শেষ ম্যাচে সান্ত্বনার জয়
শেষ ভালো মানে নাকি সব ভালো। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষটা ভালো
করেও কি সব ভালোর দাবি করতে পারছে বাংলাদেশ দল! টেস্ট সিরিজ ড্র, ওয়ানডে
সিরিজে তো হারই। টি-টোয়েন্টি সিরিজটা জিততে পারলেই কেবল আজ সকালে দেশে
ফেরার বিমানে সামান্য সান্ত্বনা নিয়ে ওঠা যেত। কিন্তু কুইন্স স্পোর্টস
ক্লাব মাঠে পাওয়া কালকের ৩৪ রানের জয় যে সিরিজ জয়ের উৎসবে মাতার নয়,
শুধুই সিরিজ ড্র করার! মুশফিক পুরো সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো টসে জিতলেন।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারলেও কাল জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ। এই দুই পার্থক্য
ছাড়া প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সঙ্গে দ্বিতীয়টির অনেকই মিল। প্রথম
ইনিংসের রানটাই দেখুন। আগের দিন বাংলাদেশের সামনে ১৬৯ রানের লক্ষ্য
দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। কাল আগে ব্যাট করে বাংলাদেশও করল ঠিক ১৬৮। আরও মিল
খুঁজে পাবেন যদি বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কালকের
ব্যাটিংটাকে মেলান। অবশ্য মিল ধরে রাখতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। প্রথম
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ মাত্র ৬ রানে হারলেও কাল ২০ ওভার ব্যাটিং করে ৯
উইকেটে ১৩৪ রানই করতে পারল জিম্বাবুয়ে। সাকিব আল হাসানের জন্য জিম্বাবুয়ে
সফরের শুরুটা ছিল শঙ্কার। শিনবোনের চিকিৎসা-পরবর্তী পুনর্বাসন
জিম্বাবুয়েতে এসেও চলছিল বলেই হয়তো পুরোপুরি মেলে ধরতে পারছিলেন না
নিজেকে। তবে সফরের শেষটা সাকিব করলেন সাকিবের মতোই। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে
ফিফটির সঙ্গে পেয়েছেন ২ উইকেট। বাংলাদেশ জিতলে হয়তো হয়ে যেতেন ম্যান অব
দ্য ম্যাচও। কাল আর এই ‘হয়তো’র প্রয়োজন পড়ল না। ব্যাট হাতে ৪০ রান,
সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং। ম্যান অব দ্য ম্যাচ তো বটেই,
টি-টোয়েন্টির ম্যান অব দ্য সিরিজও সাকিব আল হাসানই। আগের সেরা বোলিংটা ছিল
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ৩৪ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন সেবার। আর কাল ২২
রানে ৪ উইকেট। জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের দাঁড়াতে দেননি এই বাঁহাতি
স্পিনারই। বাংলাদেশের ইনিংস মূলত প্রথম টি-টোয়েন্টিরই পুনরাবৃত্তি। প্রথম
ম্যাচে ইনিংসের প্রথম ওভারেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ দল
লড়াই যা করার করেছিল ওপেনার শামসুর রহমানের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে। শুরুর দৃশ্যে কাল শামসুরের জায়গায় তামিম, তামিমের
জায়গায় শামসুর। শামসুরও এদিন উতসেয়ার করা ইনিংসের প্রথম ওভারে ডিপ মিড
উইকেটে ওয়ালারের ক্যাচ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সাকিবের সঙ্গে শামসুরের
জায়গায় তাই তাামিম। ৮২ রানের জুটি। তামিম ৩০ বলে ৪৩, সাকিব ২৮ বলে ৪০।
আগের ম্যাচে যেমন সাকিবের পর পরই ফিরে যান শামসুর, কালও দুই সেট
ব্যাটসম্যানই পর পর আউট। মুসাঙ্গির বলে ডিপ স্কোয়ার লেগে রাজার হাতে ক্যাচ
দিয়ে সাকিব, দুই ওভার পর উতসেয়ার বলে লং অনে তামিম ধরা পড়লেন শিঙ্গি
মাসাকাদজার হাতে। দলের ৮৬ রানে সাকিব ও ১০১ রানে তামিমের বিদায়ের পর মনে
হচ্ছিল ঘুরে যাচ্ছে ম্যাচের গতি। তামিম আউট হওয়ার পর আরও ৪ উইকেট হারিয়ে
বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ হয়েছে মাত্র ৬৭ রান। মিডল-অর্ডারে মুশফিকুর
রহিম আশা জাগিয়েছিলেন প্রথম ম্যাচে। কাল সাকিব-তামিম ফিরে যাওয়ার পর সে
জায়গায় হাল ধরেছিলেন নাসির হোসেন। কিন্তু দুই ম্যাচের মধ্যে যেখানে এত
মিল সেখানে রানআউটটাই বা বাকি থাকবে কেন! প্রথম ম্যাচে রানআউট হয়েছিলেন
নাসির ও মাহমুদউল্লাহ। কাল সেই দুর্ভাগ্যে পুড়লেন শুধু নাসির। পুরো সিরিজে
আম্পায়ারিংয়ের মান কোন পর্যায়ের ছিল, তার সর্বশেষ নমুনা দেখা গেল কাল
শেষ ম্যাচে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এবার আম্পায়ার বল গুনতেও ভুল করলেন!
জিম্বাবুয়ের বোলিংয়ের সময় উতসেয়ার করা ১৪তম ওভারটি তাই শেষ হয়ে গেল ৫
বলেই। বাজে আম্পায়ারিংয়ের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ
জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ দল। কোচ শেন জার্গেনসেন তো এ নিয়ে কয়েকবারই কথা
বলেছেন ম্যাচ রেফারির সঙ্গে। কাল জিম্বাবুয়ের ইনিংস চলাকালে মাঠেই
আম্পায়ারের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেল সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে।
ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস অশালীন ভাষায় কিছু বলছিলেন মাহমুদউল্লাহকে। জবাব
দিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহও। কিন্তু আম্পায়ার এখানেও জিম্বাবুয়ের পক্ষ
নিয়ে বারবার মাহমুদউল্লাহকেই থামতে বলছিলেন। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক,
সহ-অধিনায়কের সঙ্গে এ নিয়ে ভালোই কথা-কাটাকাটি হয় আম্পায়ারের। শেষ
ম্যাচটা জিতলেও জিম্বাবুয়ে থেকে এ রকম অনেক রাগ-ক্ষোভ-হতাশা নিয়েই দেশে
ফিরছে বাংলাদেশ দল। তবে প্রাপ্তির খাতাটা বেশি ভারী হয়ে গেল বোধ হয়
লজ্জাতেই।
বাংলাদেশ ২০ ওভারে: ১৬৮/৭
জিম্বাবুয়ে ২০ ওভারে: ১৩৪/৯
ফল: বাংলাদেশ ৩৪ রানে জয়ী
বাংলাদেশ ২০ ওভারে: ১৬৮/৭
জিম্বাবুয়ে ২০ ওভারে: ১৩৪/৯
ফল: বাংলাদেশ ৩৪ রানে জয়ী
No comments