প্রবাসে যৌন হয়রানির শিকার নারী শ্রমিকরা by সালমান ফরিদ
একটু এদিকে-ওদিক হলেই গৃহকর্ত্রী মারধর
করেন। মারপিট করে রক্তাক্ত করে ফেলেন সারা শরীর। পিছিয়ে নেই গৃহকর্তারাও।
ঠিকমতো খাবার দেন না, উপোস থাকতে হয় ঘনঘন। দিনের পর দিন কাজ করান, কিন্তু
নিয়মিত ভেতন-ভাতা দিতে তাদের চরম অনীহা- এ চিত্র বিদেশে অবস্থানকারী
বাংলাদেশ নারী শ্রমিকদের। শুধু তাই নয়। সেখানে তারা প্রায়ই যৌন নিপীড়নের
শিকারও হচ্ছেন। কেউ কেউ প্রতিদিনই গৃহকর্তার যৌন লালসায় পরিণত হচ্ছেন।
এমনকি গর্ভবতীও হয়ে পড়ছেন অনেকে। কিন্তু চাকরি ও মান-সম্মানের ভয়ে তা বাইরে
প্রকাশ করছেন না। নিয়মিত সয়ে যাচ্ছেন সব। সমপ্রতি এক নারী শ্রমিক জর্ডান
থেকে দেশে ফিরেছেন পেটে ৭ মাসের অবৈধ সন্তান নিয়ে।
এরকম
ঘটনা অহরহ ঘটছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশী নারী
শ্রমিকরা নিপীড়নের শিকার হন সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কোন প্রতিকার পান না তারা।
অবশ্য অনেকে নিজ থেকেই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে
বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের উপর এরকম অভিযোগ ভূরি ভূরি। সংশ্লষ্টরা জানান,
এমনিতেই বিশ্ব শ্রমবাজারে বাংলাদেশী শ্রমিকদের দুর্দিন চলছে। পুরুষ
শ্রমিকদের পাশাপাশি নতুন সমপ্রসারিত হওয়া শ্রমবাজার খোলতে না খোলতে আবার
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অদক্ষতা, ভাষা বোঝতে না পারা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশী
নারী শ্রমিকদের উপর থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে নারী শ্রমিক আমদানিকারক দেশগুলো।
তার উপর তাদের নিয়ে এরকম নানা অভিযোগ ও অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বাজার আরও
দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশের মাটিতে
নারী শ্রমিকরা গৃহস্থালি কাজেই বেশি নির্যাতিত হন।
এদিকে প্রবাস থেকে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে দেশে ফিরে অনেকে আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন। অভিযোগ করছেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটিসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। প্রতি মাসেই অর্ধশতাধিক অভিযোগ আসছে। গত কয়েক বছরে গড়ে এরকম অভিযোগ এসেছে অন্তত ৪০০টি করে। এর মধ্যে মারধর, শারীরিক নির্যাতন ও টাকা না দেয়ার অভিযোগ বেশি। যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আসে একেবারেই কম। বাংলাদেশী অভিবাসী মহিলা শ্রমিক এসোসিয়েশন-বমসা জানায়, ২০১২ সালে ৫টিরও বেশি এবং গত বছর ৩টি অভিযোগ পেয়েছে তারা। এ বছর এখনও এরকম কোন অভিযোগ আসেনি। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান লিলি জাহান বলেন, নির্যাতনের পাশাপাশি প্রবাসে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। কিন্তু মান-সম্মানের ভয়ে বিষয়টি সবাই এড়িয়ে চলেন। তাই জানা যায় না আসলে কি পরিমাণ ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, বেতন না পাওয়ার অভিযোগই বেশি। এসব অভিযোগ এলেও সরকার তাদের জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারে না। বারবার ধর্না দিয়েও কোন কাজ হয় না।
একটি কেস: মনিরা (ছদ্ম নাম)। জর্ডানে গেছেন ২০১২ সালের প্রথম দিকে। সেখানে একটি বাসায় গ্রহকর্মীর কাজ করতেন। বাংলাদেশ থেকে চুক্তিনামায় তার বেতন ধরা হয় সে দেশের ২০০ টাকা। সেখানে যাওয়ার পর মাসের বেতন ঠিকমতো পেতেন না। উপরোন্ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন। গৃহকর্তা, গৃহকর্ত্রী ও তার ভাই একটু এদিক সেদিক হলেই শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। তাকে প্রথম কয়েকমাস ১০০ টাকা করে বেতন দেয়া হয়। পরে তাও বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে তার উপর চোখ পড়ে গৃহকর্তার ভাইয়ের। সে একসময় যৌন নিপীড়ন শুরু করে। তাতে সম্মতি না জানালে কোন কারণ ছাড়াই তাকে মারধর করতো। একসময় বাধ্য হয়ে মনিরা মালিকের ভাইয়ের যৌন লালসায় ধরা দেন। চলতি মাসের ১৫ই জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু গর্ভে নিয়ে এসেছেন ৭ মাসের সন্তান। ফেলে এসেছেন ৯ মাসের বকেয়া বেতন। দেশে ফিরে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে সরকারের কাছে ধর্না দেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কথা বলেন মন্ত্রীর সঙ্গে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটিতেও যান। কিন্তু কোন প্রতিকার পাননি। তাকে জানানো হয় যেহেতু ঘটনাস্থল জর্ডান, তাই সেখানকার কর্তৃপক্ষ এর প্রতিকার করতে পারে। এমনকি তার বেকেয়া বেতন উদ্ধারের ব্যাপারেও মন্ত্রণালয় কোন সহযোগিতা করতে পারেনি।
প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন শ্রমিক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডানে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার। এ তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে লেবানন ও দুবাই। অন্য দেশগুলোতেও নির্যাতিত হচ্ছে নারী শ্রমিকরা। বমসা জানায়, শুধু তারাই প্রতি মাসে ৩০-৪০টি নারী নির্যাতনের অভিযোগ পাচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তারা সংশ্লিষ্ট দেশের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওনা আদায় ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করে।
দেশে ফেরা নারী শ্রমিকরা জানান, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা দিনদিন বাড়ছেই। শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্য়াতন চলে তাদের উপর। কর্মীর সঙ্গে নিয়োগকর্তারা ক্রীতদাসের মতো আচরণ করেন। ঠিকমতো খাবার, সুপেয় পানিও দেয়া হয় না। যৌন নির্যাতন চালান বহু নিয়োগকর্তা। নির্যাতনের মাত্রা সইতে না পেরে অনেকেই ছাদ থেকে লাফ দিতে চান। এরকমও ঘটনা ঘটে। বামসা এবং বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সোসাইটি-বিপিকেএস’র কাছে এরকম অভিযোগ আসে সব সময়ই। এরকম সমস্যার কারণে গত বছরে পাঁচ দুই শতাধিক নারীকর্মী দেশে ফেরত এসেছেন বলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে। বিএমইটি’র কল্যাণ শাখার পরিচালক মু. মোহসিন চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই। বিদেশে থেকে করলে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রতিকারের ব্যবস্থা করি। আর দেশে ফেরার পর কেউ তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ করলে এজেন্সির মাধ্যমে তার সমাধান করা হয়। তিনি জানান, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে আমরা শুনেছি। সম্ভবত মান-সম্মানের ভয়ে নির্যাতিতারা এ বিষয়টি লুকিয়ে রাখেন।
এদিকে প্রবাস থেকে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে দেশে ফিরে অনেকে আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন। অভিযোগ করছেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটিসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। প্রতি মাসেই অর্ধশতাধিক অভিযোগ আসছে। গত কয়েক বছরে গড়ে এরকম অভিযোগ এসেছে অন্তত ৪০০টি করে। এর মধ্যে মারধর, শারীরিক নির্যাতন ও টাকা না দেয়ার অভিযোগ বেশি। যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আসে একেবারেই কম। বাংলাদেশী অভিবাসী মহিলা শ্রমিক এসোসিয়েশন-বমসা জানায়, ২০১২ সালে ৫টিরও বেশি এবং গত বছর ৩টি অভিযোগ পেয়েছে তারা। এ বছর এখনও এরকম কোন অভিযোগ আসেনি। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান লিলি জাহান বলেন, নির্যাতনের পাশাপাশি প্রবাসে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। কিন্তু মান-সম্মানের ভয়ে বিষয়টি সবাই এড়িয়ে চলেন। তাই জানা যায় না আসলে কি পরিমাণ ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, বেতন না পাওয়ার অভিযোগই বেশি। এসব অভিযোগ এলেও সরকার তাদের জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারে না। বারবার ধর্না দিয়েও কোন কাজ হয় না।
একটি কেস: মনিরা (ছদ্ম নাম)। জর্ডানে গেছেন ২০১২ সালের প্রথম দিকে। সেখানে একটি বাসায় গ্রহকর্মীর কাজ করতেন। বাংলাদেশ থেকে চুক্তিনামায় তার বেতন ধরা হয় সে দেশের ২০০ টাকা। সেখানে যাওয়ার পর মাসের বেতন ঠিকমতো পেতেন না। উপরোন্ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন। গৃহকর্তা, গৃহকর্ত্রী ও তার ভাই একটু এদিক সেদিক হলেই শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। তাকে প্রথম কয়েকমাস ১০০ টাকা করে বেতন দেয়া হয়। পরে তাও বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে তার উপর চোখ পড়ে গৃহকর্তার ভাইয়ের। সে একসময় যৌন নিপীড়ন শুরু করে। তাতে সম্মতি না জানালে কোন কারণ ছাড়াই তাকে মারধর করতো। একসময় বাধ্য হয়ে মনিরা মালিকের ভাইয়ের যৌন লালসায় ধরা দেন। চলতি মাসের ১৫ই জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু গর্ভে নিয়ে এসেছেন ৭ মাসের সন্তান। ফেলে এসেছেন ৯ মাসের বকেয়া বেতন। দেশে ফিরে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে সরকারের কাছে ধর্না দেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কথা বলেন মন্ত্রীর সঙ্গে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটিতেও যান। কিন্তু কোন প্রতিকার পাননি। তাকে জানানো হয় যেহেতু ঘটনাস্থল জর্ডান, তাই সেখানকার কর্তৃপক্ষ এর প্রতিকার করতে পারে। এমনকি তার বেকেয়া বেতন উদ্ধারের ব্যাপারেও মন্ত্রণালয় কোন সহযোগিতা করতে পারেনি।
প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন শ্রমিক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডানে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার। এ তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে লেবানন ও দুবাই। অন্য দেশগুলোতেও নির্যাতিত হচ্ছে নারী শ্রমিকরা। বমসা জানায়, শুধু তারাই প্রতি মাসে ৩০-৪০টি নারী নির্যাতনের অভিযোগ পাচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তারা সংশ্লিষ্ট দেশের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওনা আদায় ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করে।
দেশে ফেরা নারী শ্রমিকরা জানান, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা দিনদিন বাড়ছেই। শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্য়াতন চলে তাদের উপর। কর্মীর সঙ্গে নিয়োগকর্তারা ক্রীতদাসের মতো আচরণ করেন। ঠিকমতো খাবার, সুপেয় পানিও দেয়া হয় না। যৌন নির্যাতন চালান বহু নিয়োগকর্তা। নির্যাতনের মাত্রা সইতে না পেরে অনেকেই ছাদ থেকে লাফ দিতে চান। এরকমও ঘটনা ঘটে। বামসা এবং বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সোসাইটি-বিপিকেএস’র কাছে এরকম অভিযোগ আসে সব সময়ই। এরকম সমস্যার কারণে গত বছরে পাঁচ দুই শতাধিক নারীকর্মী দেশে ফেরত এসেছেন বলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে। বিএমইটি’র কল্যাণ শাখার পরিচালক মু. মোহসিন চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই। বিদেশে থেকে করলে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রতিকারের ব্যবস্থা করি। আর দেশে ফেরার পর কেউ তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ করলে এজেন্সির মাধ্যমে তার সমাধান করা হয়। তিনি জানান, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে আমরা শুনেছি। সম্ভবত মান-সম্মানের ভয়ে নির্যাতিতারা এ বিষয়টি লুকিয়ে রাখেন।
No comments