অনান্য জেলায়। এরা প্রায়ই বিকট হর্ন বাজিয়ে তীব্র গতিতে রাজপথ দাপিয়ে বেড়ায় মোটরসাইকেল, সমবয়সী মেয়েদের নানা সময়ে উত্ত্যক্ত করে, ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেয়, মোবাইলে অশ্লীল ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে, খেলার মাঠে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের ওপর।
২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরায়‘গ্যাং গ্রুপ’ এর হাতে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেনীর ছাত্র আদনান খুন হয়। এর ঠিক এক বছর ১০ দিন পর চট্রগ্রামের জামালখানে আরেক আদনান খুন হয় গ্যাং গ্রুপের হাতে। এই খুনের এক বছর চার মাসের মাথায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এক কিশোরের গুলিতে লোকমান নামের একজন নিহত হন। চলতি বছরের ২১ শে এপ্রিল শবে বরাতের রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকজন কিশোরের হাতে খুন হন নগরীর মডার্ন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র মুমতাহিন হাসান মিরণ। কয়েকদিন পর নগরীর নুরপুর এলাকায় কিশোরের ছুরিকাঘাতে মারা যান এক রিকশাচালক। গত ১৫ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের পাশে আরিফ হোসেন নামে এক কিশোর খুন হয়। এই খুনের পেছনে ছিল মাফিয়া গ্যাং নামের চার কিশোর সদস্য। এর আট দিন পর রাজধানীর চানখারপুলে আরেক কিশোর গ্যাংয়ের হাতে সিজান নামের এক কিশোর খুন হয়। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ ও সাভারে তিন কিশোর রিকশাচালকের হাতে খুন হয় দুই রিকশাচালক। পরে তিনজনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। অল্প সময় বড়লোক হওয়ার আশায় তারা এই কাজ করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়।
বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন: সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় কিশোর অপরাধ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি পারিবারিক গণ্ডিতে সঠিক শিক্ষার অভাবেও অনেকাংশে কিশোর অপরাধের জন্য দায়ী। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজেদের স্বার্থে কিশোরদের অপরাধ জগতে টানছে। অপরাধমূলক কর্মকান্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। ফলে একসময় এই কিশোররা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন শুধু পাড়া-পড়শির নয়, নিজের পরিবারের জন্যও তারা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কিশোররা বর্তমানে অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কিশোর অপরাধপ্রবণতা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রুপ তৈরি করে নানা অপরাধ করছে কিশোররা। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের কুপ্রভাবে অনেকে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে কিশোর অপরাধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শেখ তৌহীদুল ইসলাম বলেন, কিশোর অপরাধীদের মধ্যে এখন তিনটি শ্রেণি রয়েছে। এর মধ্যে বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের পরিবারের কিশোরেরা দারিদ্র্যের কারণে, মফস্বল থেকে বড় শহরে আসা কিশোররা সমাজে টিকে থাকার জন্য এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হচ্ছে এসব কিশোর অপরাধীরাই এক সময় বড় অপরাধী হয়ে উঠে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তোলে। পরিবার ও সরকার প্রত্যেকেরই উচিত নিজের অবস্থান থেকে জরুরি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে এ প্রবণতা ঠেকানো, তা না হলে অপরাধপ্রবণ তরুণ সমাজ দেশের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খোদ রাজধানীর উত্তরাতেই আছে কয়েকটি সক্রিয় কিশোর গ্যাং।
এসব গ্রুপের নামেরও নানা বাহার। নাইন স্টার, ডিস্কো বয়েজ, বিগ বস ইত্যাদি। এরকম আরো একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রাজধানীসহ ও দেশের অন্যত্র। এগুলোর বেশিরভাগই কিশোর বয়সী- নবম-দশম শ্রেণি থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এসব গ্রুপের আবার গ্যাং লিডারও রয়েছে, যারা অপেক্ষাকৃত অল্প শিক্ষিত এবং মাস্তান প্রকৃতির।
উত্তরার নাইন স্টার ও ডিস্কো বয়েজ নামের গ্যাং দুটির গডফাদারেরও সন্ধান মিলেছে। তাদের নামেও রয়েছে মামলা, গ্রেপ্তার এবং জামিনের খবরও। পুলিশের তথ্য অনুযাযী, এই দুই গ্রুপের মধ্যে গত কয়েক মাসে সংঘাত-সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে পাঁচটি। এরমধ্যে তিনটি মারামারি, একটি ছুরিকাঘাত এবং একটি খুনের। রাজধানীর মতো ভয়ঙ্কর সব গ্রুপ গজিয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও অনান্য জেলায়। এরা প্রায়ই বিকট হর্ন বাজিয়ে তীব্র গতিতে রাজপথ দাপিয়ে বেড়ায় মোটরসাইকেল, সমবয়সী মেয়েদের নানা সময়ে উত্ত্যক্ত করে, ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেয়, মোবাইলে অশ্লীল ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে, খেলার মাঠে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের ওপর।
২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরায়‘গ্যাং গ্রুপ’ এর হাতে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেনীর ছাত্র আদনান খুন হয়। এর ঠিক এক বছর ১০ দিন পর চট্রগ্রামের জামালখানে আরেক আদনান খুন হয় গ্যাং গ্রুপের হাতে। এই খুনের এক বছর চার মাসের মাথায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এক কিশোরের গুলিতে লোকমান নামের একজন নিহত হন। চলতি বছরের ২১ শে এপ্রিল শবে বরাতের রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকজন কিশোরের হাতে খুন হন নগরীর মডার্ন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র মুমতাহিন হাসান মিরণ। কয়েকদিন পর নগরীর নুরপুর এলাকায় কিশোরের ছুরিকাঘাতে মারা যান এক রিকশাচালক। গত ১৫ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের পাশে আরিফ হোসেন নামে এক কিশোর খুন হয়। এই খুনের পেছনে ছিল মাফিয়া গ্যাং নামের চার কিশোর সদস্য। এর আট দিন পর রাজধানীর চানখারপুলে আরেক কিশোর গ্যাংয়ের হাতে সিজান নামের এক কিশোর খুন হয়। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ ও সাভারে তিন কিশোর রিকশাচালকের হাতে খুন হয় দুই রিকশাচালক। পরে তিনজনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। অল্প সময় বড়লোক হওয়ার আশায় তারা এই কাজ করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়।
বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন: সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় কিশোর অপরাধ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি পারিবারিক গণ্ডিতে সঠিক শিক্ষার অভাবেও অনেকাংশে কিশোর অপরাধের জন্য দায়ী। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজেদের স্বার্থে কিশোরদের অপরাধ জগতে টানছে। অপরাধমূলক কর্মকান্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। ফলে একসময় এই কিশোররা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন শুধু পাড়া-পড়শির নয়, নিজের পরিবারের জন্যও তারা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কিশোররা বর্তমানে অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কিশোর অপরাধপ্রবণতা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রুপ তৈরি করে নানা অপরাধ করছে কিশোররা। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের কুপ্রভাবে অনেকে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে কিশোর অপরাধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শেখ তৌহীদুল ইসলাম বলেন, কিশোর অপরাধীদের মধ্যে এখন তিনটি শ্রেণি রয়েছে। এর মধ্যে বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের পরিবারের কিশোরেরা দারিদ্র্যের কারণে, মফস্বল থেকে বড় শহরে আসা কিশোররা সমাজে টিকে থাকার জন্য এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হচ্ছে এসব কিশোর অপরাধীরাই এক সময় বড় অপরাধী হয়ে উঠে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তোলে। পরিবার ও সরকার প্রত্যেকেরই উচিত নিজের অবস্থান থেকে জরুরি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে এ প্রবণতা ঠেকানো, তা না হলে অপরাধপ্রবণ তরুণ সমাজ দেশের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠবে।
No comments