মৃত্যুকে ভয় পাই না by মুজিব মাসুদ
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বিশিষ্ট
সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, তার মৃত্যু কোনো সন্ত্রাসীর হাতে হবে
না। তার মৃত্যু হবে আল্লাহর নির্দেশে। আল্লাহর হাতে। মৃত্যুকে তিনি ভয়ও
পান না। ফেনীতে খুনের তালিকায় তার নাম থাকার বিষয়ে জয়নাল হাজারীর দেয়া
বক্তব্য প্রসঙ্গে শুক্রবার যুগান্তরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, ফেনী যখন চরম অশান্ত ছিল তখনও তিনি যেভাবে সন্ত্রাসী-গডফাদারদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, সোচ্চার ছিলেন- প্রয়োজন হলে মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে আবারও সেসব সন্ত্রাসী-খুনিদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন। তবে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার তিনি ফেনীর স্থানীয় নির্বাচনে যাননি। প্রধানমন্ত্রী তাকে তার তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে একটি দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই এই দায়িত্ব এখন সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছেন। যদি প্রধানমন্ত্রী তাকে নির্দেশ দেন তাহলে আবারও ফেনীবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে অশান্ত ফেনীকে শান্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। কারণ খুনি, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, আর গডফাদারদের বিরুদ্ধে কথা বলা ইমানী দায়িত্ব। যতদিন জীবন থাকবে ততদিন তিনি এই ইমানী দায়িত্ব পালন করে যাবেন। তবে এখন ফেনীতে গিয়ে বিতর্কিত হবেন না বলেও জানান তিনি।
ফুলগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান একরামুল হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন যদি মনে করে থাকে এই তদন্ত তারা একা একা করছেন তাহলে ভুল হবে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশিত হয়ে রাষ্ট্রের প্রতিটি সংস্থা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করছে। কাজেই খুনি যেই হোক তাকে খুঁজে বের করে আনা হবে। তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে হুশিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, একরামুল হত্যার প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার ও সুষ্ঠু তদন্ত না করলে ফেনীর স্থানীয় প্রশাসনের পরিণতি হবে নারায়ণগঞ্জের র্যাবের মতো। তার মতে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে যেভাবে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের তদন্ত ও র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ফেনীর একরাম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও সরকারের শীর্ষ মহল থেকে সেভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী কারও প্রতি ইঙ্গিত না করে বলেন, প্রশাসন স্থানীয় নেতাদের নির্দেশে চলে না। চলার কথাও না। প্রশাসন চলবে সরকারের নির্দেশে। তাদের জবাবদিহি করতে হবে সরকারের কাছে। ফেনীর কোনো স্থানীর ব্যক্তির কাছে নয়। কাজেই প্রশাসনের কেউ যদি কোনো ব্যক্তি, নেতা কিংবা এমপির কথায় ওঠ-বস করে তাহলে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
খুনের তালিকায় নাম প্রসঙ্গে জয়নাল হাজারীর বক্তব্যের জবাবে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত মতামত। কি তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এরকম বলেছেন, জানি না। তিনি মনে করেন, খুন হওয়ার মতো এমন কোনো অন্যায় তিনি এখন পর্যন্ত করেননি। তাছাড়া কারও এমন কোনো ক্ষতিও করেননি যে, তিনি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের টার্গেট হবেন। তবে তার এখন একটাই কষ্ট, দীর্ঘ ৫ বছরের শান্ত ফেনী আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। খুনাখুনি শুরু হয়েছে। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছে ফেনীবাসী।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বানিয়ে ফেনীতে পাঠিয়েছিলেন। সে সময়ও ফেনী এরকম অশান্ত ছিল। যে কারণে নির্বাচন করেও সফল হতে পারেননি।
সর্বশেষ ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হত্যাকাণ্ড তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এই হত্যাকান্ড যে ঘটিয়েছে তার বিচার হতে হবে। কারণ ফেনীবাসী আজ আতংকিত। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে যেভাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ফেনীর ঘটনায়ও সেরকম দৃষ্টান্ত হবে। তার মতে, ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে সব ধরনের প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে কারণে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি আইনশৃংখলা বাহিনীসহ সরকারের সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থা ফেনীতে গিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তার ধারণা শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদঘাটিত হবে এবং প্রকৃত খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। আর এর মধ্য দিয়েই অশান্ত ফেনী শান্ত হবে।
>>মুজিব মাসুদ @যুগান্তর
No comments