‘আমি যখন লিখি না, তখনো আমি লিখি’ -অরুন্ধতী রায়
ছবিমেলা উপলক্ষে সম্প্রতি ঢাকা এসেছিলেন খ্যাতিমান ভারতীয় ঔপন্যাসিক অরুন্ধতী রায়। গত ৪ মার্চ ২০১৯ সকালে ঢাকার একটি পান্থশালায় বসে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের
সঙ্গে দীর্ঘ অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় তিনি উন্মোচন করলেন তাঁর লেখার জগৎ।
কীভাবে লেখক হয়ে উঠলেন তিনি, সেই গল্পের পাশাপাশি জানালেন নিজের আরও সব
বিচিত্র গল্প।
আনিসুল হক: আজকের দিনটা বর্ষামেদুর।
আপনার দ্য গড অব স্মল থিংস-এর শুরুর বিবরণের মতো, ভেজা আর শেওলাময়। আমরা
সরাসরি আপনার সাহিত্য নিয়ে কথা বলি! আপনি পড়তে গেলেন স্থাপত্যবিদ্যা।
ছাত্রজীবনে আপনার কি স্বপ্ন ছিল যে লেখক হবেন?
অরুন্ধতী রায়: না। ঠিক তা নয়। তবে আমি
যখন খুব ছোট ছিলাম, পাঁচ বা ছয় বছর, তখন আমার অবস্থা এমন ছিল যে কেবল লেখা
ছাড়া আমি আর কিছু করতাম না। এমন না যে আমি ঔপন্যাসিক হতে চেয়েছিলাম বলে
লিখতাম। সেটাই ছিল আমার নিজেকে প্রকাশ করার একমাত্র উপায়। ষোলো বছর বয়সে
কেরালা থেকে দিল্লিতে এলাম। কেরালায় খুব বদ্ধ সমাজ ছিল। এটা
কমিউনিস্ট-অধ্যুষিত, কিন্তু খুব সনাতনপন্থী। একজন মেয়ের জন্য পরিস্থিতিটা
কঠিন ছিল। আমি গৃহত্যাগ করলাম। বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।
সতেরো বছর বয়স থেকে নিজে নিজে চলতে শুরু করলাম। স্থাপত্যে
পড়ার সেই দীর্ঘ বছরগুলোয় আমার কোনো উচ্চাভিলাষ ছিল না। জীবন নিয়ে আমি
ভাবিনি, ভেবেছি শুধু কীভাবে বাসা ভাড়া জোগাড় করতে পারব! কীভাবে টিকে থাকব,
সেটাই ছিল ভাবনা। আমি লেখক হব—এটা ভাবা তো অসম্ভব ছিল।
আনিস: স্থপতি হবেন, সেই আকাঙ্ক্ষা তো ছিল?
অরুন্ধতী: আমার কখনোই কোনো আকাঙ্ক্ষা ছিল
না। এখনো নেই। আমি যখন কোনো একটা কাজ করি, তখন ওই কাজটা শেষ করার একটা
শৈল্পিক উচ্চাশা থাকে; কিন্তু আমার কোনো দিনও এই আকাঙ্ক্ষা ছিল না যে আমি
এটা হব, ওটা হব। স্থাপত্যের ছবি আঁকা, নগর-পরিকল্পনা—এসব আমার পছন্দের ছিল।
তারপর আমার কোনো টাকা ছিল না। আমার জীবন ছিল তিলোত্তমার মতো (দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস-এর চরিত্র।)
নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগার পাশে একটা রুমে কোনোরকমে থাকতাম আমি। তখন
একজনের সঙ্গে আমার দেখা হলো, যাঁর স্ত্রী আমার অফিসে কাজ করতেন। তিনি ছিলেন
চিত্রনির্মাতা। তিনি আমাকে তাঁর ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। অভিনয়ে আমি
আগ্রহী ছিলাম না, আমার আগ্রহ ছিল চলচ্চিত্র নির্মাণে। তো, আমি ছবিতে অভিনয়
করলাম; এবং ছবির চিত্রনাট্য লিখলাম। স্থাপত্যের ছেলেমেয়েদের নিয়ে...
আনিস: তারপর ওই ছবির জন্য জাতীয়
পুরস্কার পেলেন। দুটো পুরস্কার পেয়েছিলেন আপনারা। এরও অনেক বছর পর ভারতের
মুক্তচিন্তার লেখকদের ওপরে হামলার প্রতিবাদে যে পুরস্কার আপনি ফিরিয়েও
দেবেন!
অরুন্ধতী: ও হ্যাঁ। তখন কিন্তু আমি পুরস্কার গ্রহণ করেছিলাম। এখন আমি সেই পুরস্কার ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি।
আনিস: আপনি বলেছিলেন, ফেরত পাঠানোর মতো পুরস্কার দুটোর বেশি আপনার নেই। আপনার কৌতুকবোধ ভীষণ তীব্র। আপনি কি দু-একটি বাংলা শব্দ বোঝেন?
অরুন্ধতী: একটি-দুটি বুঝি। বেশি না। আমার
বাবা বাংলাদেশের। বরিশালের। তবে আমার এক বছর বয়স থেকেই বাবা-মায়ের
ছাড়াছাড়ি হয়। কেরালাতে মায়ের কাছে আমি বড় হই। সুতরাং আমার ভাষা কেরালার।
মালয়লি। এখন হিন্দি।
আনিস: এবারে আমাদের বইমেলায় বৃষ্টি হচ্ছিল। তাকিয়ে দেখি, ছাদের নিচে বৃষ্টির ফোঁটা জমেছে, অ্যাবাকাসের মতো। আপনি এই উপমাটা লিখেছিলেন দ্য গড অব স্মল থিংস-এ।
আপনার লেখায় এই রকম সৌন্দর্য থাকে। সর্বতোভাবে আপনি একজন শিল্পী। আপনার কি
কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ আছে লেখালেখির বিষয়ে? ক্রিয়েটিভ
রাইটিংয়ের কোনো কোর্স করেছেন?
অরুন্ধতী: ক্রিয়েটিভ রাইটিং কোর্সে আমি
বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয়, ক্রিয়েটিভ রাইটিং কোর্সগুলো পণ্য উৎপাদন করতে
শেখায়। হয়তো তারা নিম্নমানের লেখককে মাঝারি লেখকে উন্নীত করে। তবে তারা
ভালো লেখককেও মাঝারি বানিয়ে ছাড়ে।
আনিস: আপনি কি জেমস জয়েসের পোর্ট্রেট অব দ্য আর্টিস্ট এজ আ ইয়াংম্যান
অরুন্ধতী: আমি এমন কাউকে সচরাচর দেখি না, যিনি ইউলিসিস গোটাটা
পড়েছেন। ছোট্ট গ্রাম আয়েমেনেমে শৈশব কাটিয়েছি আমি। আমার জন্য এটা একটা
সুবিধা ছিল যে সেখানে কোনো দোকান ছিল না, সিনেমা হল ছিল না, টেলিফোন,
টেলিভিশন, রেস্তোরাঁও ছিল না। সেখানে ছিল নদী, পোকামাকড়, মাছ, গাছপালা।
তারাই ছিল আমার খেলনা। কিন্তু প্রতি তিন মাস পরপর আমাদের কাছে মাদ্রাজের
ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে আসত এক শ বই। সেসব পড়ে আমরা আবার ফেরত দিতাম। কাজেই
প্রচুর পড়েছি। কেরালা ভারতের অন্য অঞ্চলগুলোর চেয়ে আলাদা। অনন্য। ভারতের
অন্যান্য অঞ্চলে গ্রাম, ছোট শহর, বড় শহর—এগুলো আলাদা আলাদা; গ্রামগুলো
শহরের সাংস্কৃতিক গতি থেকে বিচ্ছিন্ন। কেরালা সে রকম নয়। এখানেও শহর আছে,
গ্রাম আছে। কিন্তু তাদের সংযোগটা প্রাকৃতিক। গ্রামে থেকে আপনি দেখতে
পাচ্ছেন বর্ণপ্রথা; কিন্তু আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে রোডস স্কলারের।
চোখের সামনেই বহু কিছু ঘটতে দেখছেন। শহরের আইডিয়াগুলো, বইপড়া—সবই আপনি
পাচ্ছেন। আবার গ্রামের জীবনকে কাছে থেকে দেখছেন। আমি যদিও ওই সমাজের অংশ
ছিলাম না, তবে সব দেখছি।পড়েছেন?আনিস: আপনি কি পোর্ট্রেট অব দ্য আর্টিস্ট এজ আ ইয়াংম্যান পড়েছিলেন?অরুন্ধতী: হ্যাঁ। পড়েছিলাম। আমি পড়েছিলাম কিপলিং, শেকস্পিয়ার...
আনিস: হ্যাঁ। আমি আপনার ইউটিউব সাক্ষাৎকার দেখেছি, সেখানে আপনি বলেছেন আপনি শেক্সপিয়ার মুখস্থ বলতে পারতেন, জেন অস্টিন পড়েছেন।অরুন্ধতী: কিন্তু এমন না যে আমি খুব বেশি পড়ুয়া মানুষ।
আনিস: তাহলে আপনি কী করে এত সুন্দর একটা উপন্যাস লিখে ফেললেন? আপনার দ্য গড অব স্মল থিংস নিয়ে একটামাত্র সমালোচনা আছে, বইটা অতিলিখিত। বেশি ঘষামাজা করা! তাই তো? কত দিন লাগল ওই উপন্যাসটা লিখতে?
আনিস: হ্যাঁ। আমি আপনার ইউটিউব সাক্ষাৎকার দেখেছি, সেখানে আপনি বলেছেন আপনি শেক্সপিয়ার মুখস্থ বলতে পারতেন, জেন অস্টিন পড়েছেন।অরুন্ধতী: কিন্তু এমন না যে আমি খুব বেশি পড়ুয়া মানুষ।
আনিস: তাহলে আপনি কী করে এত সুন্দর একটা উপন্যাস লিখে ফেললেন? আপনার দ্য গড অব স্মল থিংস নিয়ে একটামাত্র সমালোচনা আছে, বইটা অতিলিখিত। বেশি ঘষামাজা করা! তাই তো? কত দিন লাগল ওই উপন্যাসটা লিখতে?
অরুন্ধতী: চার-সাড়ে চার বছর?
আনিস: আপনি তো রোজ লিখতেন, না? সব মিলিয়ে উপন্যাসটির শব্দ কত, আশি হাজার?
অরুন্ধতী: এক লাখ।
আনিস: তাহলে তো রোজ লেখার দরকার পড়েনি!
অরুন্ধতী: না। আমি রোজ লিখতাম। এমন না যে
আমি লিখতাম, আর পছন্দ হতো না বলে ছুড়ে ফেলে দিতাম। আমি যখন লিখি না, তখনো
আমি লিখি। মনে মনে লিখি।আমার কাছে লেখালেখি ব্যাপারটা সংগীতের মতো। আমি এটা
শুনি, দেখি না।
আনিস: দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস-এ
আপনি বলেছেন কীভাবে একটা লন্ডভন্ড গল্প বলতে হয়। একটা গুবরে পোকার কথাও
লিখেছিলেন উপন্যাসের শেষ অনুচ্ছেদে। একটা গোবরের পোকা চিত হয়ে পা উঁচু করে
আছে। যদি আকাশ ভেঙে পড়ে, সে তার পা দিয়ে আকাশের পতন রোধ করবে।
অরুন্ধতী: হ্যাঁ। গোবরের পোকা। গুই কিয়োম।
আনিস: গুই ইজ শিট, রাইট?
অরুন্ধতী: হ্যাঁ। কাশ্মীরি শব্দ।
আনিস: বাংলাও অনেকটা তাই। আচ্ছা, এবার বলুন, আপনার এই বইয়ের শেষ বাক্যটা হলো, ‘মিস উদয়া জেবিন ওয়াজ কাম।’ এই ‘ওয়াজ’ (was) টি কেন?
অরুন্ধতী: এটা বিবলিকাল। ‘হ্যাড কাম’
(had come) দিলে সেটা স্বাভাবিক হয়ে যেত। বাইবেলে লেখা হয়, ধরা যাক,
ক্রাইস্ট ওয়াজ কাম। আপনি আমার বইয়ে উদয়া জেবিনের জন্মের বর্ণনাটা খেয়াল
করেছেন? এটা এই বইয়ের গোপন রহস্য, যা উন্মোচন করার জন্য আপনাকে বারবার পড়তে
হবে। ‘দ্য ন্যাটিভিটি’ অধ্যায়ে আছে, ‘সে আবির্ভূত হলো আকস্মিকভাবে,
মধ্যরাতের পর। কোনো দেবদূত গাইল না, কোনো ওয়াইজমেন গিফট আনল না। কিন্তু
পুবের আকাশে তার আগমনকে স্বাগত জানাল নিযুত তারা।’ ক্রাইস্টের যা ঘটেছে,
এখানে ঘটল তার উল্টো। সে একটা মেয়েবাচ্চা, সে কালো। জেসাসকে স্বাগত জানাল
সব সুন্দর সৃষ্টিরা—ঘোড়া, গরু, মেষ। আর এখানে সব প্লাস্টিক ব্যাগ, পথের
কুকুর। কংক্রিট রঙের টিকটিকি।
আনিস: এখন বুঝতে পারলাম। আচ্ছা,
দ্বিতীয় যেটি বলার ছিল: দেখুন, আমিও নিজেকে একটা গোবরের পোকা মনে করি, আমি
পা দিয়ে আকাশের ভেঙে পড়া রোধ করব বলে ভাবি, কিন্তু আসলে তো আকাশ ভেঙে পড়লে
আমি কিছুই করতে পারব না। আমেরিকায় ট্রাম্প, ভারতে গুজরাত কি লালা,
পাকিস্তানে ইমরান খান।
অরুন্ধতী: এবং এরদোয়ান।
আনিস: আপনি বলে থাকেন, আমরা ইতিহাসের
সবচেয়ে বিপজ্জনক সময় পার করছি। চার বছর আগেও আপনি তা-ই বলেছেন, চার বছর
পরেও বলবেন, আমরা কি সব সময় সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ই পার করব? কাজেই আমার মনে
হয় আমরা গুবরে পোকা, আমরা আকাশের ভেঙে পড়া রোধ করতে পারব না।
অরুন্ধতী: কিন্তু ওই পোকাটা বিশ্বাস করে যে সে আকাশকে রক্ষা করতে পারবে।
আনিস: আমি একটা পোকা। আমি বিশ্বাস করি পারব। কিন্তু বাস্তবে আমরা পারি না।
অরুন্ধতী:
হয়তো আমরা পারব। বলার কথা হলো, আমরা পারি বা না পারি, আমরা আমাদের পা
নামাচ্ছি না। আমাদের পা তুলে ধরে থাকতেই হবে। যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা
আমাদের কাজ করে যাব। তারা তো তাদের কাজ করে যাচ্ছে। আমি এটা দেখেছি, বিশেষত
ভারতে যে,যাঁরা বেশি চিন্তা করেন, তাঁরা বেশির ভাগই বিষাদগ্রস্ত। কিন্তু
আমি যখন অরণ্যের ভেতরে হাঁটি, কমরেডদের সঙ্গে হাঁটি, বা কাশ্মীরে যাই,
যাঁদের দেখি, তাঁরা হয়তো একটু পরে মারা যাবেন, তাঁরাও বিষণ্ন, কিন্তু তাঁরা
সব সময় মন খারাপ করে থাকেন না। তাঁদের মধ্যেও হাস্যরস আছে।
আনিস: তাই তো! একটা মানুষ সব সময় মন
খারাপ করে থাকতে পারে না। যেমন একটা মানুষ সব সময় সাহসী নয়। একই মানুষ—কখনো
সে ভিতু; কখনোবা মুহূর্তের প্রয়োজনে সে সাহসী।
অরুন্ধতী: হ্যাঁ। একজন লেখককেও তেমনি হতে
হয়। আপনি সব সময় শুধু সাহসী হবেন তা তো নয়।আমি খুব বিরক্ত হই যখন লোকে
আমাকে বলে যে আপনি খুব সাহসী। আদতে আপনাকে জানতে হবে এই সমাজে আপনি কী করে
টিকে থাকবেন। কখন আপনাকে এগোতে হবে। কখন আপনাকে পেছাতে হবে। কখন সাহসী হতে
হবে, আর কখন আপনাকে হতে হবে শুধুই কিউট। আপনাকে খেলতে হবে।
আনিস: মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস পড়ার
পর আমার খুব অনুশোচনা হয়েছিল। ভাবছিলাম, অরুন্ধতী এই ধরনের একটা বই লিখে
ফেলতে পারলেন, আমরা তো পারছি না। আমি শৈল্পিক উচ্চতার কথা বলছি না। যে
বিষয়গুলো আপনি এখানে বেছে নিয়েছেন, বলছি তার কথা—আদিবাসী, মাওবাদী,
কাশ্মীর, হিজড়া, গোরক্ষা আন্দোলন। আপনি বলেছেন, ভারতে একটা নারী হয়ে
জন্মানোর চেয়ে গরু হয়ে জন্মানো নিরাপদ। আমিও তো প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক
হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলাম। ওই যে বললেন, কখন পেছাতে হবে, কখন কিউট হতে
হবে, সেসব শিখে ফেলেছি। আমার একটা পর্যবেক্ষণ হলো, এই বই লিখেও আপনি ভারতে
থাকতে বসবাস করতে পারছেন। ঠিক তো? তাহলে ভারত অনেক পরমতসহিষ্ণু দেশ।
অরুন্ধতী: ভারত অনেক চালাক। দেখুন,আমি
যখন এই বইটা লিখছিলাম, আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছিলাম। আমি আমাকে বলছিলাম, দেখো,
তুমি এটা লিখে ফেলো। তারপর তুমি এটা একটা ড্রয়ারে বন্দী করে রেখো। প্রকাশ
করো না। কারণ, ওই সময় পরিবেশটা ছিল খুবই ভীতিকর। কিন্তু যখন আপনি লেখাটা
শেষ করে ফেলেন, তখন আপনার লেখক সত্তা আপনাকে আর ওই লেখাটা ড্রয়ারে ফেলে
রাখতে দেয় না। তাই যখন ২০১৬ সালে এই বই লেখা প্রায় শেষ করে আনি, সে সময়
ছাত্রদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, টিভিতে চিৎকার করে বলা হচ্ছে, ওই যে
অরুন্ধতী রায়, সে হচ্ছে এই সবকিছুর পেছনের পরিকল্পক। আমি এত ভয় পেয়ে গেলাম
যে ভারত ছেড়ে গেলাম। আমি ভয় পেয়েছিলাম আমার নিজের জন্য নয়। আমার বইটার
জন্য। আমি এই বইটা নিয়ে দশ বছর ধরে কাজ করছি। আমাকে এটা শেষ করতে হবে। তবে
আমি আবার ফিরেও এলাম। কারণ, আমি বাইরে থাকতে পারি না। আমি যে ভারতে থাকতে
পারছি তার কারণ আমি যা নিয়ে লিখেছি তা নিয়ে চারপাশে যে সংহতি বিরাজ করে,
সেটা। সুতরাং কখনো এই ভুল করবেন না যে কৃতিত্বটা সরকারকে দেবেন। আমি বইটা
লিখেছি। তারপর প্রকাশ করতে দিয়েছি। এরপর আমি ভারত ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছি। সব
জায়গায় গিয়েছি। কথা বলেছি। এটা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হতে শুরু করেছে। ২৬টা
ভাষায়। এখন তো ৪৯টা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। এটা আমার রক্ষাকবচ। কাজ আমাদের
রক্ষা করে। পাঠকেরা আমাদের রক্ষা করেন। একই কথা শহিদুল আলমের বেলাতেও
প্রযোজ্য। তাঁকে রক্ষা করেছে তাঁর শিল্প, তাঁর কাজ।
আনিস: আপনি কি দেরিদা, ফুকো, এডওয়ার্ড সাঈদ, উত্তর-উপনিবেশিকতা, উত্তর-আধুনিকতা ইত্যাদি নিয়ে অনেক পড়েন?
অরুন্ধতী: না না। আমি অত পড়ি না। আমি
এডওয়ার্ড সাঈদ পড়েছি। তবেআমি ঔপন্যাসিক হিসেবে আমার ভাষা ধরে রাখতে চাই।
আমার বিশ্লেষণ ধরে রাখতে চাই। ধরা যাক, দ্য গড অব স্মল থিংকস। আমি
কিন্তু এটা লেখার আগে অত পড়িনি। কিন্তু লেখা হয়ে যাওয়ার পরে দেখা গেল,
ভারতের বর্ণপ্রথা, বামপন্থীদের সমস্যা—নানা কিছুই এতে আছে। কারণ, আমি আমার
সহজাত প্রবৃিত্ত বা ইনস্টিংক্টের ওপরে ভরসা রেখেছিলাম।
আনিস: আপনার সবচেয়ে প্রিয় লেখক কে?
অরুন্ধতী: এই প্রশ্নের উত্তর কখনো দেব
না। কারণ কত লেখক। আবার ধরুন কিপলিং। তিনি তো একজন সাম্রাজ্যবাদী লেখক।
কিন্তু কী চমৎকার দক্ষ লেখক তিনি! অবশ্যই লেখকদের মধ্যে টনি মরিসন, জেমস
বলডউইন—এঁরা আছেন। কিন্তু গড অব স্মল থিংস-এ মন্দিরে যে কথাকলি নৃত্য
হয়,আমার লেখার ধরন, কী করে লিখতে হয়, এটা এসেছে ওই নৃত্যের আঙ্গিক থেকে।
নৃত্যশিল্পীরা ধীরে ধীরে প্রতিটি জিনিসে পরিণত হয়। দে স্লোলি বিকাম
এভরিথিং। তারা সমুদ্র হয়, জঙ্গল হয়, পাখি হয়। কিন্তু আমি চেষ্টা করি নিজের
পারস্পেকটিভ থেকে জগৎটাকে দেখতে। আর আমার নিজের ভাষা তৈরি করতে।আপনি কি
আমার ওই প্রবন্ধ পড়েছেন, কোন ভাষায় লেখা এবং চিন্তা করা নৈতিকভাবে ঠিক হবে?
আনিস: জি। পড়েছি। খুব সুন্দর, খুব
সুন্দর লেখা। আর আমি সেই কলকাতার ভদ্রলোকের কথা ভাবছিলাম, যিনি জিজ্ঞেস
করেছিলেন, অরুন্ধতী, মাতৃভাষায় না লিখে কেউ কি মাস্টারপিস লিখতে পেরেছেন?
অরুন্ধতী: হা হা হা। আমাকে তাই অনেক লেখকই প্রভাবিত করেছেন, তবে আমি সব সময় আমার বাস্তবতাকে তুলে ধরার জন্য ভাষা খুঁজে আসছি।
আনিস: ৩৫ বছর বয়সের আগে আপনি উপন্যাস
লেখেননি। আপনি ঔপন্যাসিক ছিলেন না। কী করে আপনি এই রকম একটা চমৎকার ভাষায়,
চমৎকার চিত্রকল্পে ভরা এমন একটি উচ্চাভিলাষী উপন্যাস লিখে ফেললেন?
অরুন্ধতী: কারণ, আমি মোটেও উচ্চাভিলাষী ছিলাম না। আমি ছিলাম স্থপতি, তারপর সিনেমায় কাজ করেছি।
আনিস: আপনাদের ছবিটাও তো ছিল ভাষা নিয়ে।
অরুন্ধতী: হ্যাঁ। আমরা একটা ভাষায় কথা
বলতাম, স্থাপত্যবিদ্যায় পড়ুয়ারা, কিন্তু সেই ভাষাটা কোথাও দেখতাম না। আমরা
সিনেমাটা বানালাম। এরপর আমি আর ওদের সঙ্গে আর কাজ করতে চাইনি। উপন্যাস
লিখতে শুরু করলাম।আমি যখন লিখি, তখন আমি ভাবিনি যে এটা কি ৮০ লাখ বিক্রি
হবে, বুকার পুরস্কার পাবে, নাকি দুই কপিও বিক্রি হবে না। আমি ভেবেছিলাম,
কেউ এটা বুঝবে না। তিনজন লোক মাত্র এটা পড়বে। কিন্তু আমি ভেবেছি, তা-ই সই।
তারপর এটা যখন এত বড় ব্যাপার হয়ে গেল, আমার ইনস্টিংক্ট বলতে লাগল,
পশ্চাৎপসরণ করো। কারণ, তখন তো প্রকাশকেরা আপনাকে দিয়ে লেখাতে চাচ্ছে,
আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে, গড অব স্মল থিংস-এর পরের খণ্ড লেখো, গড অব স্মল থিংস-এর ছেলেকে নিয়ে লেখো। ফ্যাক্টরি প্রোডাক্ট চালিয়ে যাও।
আনিস:আপনার হয়তো এমন বিলাসিতা করা
সাজে। কেননা প্রথম উপন্যাস লেখার পর আপনি পাঁচ লাখ পাউন্ড অগ্রিম পেয়েছেন,
বুকার পুরস্কার পেয়েছেন, টাকার আর কোনো চিন্তা আপনার নেই।
অরুন্ধতী: দেখুন, চিত্রতারকাদের এই
বিলাসিতা করার মতো টাকা আছে। অনেকেরই আছে। কিন্তু কোনো অঙ্কের টাকাকেই কি
তাঁরা যথেষ্ট মনে করেন? আমার বেলায় যেটা হলো, এত টাকা দেখে আমি ভয় পেয়ে
গেলাম।
আনিস: এবং আপনি বলেছেন, এটা খুব কঠিন টাকা খরচ করা, বা টাকার সঙ্গে চলা।
অরুন্ধতী: হ্যাঁ। আমি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম। আমি কোনো দিনও দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস
লিখতে পারতাম না, যদি আমি প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি সই করে ফেলতাম। আমাকে
অন্য ধরনের ঝুঁকি নিতে হলো। এটা যত কঠিন হয়ে উঠতে লাগল, আমি সেটাকেই এগিয়ে
নিয়ে যেতে লাগলাম। এই বইটা যে ৪৯ ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে, এটা আমার জন্য একটা
ধাক্কা।
আনিস: আপনি মাওবাদীদের কাছে গেছেন, জঙ্গলে; কাশ্মীরে গেছেন, গুজরাতে গেছেন। এসব কি কেবল উপন্যাস লেখার জন্য?
অরুন্ধতী: আমি গিয়েছি। কিন্তু আমি কোথাও লিখব বলে যাইনি। আর এগুলো একেক সময় একেকটা ঘটেছে।
আনিস: আপনি কি রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন?
অরুন্ধতী: না। তেমন না। অনেকেই বলে, বাংলা না জানলে নাকি রবীন্দ্রনাথ পড়া হয়ে ওঠে না।
আনিস: লোকে বলে বটে। তবে আমরা তো তলস্তয় পড়ি।
অরুন্ধতী: হ্যাঁ। তা পড়ি বটে।
আনিস: তলস্তয় তো আমাদের নিজস্ব
তলস্তয়, না? এটি যেকোনো লেখা সম্পর্কেই বলা যায়। আমরা যা পড়ি, তাকে নিজের
মতো করে নিই। আপনার বই যখন পড়ি, আমি তো বাংলা জানি, অল্প ইংরেজি জানি,
আপনার বইকে আমার নিজের মতো করে নিই।
অরুন্ধতী: আমি শুনেছি, আমার বই অনুমতি না নিয়ে বাংলায় অনুবাদ হয়েছে। জানি না কেমন হয়েছে।
আনিস: পাইরেসি সম্পর্কে আপনার মত কী?
অরুন্ধতী: আমি খুশি।
আনিস: আজ ৪ মার্চ আমার জন্মদিন।
আজকের সকালটি নিয়ে আমার মধ্যে একটু দ্বিধা ছিল—না জানি জন্মদিনের সকালটা
কেমন হবে। অরুন্ধতী তো শক্ত মানুষ, না জানি রাগী কি না।
অরুন্ধতী: শুভ জন্মদিন! কেন লোকে আমাকে
রাগী ভাবে?আমি একদম রাগী নই। তবে কেন তারা আমার ওপর রাগ করে, জানেন। কারণ,
আমি হাসি। আমি তাদের হাসিমুখে জবাব দিই। আমি তাদের নিয়ে হাসাহাসি করি।
আনিস: আপনার এই যে প্রতিবাদী সত্তা, এটা কোথা থেকে এসেছে, জানেন?
অরুন্ধতী: কোথা থেকে?
আনিস: বরিশাল থেকে। বরিশালের লোক প্রতিবাদী হয়।
অরুন্ধতী: ও, বরিশাল। আমি বরিশাল যেতে চাই। আমার বাবার বাড়ি লাকুতিয়া। কতক্ষণ লাগে যেতে?
আনিস:আপনি বরিশাল গেলে আমাকে সঙ্গে
নেবেন। আচ্ছা, বলুন তো, দু বছর বয়সে আপনি আপনার বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে গেলেন। তারপর বিশ বছর পরে আপনার সঙ্গে আপনার বাবার দেখা হলো। ছোটবেলায়
আপনি শিলংয়ের চা-বাগানের বাগানিয়া ভাষা শিখেছিলেন। তো, বাবা কুড়ি বছর পর
প্রথম দেখায় আপনাকে বললেন, তোমার মুখ কি আগের মতো খারাপ আছে। তোমার গায়ে
সিগারেটের খোঁচা লেগেছিল, তুমি আমাকে গালি দিয়েছিলে, চু...য়া। কী বলেছিলেন
আপনি?
অরুন্ধতী: চুতিয়া।
আনিস: আর কোনো বাংলা শব্দ জানেন? জল, ভাত?
অরুন্ধতী: মাছ।
আনিস: আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার অনেক বেশি সময় নিয়েছি। আপনি আমাদের উপহার দিয়েছেন একটি স্মরণীয় দিন।
অরুন্ধতী: আমারও খুব ভালো লাগল। ধন্যবাদ।
অরুন্ধতী রায়ের দুই ভুবনে
কেবল তাঁর লেখা নয়, তাঁর কথা ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিও
মানুষের প্রবল আকর্ষণ। ৪ মার্চ সকালে এক আড্ডায় অরুন্ধতী রায় নিজেও এই
আকর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করলেন। সেই আড্ডার আলোচনা থেকে জানা গেল অরুন্ধতীর
দুই ভুবনের কিছু খোঁজখবর। সেগুলো জানাচ্ছেন তৌহিদা শিরোপা।
লেখার ভুবনে
● ভারতীয় খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক অরুন্ধতী রায়ের সাড়াজাগানো
প্রথম উপন্যাস দ্য গড অব স্মল থিংস অনূদিত হয়েছে চল্লিশটির বেশি ভাষায়।
উপন্যাসটি তিনি তাঁর মা ও বড় ভাইকে উৎসর্গ করেছিলেন। বই কত বিক্রি হবে বা
তিনি বড় লেখক হবেন কি না, সেসব নিয়ে কখনোই ভাবেননি অরুন্ধতী। তিনি মনে
করেন, আকাঙ্ক্ষা নেই বলে হয়তো তিনি সফল।
● তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস অনুবাদ হয়েছে ৪৯টি ভাষায়।
● একদিন রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে ছিল অরুন্ধতীর গাড়ি।
সে সময় এক বই বিক্রেতা তাঁর গাড়ির কাচে টোকা দিতে থাকেন। তাঁকে তাঁর দ্য
মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস বইটি দেখিয়ে ওই বিক্রেতা তাঁকে বলেন তিনি
এটি কিনবেন কি না। তিনি যদি বইটি কেনেন, তবে অর্ধেক দামে তাঁকে তিনি বইটি
দেবেন। আসলে সেটি ছিল পাইরেটেড কপি। যাহোক, বিক্রেতার কথা শুনে অরুন্ধতী
তাঁর নিজের দিকে আঙুল দেখিয়ে তাঁকে বললেন, তিনিই অরুন্ধতী, আর এটি তাঁরই
বই। এরপর সেই বই বিক্রেতা খুবই লজ্জা পেলেন। ঘটনাটি অরুন্ধতীর কাছে খুব
ভালো লেগেছে। আড্ডায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইরেটেড হলেও লোকে তো আমার
বই পড়ছে, কিনছে। আমার বই কেউ কিনে পড়বে, সেই ভাবনাই তো আমার ছিল না। তাই
খুব ভালো লেগেছিল ব্যাপারটি।’
● বহু লেখকের কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত অরুন্ধতী। তাঁকে
বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন রুডইয়ার্ড কিপলিং, জেমস বলডউইন, টনি মরিসনসহ
অনেকেই।
● গবেষণা করে লিখতে হবে, এমন ধারণায় বিশ্বাসী নন অরুন্ধতী। লেখার ক্ষেত্রে তিনি নিজেও তা করেন না।
● অন্যরা অরুন্ধতীকে ‘অ্যাকটিভিস্ট’-এর তকমা দিতে চাইলেও
শব্দটি নিয়ে আপত্তি আছে তাঁর। তিনি বলেন, মনে হয় আমাদের শব্দভান্ডারে
শব্দটি নতুন যুক্ত হয়েছে। আমার বড় পরিচয় আমি লেখক। যাঁর যা কাজ, সেটা
ঠিকভাবে করতে হবে এবং সেটাই করা উচিত।
অন্য ভুবনে
● অরুন্ধতীর বাবার বাড়ি ছিল বাংলাদেশের বরিশালে। তিনি ছিলেন
চা-বাগানের ম্যানেজার। কিন্তু অরুন্ধতীর বয়স যখন দুই বছর, তখন তাঁর
মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। সে কারণে তখন থেকে মায়ের কাছে কেরালায় বেড়ে উঠেছেন এই
লেখক।
● বাবা বাঙালি হলেও অরুন্ধতী বাংলা বলতে ও পড়তে পারেন না। কয়েকটি বাংলা শব্দ জানেন, কেউ বাংলায় কথা বললে কিছু কিছু বুঝতেও পারেন।
● অরুন্ধতীর মা কেরালায় একটি স্কুল চালান। বড় ভাইও থাকেন
কেরালায়। পিঠাপিঠি জন্ম হওয়ায় ভাইকে নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধু বলে মনে করেন
অরুন্ধতী।
● অরুন্ধতীর জীবনে মায়ের প্রভাব অনেক বেশি। মায়ের
জীবনসংগ্রামই তাঁকে গল্পের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল সেই ছোটবেলায়। মেয়ে
অরুন্ধতীকে তিনি বলেছিলেন, ‘আর যা-ই করো, কখনো বিয়ে কোরো না।’ অরুন্ধতী মনে
করেন, সম্ভবত তিনিই ভারতের একমাত্র মেয়ে, যাঁকে তাঁর মা এ কথা বলেছেন।
● বিটলসের সব গান, বিশেষ করে জন লেননের গান শুনে সারা দিন কাটিয়ে দিতে পারেন অরুন্ধতী।
● অরুন্ধতী একসময় সিনেমা করেছিলেন। এখনো দেখেন, তবে খুব কম। জানালেন, সিনেমা দেখার জন্য সময় পান না খুব একটা।
● এই ঔপন্যাসিকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মানুষের বিস্তর আগ্রহ।
মানুষ তাঁর সম্পর্কে খবর রাখে। ঢাকায় বিমানবন্দরে নেমে তিনি যখন
ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ান, এ সময় ইমিগ্রেশনের এক কর্মকর্তা তাঁকে পেছন থেকে
ডেকে সামনে আসতে বলেন, তারপর জিজ্ঞেস করেন, আপনি অরুন্ধতী না? সম্মতি
দেওয়ায় খুব সাহায্য করেন তিনি। এমনকি অরুন্ধতীর বইও তিনি পড়েছেন বলে জানান।
কথায় কথায় অরুন্ধতী জানান, ‘ঢাকার এই ঘটনাটি ভীষণভাবে আপ্লুত করেছে
আমাকে।’
No comments