অন্য এক পৃথিবীর ক্যালেন্ডার by ওথমান হুসেইন

এই শব্দগুলো লেখা হচ্ছে যখন, তখন ২৪তম দিনটি নিজেই নিজের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। অপরাধগুলো ইতিহাসের মুখে ছুড়ে দিয়ে বিদায় নিচ্ছে এ দিনটি। দুপুর থেকে যে নিস্তব্ধতা শুরু হয়েছিল দিনের শেষ দুই ঘণ্টায় আমি সেই একই ধরনের নিস্তব্ধতা অনুভব করলাম। এই নিস্তব্ধতা টিকে থাকবে ২৫তম দিনের সন্ধ্যা পর্যন্তও। আগামীকাল একটি নতুন দিনের সূচনা হবে। একটি নতুন সংখ্যা সামনে আসবে। আমরা জানি না এদিনের কি স্মৃতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

ড্রোনের গুঞ্জন চারদিকে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শব্দটি অবিরাম শোনা যাচ্ছে। তাতে অন্যরকম এক পটভূমি হয়ে উঠেছে। আমাদের জীবনের প্রতিটি কোণে প্রবেশ করেছে তা। আমাদের দিনগুলোর অন্তঃস্থলে জায়গা করে নিয়েছে এই ড্রোনের গুঞ্জন। বাহিয়া আজ রাতে কোনো বিস্ফোরণের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করেনি আমাকে; হয়তো এটা জিজ্ঞাসা করলে এবং এর ব্যাখ্যা শুনলে তার মেজাজ নষ্ট হয়ে যেত। সে এখন একটি পছন্দের গান গুনগুন করে গাইছে। তার পাশে ফোন রাখা। তার উপস্থিতি পুরো ঘরটিকে দখল করে রেখেছে।
অবিরাম খবর আসছে অবিরাম। খবরের পর খবর। থামার কোনো নামই নেই। সকাল থেকে বিমানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্যও থামেনি সেই শব্দ। মানবিক সহায়তার করিডর নিয়ে অনেক কথা চলছে- এই প্রতারণাময় নীরবতাই কি সেই করিডরের প্রস্তুতি?

যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই আমরা গণনা শুরু করেছি। আশঙ্কা উপরের দিকে বাড়তে থাকা এক গণনা। দিনগুলো কেবল সংখ্যায় পরিচিত হয়ে উঠলো। উদাহরণস্বরূপ, আমার বাড়িতে আর্টিলারি গোলার আঘাত করা হয় তৃতীয় দিনে। অন্য সব দিনও বাঁধা রইল বিভিন্ন হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে- এইদিন বা সেই দিনের ভেতরে সংঘটিত বিভীষিকার স্মৃতিতে।
বিশতম দিনে, বিশ্ব দেখেছিল কীভাবে গোটা পরিবার নাগরিক নিবন্ধন থেকে মুছে দেয়া হয়েছে এক নিদারুণ ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে। এখানে প্রতিটি দিন নাগরিকরা রেজিস্ট্রি ধ্বংসের সাক্ষী হয়ে উঠছিল। পুরো পাড়া-মহল্লা মুছে গেছে মানচিত্র ও ইতিহাস থেকে এবং বিশ্ব সেই ধ্বংসযজ্ঞও প্রত্যক্ষ করেছে।
৩০ অক্টোবর, ২০২৩
(লেখক ওথমান হুসেইন গাজার রাফাহভিত্তিক একজন ফিলিস্তিনি কবি। তিনি ‘আশিতার’ সাহিত্য পত্রিকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘আশিতার এসোসিয়েশন ফর কালচারাল অ্যান্ড আর্টস’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্যালেস্টাইনি রাইটার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বিসান মিডিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিসান মিডিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ‘রাফাহ অ্যালফাবেট অব ডিসট্যান্স অ্যান্ড মেমরি (১৯৯২)’। ‘দ্য সিজ অ্যাপোলোজাইজ ফর ড্রোউনিং (১৯৯৩)’। ‘হু উইল কাট দ্য হেড অব দ্য সি (১৯৯৬)’। ‘ফর ইউ (২০০০)’। ‘দ্য থিংস লেফট টু দ্য ব্লু (২০০৪)’। ‘অ্যাজ ইফ আই অ্যাম রোলিং গ্যালাক্সিজ (২০১২)’। ‘দ্য ভিকটিমস গার্ডিয়ান (২০২৩)’। দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় তার পারিবারিক ঘরটি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবুও তিনি যুদ্ধ চলাকালীন গাজাতেই থেকে গেছেনÑ শব্দের ভেতর বেঁচে আছেন, ধ্বংসস্তূপের মাঝেও কবিতার কণ্ঠস্বর হয়ে। লেটারস ফ্রম গাজা বই থেকে)।

লেখক: ওথমান হুসেইন অনুবাদ: মোহাম্মদ আবুল হোসেন

https://mzamin.com/uploads/news/main/183103_2.webp

No comments

Powered by Blogger.