আবার রোহিঙ্গা—একটি আবর্তিক সংকট
মিয়ানমার থেকে আসা নারী ও শিশুদের কয়েকজন |
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে আবার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমাবেশ হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ২০ থেকে ৩০ হাজার নর-নারী ও শিশু সীমান্তপারে দাঁড়িয়ে আছে সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য। জানি না এদের আর কয় দিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে। কারণ, এর মধ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশকে তাগাদা দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে। যদি এদের আসতে দেওয়া হয়, এটি হবে তৃতীয়বারের মতো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রবেশ এবং এর জের চলবে আরও অনেক দিন। যেমন হয়েছিল ১৯৭৮-৭৯ ও ১৯৯২-৯৪ সালে। বর্তমান পৃথিবীতে উদ্বাস্তু সমস্যা এক নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের উদ্বাস্তু সমস্যা সারা ইউরোপকে আলোড়িত করেছে। সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধে লাখ লাখ লোক নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় চাইছে হাজার হাজার মাইল দূরে। বিভিন্ন কারণে কোথাও স্থায়ী হতে পারছে না।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে নিজেদের দেশে অন্তর্ঘাতী যুদ্ধের জন্য, নৌকা নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, মারাও যাচ্ছে পথেঘাটে। তবু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ পালাচ্ছে। রোহিঙ্গারাও পালাচ্ছে নিজের বাসভূমি ছেড়ে। কারণ, সেখানে তাদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে অন্য উদ্বাস্তুদের তফাত এই যে, রোহিঙ্গারা যুদ্ধের ফলে ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে না; তাদের দেশে কোনো যুদ্ধ চলছে না। তারা নিজ ভূমিতে নিগৃহীত এক সাম্প্রদায়িক সংখ্যালঘু। সে দেশের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী ও সরকার তাদেরকে নাগরিক হিসেবে গণ্য করতে নারাজ। এর পেছনে তাদের প্রধান যুক্তি হলো, রোহিঙ্গারা নাকি আদতে বাঙালি অনুপ্রবেশকারী। তারা এটা বলেই রোহিঙ্গাদের ১৯৭৮ সাল থেকে আরাকান অঞ্চল থেকে খেদানোর চেষ্টা করে আসছে। ১৯৭৮ সালে প্রথম রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় আমি বৃহত্তর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলাম। সে বছরের মে মাসে রোহিঙ্গারা প্রথম চট্টগ্রামের উখিয়া সীমান্তে উপস্থিত হলে আমাদের সীমান্তরক্ষীরা তাদের নিয়মমাফিক বাধা দেয়। তারা সীমান্তের পাশেই বসতি গড়তে থাকে। কিন্তু কয়েক দিনের ভেতর তাদের সংখ্যা বেড়ে কয়েক হাজার হয়ে দাঁড়ায়। তারা সীমান্তরক্ষীদের চাপ দিতে থাকে তাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে অনুমতি দিতে।
এমতাবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনকে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা অধিনায়ক অনুরোধ জানান তাঁদের এ ব্যাপারে করণীয় কাজে সরকারি পরামর্শ দিতে। মহকুমা প্রশাসকের জরুরি বার্তা পেয়ে আমি চলে যাই উখিয়াতে। বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশপ্রধান ও স্থানীয় সেনাবাহিনী কমান্ডারও পরে যোগ দেন। উখিয়ায় গিয়ে দেখি, সীমান্তের দুই ধারে প্রায় পাঁচ হাজার নর-নারী ও শিশু। সীমান্ত অধিনায়ক বললেন, এরা চার দিন ধরে বসে আছে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হওয়ার জন্য। অধিকাংশ উদ্বাস্তু শুকনো জমিতে খড়ের বিছানা পেতেছে, কেউ কেউ মাথার ওপর শালপাতা দিয়ে ছাদ বানিয়েছে। সবার সঙ্গে কিছু বাক্স আর রান্নার হাঁড়িপাতিল। আমাদের দেখে কিছু নেতা গোছের লোক এগিয়ে আসে। তারা বাংলাদেশে আশ্রয় চায়। কারণ, বর্মি সেনারা তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের ওপর অত্যাচার করেছে। কেউ কেউ দেখাল তাদের গায়ে জখমের দাগ। কেন পুড়িয়ে দিয়েছে জানতে চাইলে তারা বলল, বার্মা সরকার (এখন মিয়ানমার) নাগরিকত্ব তদন্তের নামে অভিযান চালিয়েছে। যেসব লোক নাগরিকত্ব কাগজ দেখাতে পারেনি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের উৎখাত করেছে। (নাগরিকত্বের কাগজ ছিল না, কারণ তাদের সরকারের কাছ থেকে এ রকম কোনো কাগজ তারা কখনো পায়নি)।
বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশপ্রধান ও সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক প্রধানের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক হলো, উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশের ভেতরে মানবতার খাতিরে আসতে দেওয়া হবে, তবে তাদের অস্থায়ী আশ্রয় হবে সীমান্তের পাশে। স্থানীয় প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় উদ্বাস্তুদের খাবারের বন্দোবস্ত এবং তাঁবু বানানোর সরঞ্জাম মহকুমার ত্রাণ অফিস থেকে দেবে। একই সঙ্গে আমরা স্বরাষ্ট্র এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়ে দিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে সরকারের অনুমোদন চাইলাম। সরকারের তরফ থেকে এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকার কথা নয়, তাই সেদিন থেকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে প্রবেশ করার অনুমতি পায়।
সেদিন আমরা বুঝতে পারিনি, এ সিদ্ধান্তের ফলে আমরা একটি বিরাট শরণার্থী জলপ্রপাতের সম্মুখীন হব। সিদ্ধান্তের এক সপ্তাহের মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এক মাসে দাঁড়ায় এক লাখের ওপর। উখিয়াতে আমরা শুরু করি দুটি শিবির দিয়ে, অচিরেই আরও পাঁচটি শিবির স্থাপন করতে হলো। খুব তাড়াতাড়ি শরণার্থীর সংখ্যা দুই লাখের ওপর দাঁড়ালে আমরা আরও ছয়টি শিবির স্থাপন করি। শিবিরগুলো ছিল সীমান্তসংলগ্ন এলাকায়। বারোটি ছিল কক্সবাজার অঞ্চলে (টেকনাফ, উখিয়া) আর একটি ছিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়।
শরণার্থীদের প্রথম দিকে ত্রাণ সরকারের তরফ থেকেই দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ক্রমেই এটা দুষ্কর হচ্ছিল। খুব শিগগির সাহায্য আসে ইউএনএইচসিআর থেকে, যার সঙ্গে যোগ দেয় অন্যান্য আন্তর্জাতিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বিদেশি সাহায্যের সুফল ও কুফল দুই-ই ছিল। সুফল বলা বাহুল্য, কুফল ছিল যে সাহায্যের পরিমাণ আর প্রাচুর্য শরণার্থীদের আরও আকর্ষণ করতে থাকে। আমরা স্থানীয় প্রশাসন প্রমাদ গুনলাম যে ত্রাণের বাহুল্যে শরণার্থীরা শিবিরগুলোকে তাদের চিরস্থায়ী আশ্রয় মনে করে বার্মায় ফিরে যাওয়ার কথা ভুলে যেতে পারে।
এ সম্ভাবনা আমাদের মনে প্রথম থেকেই ছিল বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আমার চারটি সুপারিশ ছিল—শরণার্থী শিবির সীমান্তের কাছাকাছি থাকবে; শিবিরগুলো থাকবে কড়া পুলিশ প্রহরায়, যাতে শরণার্থীরা এলাকার অভ্যন্তরে যেতে না পারে; বিদেশি ত্রাণ সংস্থাগুলো কাজ করবে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এবং শরণার্থী সমস্যাকে আন্তর্জাতিক না করে বার্মার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হবে। তৎকালীন মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সব সুপারিশই গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকার বর্মি সরকারের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা শুরু করে। শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দুবার উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়; একবার ঢাকায়, অন্যবার আরাকান রাজ্যের মংডুতে। আমি দুটিতেই শামিল ছিলাম। ঢাকার আলোচনার পর বর্মি দল কক্সবাজারে আসে শরণার্থী শিবির দেখতে। সফরকারী দলে ছিলেন বার্মার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডিরেক্টর জেনারেল অব ইমিগ্রেশন এবং রাষ্ট্রদূত। আমি নিজে তাঁদের কয়েকটি শিবিরে নিয়ে যাই, তাঁরা স্বচক্ষে শরণার্থীদের অবস্থা দেখেন। মংডুতে আলোচনায় শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের সময়সূচি স্থির করা হয়।
বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশপ্রধান ও সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক প্রধানের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক হলো, উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশের ভেতরে মানবতার খাতিরে আসতে দেওয়া হবে, তবে তাদের অস্থায়ী আশ্রয় হবে সীমান্তের পাশে। স্থানীয় প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় উদ্বাস্তুদের খাবারের বন্দোবস্ত এবং তাঁবু বানানোর সরঞ্জাম মহকুমার ত্রাণ অফিস থেকে দেবে। একই সঙ্গে আমরা স্বরাষ্ট্র এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়ে দিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে সরকারের অনুমোদন চাইলাম। সরকারের তরফ থেকে এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকার কথা নয়, তাই সেদিন থেকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে প্রবেশ করার অনুমতি পায়।
সেদিন আমরা বুঝতে পারিনি, এ সিদ্ধান্তের ফলে আমরা একটি বিরাট শরণার্থী জলপ্রপাতের সম্মুখীন হব। সিদ্ধান্তের এক সপ্তাহের মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এক মাসে দাঁড়ায় এক লাখের ওপর। উখিয়াতে আমরা শুরু করি দুটি শিবির দিয়ে, অচিরেই আরও পাঁচটি শিবির স্থাপন করতে হলো। খুব তাড়াতাড়ি শরণার্থীর সংখ্যা দুই লাখের ওপর দাঁড়ালে আমরা আরও ছয়টি শিবির স্থাপন করি। শিবিরগুলো ছিল সীমান্তসংলগ্ন এলাকায়। বারোটি ছিল কক্সবাজার অঞ্চলে (টেকনাফ, উখিয়া) আর একটি ছিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়।
শরণার্থীদের প্রথম দিকে ত্রাণ সরকারের তরফ থেকেই দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ক্রমেই এটা দুষ্কর হচ্ছিল। খুব শিগগির সাহায্য আসে ইউএনএইচসিআর থেকে, যার সঙ্গে যোগ দেয় অন্যান্য আন্তর্জাতিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বিদেশি সাহায্যের সুফল ও কুফল দুই-ই ছিল। সুফল বলা বাহুল্য, কুফল ছিল যে সাহায্যের পরিমাণ আর প্রাচুর্য শরণার্থীদের আরও আকর্ষণ করতে থাকে। আমরা স্থানীয় প্রশাসন প্রমাদ গুনলাম যে ত্রাণের বাহুল্যে শরণার্থীরা শিবিরগুলোকে তাদের চিরস্থায়ী আশ্রয় মনে করে বার্মায় ফিরে যাওয়ার কথা ভুলে যেতে পারে।
এ সম্ভাবনা আমাদের মনে প্রথম থেকেই ছিল বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আমার চারটি সুপারিশ ছিল—শরণার্থী শিবির সীমান্তের কাছাকাছি থাকবে; শিবিরগুলো থাকবে কড়া পুলিশ প্রহরায়, যাতে শরণার্থীরা এলাকার অভ্যন্তরে যেতে না পারে; বিদেশি ত্রাণ সংস্থাগুলো কাজ করবে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এবং শরণার্থী সমস্যাকে আন্তর্জাতিক না করে বার্মার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হবে। তৎকালীন মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সব সুপারিশই গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকার বর্মি সরকারের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা শুরু করে। শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দুবার উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়; একবার ঢাকায়, অন্যবার আরাকান রাজ্যের মংডুতে। আমি দুটিতেই শামিল ছিলাম। ঢাকার আলোচনার পর বর্মি দল কক্সবাজারে আসে শরণার্থী শিবির দেখতে। সফরকারী দলে ছিলেন বার্মার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডিরেক্টর জেনারেল অব ইমিগ্রেশন এবং রাষ্ট্রদূত। আমি নিজে তাঁদের কয়েকটি শিবিরে নিয়ে যাই, তাঁরা স্বচক্ষে শরণার্থীদের অবস্থা দেখেন। মংডুতে আলোচনায় শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের সময়সূচি স্থির করা হয়।
শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন শুরু হয় ১৯৭৯ সালের মাঝামাঝি। অর্থাৎ এ সংকট শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায়। শুরু করি আমি নিজে এক প্রতীকী প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে। ৪০ জন শরণার্থীকে বাসে করে গুন্দুম সীমান্তে নিয়ে পায়ে হেঁটে পুল পার হয়ে নাফ নদীর ওপারে তাদের বর্মি কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছে দিয়ে আসি। এরপর নিয়মিত প্রত্যাবর্তন শুরু হয়। দু-একটি অপ্রিয় ঘটনা ছাড়া সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন কাজ শেষ হয় চার মাসের মধ্যে। আন্তর্জাতিক ইতিহাসে এত কম সময়ে দুই দেশের সহযোগিতায় দুই লাখ শরণার্থীর শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের নজির খুব কম। আজ আবার বাংলাদেশ হয়তো আরেকটি শরণার্থীসংকটের মুখোমুখি হাতে যাচ্ছে। সরকারিভাবে দেশের সীমান্তে জমায়েত হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু আবার এ দেশে ঢুকতে চাইছে। কারণ, তারা নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত, সেখানে তারা অত্যাচারিত। মানবতার খাতিরে বা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশকে হয়তো এদের আশ্রয় দিতে হবে। কিন্তু তারপর? এ আবর্তক সংকটের শেষ কোথায়?
আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমরা যদি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সুফল পেয়ে থাকি, এখন তা অনুসরণ করলে অসুবিধা কী? বরং এখন আলোচনা আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে। কারণ, রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আন্তর্জাতিক চিন্তার বিষয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে উদ্যোগ নিয়ে এখনই আলাপ করা দরকার (যদি তা শুরু না হয়ে থাকে)। রোহিঙ্গা সমস্যা ৪০ বছর আগের মতো শুধু শরণার্থী ফেরত নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না; এর পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা–ও দেখতে হবে। এ আবর্ত থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি পেতে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেওয়া দরকার। সে জন্য বাংলাদেশকে মিয়ানমার সরকারের অঙ্গীকার পেতে হবে।
আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমরা যদি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সুফল পেয়ে থাকি, এখন তা অনুসরণ করলে অসুবিধা কী? বরং এখন আলোচনা আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে। কারণ, রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আন্তর্জাতিক চিন্তার বিষয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে উদ্যোগ নিয়ে এখনই আলাপ করা দরকার (যদি তা শুরু না হয়ে থাকে)। রোহিঙ্গা সমস্যা ৪০ বছর আগের মতো শুধু শরণার্থী ফেরত নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না; এর পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা–ও দেখতে হবে। এ আবর্ত থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি পেতে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেওয়া দরকার। সে জন্য বাংলাদেশকে মিয়ানমার সরকারের অঙ্গীকার পেতে হবে।
এ ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মধ্যস্থতা করতে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে প্রস্তাব দিতে পারে। এই আলোচনা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে, তাই মধ্যকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্ত এলাকায় ইউএনএইচসিআরের সাহায্যে শরণার্থী শিবির স্থাপনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রাজি হতে পারে, যার খরচ ইউএনএইচসিআর বহন করবে। অং সান সু চির নেতৃত্বে মিয়ানমারে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে এসেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও আশা করবে যে এ গণতন্ত্র তাঁর দেশের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর উপকার করবে। রোহিঙ্গাদের উৎপত্তিস্থল বিচার না করে তারা কত যুগ ধরে ওই দেশের বাসিন্দা, তা দেখে তাদের নাগরিকত্ব বিচার তিনি এবং তাঁর সরকার করবেন, তা-ই আমরা আশা করব।
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: রাজনৈতিক ভাষ্যকার।
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: রাজনৈতিক ভাষ্যকার।
No comments