থাইল্যান্ডের নির্বাচন বাতিল
থাইল্যান্ডে গত ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচন বাতিল করেছেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত। এতে করে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার অপসারণের দাবিতে বিরোধীদের বিক্ষোভে কয়েক মাস ধরে উত্তাল থাকা দেশটিতে নতুন সরকার গঠন আরও পিছিয়ে গেল। গতকাল শুক্রবার আদালতের রুলিংয়ে বলা হয়, ২ ফেব্রুয়ারির ওই নির্বাচনে দেশের সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। কারণ, দক্ষিণ থাইল্যান্ডের ২৮ জেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়নি। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের অবরোধের কারণে ওই এলাকাগুলোর প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি। নতুন নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে থাইল্যান্ডের নির্বাচন কমিশনের সদস্য সোমচাই শ্রিসুত্থিয়াকর্ন জানিয়েছেন, নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে দেশের সামনে এখন দুটি পথ খোলা রয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন তারিখ নির্ধারণে নতুন একটি রাজকীয় ফরমান জারির জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তা না হলে, আমরা কখন নতুন নির্বাচন করলে সবচেয়ে ভালো হয়, সে বিষয়ে মতৈক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রধানকে বলতে পারি।’ অবশ্য নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে, তা আবার প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। তাদের নেতা সুথেপ থাকসুবান গত বৃহস্পতিবার রাতে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আদালত যদি ওই নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেন, কেউ এমনকি স্বপ্নও দেখবেন না যে আবার নির্বাচন হবে। যদি নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়, তবে আমরা প্রতিটি প্রদেশে তৎপরতা চালাব।
নির্বাচন আবারও সফল হবে না।’ থাইল্যান্ডে যে সংকট চলছে, তা রাজধানী ব্যাংককের মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও রাজতন্ত্রের সমর্থকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক ও তাঁর ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থকদের মধ্যে গত আট বছর ধরে চলে আসা সংঘাতের সর্বশেষ অধ্যায়। থাকসিনকে ২০০৬ সালে উৎখাত করে দেশটির সেনাবাহিনী। দুর্নীতির একটি মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে বর্তমানে তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে রয়েছেন। বর্তমানে পঞ্চম মাসে গড়ানো এই বিক্ষোভকালে সরকারবিরোধীরা বেশ সুবিধা করতে পেরেছে। তারা বেশির ভাগ সরকারি কার্যালয়ই বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। ইংলাককে পদত্যাগে বাধ্য করতে বিক্ষোভকারীরা কয়েকবার রাজধানী ব্যাংককের অনেক এলাকা বড় ধরনের লোক সমাবেশ ঘটিয়ে অচলও করে দিয়েছিল। বিক্ষোভ থামাতে গত ডিসেম্বর মাসে ওই নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক। নির্বাচনের স্বার্থে তিনি পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। ওই সময় থেকে তিনি দেশের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইংলাকের পুয়ে থাই পার্টি ২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। তবে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেট পার্টি বিক্ষোভকারীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। তারা নির্বাচনের আগে দেশে রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে। সেই সংস্কারের লক্ষ্য হবে থাকসিনের প্রভাব হ্রাস করা। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তার সব কটিতেই থাকসিনের দল বা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দলগুলো জিতেছে। রয়টার্স।
No comments