আগামী নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি by বদরুদ্দীন উমর
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী
নির্বাচন নিজের সরকারের অধীনে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে যেভাবে অনড় অবস্থানে
আছেন তাতে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, তিনি আসলে নির্বাচনই চান না। তার দিক
থেকে নির্বাচন না চাওয়ার কারণ খুব স্পষ্ট। নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পক্ষে
জয়ের কোনো সম্ভাবনা তো নেই-ই, উপরন্তু ভরাডুবি ছাড়া অন্য কোনো কিছুই হওয়ার
নয়। একথা বিস্ময়কর মনে হতে পারে, তবু বলা দরকার যে, আগামী নির্বাচনে শেখ
হাসিনার নিজের পক্ষেও পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিগত
নির্বাচনে তিনি বাগেরহাট ও তাদের এলাকা গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করে সুন্দরবন ধ্বংসের যে কর্মসূচি
তারা নিয়েছেন, তাতে বাগেরহাটে এবার নির্বাচন করলে তার জামানতও বাজেয়াপ্ত
হতে পারে।
গোপালগঞ্জের লোকদের জন্য তিনি অনেক করেছেন। প্রশাসন, পুলিশ থেকে নিয়ে সর্বত্র তিনি গোপালগঞ্জের লোক এমনভাবে বসিয়েছেন, যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক ক্ষোভ আছে। কিন্তু তা হলেও গোপালগঞ্জে নির্বাচন প্রার্থী হয়ে তার বিশেষ সুবিধা হবে না। কারণ ওপরতলায় এভাবে লোক ঢুকিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করলেও গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষের জন্য তিনি কিছুই করেননি। এজন্য সেখানকার জনগণের মধ্যে তার বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে আছে তার প্রতিফলন নির্বাচনে ঘটার কথা। নির্বাচনে দাঁড়ালেই যে শেখ হাসিনা কোনো ম্যাজিক দেখিয়ে নিশ্চিতভাবে নিজে নির্বাচিত হবেন এমন কোনো ব্যাপার নেই। ১৯৯১ সালে ঢাকা শহরে দুটি আসনে দাঁড়িয়ে দুটিতেই তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। তাছাড়া অন্য একটি বিষয়ও বিগত পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে। ব্যক্তিগতভাবে কোনো কোনো আওয়ামী লীগ প্রার্থী তুলনায় ভালো হলেও শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছিলেন। কাজেই ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা নির্বাচনে কোনো ম্যাজিক দেখিয়ে জয়লাভ করবেন, এ চিন্তা সম্পূর্ণ অবাস্তব।
যাই হোক, এক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হল নির্বাচনে জয়ের পরিবর্তে ভরাডুবির ষোলো আনা সম্ভাবনা দেখে শেখ হাসিনা নির্বাচন হতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে গায়ের জোর দেখিয়ে বলেই চলেছেন যে, তার সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। অন্য কোনোভাবে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, মধ্যবর্তী সরকার ইত্যাদি নিরপেক্ষ কোনো সরকারের অধীনেই নির্বাচন দেয়া যাবে না। এজন্য তারা সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছেন। তাদের ধারণা, সংবিধানের সংশোধনী পাস করলেই যা ইচ্ছা তাই করা যায়।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা যে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়, এ বিষয়ে সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে একটা ঐকমত্য আছে। বিরোধী দলগুলো তো বটেই, এমনকি আওয়ামী লীগ জোট সরকারের শরিকদের মধ্যে প্রায় সবারই মত হল, বর্তমান সরকারের পরিবর্তে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন করা দরকার। বাস্তবত দেখা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যসব উল্লেখযোগ্য দল ও জনগণের বিপুল অংশ এটাই চান। কিন্তু শেখ হাসিনা এই পরিস্থিতিতে যেভাবে নিজের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়ে বসে আছেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার যে কোনো সম্পর্ক নেই এটা তারাও জানেন। সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে গেলে দেশজুড়ে তার বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ হবে, বিরোধী দলগুলো যেভাবে নির্বাচন বয়কট করবে, তাতে সমগ্র নির্বাচন ব্যবস্থাই ভণ্ডুল হবে। কাজেই সে রকম কোনো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির এমন ক্ষমতা নেই যাতে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তার ওপর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশে এক রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। তখন এই শূন্যতা পূরণের একমাত্র উপায় দাঁড়াবে ২০০৭-০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকারের মতো একটি সরকার কর্তৃক ক্ষমতাসীন হওয়া। এই সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক সম্ভাবনার দিকেই শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক’ এবং ‘স্বাধীনতার পতাকাবাহী’ হিসেবে নিজের পবিত্র কর্তব্য সমাধা করার চেষ্টায় আছেন। ভুলে যাওয়ার কোনো উপায় নেই যে, পরবর্তী সময়ে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকারের অনেক সমালোচনা করলেও সেই সরকারের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে সাফাই গেয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, তারা হল তাদের আন্দোলনের ফসল এবং ক্ষমতায় গেলেই সেই সরকারের প্রত্যেকটি কাজকে তারা সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করবেন!
কাজেই গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী হিসেবে বেনামি কোনো সামরিক সরকারের প্রতি শেখ হাসিনার কোনো বিতৃষ্ণা আছে এটা মনে করার কারণ নেই। কাজেই নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মতো করে একটি নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে একটি বেনামি সামরিক সরকারের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ পরিষ্কার করতে শেখ হাসিনার কোনো দ্বিধা নেই। কাজেই নির্বাচনের পরিবর্তে এ ধরনের একটি সরকার শেখ হাসিনার সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হলে তাতে কারও বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
এখানে অবশ্য বলা দরকার যে, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কূটকৌশলের কারণে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের মতো একটি সরকার শূন্যতা পূরণের জন্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও তার স্থায়িত্ব বেশি হওয়ার কথা নয়। যে নির্বাচন হতে না দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা তাদের ক্ষমতাসীন হওয়ার ব্যবস্থা করবেন, সে নির্বাচন তাদের অল্পদিনের মধ্যেই দিতে হবে। আগেকার বেনামি সামরিক সরকার নির্বাচন দিতে দু’বছর সময় নিয়েছিল। কিন্তু এবার নির্বাচন দিতে হবে অল্পদিনের মধ্যেই, কারণ ২০০৭ সাল ও ২০১৪ সালের পরিস্থিতি এক নয়। কাজেই আগামী জানুয়ারি মাসে যদি একটি বেনামি সামরিক সরকার ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে তাকে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবেই কাজ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশে আগামী দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে এ বিষয়ে গণক-ঠাকুরের মতো কিছু বলার উপায় নেই। কিন্তু পরিস্থিতি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং শেখ হাসিনা সমগ্র রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশৃংখলা সৃষ্টির যে কৌশল অবলম্বন করেছেন, তার থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য যে ব্যবস্থা বাস্তবসম্মত তার কথাই এখানে বলা হয়েছে। তবে এটা মনে রাখা দরকার যে, বাংলাদেশ হল দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের এক উর্বর ক্ষেত্র। কাজেই নানা ষড়যন্ত্রের অলিগলি বেয়ে শেষ পর্যন্ত বর্তমান পরিস্থিতির আশু পরিণতি কী দাঁড়াবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
গোপালগঞ্জের লোকদের জন্য তিনি অনেক করেছেন। প্রশাসন, পুলিশ থেকে নিয়ে সর্বত্র তিনি গোপালগঞ্জের লোক এমনভাবে বসিয়েছেন, যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক ক্ষোভ আছে। কিন্তু তা হলেও গোপালগঞ্জে নির্বাচন প্রার্থী হয়ে তার বিশেষ সুবিধা হবে না। কারণ ওপরতলায় এভাবে লোক ঢুকিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করলেও গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষের জন্য তিনি কিছুই করেননি। এজন্য সেখানকার জনগণের মধ্যে তার বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে আছে তার প্রতিফলন নির্বাচনে ঘটার কথা। নির্বাচনে দাঁড়ালেই যে শেখ হাসিনা কোনো ম্যাজিক দেখিয়ে নিশ্চিতভাবে নিজে নির্বাচিত হবেন এমন কোনো ব্যাপার নেই। ১৯৯১ সালে ঢাকা শহরে দুটি আসনে দাঁড়িয়ে দুটিতেই তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। তাছাড়া অন্য একটি বিষয়ও বিগত পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে। ব্যক্তিগতভাবে কোনো কোনো আওয়ামী লীগ প্রার্থী তুলনায় ভালো হলেও শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছিলেন। কাজেই ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা নির্বাচনে কোনো ম্যাজিক দেখিয়ে জয়লাভ করবেন, এ চিন্তা সম্পূর্ণ অবাস্তব।
যাই হোক, এক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হল নির্বাচনে জয়ের পরিবর্তে ভরাডুবির ষোলো আনা সম্ভাবনা দেখে শেখ হাসিনা নির্বাচন হতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে গায়ের জোর দেখিয়ে বলেই চলেছেন যে, তার সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। অন্য কোনোভাবে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, মধ্যবর্তী সরকার ইত্যাদি নিরপেক্ষ কোনো সরকারের অধীনেই নির্বাচন দেয়া যাবে না। এজন্য তারা সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছেন। তাদের ধারণা, সংবিধানের সংশোধনী পাস করলেই যা ইচ্ছা তাই করা যায়।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা যে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়, এ বিষয়ে সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে একটা ঐকমত্য আছে। বিরোধী দলগুলো তো বটেই, এমনকি আওয়ামী লীগ জোট সরকারের শরিকদের মধ্যে প্রায় সবারই মত হল, বর্তমান সরকারের পরিবর্তে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন করা দরকার। বাস্তবত দেখা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যসব উল্লেখযোগ্য দল ও জনগণের বিপুল অংশ এটাই চান। কিন্তু শেখ হাসিনা এই পরিস্থিতিতে যেভাবে নিজের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়ে বসে আছেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার যে কোনো সম্পর্ক নেই এটা তারাও জানেন। সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে গেলে দেশজুড়ে তার বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ হবে, বিরোধী দলগুলো যেভাবে নির্বাচন বয়কট করবে, তাতে সমগ্র নির্বাচন ব্যবস্থাই ভণ্ডুল হবে। কাজেই সে রকম কোনো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির এমন ক্ষমতা নেই যাতে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তার ওপর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশে এক রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। তখন এই শূন্যতা পূরণের একমাত্র উপায় দাঁড়াবে ২০০৭-০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকারের মতো একটি সরকার কর্তৃক ক্ষমতাসীন হওয়া। এই সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক সম্ভাবনার দিকেই শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক’ এবং ‘স্বাধীনতার পতাকাবাহী’ হিসেবে নিজের পবিত্র কর্তব্য সমাধা করার চেষ্টায় আছেন। ভুলে যাওয়ার কোনো উপায় নেই যে, পরবর্তী সময়ে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকারের অনেক সমালোচনা করলেও সেই সরকারের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে সাফাই গেয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, তারা হল তাদের আন্দোলনের ফসল এবং ক্ষমতায় গেলেই সেই সরকারের প্রত্যেকটি কাজকে তারা সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করবেন!
কাজেই গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী হিসেবে বেনামি কোনো সামরিক সরকারের প্রতি শেখ হাসিনার কোনো বিতৃষ্ণা আছে এটা মনে করার কারণ নেই। কাজেই নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মতো করে একটি নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে একটি বেনামি সামরিক সরকারের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ পরিষ্কার করতে শেখ হাসিনার কোনো দ্বিধা নেই। কাজেই নির্বাচনের পরিবর্তে এ ধরনের একটি সরকার শেখ হাসিনার সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হলে তাতে কারও বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
এখানে অবশ্য বলা দরকার যে, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কূটকৌশলের কারণে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের মতো একটি সরকার শূন্যতা পূরণের জন্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও তার স্থায়িত্ব বেশি হওয়ার কথা নয়। যে নির্বাচন হতে না দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা তাদের ক্ষমতাসীন হওয়ার ব্যবস্থা করবেন, সে নির্বাচন তাদের অল্পদিনের মধ্যেই দিতে হবে। আগেকার বেনামি সামরিক সরকার নির্বাচন দিতে দু’বছর সময় নিয়েছিল। কিন্তু এবার নির্বাচন দিতে হবে অল্পদিনের মধ্যেই, কারণ ২০০৭ সাল ও ২০১৪ সালের পরিস্থিতি এক নয়। কাজেই আগামী জানুয়ারি মাসে যদি একটি বেনামি সামরিক সরকার ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে তাকে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবেই কাজ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশে আগামী দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে এ বিষয়ে গণক-ঠাকুরের মতো কিছু বলার উপায় নেই। কিন্তু পরিস্থিতি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং শেখ হাসিনা সমগ্র রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশৃংখলা সৃষ্টির যে কৌশল অবলম্বন করেছেন, তার থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য যে ব্যবস্থা বাস্তবসম্মত তার কথাই এখানে বলা হয়েছে। তবে এটা মনে রাখা দরকার যে, বাংলাদেশ হল দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের এক উর্বর ক্ষেত্র। কাজেই নানা ষড়যন্ত্রের অলিগলি বেয়ে শেষ পর্যন্ত বর্তমান পরিস্থিতির আশু পরিণতি কী দাঁড়াবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments