অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ -আইনটি নিয়ে আরও আলোচনা হোক
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (সংশোধন) ২০০৯ মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন পেল—এটা একটা ভালো খবর। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু পরিবারের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক, বহু বছর ধরে চলমান এ সমস্যাটি সমাধানের ব্যাপারে যে বর্তমান সরকারের মনোযোগ আছে, মন্ত্রিসভার অনুমোদন তারই স্পষ্ট আভাস।
২০০১ সালে প্রণীত আইনটি কার্যকর হতে পারেনি ২০০২ সালে একটি ধারা সংশোধনীর কারণে; প্রথমটিতে নির্দেশনা ছিল, আইন পাসের ১৮০ দিনের মধ্যে অর্পিত সম্পত্তির সরকারি তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ২০০২ সালের সংশোধনীতে তালিকা প্রকাশের সময়সীমা তুলে দিয়ে অনির্দিষ্টকাল করে দেওয়া হলে বস্তুত আইনটির কার্যকারিতা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সাত বছর পর ২০০৯ সালের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তির সরকারি তালিকা আইন পাসের ২১০ দিনের মধ্যে প্রকাশের নির্দেশনা সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। তালিকা প্রকাশের পরই আইনের কার্যকারিতা শুরু হবে।
পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলস নামের এক অন্যায় বিধান করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপুলসংখ্যক দেশত্যাগী মানুষের ভূমির অধিকার হরণ করে সে-সময়ের সরকার। তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিকে শত্রুসম্পত্তি আখ্যা দিয়ে দখল করা হয়। এটাকে বলা চলে রাষ্ট্র কর্তৃক ভূমিগ্রাস। স্বাধীনতার পরপরই এই অন্যায়ের প্রতিকার করা উচিত ছিল; কিন্তু সেটা হয়নি। ২০০১ সালে আইন প্রণীত হলেও সে আইনের কার্যকারিতা ঝুলে আছে আট বছর ধরে। এখন এর অবসান ঘটিয়ে অর্পিত ভূ-সম্পত্তি বৈধ মালিক ও তাদের বৈধ উত্তরসূরিদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে ইতিহাসের এক বড় কলঙ্ক মোচন করা দরকার।
আইনটির বর্তমান প্রস্তাবিত সংশোধনীর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো নিয়ে আরও বিশদ পর্যালোচনা ও বিচার-বিবেচনা প্রয়োজন। আইনের মধ্যে কোনো জটিলতা, অস্বচ্ছতা, অনির্দিষ্টতা থাকা উচিত নয়, যার ফলে এর প্রয়োগ কঠিন হতে পারে, দীর্ঘ কালক্ষেপণ ঘটতে পারে। সরকারের কাছে অর্পিত সম্পত্তির হিসাব ও তালিকা রয়েছে, সেগুলোর বৈধ মালিকদের কোনো তালিকা নেই। মূল সমস্যা এখানেই: বৈধ মালিক বা তাদের উত্তরাধিকারীদের এখন দাবি জানিয়ে সত্যাসত্য প্রমাণ করে সম্পত্তি ফিরে পেতে হবে। আরও সমস্যা হলো, প্রায় সাড়ে ছয় লাখ একর মোট অর্পিত সম্পত্তির মধ্যে বর্তমানে সরকারের দখলে আছে দুই লাখ একরের কাছাকাছি, বাকি প্রায় সাড়ে চার লাখ একরই রয়েছে বেসরকারি বা ব্যক্তিগত দখলে। ব্যক্তিগত দখলে থাকা ভূ-সম্পত্তি নিয়েই জটিলতা হবে বেশি। এ জন্য উপজেলা, জেলা ও মহানগর—এই তিন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে গঠিত হবে এসব কমিটি, যেখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদদের ভূমিকা হবে উপদেষ্টার। সম্পত্তির দাবিদারদের আবেদনের পর সেসব কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দাবিকৃত সম্পত্তি অবমুক্ত করা হবে—এমন বিধানের প্রস্তাব নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া উচিত। যেসব তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি সরকারের দখলে নেই, তা প্রথমে সরকারের দখলে নেওয়া এবং তারপর বৈধ মালিক বা তাদের উত্তরাধিকারীদের প্রত্যর্পণ করার প্রক্রিয়া অধিকতর সমীচীন মনে হয়।
জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা হোক। সেই সঙ্গে প্রস্তাবিত খসড়াটি ওয়েবসাইটে ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে নাগরিক সমাজের মতামত আহ্বান করা প্রয়োজন। সংসদে পাসের আগে অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ, সাবেক বিচারপতিসহ ওয়াকিবহাল মহলের মতামতের ভিত্তিতে সংশোধনীটির ধারাগুলো আরও সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট করার সুযোগ রয়েছে এবং সেটাই করা উচিত।
২০০১ সালে প্রণীত আইনটি কার্যকর হতে পারেনি ২০০২ সালে একটি ধারা সংশোধনীর কারণে; প্রথমটিতে নির্দেশনা ছিল, আইন পাসের ১৮০ দিনের মধ্যে অর্পিত সম্পত্তির সরকারি তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ২০০২ সালের সংশোধনীতে তালিকা প্রকাশের সময়সীমা তুলে দিয়ে অনির্দিষ্টকাল করে দেওয়া হলে বস্তুত আইনটির কার্যকারিতা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সাত বছর পর ২০০৯ সালের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তির সরকারি তালিকা আইন পাসের ২১০ দিনের মধ্যে প্রকাশের নির্দেশনা সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। তালিকা প্রকাশের পরই আইনের কার্যকারিতা শুরু হবে।
পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলস নামের এক অন্যায় বিধান করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপুলসংখ্যক দেশত্যাগী মানুষের ভূমির অধিকার হরণ করে সে-সময়ের সরকার। তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিকে শত্রুসম্পত্তি আখ্যা দিয়ে দখল করা হয়। এটাকে বলা চলে রাষ্ট্র কর্তৃক ভূমিগ্রাস। স্বাধীনতার পরপরই এই অন্যায়ের প্রতিকার করা উচিত ছিল; কিন্তু সেটা হয়নি। ২০০১ সালে আইন প্রণীত হলেও সে আইনের কার্যকারিতা ঝুলে আছে আট বছর ধরে। এখন এর অবসান ঘটিয়ে অর্পিত ভূ-সম্পত্তি বৈধ মালিক ও তাদের বৈধ উত্তরসূরিদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে ইতিহাসের এক বড় কলঙ্ক মোচন করা দরকার।
আইনটির বর্তমান প্রস্তাবিত সংশোধনীর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো নিয়ে আরও বিশদ পর্যালোচনা ও বিচার-বিবেচনা প্রয়োজন। আইনের মধ্যে কোনো জটিলতা, অস্বচ্ছতা, অনির্দিষ্টতা থাকা উচিত নয়, যার ফলে এর প্রয়োগ কঠিন হতে পারে, দীর্ঘ কালক্ষেপণ ঘটতে পারে। সরকারের কাছে অর্পিত সম্পত্তির হিসাব ও তালিকা রয়েছে, সেগুলোর বৈধ মালিকদের কোনো তালিকা নেই। মূল সমস্যা এখানেই: বৈধ মালিক বা তাদের উত্তরাধিকারীদের এখন দাবি জানিয়ে সত্যাসত্য প্রমাণ করে সম্পত্তি ফিরে পেতে হবে। আরও সমস্যা হলো, প্রায় সাড়ে ছয় লাখ একর মোট অর্পিত সম্পত্তির মধ্যে বর্তমানে সরকারের দখলে আছে দুই লাখ একরের কাছাকাছি, বাকি প্রায় সাড়ে চার লাখ একরই রয়েছে বেসরকারি বা ব্যক্তিগত দখলে। ব্যক্তিগত দখলে থাকা ভূ-সম্পত্তি নিয়েই জটিলতা হবে বেশি। এ জন্য উপজেলা, জেলা ও মহানগর—এই তিন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে গঠিত হবে এসব কমিটি, যেখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদদের ভূমিকা হবে উপদেষ্টার। সম্পত্তির দাবিদারদের আবেদনের পর সেসব কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দাবিকৃত সম্পত্তি অবমুক্ত করা হবে—এমন বিধানের প্রস্তাব নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া উচিত। যেসব তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি সরকারের দখলে নেই, তা প্রথমে সরকারের দখলে নেওয়া এবং তারপর বৈধ মালিক বা তাদের উত্তরাধিকারীদের প্রত্যর্পণ করার প্রক্রিয়া অধিকতর সমীচীন মনে হয়।
জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা হোক। সেই সঙ্গে প্রস্তাবিত খসড়াটি ওয়েবসাইটে ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে নাগরিক সমাজের মতামত আহ্বান করা প্রয়োজন। সংসদে পাসের আগে অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ, সাবেক বিচারপতিসহ ওয়াকিবহাল মহলের মতামতের ভিত্তিতে সংশোধনীটির ধারাগুলো আরও সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট করার সুযোগ রয়েছে এবং সেটাই করা উচিত।
No comments