তুরস্কে বিয়েবাড়িতে হামলায় নিহত ৫১
গাজিয়ানতেপে আত্মঘাতী বোমা হামলাস্থলে পুলিশ বেষ্টনীর বাইরে বসে আছেন কয়েকজন কৌতূহলী স্থানীয় ব্যক্তি। এএফপি |
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপে গত শনিবার রাতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলায় জড়িত। তিনি বলেছেন, সংগঠনটি ১২-১৪ বছরের একটি বালককে আত্মঘাতী হিসেবে ব্যবহার করে এই হামলা চালিয়েছে। গাজিয়ানতেপ শহরের ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেক কুর্দি জনগোষ্ঠীর লোক যোগ দিয়েছিলেন। স্থানীয় বার্তা সংস্থা দোগান জানায়, বর-কনে উভয়েরই বাড়ি কুর্দি-অধ্যুষিত সিরত এলাকায়। সেখানে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘাতের ফলে তাদের পরিবার গাজিয়ানতেপে চলে আসে। কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি) বলেছে, তাদের দলের অনেক সদস্য ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন। অনেক নারী ও শিশুর উপস্থিতিও ছিল সেখানে। ছবিতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে সাদা চাদর দিয়ে বেশ কয়েকটি লাশ ঢেকে রাখা হয়েছে।
আর এসব লাশ ঘিরে বিলাপ করছেন তাদের নিকটজনেরা। তুরস্কের দৈনিক পত্রিকা দ্য হুরিয়েত ডেইলি নিউজ জানায়, কনে সেনা এবং বর নূরেত্তিন একদোগান দুজনেই আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তবে তাঁদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত। গতকাল রোববার তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী যেমন—কুর্দি, আরব ও তুর্কিদের মধ্যে অশান্তির বীজ বপন করাই এ ধরনের হামলার মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনের অনুসারী, নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) বা আইএসের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আইএসকে গাজিয়ানতেপের বিয়ের অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য হামলাকারী আখ্যা দিয়ে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা হামলাকারীদের একটি বার্তা আবার দিতে চাই। তা হলো, তোমরা সফল হবে না।’ তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) গাজিয়ানতেপ এলাকার এমপি মেহমেত এরদোয়ান বলেন, ‘আমাদের ধারণা, এটি একটি আত্মঘাতী হামলা।’ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়,
হামলাকারীরা আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে মিশে ছিল। দুজন সম্ভাব্য হামলাকারী অতিথিদের সঙ্গে মিশে পরে পালিয়েছে। হামলায় আহত গুলসের আতেস বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে শেষের দিকে হামলা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়ারে বসে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে গল্পগুজব করছিলাম। বিস্ফোরণের সময় আমার সামনেই লোকজনকে মরে যেতে দেখলাম। বর-কনের মধুরতম দিনটি হয়ে উঠল বিষময়।’ তুরস্কের গৃহযুদ্ধকবলিত প্রতিবেশী সিরিয়ার সীমান্ত থেকে গাজিয়ানতেপ শহর ৬০ কিলোমিটার দূরে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে শরণার্থী হয়ে আসা অনেক মানুষের আশ্রয়স্থল এটি। শরণার্থী ও এরদোয়ান-বিরোধী দলের সমর্থকদের পাশাপাশি এই অঞ্চলে জঙ্গিদের উপস্থিতি রয়েছে। এ বছর ইস্তাম্বুলে বেশ কয়েক দফা বোমা হামলা করেছে আইএস। এ ছাড়া কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরও কয়েক দফা হামলার শিকার হয় ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারা।
No comments