মন্দায় লেনদেন কমেছে ১১০০ কোটি টাকা
অর্থনৈতিক রিপোর্র্র্টার: বছরের প্রথম সপ্তাহে সূচক ও আর্থিক লেনদেনে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও দ্বিতীয় সপ্তাহে বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এতে আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে লেনদেন ১১০০ কোটি টাকা ও সূচক সাড়ে ৩০০ পয়েন্ট কমেছে। ফলে নতুন করে বাজারে আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তারল্য সঙ্কট ও সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতির খবরে ব্যাপক দরপতনের মধ্য দিয়ে এ সপ্তাহ শেষ হয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। শেয়ারবাজারে গত কয়েক দিনের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের ভয়ের কোন কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি এ হাফিজ। তিনি বলেন, বাজার তার নিজস্ব গতিতে কমবে আবার বাড়বে। কিন্তু এ জন্য কোন গুজব কিংবা অসত্যের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করলে চলবে না। এ হাফিজ বলেন, বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে বেশকিছু দিন ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ছিল। কিন্তু হঠাৎ মুদ্রানীতি সম্পর্কে কে বা কারা গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করার অপচেষ্টায় তৎপর হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্যচ্যুতি কিংবা বিচলিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেয়া মোটেও ঠিক নয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যেখানে শেয়ারবাজার স্বাভাবিক করতে অত্যন্ত আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে সেখানে এ ধরনের গুজবে পড়ে মার্কেট থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া কারোর জন্য শুভ হতে পারে না। মুদ্রানীতি সম্পর্কে হাফিজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা খুবই গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করছে। এটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অহেতুক মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল হওয়ার কোন কারণ নেই। মুদ্রানীতি পুঁজিবাজারের জন্য কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি মনে করছেন। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসের মধ্যে ৪ দিনই সূচক কমেছে। একই সঙ্গে লেনদেনও ধারাবাহিকভাবে কমেছে। সপ্তাহের প্রথম দিনে সূচক ৪৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪১৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এদিন লেনদেন হয় ৬১৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দিনে সূচক ১৬৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ২৫৩ পয়েন্টে। এদিন লেনদেন হয় ৫৩৮ কোটি টাকা। তৃতীয় দিনেও সূচক বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল। এদিন সূচক ৯৬ পয়েন্ট কমে ও লেনদেন কমে দাঁড়ায় ৪০৭ কোটি টাকায়। চতুর্থ দিনে বাজারে কিছুটা স্বস্তিকর বাতাস দেখা যায়। এদিন সূচক ৬৫ পয়েন্ট বাড়ে তবে লেনদেন কমে দাঁড়ায় ৪০৫ কোটি টাকায়। সপ্তাহের শেষ দিনে এসে সূচক ১০৭ পয়েন্ট কমে এবং লেনদেন কমে দাঁড়ায় ৩২৭ কোটি টাকায়। সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে মোট আর্থিক লেনদেন হয় ২ হাজার ২৯৫ কোটি ৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৪৫৯ কোটি ৮২ লাখ ৮১ হাজার ৫৫৩ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ৩৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটিগরির কোম্পানিগুলোর লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৯০ কোটি ৪৫ লাখ ৩ হাজার টাকা ও ‘বি’ ক্যাটিগরির কোম্পানিগুলোর লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৭৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৫৯ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ৬০২ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৬৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিদিনের লেনদেনের হার কমেছে ৩৩.৬৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে ২৭২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১৯টির, কমেছে ২৪৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪টির। আগের সপ্তাহে ডিএসই’র সাধারণ সূচক ছিল ৫ হাজার ৪৬৭ পয়েন্টে। গত সপ্তাহে তা ৩৫২.৫১ পয়েন্ট বা ৬.৪৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৬৭ পয়েন্টে।
No comments