ইসির সংস্কার প্রস্তাব সরকারের কাছে যাচ্ছে আজ
স্টাফ রিপোর্টার: নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ‘সার্চ কমিটি’সহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর বেশকিছু ধারা সংশোধন/বিয়োজনে আজই সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাব পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এক সপ্তাহ আগে কমিশন বৈঠকে এ সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আরও থাকছে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, আইন সংশোধন, আরও বড় পরিসরে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার। সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানের সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ‘সার্চ কমিটি’ গঠনে আইন প্রণয়নের পক্ষে মতামত দেয়ায় কমিশন আইনের একটি খসড়াও সরকারের কাছে পাঠাচ্ছে। যদিও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ বিষয়ে কোন সুপারিশ করেনি। বিএনপি নতুন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, কমিশনার নিয়োগ বিধিসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বেশকিছু সংশোধনীর প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এ সংস্কার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সংস্কার প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রধান প্রস্তাবগুলোর মধ্যে থাকছে- সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতির আইন প্রণয়ন, জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে নতুন আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর অধিকতর সংশোধন। সাখাওয়াত বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর অধিকতর সংশোধনীতে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতায় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হচ্ছে। যাতে আগামীতে কোন প্রার্থী হলফনামা আকারে অসত্য বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পার না পান। এছাড়া নির্বাচনের সময় তখন যে কোন ফর্মের সরকারই থাকুক না কেন- সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এলজিআরডি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন তখন কমিশনের পরামর্শ না নিয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ না নিতে পারে- আরপিওতে এমন বিধিও সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। কমিশন সচিবালয়ের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনী আইন সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে সংবিধানের ১১৮ ধারার আলোকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়নের সুপারিশও করা হচ্ছে। প্রস্তাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগে সার্চ কমিটির গঠনের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সর্বাধিক ৪ জন নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। আইন না থাকায় অতীতে অনেক অযোগ্য এবং দলসংশ্লিষ্ট লোক কমিশনার পদে নিয়োগ পাওয়ায় কমিশন এবার ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করার প্রস্তাব করছে। যাতে দক্ষ, যোগ্য ও দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের কমিশনার পদে নিয়োগ নিশ্চিত করা যায়। প্রস্তাবিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগের আইনে বলা হয়েছে, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং একজন মহিলা নির্বাচন কমিশনারসহ অনধিক ৫ সদস্যের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। এই কমিটির সদস্য হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, হাইকোর্টের একজন বিচারক, দুদকের চেয়ারম্যান, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও মহাহিসাব নিরীক্ষক। কমিটি প্রতিটি পদের জন্য তিনজনের নাম নির্ধারণ করবে। কমিটির কাজ পরিচালনার নিয়মাবলিও ওই কমিটি তৈরি করবে। প্যানেল প্রস্তুতের পর তা জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির পরীক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পাঠাতে হবে। কার্য উপদেষ্টা কমিটি ওই প্যানেল পরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এবং ওই প্যানেল থেকে প্রেসিডেন্ট যে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন। আরও বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া, বিদ্যমান সীমানা নির্ধারণ আইনও সংশোধনের প্রস্তাব করছে কমিশন। বিদ্যমান সীমানা আইনে সর্বশেষ আদমশুমারির জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিধান রয়েছে। তবে দিন দিন মানুষ শহরমুখী হওয়ায় শহর এলাকায় সংসদীয় আসন বেড়েই চলছে। বিপরীতে কমছে মফস্বল এলাকার আসন সংখ্যা। রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোর আসন সংখ্যা সীমিত রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়ে কমিশন তাই সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধনের প্রস্তাব করছে। সংশোধনীর স্বপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতও সংযুক্ত করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের আসনসংখ্যা ১০-এ সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ভোট গ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার, নির্বাচনী ব্যয় ও জামানতের টাকা বৃদ্ধি, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের শাস্তির বিধান সংযোজন/সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা কমিশনের প্রস্তাবে থাকছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্লেখ্য, আগামী ৫ই ফেব্রুয়ারিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা এবং নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং ১৪ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে তিন কমিশনারই বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
No comments