দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিখোঁজ মার্কিন সাবমেরিন উদ্ধারের বিস্ময়কর কাহিনী
অবশেষে
সমাধা হলো ৭৫ বছর পুরোনো এক রহস্যের। সমুদ্রে নিখোঁজ হওয়া মার্কিন
সাবমেরিন ইউএসএস গ্রেব্যাক-এর খোঁজ মিলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, এত বছর ধরে এই
সাবমেরিন পাওয়া না যাওয়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে কেবল একটি সংখ্যাকে!
নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, গ্রেব্যাক ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবচেয়ে সফল মার্কিন সাবমেরিনগুলোর একটি। ১৯৪৪ সালের ২৮শে জানুয়ারি পার্ল হারবার থেকে রওনা দেয় গ্রেব্যাক। সেই বছরের মার্চের শুরুতে অপারেশন শেষে ফিরে আসার কথা ছিল সাবমেরিনটির। কিন্তু ৩ সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো সন্ধান পাওয়া গেলো না। ফলে মার্কিন নৌবাহিনী এই সাবমেরিনটিকে নিখোঁজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করলো।
যুদ্ধের পর দেখা গেলো মার্কিন নৌবাহিনী মোট ৫২টি সাবমেরিন হারিয়েছে। এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস দাঁড় করানোর চেষ্টা করে নৌবাহিনী।
১৯৪৯ সালে এ ব্যাপারে বিস্তারিত উপাত্তের মাধ্যমে জানানো হয় প্রত্যেক সাবমেরিন আনুমানিক কোন স্থানে নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারে। গ্রেব্যাকের ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়েছিল ওকিনাওয়া থেকে পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব দিকে ১০০ মাইল দূরে এটি হারিয়েছে। কিন্তু মার্কিন নৌবাহিনী অজ্ঞানতাবশত জাপানি যুদ্ধ নথির ত্রুটিপূর্ণ অনুবাদের ওপরই এতদিন নির্ভর করেছে। আর এতে দেখা যাচ্ছে, অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে একটি সংখ্যা ভুল হয়েছে। এই ভুল এতদিন কারও চোখে পড়েনি। ফলে গ্রেব্যাকের সন্ধানে এতদিন ভুল জায়গায় অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল।
গত বছর একজন সৌখিন গবেষক ইউতাকা ইওয়াসাকির চোখে এই ভুল ধরা পড়ে। তিনি সাসেবোতে অবস্থিত তৎকালীন জাপানি সাম্রাজ্যবাদী নৌবাহিনীর যুদ্ধকালীন রেকর্ড যাচাইবাছাই করছিলেন। ওই নথির মধ্যে ছিলো ওকিনাওয়ার নৌ বিমান ঘাঁটির রেডিও থেকে প্রাপ্ত দৈনিক তথ্যও। ১৯৪৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারিতে লিপিবদ্ধ তথ্য থেকে পাওয়া গেলো একটি সূত্র।
জাপানি নৌবাহিনীর সেইদিনের প্রতিবেদনে বলা হলো, নাকাজিমা বি৫এন বোমারু বিমান থেকে ৫০০ পাউন্ডের একটি বোমা ফেলা হয়েছে একটি ভাসমান সাবমেরিনের ওপর। এতে করে ওই সাবমেরিন বিস্ফোরিত হয় ও সঙ্গে সঙ্গে ডুবে যায়। জীবিত কাউকে উদ্ধার করা যায়নি।
ইওয়াসাকি বলেন, ‘ওই রেডিও রেকর্ডে সাবমেরিনের ওপর হামলার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ লিপিবদ্ধ করা ছিল বেশ স্পষ্টভাবে।’ আর এই অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর ১৯৪৯ সালের ইতিহাসে গ্রেব্যাকের সম্ভাব্য অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায় মাত্র একটি সংখ্যায়। আর একটি সংখ্যার কারণেই ব্যবধান হয়ে যায় কয়েকশ মাইল!
ইওয়াসাকির এই আবিষ্কার চোখে পড়ে টিম টেইলরের। টেইলর একজন সমুদ্রতল অভিযাত্রী। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস হওয়া প্রত্যেকটি মার্কিন সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের মিশন হাতে নিয়েছেন। ২০১০ সালে তিনি খুঁজে পান প্রথম সাবমেরিন। সেটি ছিল ইউএসএস আর-১২। এটি পাওয়া গিয়েছিল কী ওয়েস্ট-এ। সেখানে ইউএসএস আর-১২ প্রশিক্ষণের সময় ১৯৪৩ সালে ডুবে গিয়েছিল। টিম টেইলর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে লস্ট ৫২ প্রজেক্ট নামে ওই প্রকল্প হাতে নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া ৫২টি সাবমেরিনের মধ্যে যেগুলোর সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি, সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করাই ছিল এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পে এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা সবে গত ১০-১৫ বছর হলো এসেছে। টেইলর বলেন, ৫২টি নিখোঁজ সাবমেরিনের মধ্যে ৪৭টিই উদ্ধারের যোগ্য বলে ভাবা হয়। বাকি ৫টি ধ্বংস হওয়ার স্থান জানা আছে। এই ৪৭টি সাবমেরিন উদ্ধারের জন্য বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছেন টেইলর ও তার স্ত্রী ক্রিস্টাইন ডেনিসন। তারা এখন নজর দিয়েছেন জাপানের আশেপাশে যেগুলো ডুবে থাকতে পারে সেগুলোর ওপর।
সাগরতলের অভিযানে ঝোঁক থাকায় টেইলরের সঙ্গে পরিচয় হয় ডন ওয়ালশ নামে নৌবাহিনীর সাবেক এক সাবমেরিনারের সঙ্গে। ১৯৬০ সালে ডন ওয়ালশ লেফটেন্যান্ট হিসেবে পৃথিবীর গভীরতল সমুদ্র তল হিসেবে বিবেচিত মারিয়ানা ট্রেঞ্চ ছুয়েছিলেন। ওয়ালশই ১৯৪৯ সালের নৌবাহিনীর ওই ইতিহাসের একটি কপি টেইলরকে দেন।
এই বইয়ের তথ্য ও ইওয়াসাকির নতুন আবিষ্কার- এই দুই মিলিয়ে টেইলর ও লস্ট ৫২ দল সিদ্ধান্ত নেয় গ্রেব্যাকের অবশিষ্টাংশ উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানো হবে।
গ্রেব্যাকের শেষ অভিযান ছিল লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জন এ মুরের নেতৃত্বে তৃতীয় অভিযান। আগের দুইটি অভিযানের জন্য নৌবাহিনীর সম্মানজনক ক্রস পদক পেয়েছিলেন মুর। তৃতীয় ক্রস পদক পান মরনোত্তর। গ্রেব্যাক এক ডজনেরও বেশি জাপানি জাহাজ ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
৭৫ আগে কমান্ডার মুর যেভাবে শুরু করেছিলেন, টেইলরও হাওয়াই থেকে ওকিনাওয়ার দিকে রওনা দেন। জুন মাসে তারা জাপানি নৌসীমায় প্রবেশ করলেও মেকানিক্যাল ও ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যার কারণে তাদের মিশন ভেস্তে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তারা এমন এক স্থানে খুঁজছিলেন যেখানে সাগরের গভীরতা ১৪০০ ফুট। অনুসন্ধানের জন্য টেইলরের দলের প্রধান যন্ত্র ছিল ১৪ ফুট লম্বা স্বয়ংক্রিয় যান। এটি যেন অনেকটা সমুদ্রতলের ড্রোন। ২৪ ঘণ্টা ধরে সমুদ্রের গভীরে ও ১০ বর্গ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সোনার পাঠিয়ে উপরে উঠে আসে ওই যান। এরপর ওই যানের সংগ্রহ করা উপাত্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাউনলোড করেন টেইলরের দল।
পরেরদিনেই ওই ড্রোনে সমস্যা দেখা দেয়। পুরো দল ভেবে নেয় এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। ফলে ফিরে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। কিন্তু টেইলর ড্রোনের তোলা ছবি পর্যালোচনা করতে শুরু করেন। খুব দ্রুতই তিনি দেখতে পান সমুদ্র তলে দুইটি অসামঞ্জস্য আছে। এরপর আরেকটি যন্ত্র পাঠানো হয় সমুদ্রতলে। তবে এটি সোনার নয়, নিজেই সমুদ্রতলে যেতে সক্ষম। এছাড়া এই যন্ত্রে ছিল উচ্চধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টেইলরের হাতে চলে আসে গ্রেব্যাকের ধ্বংসাবশেষের ছবি। ৪০০ ফুট নিচে পড়ে আছে গ্রেব্যাকের ডেক গান।
পরদিন নিহত ৮০ জনের জন্য বিশেষ স্মরণসভা আয়োজন করেন টেইলর ও তার দল। প্রত্যেকের নাম সেখানে উচ্চারণ করা হয়। এদের একজন ছিলেন জন প্যাট্রিক কিং। তার ভাইয়ের ছেলে জন বিন, যার নাম রাখা হয়েছিল জন প্যাট্রিক কিং-এর আদলে। তার জন্ম হয়েছিল প্যাট্রিক কিং শেষ অভিযানে যাওয়ার ৩ বছর আগে। বিনের দাদা-দাদী তাদের সন্তানের দেহবাশেষ খুঁজে না পেয়ে নিজেরাই একটি এপিটাফ বানিয়ে তাকে স্মরণ করতেন।
বিন দুই সপ্তাহ আগে তার বোন ক্যাথেরিনের কাছ থেকে একটি বার্তা পান যে, গ্রেব্যাক খুঁজে পাওয়া গেছে। ক্রিস্টাইন ডেনিসনের কাছ থেকে ক্যাথেরিন ওই বার্তা পেয়েছিলেন। ওই কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যান বিন। তিনি যেনো বিশ্বাসই করতে পারেননি। তার ভাষ্য, ‘আমার পিতামাতা যদি বেঁচে থাকতে এটি দেখে যেতে পারতেন! তারা অনেক খুশি হতেন।’
টেইলরের ওই যন্ত্র থেকে তোলা একটি ভিডিওতে সাবমেরিনের একটি টাওয়ার দেখা যাচ্ছিল। সেখানে স্পষ্ট লেখা ‘ইউএসএস গ্রেব্যাক।’ বিন বলেন, ‘কেউ যেন এই অংশটা পরিষ্কার করে রেখেছে। মনে হলো, গ্রেব্যাকই চেয়েছিল যেন তাকে খুঁজে পাওয়া যায়।’
নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, গ্রেব্যাক ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবচেয়ে সফল মার্কিন সাবমেরিনগুলোর একটি। ১৯৪৪ সালের ২৮শে জানুয়ারি পার্ল হারবার থেকে রওনা দেয় গ্রেব্যাক। সেই বছরের মার্চের শুরুতে অপারেশন শেষে ফিরে আসার কথা ছিল সাবমেরিনটির। কিন্তু ৩ সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো সন্ধান পাওয়া গেলো না। ফলে মার্কিন নৌবাহিনী এই সাবমেরিনটিকে নিখোঁজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করলো।
যুদ্ধের পর দেখা গেলো মার্কিন নৌবাহিনী মোট ৫২টি সাবমেরিন হারিয়েছে। এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস দাঁড় করানোর চেষ্টা করে নৌবাহিনী।
১৯৪৯ সালে এ ব্যাপারে বিস্তারিত উপাত্তের মাধ্যমে জানানো হয় প্রত্যেক সাবমেরিন আনুমানিক কোন স্থানে নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারে। গ্রেব্যাকের ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়েছিল ওকিনাওয়া থেকে পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব দিকে ১০০ মাইল দূরে এটি হারিয়েছে। কিন্তু মার্কিন নৌবাহিনী অজ্ঞানতাবশত জাপানি যুদ্ধ নথির ত্রুটিপূর্ণ অনুবাদের ওপরই এতদিন নির্ভর করেছে। আর এতে দেখা যাচ্ছে, অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে একটি সংখ্যা ভুল হয়েছে। এই ভুল এতদিন কারও চোখে পড়েনি। ফলে গ্রেব্যাকের সন্ধানে এতদিন ভুল জায়গায় অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল।
গত বছর একজন সৌখিন গবেষক ইউতাকা ইওয়াসাকির চোখে এই ভুল ধরা পড়ে। তিনি সাসেবোতে অবস্থিত তৎকালীন জাপানি সাম্রাজ্যবাদী নৌবাহিনীর যুদ্ধকালীন রেকর্ড যাচাইবাছাই করছিলেন। ওই নথির মধ্যে ছিলো ওকিনাওয়ার নৌ বিমান ঘাঁটির রেডিও থেকে প্রাপ্ত দৈনিক তথ্যও। ১৯৪৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারিতে লিপিবদ্ধ তথ্য থেকে পাওয়া গেলো একটি সূত্র।
জাপানি নৌবাহিনীর সেইদিনের প্রতিবেদনে বলা হলো, নাকাজিমা বি৫এন বোমারু বিমান থেকে ৫০০ পাউন্ডের একটি বোমা ফেলা হয়েছে একটি ভাসমান সাবমেরিনের ওপর। এতে করে ওই সাবমেরিন বিস্ফোরিত হয় ও সঙ্গে সঙ্গে ডুবে যায়। জীবিত কাউকে উদ্ধার করা যায়নি।
ইওয়াসাকি বলেন, ‘ওই রেডিও রেকর্ডে সাবমেরিনের ওপর হামলার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ লিপিবদ্ধ করা ছিল বেশ স্পষ্টভাবে।’ আর এই অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর ১৯৪৯ সালের ইতিহাসে গ্রেব্যাকের সম্ভাব্য অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায় মাত্র একটি সংখ্যায়। আর একটি সংখ্যার কারণেই ব্যবধান হয়ে যায় কয়েকশ মাইল!
ইওয়াসাকির এই আবিষ্কার চোখে পড়ে টিম টেইলরের। টেইলর একজন সমুদ্রতল অভিযাত্রী। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস হওয়া প্রত্যেকটি মার্কিন সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের মিশন হাতে নিয়েছেন। ২০১০ সালে তিনি খুঁজে পান প্রথম সাবমেরিন। সেটি ছিল ইউএসএস আর-১২। এটি পাওয়া গিয়েছিল কী ওয়েস্ট-এ। সেখানে ইউএসএস আর-১২ প্রশিক্ষণের সময় ১৯৪৩ সালে ডুবে গিয়েছিল। টিম টেইলর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে লস্ট ৫২ প্রজেক্ট নামে ওই প্রকল্প হাতে নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া ৫২টি সাবমেরিনের মধ্যে যেগুলোর সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি, সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করাই ছিল এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পে এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা সবে গত ১০-১৫ বছর হলো এসেছে। টেইলর বলেন, ৫২টি নিখোঁজ সাবমেরিনের মধ্যে ৪৭টিই উদ্ধারের যোগ্য বলে ভাবা হয়। বাকি ৫টি ধ্বংস হওয়ার স্থান জানা আছে। এই ৪৭টি সাবমেরিন উদ্ধারের জন্য বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছেন টেইলর ও তার স্ত্রী ক্রিস্টাইন ডেনিসন। তারা এখন নজর দিয়েছেন জাপানের আশেপাশে যেগুলো ডুবে থাকতে পারে সেগুলোর ওপর।
সাগরতলের অভিযানে ঝোঁক থাকায় টেইলরের সঙ্গে পরিচয় হয় ডন ওয়ালশ নামে নৌবাহিনীর সাবেক এক সাবমেরিনারের সঙ্গে। ১৯৬০ সালে ডন ওয়ালশ লেফটেন্যান্ট হিসেবে পৃথিবীর গভীরতল সমুদ্র তল হিসেবে বিবেচিত মারিয়ানা ট্রেঞ্চ ছুয়েছিলেন। ওয়ালশই ১৯৪৯ সালের নৌবাহিনীর ওই ইতিহাসের একটি কপি টেইলরকে দেন।
এই বইয়ের তথ্য ও ইওয়াসাকির নতুন আবিষ্কার- এই দুই মিলিয়ে টেইলর ও লস্ট ৫২ দল সিদ্ধান্ত নেয় গ্রেব্যাকের অবশিষ্টাংশ উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানো হবে।
গ্রেব্যাকের শেষ অভিযান ছিল লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জন এ মুরের নেতৃত্বে তৃতীয় অভিযান। আগের দুইটি অভিযানের জন্য নৌবাহিনীর সম্মানজনক ক্রস পদক পেয়েছিলেন মুর। তৃতীয় ক্রস পদক পান মরনোত্তর। গ্রেব্যাক এক ডজনেরও বেশি জাপানি জাহাজ ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
৭৫ আগে কমান্ডার মুর যেভাবে শুরু করেছিলেন, টেইলরও হাওয়াই থেকে ওকিনাওয়ার দিকে রওনা দেন। জুন মাসে তারা জাপানি নৌসীমায় প্রবেশ করলেও মেকানিক্যাল ও ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যার কারণে তাদের মিশন ভেস্তে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তারা এমন এক স্থানে খুঁজছিলেন যেখানে সাগরের গভীরতা ১৪০০ ফুট। অনুসন্ধানের জন্য টেইলরের দলের প্রধান যন্ত্র ছিল ১৪ ফুট লম্বা স্বয়ংক্রিয় যান। এটি যেন অনেকটা সমুদ্রতলের ড্রোন। ২৪ ঘণ্টা ধরে সমুদ্রের গভীরে ও ১০ বর্গ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সোনার পাঠিয়ে উপরে উঠে আসে ওই যান। এরপর ওই যানের সংগ্রহ করা উপাত্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাউনলোড করেন টেইলরের দল।
পরেরদিনেই ওই ড্রোনে সমস্যা দেখা দেয়। পুরো দল ভেবে নেয় এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। ফলে ফিরে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। কিন্তু টেইলর ড্রোনের তোলা ছবি পর্যালোচনা করতে শুরু করেন। খুব দ্রুতই তিনি দেখতে পান সমুদ্র তলে দুইটি অসামঞ্জস্য আছে। এরপর আরেকটি যন্ত্র পাঠানো হয় সমুদ্রতলে। তবে এটি সোনার নয়, নিজেই সমুদ্রতলে যেতে সক্ষম। এছাড়া এই যন্ত্রে ছিল উচ্চধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টেইলরের হাতে চলে আসে গ্রেব্যাকের ধ্বংসাবশেষের ছবি। ৪০০ ফুট নিচে পড়ে আছে গ্রেব্যাকের ডেক গান।
পরদিন নিহত ৮০ জনের জন্য বিশেষ স্মরণসভা আয়োজন করেন টেইলর ও তার দল। প্রত্যেকের নাম সেখানে উচ্চারণ করা হয়। এদের একজন ছিলেন জন প্যাট্রিক কিং। তার ভাইয়ের ছেলে জন বিন, যার নাম রাখা হয়েছিল জন প্যাট্রিক কিং-এর আদলে। তার জন্ম হয়েছিল প্যাট্রিক কিং শেষ অভিযানে যাওয়ার ৩ বছর আগে। বিনের দাদা-দাদী তাদের সন্তানের দেহবাশেষ খুঁজে না পেয়ে নিজেরাই একটি এপিটাফ বানিয়ে তাকে স্মরণ করতেন।
বিন দুই সপ্তাহ আগে তার বোন ক্যাথেরিনের কাছ থেকে একটি বার্তা পান যে, গ্রেব্যাক খুঁজে পাওয়া গেছে। ক্রিস্টাইন ডেনিসনের কাছ থেকে ক্যাথেরিন ওই বার্তা পেয়েছিলেন। ওই কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যান বিন। তিনি যেনো বিশ্বাসই করতে পারেননি। তার ভাষ্য, ‘আমার পিতামাতা যদি বেঁচে থাকতে এটি দেখে যেতে পারতেন! তারা অনেক খুশি হতেন।’
টেইলরের ওই যন্ত্র থেকে তোলা একটি ভিডিওতে সাবমেরিনের একটি টাওয়ার দেখা যাচ্ছিল। সেখানে স্পষ্ট লেখা ‘ইউএসএস গ্রেব্যাক।’ বিন বলেন, ‘কেউ যেন এই অংশটা পরিষ্কার করে রেখেছে। মনে হলো, গ্রেব্যাকই চেয়েছিল যেন তাকে খুঁজে পাওয়া যায়।’
No comments