দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার সাক্ষ্যসহ ইমাম হোসাইনের (আ) বিজয়ের কিছু প্রমাণ

ইমাম হোসাইন (আ) কারবালার মহাবিপ্লবে তাঁর ও মহান সঙ্গীদের অনন্য আত্মত্যাগের মাধ্যমে কেবল ইসলামের নিস্তেজ হয়ে আসা গাছকেই রক্ষা করেননি ও স্বৈরতান্ত্রিক খোদাদ্রোহী শাসনের মেরুদণ্ড গুড়িয়ে দেননি, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ও সুদূরপ্রসারী নানা বিজয়ও অর্জন করেছিলেন।

‘‘তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত,মানবতার স্বার্থেই তোমাদের এ পৃথিবীতে আগমন। কেননা তোমরা আমর বিল মারুফ এবং নাহী আনিল মুনকার কর।’’

আদেশ প্রদানকারী বা বাধা প্রদানকারীর জন্যে দুটো শর্ত রয়েছে। প্রথমত জ্ঞান বুদ্ধির পরিপক্কতা ও বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিশক্তি। যেনতেনভাবে আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকারের কোন সার্থকতা নেই। আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার সম্বন্ধে আমার কতটুকু ধারণা রয়েছে? আর কেমন করেই বা তা কার্যকরী করা সম্ভব? এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণার অভাব আছে বলেই আমরা এতকাল অন্যের বিকৃত চুলের স্টাইল কিংবা জামার বোতাম আর জুতোর ফিতার বিকৃত স্টাইলের বিরুদ্ধে আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার করে এসেছি। মুনকারকে মারুফ আর মারুফকে মুনকার জ্ঞান করার ঘটনাও বিরল নয়। এসব ক্ষেত্রে আমাদের আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার না করাই শ্রেয়। কেননা এ ধরনের আমর বিল মারুফ করতে গিয়ে কত মুনকারেরই প্রচলন হতে দেখা গেছে। তাই এ কাজে হাত দেবার আগে পর্যাপ্ত-জ্ঞান গবেষণা,পরীক্ষা-নিরীক্ষা,মনস্তত্ব আর সমাজ পরিচিতির মতো অনেক কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। যাতে সর্বোত্তম উপায়ে ও সর্বোচ্চ কার্যকরী পন্থায় ইসলামের এ  মূলনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। মারুফ ও মুনকারকে শনাক্ত করতে হবে, এগুলোর মূল উৎস কোথায় তা খুঁজে বের করতে হবে। এ কারণে ইমামগণ অজ্ঞ লোকদেরকে আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার করতে বারণ করেছেন। কেননা  لِاَنَّهُ مَا یُفْسِِدُهُ اَآْثَرُ مِمَّا یُصْلِحُهُ  তারা যতটা না সংস্কার করতে পারে তার চেয়ে বেশী ধ্বংস করে দেয়। তারা ভাল করতে চায় কিন্তু ফলাফলে খারাপ হয়ে যায়। এমন দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি রয়েছে।

এখানে হয়তো অনেকে অজুহাত তুলতে পারে: আমরা যেহেতু অজ্ঞ শ্রেণীর লোক তাই এ ব্যাপারে আমাদের আর কোনো করণীয় রইল না। পবিত্র কোরআন সুস্পষ্ট ভাষায় এর উত্তর দিয়েছে:

)لِیَهْلِکَ مَنْ هَلَکَ عَنْ بَیِّنَةٍ وَ یَحْیَی مَنْ حَیَّ عَنْ بَیِّنَةٍ(

যাতে যে ধ্বংস হবে সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশের পর ধ্বংস হয় এবং জীবিতদের মধ্য থেকে যে জীবিত  থাকে সে যেন জীবিত থাকে সত্যাসত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশের পর। (আনফাল-৪২)

অথবা,

)لِئَلِّا یَکُونَ لِلنَّاسِ عَلَی اللهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرَّسُولِ (

‘‘যাতে রসুল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকে।’’ (নিসা-১৬৫)

ইমামদের (আঃ) একজনকে প্রশ্ন করা হল: একদল মানুষ অজ্ঞ । কিয়ামতের দিন এদেরকে কিভাবে বিচার করা হবে? জবাবে তিনি বললেন: সেদিন একজন আলমকে হাজির করা হবে যে সবকিছু জেনেশুনেও তা পালন করতো না। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তুমি এসব জেনেও মেনে চলতে না কেন? এবার তার আর কোনো অজুহাত থাকবে না। তখন তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। আরেকজনকে হাজির করে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তুমি কেন পালন করতে না? জবাবে সে বলবে: আমি জানতাম না বলে পালন করিনি। প্রত্যুত্তরে বলা হবে:

 هَلاَّ تَعَلَّمْتَ জানতে না তবে শিখতে তো আর বাধা ছিল না,জেনে নাওনি কেন? জানতাম না,বুঝতাম না এটা কোনো জবাব হল নাকি? বিবেককে আল্লাহ কী কারণে সৃষ্টি করেছেন? যাতে জ্ঞানার্জন করতে পার,পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করতে পার। এজন্যেই তোমাকে বিবেক দান করা হয়েছে। তোমাকে তেমন জ্ঞানী হতে হবে যারা কেবল চলতি ঘটনাবলীরই আচার-বিচার করে ক্ষান্ত হয় না,অতীত ও ভবিষ্যতও যাদের নখাগ্রে থাকে। হযরত আলী (আঃ) বলেছেন :

 -وَ لاَ نَتَخَوَّفُ قَارِعَةً حَتَّی تَحُلَّ بِنَا  আমাদের জনগণ গণ্ডমূর্খ হয়ে গেছে। কোন বিষয় যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদেরকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে ততক্ষণ তারা বেখবর থাকে। (নাহাজুল বালাগা-3২ নং খোতবা) এদের মধ্যে কেউ ভবিষ্যৎ বক্তা নেই। এদের ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতার প্রয়োজন। কেবল সমসাময়িক জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। সমাজতত্ত্বে এমন দখল থাকতে হবে যে,পঞ্চাশ বছর শত বছর কিংবা হাজার বছর পরের যে বিপর্যয় মানব জাতিকে হুমকি দিচ্ছে তাকেও যেন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। হযরত ইবরাহীম(আঃ)-এর জ্ঞানের পরিসীমা বর্ণনায় আল্লাহ বলছেন,‘‘আমরা ইবরাহীমকে পরিপক্ব জ্ঞান দান করেছি।’’ (আম্বিয়া ৫১)। তাই সমাজে সংস্কার আনতে পরিপক্ব  জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। দূরদর্শিতা বা ভবিষ্যৎ  জ্ঞান ইমাম হোসাইনের (আঃ) বিপ্লবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইমাম হোসাইনের (আঃ) দূরদর্শিতার দৃষ্টিপটে ভবিষ্যৎ স্বচ্ছ হয়ে ধরা দিয়েছিল। অর্থাৎ তিনি খড়কুটোর মধ্যে ও ভবিষ্যতের যে আভাস প্রত্যক্ষ করতেন,অন্যরা আয়নায়ও তা দেখতে পেত না। আজ আমরা সে যুগের পরিস্থিতির বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারি। কিন্তু সেদিনকার মানুষের কাছে ইমাম হোসাইনের (আঃ) কথা-কাজ ছিল দুর্বোধ্য-দুর্গম।

আশুরার দিনেও তিনি নির্দ্বিধায় ঘোষণা দিলেন,ওরা আমাকে হত্যা করবেই। তবে আমি আজ তোমাদেরকে বলে যাচ্ছি,আমার হত্যার পর ওদের পতন অনিবার্য হবে। অনতিবিলম্বে তাদের পতন ঘটবে। এদের পতন ছিল আশাতীতভাবে দ্রুত। বনি উমাইয়ারাও বেশী দিন ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে ধরে রাখতে পারেনি। তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করলো বিন আব্বাসীয়রা। এরপর থেকে দীর্ঘ পাঁচ শতাধিক বছর ধরে মসনদ থাকলো তাদের আয়ত্তে। মোটকথা,কারবালার হত্যাকাণ্ড থেকে যে বনি উমাইয়ার প্রাসাদে ভাঙন ধরলো,অনতিবিলম্বেই তা তাদের চরম পতনের মাধ্যমে পরিণতি লাভ করলো। এ সমস্ত ঘটনা ইমাম হোসাইনের (আঃ) অনন্য দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে।

কাপুরুষ ইবনে যিয়াদের উসমান নামের এক ভাই ছিল। একদিন উসমান বলল,হে ভাই,যিয়াদের সব সন্তান যদি দারিদ্র,অপমান আর দুঃখের সাথে বেঁচে থাকতো তাতেও আমি অসন্তুষ্ট হতাম না, যত না অসন্তুষ্ট হয়েছি তোমার হাতে আমাদের খান্দানে (কারবালার) এ অপরাধ দেখে। ইবনে যিয়াদের মা ছিল পরকীয়া-ব্যভিচারিণী। সেও একদিন ইবনে যিয়াদকে ভর্ৎসনা করে বলল: জেনে রেখো তুমি যে অপরাধ করেছ তাতে তোমার বেহেশতের কোনো আশা নেই। এমন কি মারওয়ান ইবনে হাকামের মতো জঘন্য কাপুরুষও ইয়াযিদের দরবারে প্রতিবাদী হয়ে বললোঃ সুবহানাল্লাহ,সুমাইয়ার (অর্থাৎ যিয়াদের মার) সন্তানেরা সম্মানিত হোক,কিন্তু নবীর বংশকে এ অবস্থায় তুমি দরবারে আনতে পারলে?

হ্যাঁ,এভাবেই সেদিন ইমাম হোসাইনের (আঃ) ভবিষ্যৎ বার্তা ফলতে শুরু করেছিল এবং তা দুশমনের কণ্ঠ থেকেও প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। স্বয়ং ইয়াযিদের স্ত্রী হিন্দের কথাও হয়তো শুনে থাকবেন। ইয়াযিদের ক্রিয়াকর্মের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সে ইয়াযিদের কাছে এসবের ব্যাখ্যা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখে ইয়াজিদ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বসে। উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের ঘাড়ে সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়ে সে আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা করে।

ইমাম হোসাইনের (আঃ) সর্বশেষ ভবিষ্যদ্বাণী ছিল অনতিবিলম্বে ইয়াযিদের পতন হবে। এদিকে কারবালা ঘটনার পর মাত্র দু’তিন বছর চরম দুর্দশা ও হতাশার মাধ্যমে ইয়াযিদী শাসন অব্যাহত থাকে তারপর তার জীবনাবসান ঘটে। পিতার মৃত্যুর পর ইয়াযিদ-পুত্র ‘দ্বিতীয় মুয়াবিয়া’ চেপে বসলো মসনদে। কিন্তু মাত্র চল্লিশ দিন পার না হতেই একদিন সে ঘোষণা দিল, হে লোকসকল! আমার পিতামহ মুয়াবিয়া (প্রথম) আলী ইবনে আবু তালিবের (আঃ)-সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। অথচ হক ছিল আলীর (আঃ) সাথে। আবার,আমার পিতা ইয়াযিদ দাঁড়ায় হোসাইন ইবনে আলীর (আঃ) বিরুদ্ধে । এখানেও হোসাইন (আঃ) ছিল সত্যের উপরে, আমার পিতা নয়। আর আমি আমার পিতার ওপর অসন্তুষ্ট। নিজেকেও খেলাফতের যোগ্য বলে মনে করি না। তাই আমার পিতামহ কিংবা পিতার অপরাধের পুনরাবৃত্তি এড়ানোর লক্ষে এখানেই আমার পদত্যাগের ঘোষণা দিলাম। সে ক্ষমতা ছেড়ে দিল।

আর এভাবে জয় হল সত্যের। মিথ্যা হল অস্তমিত। ইমাম হোসাইন (আঃ) অসীম আধ্যাত্মিক শক্তিবলে শত্রু-মিত্র উভয়কেই ন্যায়ের পথে উদ্দীপ্ত করে দিলেন। সূচিত হল তরবারির উপর রক্তের বিজয়।

আশুরার রাতের দুর্বিষহ অবস্থা দেখে হযরত যয়নাব দু’একবার কেঁদেও ফেলেন। একবার ইমাম হোসাইনের (আঃ) কোলে মাথা রেখে তিনি এতোই কাঁদলেন যে,বেহুশ প্রায় হয়ে পড়েন। ইমাম হোসাইনের (আঃ) বিভিন্ন ভাবে তাকে শান্ত করেন। তারপর বলেন,

لَا یُذْهِبَنَّ حِلْمَکَ الشَّیْطَانُ

‘‘বোন আমার! শয়তান যেন তোমার ধৈর্যচ্যুতি না ঘটায়।’’ (এ’লামুল ওরা: ২৩৬,ইরশাদে মুফীদঃ ২৩২ বিহারুল আনওয়ারঃ ৪৫/২)

তিনি হযরত যয়নাবকে (আঃ) বলেনঃ আমাদের নানাইতো এপথ দেখিয়ে গেছেন। বাবা-মা-ভাই সবাইতো এপথে শাহাদাত বরণ করেছেন। এতে তো গৌরব ছাড়া কাঁদার কিছুই নেই।

হযরত যয়নাব (আঃ) নিজেকে কিছুটা সংযত করে বলেনঃ ‘আমি কোনো কষ্টের জন্যে কাঁদছি না। আমার দুঃখ হলো এ কারণে যে, নানাকে হারিয়েছি,বাবাকে হারিয়েছি, মাকে হারিয়েছি, বড় ভাই হাসানকে (আঃ) হারিয়েছি। তারপরও এতদিন আপনার দিকে চেয়ে আমি সব দুঃখ ভুলেছিলাম। কিন্তু আজ তোমাকেও হারাতে হবে তাই আমার কষ্ট হচ্ছে ।

অথচ কারবালার ঘটনার পর-মুহূর্ত থেকে হযরত যয়নাব আর আগের যয়নাব রইলেন না। ইমাম হোসাইনের শৌর্য-বীর্য এবং ধৈর্য দেখে তিনি এমন মানসিকতা অর্জন করলেন যে, যত বড় ব্যক্তিত্বই হোক না কেন, যয়নাবের (আঃ) সামনে সে তুচ্ছ। ইমাম যয়নুল আবেদীন (আঃ) বলেনঃ আমরা বারোজন ছিলাম। সবাইকে এক শিকলে বেঁধে শিকলের একমাথা আমার বাহুতে এবং অন্য মাথা আমার ফুফুর বাহুতে বেঁধে দেয়া হয়।

বলা হয় যে,নবী পরিবারকে ২রা সফর তারিখে বন্দী অবস্থায় সিরিয়ায় নিয়ে আসা হয়। এ হিসাব অনুযায়ী কারবালার ঘটনা থেকে যখন বাইশ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেছে তখন বন্দীদেরকে ইয়াযিদের সবুজ প্রাসাদে নেয়া হল। সবুজ প্রাসাদ মুয়াবিয়ার তৈরি।

এই প্রাসাদ ঝলমলে,রাজকীয় সাজে সজ্জিত,আয়া-খানসামাদের ভিড় প্রভৃতিতে ভরা ছিল এবং কেউ এর মধ্যে ঢ়ুকলে হতবাক হয়ে পড়তো। বলা হয় যে,সাত সাতটা বড় বড় হল ঘর পার হলে তারপর ইয়াযিদের মণিমাণিক্য খচিত দরবারে আসা যেত। সেখানে ইয়াযিদ দাস-দাসী,উজির-নাযির সবাইকে নিয়ে বসে আছে। এমনি অবস্থায় বন্দী নবী পরিবারকে দরবারে আনা হল। কিন্তু হযরত যয়নাব (আঃ) এত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার পরও ইয়াযিদের দরবারে এমন সাহসী ভূমিকা নিলেন যে,সমস্ত দরবার কেঁপে উঠলো এবং উপস্থিত সভাসদরা হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। এমন কি বাকপটু ইয়াযিদও সম্পূর্ণ নিশ্চুপ হয়ে গেল। ইয়াযিদ প্রথমে গর্বভরে তার বিজয় উল্লাস করছিল। সাথে সাথে হযরত যয়নাব (আঃ) বাঘের মতো গর্জে উঠে বললেন:

اَظَنَنْتَ یَا یَزِیدُ حَیْثُ اَخَذْتَ عَلَیْنَا اَقْطَارَ الْاَرْضِ وَ آفَاقَ السَّمَاءِ فَاَصْبَحْنَا نُسَاقُ آکمَا تُسَاقُ الْاُسَارَی اَنَّ بِنَا عَلَی اللهِ هَوَاناً وَ بِکَ عَلَیْهِ کرَامَة ؟

‘হে ইয়াযিদ খুব যে ফুর্তি করছ! আমাদেরকে এই হালে ফেলে ও নিজের হাতের মুঠোয় পেয়ে বোধ হয় মনে করছ যে,পৃথিবীর সব কিছু থেকে আমাদের বঞ্চিত করে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নেয়ামত লাভ করেছ। আল্লাহর শপথ করে বলছি যে,আমার দৃষ্টিতে তোমার মতো কাপুরুষ আর কেউ নেই। আমার দৃষ্টিতে তোমার এক কানাকড়িও মূল্য নেই।’ (আল লুহুফঃ ৭৬,মাকতালুল মোকাররামঃ ৪৬২ বিহারুল আনওয়ারঃ ৪৫/১৩৩)

একবার লক্ষ্য করুন যে, কেবল ঈমান ও ব্যক্তিত্ব ছাড়া সবকিছু হারিয়েছেন এবং বর্তমানে বন্দী অবস্থায় সবচেয়ে জঘন্য লোকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন-এরকম একজন মহিলার কাছ থেকে কী আশা করা যেতে পারে? কিন্তু দেখুন হযরত যয়নাব (আঃ) এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন যে, অতি শীঘ্রই শামে বিপ্লবের ঘনঘটা শুরু হয়।

ঐ দরবারে বসেই ইয়াযিদ তার কৌশল বদলাতে বাধ্য হয়। বন্দীদেরকে সসম্মানে মদীনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তারপর নিজে অনুতাপ প্রকাশ করে ও ইবনে যিয়াদকে অভিসম্পাত করে বলে আমি ওকে এ কাজ করতে আদেশ দেইনি। সে নিজেই একাজ করেছে। এই বিপ্লব কে ঘটালেন? ইসলামের মহীয়সী নারী হযরত যয়নাবই (আঃ) এরকম বিপ্লবের ভিত্তি রচনা করে যান। তারপর তার বক্তব্যের শেষাংশে যে ইয়াজিদকে হাজার হাজার মানুষ জাঁহাপনা বলে ডাকতো সেই ইয়াজিদকে ব্যঙ্গ করে হযরত যয়নাব বললেন:

یَا یَزِیدُ آِدْ کِیْدَکَ وَاسْعَ سَعْیَکَ نَاصِبْ جَهْدَکَ فَوَاللهِ لَا تَمْحُوا ذِکرَنَا وَ لَا تَمِیتَ وَحْیَنَا

‘‘হে ইয়াযিদ! তোমাদের যে জল্পনা-কল্পনা আর ষড়যন্ত্র আছে সবই করো। তবে জেনে রেখো যে আমাদের স্মরণকে মানুষের অন্তর থেকে কোনোদিন  মুছে ফেলতে পারবে না। আমাদের এ বাণী চিরন্তন। আর যারা নিশ্চিহ্ন হবে সে হলো তুমি এবং তোমার চাটুকাররা’’(আল লুহুফঃ ৭৭,বিহারুল আনওয়ারঃ ৪৫/২৩৫)

একথা শুনে ইয়াজিদ প্রথম চুপ রইলো তারপর পাপিষ্ঠ ইয়াযিদ ভিতরে জ্বলে উঠলো এবং হযরত যয়নাবকে (আঃ) আরও কষ্ট দেয়ার জন্যে তার হাতের লাঠি দিয়ে ইমাম হোসাইনের (আঃ) ছিন্ন মস্তকে খোঁচা মারল। (লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়িল আযিম)

ইমাম হোসাইন (আঃ) দূরদর্শী ছিলেন। তিনি যা দেখতেন সমসাময়িক কালের কোনো বুদ্ধিজীবী কিংবা চিন্তাবিদের মাথায়ও তা আসতো না। তিনি মানুষের পরিত্রাণের উপায় তাদের নিজেদের চেয়ে ভালো বুঝতেন। দশ,কুড়ি,পঞ্চাশ,শত বছর যখন পার হয় তখন মানুষ একটু একটু বুঝতে পারে যে,সত্যিই তো! তিনি তো এক মহা-বিপ্লব করে গেছেন। আজ আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি যে,ইয়াযিদ কি ছিল আর মুয়াবিয়া কি ছিল বা উমাইয়াদের ষড়যন্ত্র কি ছিল। কিন্তু ইমাম হোসাইন (আঃ) সেদিনই এর চেয়ে ভালো বুঝতে পেরেছিলেন। সেকালে বিশেষ করে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মদীনার লোকজন ইমাম হোসাইন (আঃ) কি চান তা অনুধাবন করতে পারেনি। কিন্তু ইমাম হোসাইনের (আঃ) নিহত হবার সংবাদ যেদিন তাদের কানে গেলো,অমনি যেন সবার টনক নড়ে উঠলো। সবার একই প্রশ্নঃ হোসাইন ইবনে আলীকে (আঃ) হত্যা করা হলো কেন? এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য মদীনার চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। এর প্রধান ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা। তদন্ত কমিটি শামে গিয়ে ইয়াযিদের দরবারে এসে উপস্থিত হলো। মাত্র ক’দিন অতিক্রান্ত হতে না হতেই তারা অবস্থাটি ধরে ফেললো। অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে তারা শীঘ্রই মদীনায় ফিরে এলো। লোকজন জিজ্ঞেস করলো কী দেখে এলেন? জবাবে তারা বললোঃ শুধু এইটুকুই তোমাদের বলি যে,আমরা যে ক’দিন শামে ছিলাম সে ক’দিন শুধু এ চিন্তায় ছিলাম যে,খোদা এক্ষুণি হয়তো এ জাতিকে পাথর নিক্ষেপ করে ধ্বংস করবেন! লোকজন বললোঃ কেন,কী হয়েছে? তারা বললোঃ আমরা এমন এক খলিফার সামনে গিয়েছিলাম যে প্রকাশ্যে মদ খাচ্ছিল,জুয়া খেলছিল,কুকুর-বানর নিয়ে খেলা করছিলো,এমন কি বেগানা নারীর সাথে যেনাও করছিলো!

আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালার আটজন ছেলে ছিল। তিনি মদীনার জনগণকে বললেন: তোমরা বিদ্রোহ কর আর না করো আমি শুধু আমার আটজন ছেলেকে নিয়ে হলেও বিদ্রোহ করতে যাচ্ছি । কথামতো তিনি তার আটজন ছেলেকে নিয়ে বিদ্রোহ করলেন এবং ইয়াযিদের বিরুদ্ধে ‘‘হাররা বিদ্রোহে’’ প্রথম তার আটজন ছেলের সবাই এবং পরে তিনি নিজেও শহীদ হন। (মুরুজুয যেহাব ৩/৬৯)

আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা নিঃসন্দেহে একজন চিন্তাশীল লোক ছিলেন। কিন্তু তিন বছর আগে ইমাম হোসাইন (আঃ) যখন মদীনা থেকে বেরিয়ে আসনে তখন তিনিও ইমামের (আঃ) কাজকর্ম থেকে কিছুই বুঝতে পারেননি।

ইমাম হোসাইন (আঃ) বিদ্রোহ করলেন,আন্দোলন করলেন,জানমাল উৎসর্গ করলেন। তিন বছর কেটে গেলো। তারপর আজ এসে আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালার মতো ব্যক্তিরও টনক নড়লো। এ হলো ইমাম হোসাইনের (আঃ) দূরদর্শিতা এবং বিচক্ষণতার স্বরূপ মাত্র ।

কারবালার মতো ঘটনাকেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে যে ঘটনায় আত্মিক ও মানসিক  উভয় দিক দিয়ে মাত্র ৭২ জনের এক বাহিনী ত্রিশ হাজার লোকের বাহিনীকে পরাজিত করেছে। তারা সংখ্যায় মাত্র ৭২ জন ছিলেন এবং মৃত্যু যে নির্ঘাত এটিও তারা নিশ্চিতভাবে জানতেন। তবুও কিভাবে তারা ত্রিশ হাজারের বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হলেন?

প্রথমত তারা এমন শক্তিতে শক্তিমান ছিলেন যে,শত্রুদের থেকে হুর ইবনে ইয়াযিদ রিয়াহীর মতো ত্রিশ জনের অধিক লোককে বেঁচে থাকার ঘাঁটি থেকে নির্ঘাত মৃত্যুর ঘাঁটিতে আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। কিন্তু মৃত্যু ঘাঁটি থেকে একজন লোকও ইয়াযিদের দুনিয়াবি ঘাঁটিতে যায়নি। তাহলে বুঝতে হবে যে,এ ঘাঁটিতে সংখ্যা কম এবং নিশ্চিত হলেও এখানে শক্তি -সামর্থ্য অনেক বেশী যা দিয়ে শত্রুদেরকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।

দ্বিতীয়ত আরবের চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী একজনের মোকাবিলায় অন্য আরেকজন যুদ্ধ করতো। কারবালায় ইবনে সা’দ প্রথমে এভাবেই যুদ্ধ করতো রাজি হয়। কিন্তু যখন দেখল যে,এভাবে যুদ্ধ করলে ইমাম হোসাইনের (আঃ) একজন সৈন্যই তার সমস্ত সৈন্যকে সাবাড় করে দিতে যথেষ্ট তখন সে এ যুদ্ধ বর্জন করে দল বেঁধে আক্রমণ করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হলো।

আশুরার দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একে একে ৭১ জন শহীদের লাশকে ইমাম হোসাইন কাঁধে বয়ে তাঁবুতে নিয়ে এসেছেন। তাদের কাছে গিয়ে অভয় বাণী দিয়েছেন,তাঁবুতে এসে সবাইকে শান্ত করেছেন,এছাড়া তিনি নিজেও কত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন। ৫৭ বছরের একজন বৃদ্ধলোক এত ক্লান্ত, শ্রান্ত অবস্থায় যখন ময়দানে এলেন তখন শত্রুরা ভেবেছিলো হয়তো সহজেই তাকে পরাস্ত করা যাবে। কিন্তু একটু পরেই তাদের সব আশা-ভরসা উড়ে গেলো। ইমাম হোসাইনের (আঃ) সামনে যে-ই এলো এক মুহূর্তও টিকে থাকতে পারলো না। ইবনে সাদ এ অবস্থা দেখে চিৎকার করে বলে উঠে:



هَذَا ابْنُ قَتَّالِ الْعَرَبِ

‘‘তোমরা জান এ কার সন্তান? এ তারই সন্তান যে সমস্ত আরবকে নিশ্চিহ্ন করতে পারতো। এ শেরে খোদা আলীর (আঃ) সন্তান।’’(মাকতালু মোকাররম: ৩৪৬ বিহারুল আনওয়ারঃ ৪৫/৫৯ মানাকিবে ইবনে শাহের অশুবঃ ৪/১১০)

 وَاللهِ نَفْسُ اَبِیهِ بَیْنَ جَنْبَیْهِ

তারপর বলে : ‘‘আল্লাহর শপথ করে বলছি,তার দু’বাহুতে তার বাবার মতোই শক্তি । আজ যে তার মোকাবিলায় যাবে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।’’ এটি কি ইবনে সা’দের পরাজয়ের প্রমাণ নয়? ত্রিশ হাজার সেনা নিয়ে যে একজন ক্লান্ত-শ্রান্ত,বয়োবৃদ্ধ,অপরিমেয় দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে পশ্চাদপসরণ করে ছুটে পালায় এটি কি তাদের পরাজয় নয়? (ইরশাদে মুফিদঃ ২৩০ বিহারুল আনওয়ারঃ ৪৪/৩৯০)

তারা তলোয়ারের মুখে যেমন পরাজয় বরণ করে তেমনি ইমাম হোসাইনের (আঃ) চিন্তাধারার কাছেও তাদের হীন চিন্তাধারা পরাজিত হয়।

আশুরার দিন যুদ্ধ আরম্ভ হবার আগে ইমাম হোসাইন (আঃ) -তিনবার বক্তৃতা দান করেন। এ বক্তৃতাগুলো প্রত্যেকটি বীরত্বপূর্ণ ছিল। যাদের বক্তৃতা করার অভ্যাস আছে তারা হয়তো জানেন যে বক্তৃতার ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত মানসিকতার দরকার হয়। সাধারণ অবস্থায় মানুষ একটি অসাধারণ বক্তব্য রাখতে পারে না। যে হৃদয় আঘাত পেয়েছে সে ভালো মর্সিয়া পড়তে পারে। যার হৃদয় প্রেমে ভরা সে ভালো গজল গাইতে পারে। তেমনি কেউ যদি বীরত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করতে চায় তাহলে তার অস্তিত্ব বীরের ভাবানুভবে ভরা থাকতে হবে। ইমাম হোসাইন (আঃ) আশুরার দিনে যখন বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন তখন ইবনে সা’দ চিন্তায় পড়ে গেল। সবার কানে যাতে ইমামের কথা পৌঁছায় সে জন্য ইমাম হোসাইন (আঃ) একটি উঁচু জায়গা হিসাবে উটের পিঠে উঠে দাঁড়ালেন এবং চিৎকার করে বললেন:

تَبّاً لَکُمْ اَیَّتُهَا الْجَمَاعَة وَ تَرْحاً حیْنَ اسْتَصْرَخْتُمُونَا وَالِهین فَاَصْرَخْنَاآکمْ مُوجِفِینَ

‘‘হে জনগোষ্ঠী! তোমাদের জন্য ধ্বংস এ জন্য যে,তোমরা জটিল পরিস্থিতিতে আমার সাহায্য চেয়েছ। আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য ছুটে এসেছি। কিন্তু যে তরবারি আমার সাহায্যে পরিচালনার শপথ তোমরা নিয়েছিলে আজ আমাকে হত্যার জন্য সে তরবারি হাতে নিয়েছ।’’ (আল-লুহুফঃ ৪১ তুহফাল উকুল: ১৭৩ মানাকিবে ইবনে শাহরে অশুবঃ ৪/১১০ মাকতালু মোকাররামঃ ২৮৬/৬)

সত্যিকার অর্থে হযরত আলীর (আঃ) জ্ঞানগর্ভমূলক বাগ্মিতার পর এ ধরনের বক্তৃতা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ইমাম হোসাইনের(আঃ) বক্তৃতায় যেন হযরত আলীরই (আঃ) বিচক্ষণতা। যেন সেই জ্ঞান,সেই সাহস,সেই বীরত্ব । ইমাম হোসাইন (আঃ) এ কথা তিনবার চিৎকার করে বললেন। তাতেই ইবনে সাদের মনে ভয় ঢুকে গেলো যে,এভাবে কথা বলতে দিলে এক্ষুণি তার বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়বে। তাই ইমাম হোসাইন (আঃ) যখন চতুর্থ বারের মত কথা বলতে যাবেন এ সময় পরাজিত মনোবৃত্তি নিয়ে কাপুরুষ ইবনে সাদ নির্দেশ দিল যে,সবাই হৈ-হুল্লোড় করে উঠবে যাতে ইমাম হোসাইনের (আঃ) কথা কেউ শুনতে না পারে। এটি কি পরাজয় নয়? এটি কি ইমাম হোসাইনের (আঃ) বিজয় নয়?

ইতিহাসে আছে, আশুরার দিন ভোর বেলায় ইমাম হোসাইন নামাজ সেরে তার সঙ্গী-সাথীদেরকে বললেন, তৈরি হয়ে যাও। মৃত্যু এ দুনিয়া থেকে ঐ দুনিয়ার পার হবার জন্য একটা সাকো বৈ কিছুই নয়। একটা কঠিন দুনিয়া থেকে তামাদেরকে একটা মর্যাদাশালী মহান জগতে পার করে দেব। এ ছিল ইমাম হোসাইনের (আঃ) বক্তব্য। এ ঘটনাটি ইমাম হোসাইন (আঃ) বর্ণনা করেননি। কারবালায় যারা উপস্থিত ছিল তারাই বর্ণনা করেছে। এমন কি ইবনে সা’দের বিশিষ্ট রিপোর্টার হেলাল ইবনে নাফেও এ ঘটনা বর্ণনা করেছে যে,আমি হোসাইন ইবনে আলীকে (আঃ) দেখে অবাক হয়ে যাই। তার শেষ মুহূর্ত যতই ঘনিয়ে আসছিলো এবং যতই তার কষ্ট অসহনীয় হয়ে উঠছিল ততই তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। যেন দীর্ঘ বিরহের পর কারো তার আপনজনের সাথে মিলনের সময় হয়েছে। আরও বলে যেঃ

 لَقَدْ شَغَلَنِی نُورُ وَجْهِهِ جَمَال هَیْبَتِهِ عَنِ الْفِکْرَةِ فِی قَتْلِهِ

এমনকি যখন অভিশপ্ত শিমার ইমাম হোসাইনের শিরশ্ছেদ করছিলো তখন আমি তার চেহারায় এমন প্রসন্নতা এবং উজ্জ্বলতা দেখেছিলাম যে তাকে হত্যা করার কথা একবারে ভুলেই গিয়েছিলাম। (আল লুহুফঃ ৫৩, বিহারুল আনওয়ারঃ ৪৫/৫৭) #

সূত্র: ইমাম হোসাইনের (আ) কালজয়ী বিপ্লব: শহীদ অধ্যাপক আয়াতুল্লাহ মূর্তাজা মোতাহ্হারি

No comments

Powered by Blogger.