অঢেল সম্পদ দুই সিবিএ নেতার by আব্দুল আলীম
বাংলাদেশ
অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সিবিএ’র সভাপতি আবুল
হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অঢেল সম্পত্তি
অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ, বদলি বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে
নামে-বেনামে তারা এ সম্পদ অর্জন করেছেন। বিআইডব্লিউটিএ থেকেই তাদের
বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর তা তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।
গত ১০ই ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করেন বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের মেডিকেল এটেন্ডেন্ট মো. মুজিবর রহমান। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও এ দুই নেতা সরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিআইডব্লিটি’র একাধিক কর্মচারী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পাশাপাশি ভুয়া মামলায় আসামিও হয়েছেন। এমনকি বদলি, বরখাস্ত করা হয়েছে বেশ কয়েক কর্মচারীকে। দুই নেতার অনাচার থেকে বাঁচতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
উল্টো অভিযোগকারীদের নানাভাবে হয়রানি ও নাজেহালের শিকার হতে হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (নিবন্ধন নং বি-২১৭৬) সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের টোল কালেক্টর রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ করা হয়েছে, নিজের নামে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার মাসদাইর মৌজায় ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়ি কিনেছেন। গত ১৫ই নভেম্বর ফতুল্লা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে রেজিস্ট্রি হওয়া দলিলে (নং ১০,৯৪৪) পাকা ভবনসহ জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৮৫ লাখ টাকা। তবে ভবনসহ ওই জমির প্রকৃত বাজারমূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা মৌজায় পৃথকভাবে ১২, ২৭ ও ৪৭ শতাংশ জমি কিনেছেন। সব মিলিয়ে এসব স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ১০ কোটি টাকা। এর বাইরে তিনি ৩২ লাখ টাকা মূল্যের নোয়া গাড়ি (ঢাকা মেট্রো চ-১৯-২৯১৮) ব্যবহার করেন।
রফিকুল ইসলামের গৃহিণী স্ত্রী শাহীদা বেগমের নামে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার ৯৬/১০ এসএস শাহ রোডে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ‘মেসার্স ইব্রাহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’ নামে একটি ডকইয়ার্ড রয়েছে। এটি স্থাপনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে স্ত্রীর নামে শীতলক্ষ্যা নদীতীরে ২০ কাঠা জমি ইজারা নিয়েছেন। রফিক-শাহীদা দম্পতির নাবালক ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসাইনের নামে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার গন্ধাকুল এলাকায় আরেকটি ডকইয়ার্ড রয়েছে। যার নাম মেসার্স ইব্রাহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ডকইয়ার্ড এন্ড ওয়ার্কশপ। এটি নির্মাণের জন্য ইজারা নেয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা তীরের ৬,০০০ বর্গফুট জমি। অথচ বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা, কর্মচারী বা তাদের নিকটাত্মীয়দের নামে নদীর তীরভূমি ইজারা দেয়ার বিধান নেই। এছাড়া রফিকুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তার মেঝ ছেলে ওমর ফারুককে বিআইডব্লিউটিতে মার্কম্যান পদে চাকরি দিয়েছেন।
অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি আবুল হোসেন প্রভাব খাটিয়ে তার জামাতার (মেয়ের স্বামী) নামে করা লাইসেন্সে (এআরটেল বিডি লিমিটেড) বিআইডব্লিউটিএতে রমরমা ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন। এভাবে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। যদিও বিধি অনুযায়ী বিআইডব্লিউটি’র কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা তাদের নিকটাত্মীয় এই সংস্থার লাভজনক কাজে যুক্ত হতে পারেন না। এছাড়া আবুল হোসেন প্রভাব খাটিয়ে আপন ছোট ভাই চল্লিশোর্ধ বয়সী মেহেদী হাসানকে অষ্টম শ্রেণি পাস দেখিয়ে বিআইডব্লিউটি’তে মার্কম্যান পদে চাকরি দিয়েছেন।
বিষয়টি জানাজনি হলে তাড়াহুড়া করে জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স সংশোধন করা হয়। তবে মেহেদীর এসএসসি পাসের সনদে দেখা যায়, তার বয়স চল্লিশের বেশি। অভিযোগে বলা হয়েছে, আবুল হোসেন ও রফিকুল ইসলামের অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস কর্মচারী নিয়োগ ও বদলি। গত আড়াই বছরে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান কার্যালয়, ড্রেজারসহ বিভিন্ন জলযান, নদীবন্দর ও শাখা কার্যালয়গুলোতে বিভিন্ন পদে ৪ শতাধিক কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে।
এর মধ্যে অন্তত দেড়শ’ নিয়োগ দেয়া হয়েছে আবুল হোসেন ও রফিকুল ইসলামের তদবিরে। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা দু’জন জনপ্রতি পাঁচ লাখ থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়া এ দুই সিবিএ নেতা গত আড়াই বছরে কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ২০০ কর্মচারীকে বদলি ও বদলিকৃতদের পছন্দের স্থানে পদায়ন করিয়েছেন। এর বিনিময়ে তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এসব অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করিয়েছেন। তাদের কয়েকজন হলেন বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ১নং যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জীব দাশ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক তুষার কান্তি বণিক, মুজিবর রহমান ও মাযহার হোসেন।
বিআইডব্লিউটিএর একটি সূত্রে জানা গেছে, সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেন বিআইডব্লিউটিএর একজন পরিচালকের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৭৪৩৭) ২০১৬ সালের জুলাই থেকে গত ১১ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ব্যবহার করেছেন। শুধু তাই নয়, গাড়ির পেছনে ব্যয় হওয়া প্রায় ৭ লাখ টাকার জ্বালানি এবং চালকের বেতন-ভাতা ৫ লাখ টাকা বহন করেছে কর্তৃপক্ষ। সমপ্রতি দুদক এক অভিযান চালিয়ে পিডিবির দুই সিবিএ নেতার দখলে থাকা দুটি গাড়ি উদ্ধারের পর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ আবুলের গাড়ি প্রত্যাহার করেছে। তবে আবুল হোসেন দীর্ঘদিন বেআইনিভাবে গাড়িটি ব্যবহার করেছেন- এই তথ্য ধামাচাপা দেয়ার জন্য লগবুকসহ দাপ্তরিক আলামতগুলো ধ্বংসের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএর সিবিএ সভাপতি ও সেক্রেটারির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। ইতিমধ্যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ওই নোটিশে তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি দুদকের পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ দুই সিবিএ নেতার পরিবারের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ও পরিবারের সদস্যদের সকল সম্পদ, ব্যাংক হিসাবসহ ১২ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ২৭শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব তথ্য দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (টিএ) মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. আবদুস ছাত্তারকে এ দুই সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বিআইডব্লিউটিএর সিবিএ নেতাদের দৌরাত্ম্য বন্ধে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সরজমিনে তদন্তপূর্বক সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হলো।
যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিএর সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, যেহেতু আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। তাই দুদকের অনুসন্ধানের বিষয় নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে এতটুকু বলতে পারি- যারা অভিযোগ করেছে তারা বিএনপি জামায়াতের লোক। সিবিএ থেকে আমাদের সরানোর চেষ্টা করেছে, না পেরে তারা দুদকে কিছু মনগড়া অভিযোগ করেছে।
সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, দুদকে আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ দেখেছি। এগুলোর কোনো সত্যতা নেই। আমি যে পদে চাকরি করি এই পদে চাকরি করে আমার চেয়ে জুনিয়ররা আমার চেয়ে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছে। সেই হিসেবে আমার কিছুই নেই।
গত ১০ই ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করেন বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের মেডিকেল এটেন্ডেন্ট মো. মুজিবর রহমান। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও এ দুই নেতা সরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিআইডব্লিটি’র একাধিক কর্মচারী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পাশাপাশি ভুয়া মামলায় আসামিও হয়েছেন। এমনকি বদলি, বরখাস্ত করা হয়েছে বেশ কয়েক কর্মচারীকে। দুই নেতার অনাচার থেকে বাঁচতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
উল্টো অভিযোগকারীদের নানাভাবে হয়রানি ও নাজেহালের শিকার হতে হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (নিবন্ধন নং বি-২১৭৬) সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের টোল কালেক্টর রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ করা হয়েছে, নিজের নামে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার মাসদাইর মৌজায় ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়ি কিনেছেন। গত ১৫ই নভেম্বর ফতুল্লা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে রেজিস্ট্রি হওয়া দলিলে (নং ১০,৯৪৪) পাকা ভবনসহ জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৮৫ লাখ টাকা। তবে ভবনসহ ওই জমির প্রকৃত বাজারমূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা মৌজায় পৃথকভাবে ১২, ২৭ ও ৪৭ শতাংশ জমি কিনেছেন। সব মিলিয়ে এসব স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ১০ কোটি টাকা। এর বাইরে তিনি ৩২ লাখ টাকা মূল্যের নোয়া গাড়ি (ঢাকা মেট্রো চ-১৯-২৯১৮) ব্যবহার করেন।
রফিকুল ইসলামের গৃহিণী স্ত্রী শাহীদা বেগমের নামে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার ৯৬/১০ এসএস শাহ রোডে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ‘মেসার্স ইব্রাহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’ নামে একটি ডকইয়ার্ড রয়েছে। এটি স্থাপনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে স্ত্রীর নামে শীতলক্ষ্যা নদীতীরে ২০ কাঠা জমি ইজারা নিয়েছেন। রফিক-শাহীদা দম্পতির নাবালক ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসাইনের নামে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার গন্ধাকুল এলাকায় আরেকটি ডকইয়ার্ড রয়েছে। যার নাম মেসার্স ইব্রাহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ডকইয়ার্ড এন্ড ওয়ার্কশপ। এটি নির্মাণের জন্য ইজারা নেয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা তীরের ৬,০০০ বর্গফুট জমি। অথচ বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা, কর্মচারী বা তাদের নিকটাত্মীয়দের নামে নদীর তীরভূমি ইজারা দেয়ার বিধান নেই। এছাড়া রফিকুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তার মেঝ ছেলে ওমর ফারুককে বিআইডব্লিউটিতে মার্কম্যান পদে চাকরি দিয়েছেন।
অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি আবুল হোসেন প্রভাব খাটিয়ে তার জামাতার (মেয়ের স্বামী) নামে করা লাইসেন্সে (এআরটেল বিডি লিমিটেড) বিআইডব্লিউটিএতে রমরমা ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন। এভাবে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। যদিও বিধি অনুযায়ী বিআইডব্লিউটি’র কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা তাদের নিকটাত্মীয় এই সংস্থার লাভজনক কাজে যুক্ত হতে পারেন না। এছাড়া আবুল হোসেন প্রভাব খাটিয়ে আপন ছোট ভাই চল্লিশোর্ধ বয়সী মেহেদী হাসানকে অষ্টম শ্রেণি পাস দেখিয়ে বিআইডব্লিউটি’তে মার্কম্যান পদে চাকরি দিয়েছেন।
বিষয়টি জানাজনি হলে তাড়াহুড়া করে জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স সংশোধন করা হয়। তবে মেহেদীর এসএসসি পাসের সনদে দেখা যায়, তার বয়স চল্লিশের বেশি। অভিযোগে বলা হয়েছে, আবুল হোসেন ও রফিকুল ইসলামের অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস কর্মচারী নিয়োগ ও বদলি। গত আড়াই বছরে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান কার্যালয়, ড্রেজারসহ বিভিন্ন জলযান, নদীবন্দর ও শাখা কার্যালয়গুলোতে বিভিন্ন পদে ৪ শতাধিক কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে।
এর মধ্যে অন্তত দেড়শ’ নিয়োগ দেয়া হয়েছে আবুল হোসেন ও রফিকুল ইসলামের তদবিরে। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা দু’জন জনপ্রতি পাঁচ লাখ থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়া এ দুই সিবিএ নেতা গত আড়াই বছরে কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ২০০ কর্মচারীকে বদলি ও বদলিকৃতদের পছন্দের স্থানে পদায়ন করিয়েছেন। এর বিনিময়ে তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এসব অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করিয়েছেন। তাদের কয়েকজন হলেন বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ১নং যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জীব দাশ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক তুষার কান্তি বণিক, মুজিবর রহমান ও মাযহার হোসেন।
বিআইডব্লিউটিএর একটি সূত্রে জানা গেছে, সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেন বিআইডব্লিউটিএর একজন পরিচালকের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৭৪৩৭) ২০১৬ সালের জুলাই থেকে গত ১১ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ব্যবহার করেছেন। শুধু তাই নয়, গাড়ির পেছনে ব্যয় হওয়া প্রায় ৭ লাখ টাকার জ্বালানি এবং চালকের বেতন-ভাতা ৫ লাখ টাকা বহন করেছে কর্তৃপক্ষ। সমপ্রতি দুদক এক অভিযান চালিয়ে পিডিবির দুই সিবিএ নেতার দখলে থাকা দুটি গাড়ি উদ্ধারের পর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ আবুলের গাড়ি প্রত্যাহার করেছে। তবে আবুল হোসেন দীর্ঘদিন বেআইনিভাবে গাড়িটি ব্যবহার করেছেন- এই তথ্য ধামাচাপা দেয়ার জন্য লগবুকসহ দাপ্তরিক আলামতগুলো ধ্বংসের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএর সিবিএ সভাপতি ও সেক্রেটারির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। ইতিমধ্যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ওই নোটিশে তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি দুদকের পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ দুই সিবিএ নেতার পরিবারের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ও পরিবারের সদস্যদের সকল সম্পদ, ব্যাংক হিসাবসহ ১২ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ২৭শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব তথ্য দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (টিএ) মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. আবদুস ছাত্তারকে এ দুই সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বিআইডব্লিউটিএর সিবিএ নেতাদের দৌরাত্ম্য বন্ধে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সরজমিনে তদন্তপূর্বক সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হলো।
যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিএর সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, যেহেতু আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। তাই দুদকের অনুসন্ধানের বিষয় নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে এতটুকু বলতে পারি- যারা অভিযোগ করেছে তারা বিএনপি জামায়াতের লোক। সিবিএ থেকে আমাদের সরানোর চেষ্টা করেছে, না পেরে তারা দুদকে কিছু মনগড়া অভিযোগ করেছে।
সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, দুদকে আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ দেখেছি। এগুলোর কোনো সত্যতা নেই। আমি যে পদে চাকরি করি এই পদে চাকরি করে আমার চেয়ে জুনিয়ররা আমার চেয়ে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছে। সেই হিসেবে আমার কিছুই নেই।
No comments