পেশোয়ার: ঐতিহ্যের পথে চলা by ওমর খান
পেশোয়ার: ঐতিহ্যের পথে চলা |
সাউথ এশিয়ান মনিটর, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮: পেশোয়ার
নিয়ে আমার সবচেয়ে প্রাচীন স্মৃতি জড়িয়ে আছে ইউনিভার্সিটি টাউনের একটি
দোতলা বাড়ি, লাল দোতলা বাস, অমিতাভের কভি কভি সিনেমা দেখা আর আমার
কিন্ডারগার্টেন।
আমার সবসময়ই ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল। আর এক সকালে নিজেকে নগরীর মাঝামাঝি স্থানে থাকা গোরখাত্রিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।
আমি এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলাম জেনারেল পাওলো ক্রেসনজো মার্টিনো অ্যাভিটাভিলের একটি প্রতিবেদনে। তিনি ওয়াটারলু যুদ্ধের পর মহারাজা রনজিৎ সিংয়ের সেনাবাহিনীতে কাজ করতে ভারতবর্ষে এসেছিলেন।
অ্যাভিটাভিলকে প্রথমে ওয়াজিরাবাদের গভর্নর করা হয়েছিল, তারপর তিনি ১৮৩৮ থেকে ১৮৩২ পর্যন্ত ছিলেন পেশোয়ারের গভর্নর। তিনি গোরখাত্রিকে বাসভবন বানিয়েছিলেন। স্থানীয়ভাবে তাকে বলা হতো আবু তাবেলা।
আবু তাবেলা নির্মমভাবে শাসনকাজ চালাতেন। অপরাধীদের মাহাতাব খান মসজিদের মিনারে ফাঁসি দিয়েছিলেন। মায়েরা তাদের সন্তানদের ভয় দেখাতেন এই বলে যে তারা যদি তার কথা না শোনে, তবে আবু তাবেলা আসবেন।
আমার সবসময়ই ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল। আর এক সকালে নিজেকে নগরীর মাঝামাঝি স্থানে থাকা গোরখাত্রিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।
আমি এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলাম জেনারেল পাওলো ক্রেসনজো মার্টিনো অ্যাভিটাভিলের একটি প্রতিবেদনে। তিনি ওয়াটারলু যুদ্ধের পর মহারাজা রনজিৎ সিংয়ের সেনাবাহিনীতে কাজ করতে ভারতবর্ষে এসেছিলেন।
অ্যাভিটাভিলকে প্রথমে ওয়াজিরাবাদের গভর্নর করা হয়েছিল, তারপর তিনি ১৮৩৮ থেকে ১৮৩২ পর্যন্ত ছিলেন পেশোয়ারের গভর্নর। তিনি গোরখাত্রিকে বাসভবন বানিয়েছিলেন। স্থানীয়ভাবে তাকে বলা হতো আবু তাবেলা।
আবু তাবেলা নির্মমভাবে শাসনকাজ চালাতেন। অপরাধীদের মাহাতাব খান মসজিদের মিনারে ফাঁসি দিয়েছিলেন। মায়েরা তাদের সন্তানদের ভয় দেখাতেন এই বলে যে তারা যদি তার কথা না শোনে, তবে আবু তাবেলা আসবেন।
গোরখাত্রিতে প্রত্মতাত্ত্বি খননকাজ চলছে |
এখন
গোরখাত্রি শাসন করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। ইতিহাস আরো অনুসন্ধানের জন্য তারা
খননকাজ চালিয়েই যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ববিদেরা খ্রিস্টপূর্ব ২০০
সালের ইন্দো-গ্রিক আমল থেকে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত বিভিন্ন সভ্যতার ১৩টি স্তর
খুঁজে পেয়েছে।
একসময় অনেকে এখানে বিয়ের আয়োজনও করতো। তবে একপর্যায়ে শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এখানে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
একসময় অনেকে এখানে বিয়ের আয়োজনও করতো। তবে একপর্যায়ে শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এখানে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
গোরখাত্রিতে এক হিন্দু মন্দির |
আর
মোগলদের ১৬ শতকে নির্মিত সরাইখানাকে কেন্দ্র করে অনেকে ছোট ছোট দোকান
বসিয়েছে। এগুলোতে হস্তশিল্প, শাল, পেশোয়ারি চপ্পল ইত্যাদি বিক্রি হয়।
কমপ্লেক্সটির মাঝামাঝি একটি বিশাল বটবৃক্ষের নিচে একটি পুরনো মন্দিরও আছে। পেশোয়ারের হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা এখনো এটি দেখাশোনার কাজটি করে যাচ্ছে।
এখানকার পশ্চিম দিকের গেট দিয়ে হাঁটলে পেশোয়ারের সবচেয়ে পুরনো স্থানটিতে চলে যাওয়া যাবে। সরকার এখানকার পুরোনো ঐতিহ্যের অনেক কিছুই সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেছে।
কমপ্লেক্সটির মাঝামাঝি একটি বিশাল বটবৃক্ষের নিচে একটি পুরনো মন্দিরও আছে। পেশোয়ারের হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা এখনো এটি দেখাশোনার কাজটি করে যাচ্ছে।
এখানকার পশ্চিম দিকের গেট দিয়ে হাঁটলে পেশোয়ারের সবচেয়ে পুরনো স্থানটিতে চলে যাওয়া যাবে। সরকার এখানকার পুরোনো ঐতিহ্যের অনেক কিছুই সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেছে।
শেঠি হাভেলি |
আমি অনেক আগে থেকেই শেঠি হাভেলির কথা শুনেছিলাম। আমার গাইড আমাকে শেঠি মহল্লায় নিয়ে গেল। বাজারের ঠিক পরেই এর অবস্থান।
আমি সংকীর্ণ, তবে পরিচ্ছন্ন গলি দিয়ে প্রবেশ করলাম। করিম বকশ শেঠির অনন্য ভবনটি ছাড়া আর আছে কয়েকটি ছোট ভোট বাড়ি। করিম বকশ তার বাড়িটি বানিয়েছিলেন ১৮৮৪ সালে। বাড়িতে প্রবেশ করামাত্র আঙিনায় থাকা ঝরনাটি দেখা যাবে। তবে সবচেয়ে মুগ্ধ করবে বেডরুমগুলোতে থাকা বর্ণিল জানালাগুলো।
শেঠিরা শিখ শাসনকালে ভেরা থেকে পেশোয়ারে আগত ব্যবসায়ী। তারা অল্প সময়ের মধ্যেই মধ্য এশিয়া থেকে উপমহাদেশের বাণিজ্য রুটগুলোর প্রভুতে পরিণত হয়। তাদের বিত্তবৈভব তাদের হাভেলিগুলোতে ফুটে ওঠত।
এরপর আমরা ১৯০০ সালে নির্মিত কানিংহ্যাম ক্লক টাওয়ার অতিক্রম করলাম। উপনিবেশ আমলের গভর্নর স্যার জর্জ কানিংহ্যামের নামে এই টাওয়ার। রানি ভিক্টোরিয়ার ডায়ামন্ড জুবিলি উপলক্ষে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
আমি সংকীর্ণ, তবে পরিচ্ছন্ন গলি দিয়ে প্রবেশ করলাম। করিম বকশ শেঠির অনন্য ভবনটি ছাড়া আর আছে কয়েকটি ছোট ভোট বাড়ি। করিম বকশ তার বাড়িটি বানিয়েছিলেন ১৮৮৪ সালে। বাড়িতে প্রবেশ করামাত্র আঙিনায় থাকা ঝরনাটি দেখা যাবে। তবে সবচেয়ে মুগ্ধ করবে বেডরুমগুলোতে থাকা বর্ণিল জানালাগুলো।
শেঠিরা শিখ শাসনকালে ভেরা থেকে পেশোয়ারে আগত ব্যবসায়ী। তারা অল্প সময়ের মধ্যেই মধ্য এশিয়া থেকে উপমহাদেশের বাণিজ্য রুটগুলোর প্রভুতে পরিণত হয়। তাদের বিত্তবৈভব তাদের হাভেলিগুলোতে ফুটে ওঠত।
এরপর আমরা ১৯০০ সালে নির্মিত কানিংহ্যাম ক্লক টাওয়ার অতিক্রম করলাম। উপনিবেশ আমলের গভর্নর স্যার জর্জ কানিংহ্যামের নামে এই টাওয়ার। রানি ভিক্টোরিয়ার ডায়ামন্ড জুবিলি উপলক্ষে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
কানিংহ্যাম ক্লক টাওয়ার |
মসজিদ মাহবাত খানের ঠিক বিপরীতে আছে বাজার কালান। আর কিসসা কাহিনী বাজারে প্রবেশ করতে হলে চক ইয়াদগর ছাড়িয়ে যেতে হয়।
আমার উৎসাহী গাইড আমাকে সরু সরু গলি পাড়ি দিয়ে কিংবদন্তির ভারতীয় অভিনেতা দিলীপ কুমারের স্কুলে এবং তারপর খুদাদাদ মহল্লায় তার সাবেক বাড়িতে নিয়ে গেল।
মসজিদ মাহবাত খানের ঠিক বিপরীতে আছে বাজার কালান। আর কিসসা কাহিনী বাজারে প্রবেশ করতে হলে চক ইয়াদগর ছাড়িয়ে যেতে হয়।
আমার উৎসাহী গাইড আমাকে সরু সরু গলি পাড়ি দিয়ে কিংবদন্তির ভারতীয় অভিনেতা দিলীপ কুমারের স্কুলে এবং তারপর খুদাদাদ মহল্লায় তার সাবেক বাড়িতে নিয়ে গেল।
মসজিদ মাহবাত খানের ঠিক বিপরীতে আছে বাজার কালান। আর কিসসা কাহিনী বাজারে প্রবেশ করতে হলে চক ইয়াদগর ছাড়িয়ে যেতে হয়।
কালান বাজারের রুটি |
আমার
উৎসাহী গাইড আমাকে সরু সরু গলি পাড়ি দিয়ে কিংবদন্তির ভারতীয় অভিনেতা দিলীপ
কুমারের স্কুলে এবং তারপর খুদাদাদ মহল্লায় তার সাবেক বাড়িতে নিয়ে গেল।
স্কুলটি এখনো চলছে। তবে সাবেক বাড়িটি ধসে পড়েছে। এখন এটিকে একটি জাদুঘরে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।
দিলীপ কুমারের পৈত্রিক ভবনের প্রতি যদি এত টান থাকে, তবে শাহরুখ খানের বাড়ি কি ভোলা যায়?
ফলে আমাদের গাইড আরো কয়েকটি সরু গলি পার করে আরেক স্থানে নিয়ে গেল।
স্কুলটি এখনো চলছে। তবে সাবেক বাড়িটি ধসে পড়েছে। এখন এটিকে একটি জাদুঘরে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।
দিলীপ কুমারের পৈত্রিক ভবনের প্রতি যদি এত টান থাকে, তবে শাহরুখ খানের বাড়ি কি ভোলা যায়?
ফলে আমাদের গাইড আরো কয়েকটি সরু গলি পার করে আরেক স্থানে নিয়ে গেল।
দিলীপ কুমারের পৈত্রিক ভবন |
তবে
সেখানে যাওয়ার আগে তাজ সোডা শপ থেকে লেমন সোডার বোতল চেখে দেখতেই হলো।
পেশোয়ারের লোকজন তাজ সোডা কোম্পানির পানীয় খেয়েই বেড়ে ওঠেছে।
কিসসা কাহিনী বাজারে গেলে কিচ্ছা তো শুনতেই হবে। তবে আমরা যখন গেলাম, তখন একজন কিচ্ছা কথককেও পাইনি। তবে ঐতিহ্য বজায় রেখে খেহওয়া খানা এখনো আছে। সেই আগের মতোই এর স্বাদ আছে।
শাহরুখ খানের পৈত্রিক বাড়ি কিসসা কাহিনী বাজারের কাছেই। তার বাবা তাজ মোহাম্মদ খান এই এলাকাতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি ছিলেন পেশায় আইনজীবী ও কংগ্রেস কর্মী। তিনি ১৯৪৭ সালে ভারতে অভিবাসন করেন। শাহরুখ খান দুবার পেশোয়ার এসেছিলেন। ১৯৭৮ সালে একবার, ১৯৮০ সালে আরেকবার। তিনি ওই বাড়িতেই থেকেছিলেন।
তার চাচাত ভাইরা এখনো পেশোয়ারে থাকেন।
কিসসা কাহিনী বাজারে গেলে কিচ্ছা তো শুনতেই হবে। তবে আমরা যখন গেলাম, তখন একজন কিচ্ছা কথককেও পাইনি। তবে ঐতিহ্য বজায় রেখে খেহওয়া খানা এখনো আছে। সেই আগের মতোই এর স্বাদ আছে।
শাহরুখ খানের পৈত্রিক বাড়ি কিসসা কাহিনী বাজারের কাছেই। তার বাবা তাজ মোহাম্মদ খান এই এলাকাতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি ছিলেন পেশায় আইনজীবী ও কংগ্রেস কর্মী। তিনি ১৯৪৭ সালে ভারতে অভিবাসন করেন। শাহরুখ খান দুবার পেশোয়ার এসেছিলেন। ১৯৭৮ সালে একবার, ১৯৮০ সালে আরেকবার। তিনি ওই বাড়িতেই থেকেছিলেন।
তার চাচাত ভাইরা এখনো পেশোয়ারে থাকেন।
শাহরুখ খানদের পৈত্রিক নিবাস |
রনবীর
কাপুর আর কারিনা কাপুরের সাথেও আপনি পরিচিত হতে পারেন যদি ১৯১৮ সালে খান
রাজিক এলাকার কাপুর হাভেলিতে যান। কিসসা কাহিনী বাজারের খুব কাছেই এর
অবস্থান।
তাদের নিয়ে যে কাহিনীটি প্রচলিত তা হলো, পৃথ্বিরাজ কাপুরের জন্ম হয়েছিল ফয়সালাবাদের কাছে লায়ালপুরের সরকারি কর্মকর্তা দেওয়ান বাশ্বেনাথ কাপুরের ছেলে হিসেবে। পরে তারা পেশোয়ারে চলে আসেন। সেখানেই রাজ কাপুরের জন্ম।
দিলীপ কুমার আর শাহরুখ খানদের পৈত্রিক নিবাসের তুলনায় কাপুর হাভেলি অনেক বেশি জাকজমকপূর্ণ।
নানা সরু গলি পাড়ি দিয়ে ১৬ শতকের মাহতাব খান মসজিদে আসতে হয়। সম্রাট শাহজাহানের আমলে পেশোয়ারের গভর্নর এটি নির্মাণ করেছিলেন।
পেশোয়ারে এসে কি বালা হিসার ফোর্ট না দেখে যাওয়া যায়? আগে অনুমতি না থাকায় আমি সেখানে প্রবেশ করতে পারিনি। তবে আবার আসবই। তখন গভর্নর হাউস, পেশোয়ার জাদুঘর, উপনিবেশিক খ্রিস্টান সিমেটারি, ডেপুটি কমিশনারের হাউস, ইসলামিয়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় দেখে নেব।
>>>সব ছবি লেখকের নিজের তোলা
তাদের নিয়ে যে কাহিনীটি প্রচলিত তা হলো, পৃথ্বিরাজ কাপুরের জন্ম হয়েছিল ফয়সালাবাদের কাছে লায়ালপুরের সরকারি কর্মকর্তা দেওয়ান বাশ্বেনাথ কাপুরের ছেলে হিসেবে। পরে তারা পেশোয়ারে চলে আসেন। সেখানেই রাজ কাপুরের জন্ম।
দিলীপ কুমার আর শাহরুখ খানদের পৈত্রিক নিবাসের তুলনায় কাপুর হাভেলি অনেক বেশি জাকজমকপূর্ণ।
নানা সরু গলি পাড়ি দিয়ে ১৬ শতকের মাহতাব খান মসজিদে আসতে হয়। সম্রাট শাহজাহানের আমলে পেশোয়ারের গভর্নর এটি নির্মাণ করেছিলেন।
পেশোয়ারে এসে কি বালা হিসার ফোর্ট না দেখে যাওয়া যায়? আগে অনুমতি না থাকায় আমি সেখানে প্রবেশ করতে পারিনি। তবে আবার আসবই। তখন গভর্নর হাউস, পেশোয়ার জাদুঘর, উপনিবেশিক খ্রিস্টান সিমেটারি, ডেপুটি কমিশনারের হাউস, ইসলামিয়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় দেখে নেব।
>>>সব ছবি লেখকের নিজের তোলা
No comments