রসুনের কেজি আবার ২০০ টাকা ছাড়াল
ছোট পরিবারে মাসে যদি গড়পড়তা পাঁচ কেজি পেঁয়াজ লাগে, তাহলে রসুন লাগে এক কেজি। কিন্তু সেই এক কেজি রসুন কিনতে এখন আট কেজি পেঁয়াজের সমান দাম দিতে হচ্ছে। রাজধানীর বাজারে আবার আমদানি করা চীনা রসুনের দর প্রতি কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। বিপরীতে ভারতীয় পেঁয়াজ মিলছে প্রতি কেজি ২৫ টাকায়। বাজারে এখন ক্রেতাদের নতুন অস্বস্তির নাম রসুন। সবজির দাম ধীরে ধীরে কমছে। মাছ ও মাংসের দাম স্থিতিশীল। কিন্তু চীনে রসুনের দামের উত্তাপ ভোগাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রেতাদের।
অবশ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, রসুনের চড়া দামে ভুগছে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, মালয়েশিয়াসহ বহু দেশ। চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রসুন উৎপাদন ও রপ্তানি করে। গত বছরের শেষ দিকে ভারী বৃষ্টিপাত, এরপর তুষারপাতে সেখানে রসুনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে চীনের বিনিয়োগকারীরা মুনাফার গন্ধ পাওয়ায় রসুন মজুতে বিপুল বিনিয়োগ করছেন। এতে বাজার চড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সম্প্রতি চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট নামের একটি পত্রিকায় ‘রসুনে মধু খুঁজে পেয়েছে বিনিয়োগকারীরা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, চীনে রসুনের কেজিপ্রতি দাম ১৬ ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। দ্রুত অর্থ উপার্জনের একটি পথ এখন রসুন। সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টন রসুনের চাহিদা আছে। এর মধ্যে দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন উৎপাদিত হয়। বাকিটা মূলত চীন থেকে আমদানি করা হয়। ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তে গতকাল শনিবার চীনা রসুন মানভেদে ১৭৮-১৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আড়তের কাছাকাছি খুচরা দোকানগুলোতে মিলছে ১৯০ টাকা কেজি দরে। তবে ঢাকার অন্যান্য বাজারে চীনা রসুন কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং দেশি রসুন মানভেদে ১৬০-১৮০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারের আড়তের বিক্রেতা এমদাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাস খানেক আগে চীনা রসুন প্রতি কেজি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন তিনি।
অন্যদিকে দেশি রসুন ছিল কেজিপ্রতি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তিনি বলেন, এ বছর কৃষকেরা রসুনের দাম সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন। বছরজুড়েই পণ্যটির দাম বেশি ছিল। রাজধানীর শ্যামবাজারের কৃষিপণ্যের আড়ত নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, চীনে রসুনের দাম অত্যধিক বেশি বলে গুটি কয়েক আমদানিকারক আমদানি করছেন। এ ছাড়া এ বছর ভারত ও মিয়ানমার থেকেও রসুন আমদানি হচ্ছে না। তিনি বলেন, শ্যামবাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭-১৮ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ২২-২৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি নতুন মৌসুমের রসুন বাজারে আসবে আগামী এপ্রিল মাসে। তাঁর আগে দাম কমার কোনো আশাও জানাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এদিকে রাজধানীর বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। গেল সপ্তাহে সবজির বাজারে নতুন করে এসেছে পাকা টমেটো (টক)। এর কেজিপ্রতি দর চাওয়া হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। অন্যান্য বেশির ভাগ সবজি কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তবে অভিজাত বাজারে দাম আরেকটু বেশি। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৪০-১৫০ টাকা এবং ফার্মের মুরগির ডিম হালিপ্রতি ৩২-৩৪ টাকা চাওয়া হচ্ছে। গেল সপ্তাহে চাল, ডাল, আটাসহ প্রধান প্রধান নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে তেমন কোনো হেরফের হয়নি।
No comments