‘জীবনের দাম’ বাড়বে কবে? by মরিয়ম চম্পা
ট্রেন
দুর্ঘটনায় কোনো যাত্রীর প্রাণহানি হলে কিংবা কেউ আহত হলে ৭৬ বছর আগে করা
রেলওয়ে আইনে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ মাত্র ১০ হাজার টাকা। গত বছর রেল কর্তৃপক্ষ
এই ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। বৃটিশ আমলের
ক্ষতিপূরণ আইনে এখনো চলছে রেল। অথচ প্রতিবেশি দেশ ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনায়
কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ ৪ লাখ রুপি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থ দিয়ে জীবনের
মূল্য হয় না ঠিক। কিন্তু দূর্ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের
জন্য ক্ষতিপূরণটা জরুরি। ৭৬ বছর আগে যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হতো এর বর্তমান
বাজার দর ধরলেও প্রায় কোটি টাকা হয়ে যায়। তারা বলছেন, সবকিছুরই মূল্য
বাড়ছে, জীবনের মূল্য বাড়বে কবে?
১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ৮২-এ ধারায় যাত্রীবাহী ট্রেনের দুর্ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষের দায়দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।
এটি সর্বশেষ ১৯৪৩ সালে সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয়, রেল কর্তৃপক্ষের কারণে ট্রেন দুর্ঘটনায় কোনো যাত্রীর প্রাণহানি কিংবা আহত হলে অথবা যাত্রীর কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে এর জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমনকি যাত্রীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তি এবং মালামালের জন্যও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আইনে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাইলে আহতদের আরও কম ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব। এদিকে রেলওয়ে আইনে শুধু টিকিটধারী যাত্রীদেরই ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনায় ট্রেনের যাত্রীর বাইরে (ট্রেনে কাটা পড়ে বা ট্রেনের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষে) কেউ নিহত বা আহত হলে কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। রেলওয়ের তথ্য বলছে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৯ বছরে ৪০০ মানুষ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এবারের বাজেটে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।
বর্তমান আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্ষতিপূরণের হার পুনর্নিধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে গবেষক-অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, ক্ষতিপূরনের টাকার অংক কেন বাড়ছে না সেটা বলা সহজ নয়। মানুষের মৃত্যুর ক্ষতি টাকা দিয়ে পূরণ করা কঠিন। যেহেতু আমাদের সমাজ টাকার ওপর ভর করে আছে সেক্ষেত্রে মানুষের বেঁচে থাকতে টাকা লাগে। দুর্ঘটনায় একজন বাবা যদি নিহত হন সেক্ষেত্রে তার সন্তানদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা লাগে। তবে এখানে আমাদের সমাজ যেহেতু শ্রেণি বিভক্ত। কাজেই সামাজিক, সাংস্কৃতিক মাপকাঠি এবং আর্থিক দিক থেকে তিন থেকে চার শ্রেণির মানুষ রয়েছে সমাজে। ধনী, গরিব, মধ্যেবিত্তসহ অন্যান্য। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় ক্ষতিপূরণ যাদের সবচেয়ে দরকার তারা হলো যাদের কিছু নেই। যাদের পরিবারে উপার্জনক্ষম একজন ব্যক্তি। আহত-নিহত হলে তাদের জন্য একটি কাঠামো হওয়া উচিৎ। শ্রেণিগত যত নিচের দিকের মানুষ হবেন অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণটা তত বেশি হওয়া উচিৎ।
দ্বিতীয়ত, কোনো নারী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলে সেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ হওয়া উচিৎ। বিত্তের মাপকাঠিতে যত উপরের দিকে উঠবেন তত কম ক্ষতিপূরণ পেতে হবে তার। তৃতীয় হচ্ছে, দুর্ঘটনায় কোনো পরিবারের সকল সদস্য মারা গেছে কিন্তু শিশুটি বেঁচে রয়েছে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে উক্ত শিশু বা সন্তানের দায়িত্ব নিতে হবে। টাকা দিয়ে নয় বরং তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আলোকিত ভবিষ্যত ইত্যাদির দায়িত্ব রাষ্ট্রের নিতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৯৪৩ সালে সংশোধনী আইনে রেলওয়ে ক্ষতিপূরণ যদি ১০ হাজার টাকা করা হয় সেটা এখন কতো টাকা হওয়ার কথা। কমপক্ষে ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা। তখনকার সময়ে স্বর্ণের দাম দিয়ে তুলনা করলে তখন ১০ হাজার টাকা দিয়ে যতটুকু স্বর্ণ পাওয়া যেত এখন সেই পরিমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেটা হলে ক্ষতিপূরণের পরিমান প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমি মনে করি আমাদের আয় বেড়েছে, জীবন মান বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে সে তুলনায় একজন নিহতের পরিবারকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া খুবই সামান্য। কোন আইনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সেটা আমার জানা নেই। যদি রুলস এ থাকে তাহলে সেটা পরিবর্তন করতে হবে। একটি পেয়াজের দাম যেখানে এখন ১২ টাকা সেখানে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এর পরিবর্তে ক্ষতিপূরণের পরিমান বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, দুর পাল্লায় রেলওয়ে যাত্রী বীমার একটি ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেখানে টিকেটের সঙ্গে ৫ থেকে ১০ টাকা যুক্ত করে যাত্রী বীমা করা হলে এই ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি সহায়তা করতে পারবে বলে মনে করছি।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, দেশ যখন উন্নত হয় চাহিদা তত বাড়ে। অর্থনৈতিক অবস্থা মানানসই করতে হয়। এগুলো অনেক ক্ষেত্রে এখনো হয়নি। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন আইন পরিবর্তন করা হয়েছে দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে। এবং রেলওয়ের আইনটি কিন্তু সেই পুরানো অবস্থাতেই আছে। রেলওয়ের ১শ বছরের কালভার্ট এখনো ঠিকঠাক করা হয়নি। অর্থাৎ উপরে যতই ফিটফাট হোক না কেন ভেতরে এলোমেলো থাকলে তো হবে না। এই উন্নয়নের গুরুত্ব মানুষের কাছে ওভাবে আসবে না। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সব জায়গাতেই উন্নত করতে হবে। রেলওয়ে আইন যেটা আছে সেটা অনেক পুরানো। সে হিসেবে এই ক্ষতিপূরণের কোনো মূল্যই হয় না। এখানে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের মূল্য দিয়ে আইন প্রণয়ন করা দরকার ছিল। যারা এটা করেনি এটা তাদের ব্যর্থতা। এখন দেশ ডিজিটাল হয়েছে। কাজেই সকল ক্ষেত্রে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের একটি মাপকাঠি রয়েছে। আমাদের দেশে সেরকম ব্যবস্থা নেই। যে সামান্য পরিমান ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় তার একটি স্ট্যান্ডার্ড মান থাকা উচিৎ। রেলওয়ে আইনে যে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের কথা বলা আছে সেটা এখন আপডেট করতে হবে। বিশেষ করে সড়ক পরিবহন আইন যেভাবে আপডেট হয়েছে একইভাবে রেলপরিবহন আইনটি যতদ্রুত সম্ভব আপডেট হওয়া উচিৎ বলে মনে করি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া এটা যাত্রী সাধারণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমানে রেলওয়েতে হাজার কোটি টাকার বেশি বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবং লক্ষ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। এরমধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ বাজেট যেখানে মেগা হয় সেখানে শুধু যাত্রী সাধারণের সহায়তার বিষয় আসলে সেটা ঠেকে যায়। বর্তমান সরকারের আমলে রেলের ভাড়া তিন দফা বেড়েছে। কাজেই ১শ বছর আগে যে দশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে সহায়তা দেয়া হত সেটা এখন দিলে হবে না। এখন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আমরা চাই। আমরা মনে করি এই ক্ষতিপূরণের পরিমান নিহতের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা, পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে ২০ লাখ টাকা এবং আহতদেরকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা এখন সময়ের দাবি।
১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ৮২-এ ধারায় যাত্রীবাহী ট্রেনের দুর্ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষের দায়দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।
এটি সর্বশেষ ১৯৪৩ সালে সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয়, রেল কর্তৃপক্ষের কারণে ট্রেন দুর্ঘটনায় কোনো যাত্রীর প্রাণহানি কিংবা আহত হলে অথবা যাত্রীর কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে এর জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমনকি যাত্রীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তি এবং মালামালের জন্যও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আইনে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাইলে আহতদের আরও কম ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব। এদিকে রেলওয়ে আইনে শুধু টিকিটধারী যাত্রীদেরই ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনায় ট্রেনের যাত্রীর বাইরে (ট্রেনে কাটা পড়ে বা ট্রেনের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষে) কেউ নিহত বা আহত হলে কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। রেলওয়ের তথ্য বলছে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৯ বছরে ৪০০ মানুষ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এবারের বাজেটে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।
বর্তমান আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্ষতিপূরণের হার পুনর্নিধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে গবেষক-অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, ক্ষতিপূরনের টাকার অংক কেন বাড়ছে না সেটা বলা সহজ নয়। মানুষের মৃত্যুর ক্ষতি টাকা দিয়ে পূরণ করা কঠিন। যেহেতু আমাদের সমাজ টাকার ওপর ভর করে আছে সেক্ষেত্রে মানুষের বেঁচে থাকতে টাকা লাগে। দুর্ঘটনায় একজন বাবা যদি নিহত হন সেক্ষেত্রে তার সন্তানদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা লাগে। তবে এখানে আমাদের সমাজ যেহেতু শ্রেণি বিভক্ত। কাজেই সামাজিক, সাংস্কৃতিক মাপকাঠি এবং আর্থিক দিক থেকে তিন থেকে চার শ্রেণির মানুষ রয়েছে সমাজে। ধনী, গরিব, মধ্যেবিত্তসহ অন্যান্য। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় ক্ষতিপূরণ যাদের সবচেয়ে দরকার তারা হলো যাদের কিছু নেই। যাদের পরিবারে উপার্জনক্ষম একজন ব্যক্তি। আহত-নিহত হলে তাদের জন্য একটি কাঠামো হওয়া উচিৎ। শ্রেণিগত যত নিচের দিকের মানুষ হবেন অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণটা তত বেশি হওয়া উচিৎ।
দ্বিতীয়ত, কোনো নারী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলে সেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ হওয়া উচিৎ। বিত্তের মাপকাঠিতে যত উপরের দিকে উঠবেন তত কম ক্ষতিপূরণ পেতে হবে তার। তৃতীয় হচ্ছে, দুর্ঘটনায় কোনো পরিবারের সকল সদস্য মারা গেছে কিন্তু শিশুটি বেঁচে রয়েছে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে উক্ত শিশু বা সন্তানের দায়িত্ব নিতে হবে। টাকা দিয়ে নয় বরং তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আলোকিত ভবিষ্যত ইত্যাদির দায়িত্ব রাষ্ট্রের নিতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৯৪৩ সালে সংশোধনী আইনে রেলওয়ে ক্ষতিপূরণ যদি ১০ হাজার টাকা করা হয় সেটা এখন কতো টাকা হওয়ার কথা। কমপক্ষে ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা। তখনকার সময়ে স্বর্ণের দাম দিয়ে তুলনা করলে তখন ১০ হাজার টাকা দিয়ে যতটুকু স্বর্ণ পাওয়া যেত এখন সেই পরিমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেটা হলে ক্ষতিপূরণের পরিমান প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমি মনে করি আমাদের আয় বেড়েছে, জীবন মান বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে সে তুলনায় একজন নিহতের পরিবারকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া খুবই সামান্য। কোন আইনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সেটা আমার জানা নেই। যদি রুলস এ থাকে তাহলে সেটা পরিবর্তন করতে হবে। একটি পেয়াজের দাম যেখানে এখন ১২ টাকা সেখানে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এর পরিবর্তে ক্ষতিপূরণের পরিমান বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, দুর পাল্লায় রেলওয়ে যাত্রী বীমার একটি ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেখানে টিকেটের সঙ্গে ৫ থেকে ১০ টাকা যুক্ত করে যাত্রী বীমা করা হলে এই ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি সহায়তা করতে পারবে বলে মনে করছি।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, দেশ যখন উন্নত হয় চাহিদা তত বাড়ে। অর্থনৈতিক অবস্থা মানানসই করতে হয়। এগুলো অনেক ক্ষেত্রে এখনো হয়নি। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন আইন পরিবর্তন করা হয়েছে দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে। এবং রেলওয়ের আইনটি কিন্তু সেই পুরানো অবস্থাতেই আছে। রেলওয়ের ১শ বছরের কালভার্ট এখনো ঠিকঠাক করা হয়নি। অর্থাৎ উপরে যতই ফিটফাট হোক না কেন ভেতরে এলোমেলো থাকলে তো হবে না। এই উন্নয়নের গুরুত্ব মানুষের কাছে ওভাবে আসবে না। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সব জায়গাতেই উন্নত করতে হবে। রেলওয়ে আইন যেটা আছে সেটা অনেক পুরানো। সে হিসেবে এই ক্ষতিপূরণের কোনো মূল্যই হয় না। এখানে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের মূল্য দিয়ে আইন প্রণয়ন করা দরকার ছিল। যারা এটা করেনি এটা তাদের ব্যর্থতা। এখন দেশ ডিজিটাল হয়েছে। কাজেই সকল ক্ষেত্রে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের একটি মাপকাঠি রয়েছে। আমাদের দেশে সেরকম ব্যবস্থা নেই। যে সামান্য পরিমান ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় তার একটি স্ট্যান্ডার্ড মান থাকা উচিৎ। রেলওয়ে আইনে যে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের কথা বলা আছে সেটা এখন আপডেট করতে হবে। বিশেষ করে সড়ক পরিবহন আইন যেভাবে আপডেট হয়েছে একইভাবে রেলপরিবহন আইনটি যতদ্রুত সম্ভব আপডেট হওয়া উচিৎ বলে মনে করি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া এটা যাত্রী সাধারণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমানে রেলওয়েতে হাজার কোটি টাকার বেশি বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবং লক্ষ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। এরমধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ বাজেট যেখানে মেগা হয় সেখানে শুধু যাত্রী সাধারণের সহায়তার বিষয় আসলে সেটা ঠেকে যায়। বর্তমান সরকারের আমলে রেলের ভাড়া তিন দফা বেড়েছে। কাজেই ১শ বছর আগে যে দশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে সহায়তা দেয়া হত সেটা এখন দিলে হবে না। এখন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আমরা চাই। আমরা মনে করি এই ক্ষতিপূরণের পরিমান নিহতের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা, পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে ২০ লাখ টাকা এবং আহতদেরকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা এখন সময়ের দাবি।
No comments