মাখন ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র by মোকাম্মেল হোসেন
খুবই
জরুরি একটা কাজে বাজারে যাচ্ছিলেন মন্তাজ আলী। এ সময় ইদ্রিসের বউ এসে
রাস্তা আগলে দাঁড়াল। মন্তাজ আলীর বিরক্ত হওয়া উচিত। কিন্তু তিনি বিরক্ত
হলেন না। সামনে নির্বাচন। মন্তাজ আলী ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন
নেতা। তার দল স্বপ্ন দেখছে পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়ার। এ সময় কোনো ভোটারের ওপর
বিরক্ত হওয়া ঠিক না। গলার স্বর মোলায়েম করে মন্তাজ আলী জানতে চাইলেন-
: কী হইছে!
-ইস্রাফিলের আব্বারে পুলিশ ধইরা লইয়া গেছে...
ইস্রাফিলের আব্বা- তার মানে স্বয়ং ইদ্রিস মিয়া। মন্তাজ আলী খানিকটা অবাকই হলেন। ইদ্রিস আলী সহজ-সরল খেটে খাওয়া মানুষ। পুলিশ বাহিনীর সালাম পাওয়ার মতো কোনো যোগ্যতা তার আছে বলে জানা নেই মন্তাজ আলীর। ইদ্রিসের বউ হঠাৎ বিলাপ জুড়ে দেয়-
: আল্লাহর দোহাই লাগে, আপনে ইস্রাফিলের আব্বারে ছাড়াইয়া আইন্যা দেন...
কাঁদতে কাঁদতেই ইদ্রিসের বউ শাড়ির আঁচল থেকে কিছু টাকা বের করে মন্তাজ আলীর হাতে গুঁজে দিল। মন্তাজ আলী অভিভূত হয়ে গেলেন। বিদ্যাবুদ্ধিহীন এ নারীর জ্ঞানের জগৎ সীমাবদ্ধ হওয়ারই কথা। দেশ-বিদেশের বিস্ময়কর পরিবর্তন ও অগ্রগতি সম্পর্কে সে হয়তো কোনো খোঁজখবরই রাখে না। অথচ গায়ের ওপর পুলিশের ছায়া পড়লে যে টাকা খরচ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই- এ জ্ঞান সে ঠিকই আয়ত্ত করে ফেলেছে। মন্তাজ আলী মনে মনে বললেন, সাবাশ। তারপর টাকাগুলো পকেটে রেখে জানতে চাইলেন,
: পুলিশ তারে কী জন্য ধরল?
-এইটা তো আমারও জিজ্ঞাসা!
: ঘটনার বর্ণনা দাও।
-সকালবেলা ঘুম থেইক্যা ওঠার পর ইস্রাফিলের বাপ কইল, শইলডার মধ্যে জুৎ পাইতেছি না- আইজ আর কামে যামু না। আমি কইলাম, আইচ্ছা। হেরপর নায়নাস্তা খাইয়া কইল- উত্তরপাড়ার নেকবইরা টেকা কর্জ নিছিল, আইজ দেওনের তারিখ; যাইয়া দেহি দেয় কিনা? আমি কইলাম, আইচ্ছা। এর দুই-আড়াই ঘণ্টা বাদে আচমকা খবর পাইলাম, পুলিশ তারে ধইরা থানায় লইয়া গেছে।
ইদ্রিসের বউ যাকে থানা বলে অভিহিত করল, সেটি আসলে থানা নয়, পুলিশ ফাঁড়ি। এলাকার লোকজনের অনেক দিনের প্রত্যাশা পূরণ করতে সরকার অষ্টধার বাজারে একটি পুলিশ ফাঁড়ির বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। কাজ শেষ করে মন্তাজ আলী ফাঁড়িতে গেলেন। তারপর ইদ্রিস মিয়ার কাছে প্রকৃত ঘটনা জেনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বললেন-
: স্যার, এই লোক তো নির্দোষ!
-নির্দোষ মানে! নির্দোষ হওয়ার সার্টিফিকেট তারে কে দিছে? আমেরিকা না ইংল্যান্ড? আপনে জানেন, আমার ফোর্স জুয়ার আসর থেইক্যা তারে অ্যারেস্ট করছে?
: জুয়া না স্যার। কাজ-কাম নাই, তাই কয়েকটা পোলাপান মিইল্যা তাস খেলতেছিল...
-কাজ-কাম নাই মানে? দেশে কি কাজ-কামের অভাব পড়ছে? ভিশন টু থাউজেন্ড টুয়েন্টি ওয়ানের ঘোষণা দিয়া এই সরকার আপাটে-ঘোপাটে কর্মসৃজন করছে। হাজার হাজার-লক্ষ কোটি কাজ-কাম হ্যাংগিং অবস্থায় আছে। সেদিকে মনোযোগ না দিয়া তাসের আসর বসানো- এইটা তো ভয়ংকরতম অপরাধ।
: কিন্তু ছা- ইদ্রিস আলী হইল নীরব দর্শক। ওই পথে গমন করার সময় তামাশা দেখার জন্য সাইডে বইসা ছিল।
-ক্রাইম যে করে আর ক্রাইম যে দেখে- দু’জনই সমান অপরাধী! রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় আছে?
: জ্বি না ছার।
-গ্রেট রাইটার ছিলেন। তিনি বলে গেছেন এ কথা।
: এখন করণীয় কী ছার!
-করণীয় একটাই। আগামীকাল ভোরের ট্রেনে আসামিকে কোর্টে চালান করে দিব।
চালান শব্দটা মন্তাজ আলীর খুবই মনে ধরল। তাই আর কালক্ষেপণ না করে ইদ্রিসের বউয়ের দেয়া টাকাগুলো তিনি পুলিশ বাহাদুরের পকেটে চালান করে দিলেন...
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকলেও গড়পড়তা বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ পুলিশ বিভাগ নিজেদের অর্থায়নে পরিচালিত একটি গবেষণা কর্মের মাধ্যমে এ বাস্তবতাকে উল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছে। পুলিশ বিভাগ যদি আড়াই ঘণ্টার একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করে কিংবা সংবাদমাধ্যম ও বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়ে এ চেষ্টা করত- কারও কিছু বলার ছিল না। কেউ যদি তার প্রযোজিত ছায়াছবিতে নিজেকে নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করে তাহলে আপত্তি করার কিছু নেই। পকেটে পয়সাকড়ি থাকলে নিজেকে জাহির করার জন্য পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন ও বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিলে কে বাধা দিতে যাবে? পুলিশ বিভাগ এসব পথে না গিয়ে একটি গবেষণার ওপর ভর করেছে। জনমত জরিপের মাধ্যমে সম্পন্ন ওই গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, পুলিশ কোনো দুর্নীতি করে না এবং কোনো কাজের জন্য ঘুষও নেয় না।
জনমত জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র নয়। কাজেই এটাকে চ্যালেঞ্জ করার কিছু নেই। তবে জনমত জরিপের নামে রাতকে দিন আর ছাগলকে ঐরাবত বানানোর চেষ্টা করা হলে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কিছু দিন আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সমীক্ষা রিপোর্টে দুর্নীতির ক্ষেত্রে এদেশের পুলিশ ও রাজনৈতিক দলকে সবার সেরা হিসেবে উল্লেখ করেছে। পুলিশ বিভাগ টিআইবির সমীক্ষা বা গবেষণার জবাব একটি গবেষণার মাধ্যমে দিতে গিয়ে অর্থাৎ দাঁতের বদলে দাঁত তুলতে গিয়ে আলাজিভ পর্যন্ত উপড়ে ফেলেছে। পুলিশের এ ধরনের কাজকারবার দেখে মাখন ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের এলাকার একটি সমবায় সমিতির একাংশের নেতা হচ্ছেন মাখন ভাই। অর্থ লোপাট, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নারী কেলেংকারি, পানাহার ইত্যাদি নানা দোষে তার চরিত্র দূষিত। কিছু দিন আগে ওই সমবায় সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। নির্বাচনে মাখন ভাই একজন প্রার্থী ছিলেন। একদিন শুনলাম, তার অনুসারীরা আকাশ-বাতাস ফাটিয়ে স্লোগান দিচ্ছে-
: মাখন ভাইয়ের চরিত্র- ফুলের মতো পবিত্র...
বলার অপেক্ষা রাখে না- মাখন ভাই সম্পর্কে যারা জানে, তাদের কাছে এ স্লোগান মূল্যহীন ও হাস্যকর। ঠিক একইভাবে এদেশের পুলিশ বাহিনীকে সাধু বানানোর জন্য যত বড় গবেষণার আয়োজনই করা হোক না কেন, মানুষ তা বিশ্বাস করবে না। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হলে অবশ্যই পুলিশের আচার-আচরণ ও চরিত্র সংশোধন করতে হবে।
পুলিশ সম্পর্কিত গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দু’জন শিক্ষক ও কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। জনমত জরিপের মাধ্যমে কোনো বিষয় সম্পর্কে জনভাবনার সঠিক প্রতিফলন ঘটাতে হলে গবেষণা কর্মের প্রতিটি পর্যায়ে একজন গবেষককে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিগত সততা, গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তি, মনোযোগ ও আন্তরিকতা নিয়ে অগ্রসর হতে হয়। গবেষণার কোনো একটি ধাপে এগুলোর ঘাটতি থাকলে যত বড় প্রতিষ্ঠান বা যত বড় বিদ্বানই তার সঙ্গে যুক্ত থাকুক না কেন, সে গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ফলে এ গবেষণার মান নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে। শিক্ষকরা হচ্ছেন বিদ্যা ও জ্ঞানদাতা। জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করার মহৎ দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষকরা যদি অনৈতিক কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন, তবে জাতির আর ভরসা করার মতো কোনো জায়গা থাকে না। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সুনাম ও মর্যাদা ছিল এবং তা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন সেটা অতীতের সুখস্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত গৌরব ও ঐতিহ্যের কোনো কিছুই ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এর কারণ অতীতে যেসব মহৎপ্রাণ মানুষ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, তারা পাঠদান ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট গবেষণার বাইরে অন্য কিছু করার কথা তো অনেক পরের ব্যাপার, চিন্তাতেও ঠাঁই দিতেন না। উচ্চশিক্ষার এ প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে ‘বিদ্যার দেবী’ সরস্বতীকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। সেখানে চলছে লক্ষ্মী বন্দনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক লক্ষ্মী বন্দনায় এতটাই ব্যস্ত ও পারঙ্গম যে, নীতি-আদর্শ-কর্তব্যবোধ জলাঞ্জলি দিতেও তারা কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। কিছু দিন আগে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তিনি তার ভিজিটিং কার্ড এগিয়ে দিলেন। সেই কার্ডে তার অনেক গুণের কথা উল্লেখ ছিল। এর মধ্যে এক জায়গায় দেখলাম লেখা রয়েছে ‘টকস্টার’। বিষয়টি নিয়ে মনের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল তৈরি হতেই সহকর্মী হেসে বললেন-
: উনি নিয়মিত টেলিভিশনের টকশো-এ অংশগ্রহণ করেন। সম্ভবত এ বিষয়টি বোঝানোর জন্যই নিজেকে ‘টকস্টার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজকাল টকশো করছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ‘খ্যাপ’ মারছেন, এনজিও খুলে দোকানদারি ও কনসালটেন্সি করছেন এবং সর্বোপরি ভয়াবহরকমভাবে দলীয় রাজনীতি করছেন। এসব কাজ শেষ করার পর তারা ছাত্রছাত্রীদের কতটুকু শেখাচ্ছেন- এ প্রশ্ন যদি কেউ করতে চান তবে আমি তাকে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নানের একটি উক্তি শোনাতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর একদিন শুনলাম, আমাদের জন্য নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন উপাচার্য আবদুল মান্নান দেশের অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা করতে গিয়ে বললেন-
: আমার ছেলেমেয়েরা নীলক্ষেত থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত যাওয়া-আসা করতে করতে যা শেখে- অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পাঁচ বছর পড়ালেখা করেও তা শিখতে পারে না...
কথাটা ভয়ংকররকম সত্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু শেখার জন্য যদি গৌরব করতে চায় তবে ক্যাম্পাস ও চারপাশের পরিবেশ আর এর লাইব্রেরির ওপর অবশ্যই তাদের ঋণ স্বীকার করতে হবে। পরীক্ষা পাসের জন্য ফটোকপির দোকান ও শিক্ষকদের কাছে তাদের ঋণ স্বীকারের কিছু নেই। সামরিক সরকারের অধীনে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ হতে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সময় লেগেছিল। এ সময়কালে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক বাদে বাকিদের মধ্যে যে নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ ও দায়িত্ববোধের নমুনা দেখেছি, তা বয়ান করতে গেলে বিশাল একটা কিতাব রচনার প্রয়োজন হবে। প্রায় দুই যুগের ব্যবধানে এ অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। অবনতির এ চিত্র কতটা মারাÍক রূপ ধারণ করেছে তা গত বছর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে টের পেলাম। মধ্যরাতে ফোন পেয়ে ইনতাজ সাহেবের বাসায় যেতেই তিনি হায় হায় করে বলে উঠলেন-
: রাইত পার হইলেই ভর্তি পরীক্ষা। অথচ এখন রাত ২টার সময় আমার সুপুত্র ও তার মা মিইল্যা আমার কাছে টাকা চাইতেছে- সেই পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কেনার জন্য। চিন্তা করতে পারেন, কী ভয়ংকর ঘটনা?
-অসুবিধা কী! টাকা দিয়া দেন- প্রশ্ন নিয়া আসুক।
আমার কথা শুনে ইনতাজ সাহেব বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। সরু চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তোতলাতে তোতলাতে বললেন-
: আপনি এসব কী বলতেছেন? ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের জোরে আমার ছেলে ডাক্তার হবে? এই রকম ডাক্তারের মুখে আমি সাড়ে সাতবার থু দেই। থুঃ।
আমি আরিফের খোঁজ করলাম। তার কাছ থেকে আগে পুরো বিষয়টা জেনে নেয়া যাক। আরিফ পাশের রুমে দাঁড়িয়েছিল। ডাক দেয়ার পর সে ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হতেই বললাম-
: তুমি কি সিওর- প্রশ্ন ফাঁস হইছে।
- হ্যাঁ।
: কীভাবে সিওর হইলা?
-যে ফ্রেন্ডের সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করছিলাম, সে-ই আমাকে ফোন করে কনফার্ম করছে।
: এই প্রশ্নপত্রের জোগানদার কারা?
-আমি ঠিক জানি না। তবে আমার বন্ধু আমাকে বলেছে, আমরা প্রশ্ন আনতে যার কাছে যাব তিনি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।
আরিফের কথা শুনে ইনতাজ সাহেব গলায় হাহাকার ফুটিয়ে আমার উদ্দেশে বললেন-
: কারবারটা দেখছেন? মাস্টারি রাইখ্যা কী একটা কুকামের সঙ্গে যুক্ত হইছে! সবগুলা হইল বদের কলসি।
: ঢালাওভাবে সবাইরে খারাপ বলা ঠিক না। ভালোও আছেন অনেকে।
আমার কথা শুনে ইনতাজ সাহেব গর্জে উঠলেন। কপাল কুঁচকে বললেন-
: ভা-লো! আপনি আগে ভালোর সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন। তারপর সেই ভালোর খাতায় এ দেশের কয়জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের নাম ওঠে- তা আমি দেখতে চাই।
মোকাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক
: কী হইছে!
-ইস্রাফিলের আব্বারে পুলিশ ধইরা লইয়া গেছে...
ইস্রাফিলের আব্বা- তার মানে স্বয়ং ইদ্রিস মিয়া। মন্তাজ আলী খানিকটা অবাকই হলেন। ইদ্রিস আলী সহজ-সরল খেটে খাওয়া মানুষ। পুলিশ বাহিনীর সালাম পাওয়ার মতো কোনো যোগ্যতা তার আছে বলে জানা নেই মন্তাজ আলীর। ইদ্রিসের বউ হঠাৎ বিলাপ জুড়ে দেয়-
: আল্লাহর দোহাই লাগে, আপনে ইস্রাফিলের আব্বারে ছাড়াইয়া আইন্যা দেন...
কাঁদতে কাঁদতেই ইদ্রিসের বউ শাড়ির আঁচল থেকে কিছু টাকা বের করে মন্তাজ আলীর হাতে গুঁজে দিল। মন্তাজ আলী অভিভূত হয়ে গেলেন। বিদ্যাবুদ্ধিহীন এ নারীর জ্ঞানের জগৎ সীমাবদ্ধ হওয়ারই কথা। দেশ-বিদেশের বিস্ময়কর পরিবর্তন ও অগ্রগতি সম্পর্কে সে হয়তো কোনো খোঁজখবরই রাখে না। অথচ গায়ের ওপর পুলিশের ছায়া পড়লে যে টাকা খরচ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই- এ জ্ঞান সে ঠিকই আয়ত্ত করে ফেলেছে। মন্তাজ আলী মনে মনে বললেন, সাবাশ। তারপর টাকাগুলো পকেটে রেখে জানতে চাইলেন,
: পুলিশ তারে কী জন্য ধরল?
-এইটা তো আমারও জিজ্ঞাসা!
: ঘটনার বর্ণনা দাও।
-সকালবেলা ঘুম থেইক্যা ওঠার পর ইস্রাফিলের বাপ কইল, শইলডার মধ্যে জুৎ পাইতেছি না- আইজ আর কামে যামু না। আমি কইলাম, আইচ্ছা। হেরপর নায়নাস্তা খাইয়া কইল- উত্তরপাড়ার নেকবইরা টেকা কর্জ নিছিল, আইজ দেওনের তারিখ; যাইয়া দেহি দেয় কিনা? আমি কইলাম, আইচ্ছা। এর দুই-আড়াই ঘণ্টা বাদে আচমকা খবর পাইলাম, পুলিশ তারে ধইরা থানায় লইয়া গেছে।
ইদ্রিসের বউ যাকে থানা বলে অভিহিত করল, সেটি আসলে থানা নয়, পুলিশ ফাঁড়ি। এলাকার লোকজনের অনেক দিনের প্রত্যাশা পূরণ করতে সরকার অষ্টধার বাজারে একটি পুলিশ ফাঁড়ির বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। কাজ শেষ করে মন্তাজ আলী ফাঁড়িতে গেলেন। তারপর ইদ্রিস মিয়ার কাছে প্রকৃত ঘটনা জেনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বললেন-
: স্যার, এই লোক তো নির্দোষ!
-নির্দোষ মানে! নির্দোষ হওয়ার সার্টিফিকেট তারে কে দিছে? আমেরিকা না ইংল্যান্ড? আপনে জানেন, আমার ফোর্স জুয়ার আসর থেইক্যা তারে অ্যারেস্ট করছে?
: জুয়া না স্যার। কাজ-কাম নাই, তাই কয়েকটা পোলাপান মিইল্যা তাস খেলতেছিল...
-কাজ-কাম নাই মানে? দেশে কি কাজ-কামের অভাব পড়ছে? ভিশন টু থাউজেন্ড টুয়েন্টি ওয়ানের ঘোষণা দিয়া এই সরকার আপাটে-ঘোপাটে কর্মসৃজন করছে। হাজার হাজার-লক্ষ কোটি কাজ-কাম হ্যাংগিং অবস্থায় আছে। সেদিকে মনোযোগ না দিয়া তাসের আসর বসানো- এইটা তো ভয়ংকরতম অপরাধ।
: কিন্তু ছা- ইদ্রিস আলী হইল নীরব দর্শক। ওই পথে গমন করার সময় তামাশা দেখার জন্য সাইডে বইসা ছিল।
-ক্রাইম যে করে আর ক্রাইম যে দেখে- দু’জনই সমান অপরাধী! রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় আছে?
: জ্বি না ছার।
-গ্রেট রাইটার ছিলেন। তিনি বলে গেছেন এ কথা।
: এখন করণীয় কী ছার!
-করণীয় একটাই। আগামীকাল ভোরের ট্রেনে আসামিকে কোর্টে চালান করে দিব।
চালান শব্দটা মন্তাজ আলীর খুবই মনে ধরল। তাই আর কালক্ষেপণ না করে ইদ্রিসের বউয়ের দেয়া টাকাগুলো তিনি পুলিশ বাহাদুরের পকেটে চালান করে দিলেন...
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকলেও গড়পড়তা বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ পুলিশ বিভাগ নিজেদের অর্থায়নে পরিচালিত একটি গবেষণা কর্মের মাধ্যমে এ বাস্তবতাকে উল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছে। পুলিশ বিভাগ যদি আড়াই ঘণ্টার একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করে কিংবা সংবাদমাধ্যম ও বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়ে এ চেষ্টা করত- কারও কিছু বলার ছিল না। কেউ যদি তার প্রযোজিত ছায়াছবিতে নিজেকে নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করে তাহলে আপত্তি করার কিছু নেই। পকেটে পয়সাকড়ি থাকলে নিজেকে জাহির করার জন্য পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন ও বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিলে কে বাধা দিতে যাবে? পুলিশ বিভাগ এসব পথে না গিয়ে একটি গবেষণার ওপর ভর করেছে। জনমত জরিপের মাধ্যমে সম্পন্ন ওই গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, পুলিশ কোনো দুর্নীতি করে না এবং কোনো কাজের জন্য ঘুষও নেয় না।
জনমত জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র নয়। কাজেই এটাকে চ্যালেঞ্জ করার কিছু নেই। তবে জনমত জরিপের নামে রাতকে দিন আর ছাগলকে ঐরাবত বানানোর চেষ্টা করা হলে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কিছু দিন আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সমীক্ষা রিপোর্টে দুর্নীতির ক্ষেত্রে এদেশের পুলিশ ও রাজনৈতিক দলকে সবার সেরা হিসেবে উল্লেখ করেছে। পুলিশ বিভাগ টিআইবির সমীক্ষা বা গবেষণার জবাব একটি গবেষণার মাধ্যমে দিতে গিয়ে অর্থাৎ দাঁতের বদলে দাঁত তুলতে গিয়ে আলাজিভ পর্যন্ত উপড়ে ফেলেছে। পুলিশের এ ধরনের কাজকারবার দেখে মাখন ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের এলাকার একটি সমবায় সমিতির একাংশের নেতা হচ্ছেন মাখন ভাই। অর্থ লোপাট, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নারী কেলেংকারি, পানাহার ইত্যাদি নানা দোষে তার চরিত্র দূষিত। কিছু দিন আগে ওই সমবায় সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। নির্বাচনে মাখন ভাই একজন প্রার্থী ছিলেন। একদিন শুনলাম, তার অনুসারীরা আকাশ-বাতাস ফাটিয়ে স্লোগান দিচ্ছে-
: মাখন ভাইয়ের চরিত্র- ফুলের মতো পবিত্র...
বলার অপেক্ষা রাখে না- মাখন ভাই সম্পর্কে যারা জানে, তাদের কাছে এ স্লোগান মূল্যহীন ও হাস্যকর। ঠিক একইভাবে এদেশের পুলিশ বাহিনীকে সাধু বানানোর জন্য যত বড় গবেষণার আয়োজনই করা হোক না কেন, মানুষ তা বিশ্বাস করবে না। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হলে অবশ্যই পুলিশের আচার-আচরণ ও চরিত্র সংশোধন করতে হবে।
পুলিশ সম্পর্কিত গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দু’জন শিক্ষক ও কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। জনমত জরিপের মাধ্যমে কোনো বিষয় সম্পর্কে জনভাবনার সঠিক প্রতিফলন ঘটাতে হলে গবেষণা কর্মের প্রতিটি পর্যায়ে একজন গবেষককে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিগত সততা, গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তি, মনোযোগ ও আন্তরিকতা নিয়ে অগ্রসর হতে হয়। গবেষণার কোনো একটি ধাপে এগুলোর ঘাটতি থাকলে যত বড় প্রতিষ্ঠান বা যত বড় বিদ্বানই তার সঙ্গে যুক্ত থাকুক না কেন, সে গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ফলে এ গবেষণার মান নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে। শিক্ষকরা হচ্ছেন বিদ্যা ও জ্ঞানদাতা। জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করার মহৎ দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষকরা যদি অনৈতিক কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন, তবে জাতির আর ভরসা করার মতো কোনো জায়গা থাকে না। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সুনাম ও মর্যাদা ছিল এবং তা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন সেটা অতীতের সুখস্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত গৌরব ও ঐতিহ্যের কোনো কিছুই ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এর কারণ অতীতে যেসব মহৎপ্রাণ মানুষ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, তারা পাঠদান ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট গবেষণার বাইরে অন্য কিছু করার কথা তো অনেক পরের ব্যাপার, চিন্তাতেও ঠাঁই দিতেন না। উচ্চশিক্ষার এ প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে ‘বিদ্যার দেবী’ সরস্বতীকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। সেখানে চলছে লক্ষ্মী বন্দনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক লক্ষ্মী বন্দনায় এতটাই ব্যস্ত ও পারঙ্গম যে, নীতি-আদর্শ-কর্তব্যবোধ জলাঞ্জলি দিতেও তারা কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। কিছু দিন আগে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তিনি তার ভিজিটিং কার্ড এগিয়ে দিলেন। সেই কার্ডে তার অনেক গুণের কথা উল্লেখ ছিল। এর মধ্যে এক জায়গায় দেখলাম লেখা রয়েছে ‘টকস্টার’। বিষয়টি নিয়ে মনের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল তৈরি হতেই সহকর্মী হেসে বললেন-
: উনি নিয়মিত টেলিভিশনের টকশো-এ অংশগ্রহণ করেন। সম্ভবত এ বিষয়টি বোঝানোর জন্যই নিজেকে ‘টকস্টার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজকাল টকশো করছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ‘খ্যাপ’ মারছেন, এনজিও খুলে দোকানদারি ও কনসালটেন্সি করছেন এবং সর্বোপরি ভয়াবহরকমভাবে দলীয় রাজনীতি করছেন। এসব কাজ শেষ করার পর তারা ছাত্রছাত্রীদের কতটুকু শেখাচ্ছেন- এ প্রশ্ন যদি কেউ করতে চান তবে আমি তাকে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নানের একটি উক্তি শোনাতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর একদিন শুনলাম, আমাদের জন্য নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন উপাচার্য আবদুল মান্নান দেশের অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা করতে গিয়ে বললেন-
: আমার ছেলেমেয়েরা নীলক্ষেত থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত যাওয়া-আসা করতে করতে যা শেখে- অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পাঁচ বছর পড়ালেখা করেও তা শিখতে পারে না...
কথাটা ভয়ংকররকম সত্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু শেখার জন্য যদি গৌরব করতে চায় তবে ক্যাম্পাস ও চারপাশের পরিবেশ আর এর লাইব্রেরির ওপর অবশ্যই তাদের ঋণ স্বীকার করতে হবে। পরীক্ষা পাসের জন্য ফটোকপির দোকান ও শিক্ষকদের কাছে তাদের ঋণ স্বীকারের কিছু নেই। সামরিক সরকারের অধীনে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ হতে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সময় লেগেছিল। এ সময়কালে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক বাদে বাকিদের মধ্যে যে নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ ও দায়িত্ববোধের নমুনা দেখেছি, তা বয়ান করতে গেলে বিশাল একটা কিতাব রচনার প্রয়োজন হবে। প্রায় দুই যুগের ব্যবধানে এ অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। অবনতির এ চিত্র কতটা মারাÍক রূপ ধারণ করেছে তা গত বছর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে টের পেলাম। মধ্যরাতে ফোন পেয়ে ইনতাজ সাহেবের বাসায় যেতেই তিনি হায় হায় করে বলে উঠলেন-
: রাইত পার হইলেই ভর্তি পরীক্ষা। অথচ এখন রাত ২টার সময় আমার সুপুত্র ও তার মা মিইল্যা আমার কাছে টাকা চাইতেছে- সেই পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কেনার জন্য। চিন্তা করতে পারেন, কী ভয়ংকর ঘটনা?
-অসুবিধা কী! টাকা দিয়া দেন- প্রশ্ন নিয়া আসুক।
আমার কথা শুনে ইনতাজ সাহেব বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। সরু চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তোতলাতে তোতলাতে বললেন-
: আপনি এসব কী বলতেছেন? ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের জোরে আমার ছেলে ডাক্তার হবে? এই রকম ডাক্তারের মুখে আমি সাড়ে সাতবার থু দেই। থুঃ।
আমি আরিফের খোঁজ করলাম। তার কাছ থেকে আগে পুরো বিষয়টা জেনে নেয়া যাক। আরিফ পাশের রুমে দাঁড়িয়েছিল। ডাক দেয়ার পর সে ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হতেই বললাম-
: তুমি কি সিওর- প্রশ্ন ফাঁস হইছে।
- হ্যাঁ।
: কীভাবে সিওর হইলা?
-যে ফ্রেন্ডের সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করছিলাম, সে-ই আমাকে ফোন করে কনফার্ম করছে।
: এই প্রশ্নপত্রের জোগানদার কারা?
-আমি ঠিক জানি না। তবে আমার বন্ধু আমাকে বলেছে, আমরা প্রশ্ন আনতে যার কাছে যাব তিনি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।
আরিফের কথা শুনে ইনতাজ সাহেব গলায় হাহাকার ফুটিয়ে আমার উদ্দেশে বললেন-
: কারবারটা দেখছেন? মাস্টারি রাইখ্যা কী একটা কুকামের সঙ্গে যুক্ত হইছে! সবগুলা হইল বদের কলসি।
: ঢালাওভাবে সবাইরে খারাপ বলা ঠিক না। ভালোও আছেন অনেকে।
আমার কথা শুনে ইনতাজ সাহেব গর্জে উঠলেন। কপাল কুঁচকে বললেন-
: ভা-লো! আপনি আগে ভালোর সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন। তারপর সেই ভালোর খাতায় এ দেশের কয়জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের নাম ওঠে- তা আমি দেখতে চাই।
মোকাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক
No comments