‘ভোটের আগে জনগণই রাজা, আমরা প্রজা’
স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটের আগে জনগণই রাজা। আমরা প্রজা। কাজেই দুর্নীতি করলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের ৫৩তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের নির্বাচনে বেশির ভাগ সময়ই ভোট চুরি ও কারচুপির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এবার এমন এক যন্ত্র (ইভিএম) চালু হয়েছে যে কেউ কারও ভোটে সিল মেরে নিজের নামে নিতে পারবে না। এ জন্য তিনি প্রকৌশলীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, চিকিৎসক, প্রকৌশলী সবারই বেতন হয় জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে সীমিত সম্পদ দিয়েই অনেক বেশি মানুষের সেবা করা সম্ভব। তিনি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, আমি আশা করি আমাদের প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদগণ এ বিষয়ে আরও গভীর মনোযোগ দেবেন। আইইবি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের রাস্তাঘাট, সেতু, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বাড়িঘর, মিল-কারখানা ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের দায়িত্ব প্রকৌশলীদের এবং আপনাদের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ অর্থ ব্যয় হয়। এসব কাজের গুণগত মান বজায় রাখা ও রাষ্ট্রের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রকৌশলীদের দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততার ওপর নির্ভর করে। প্রধানমন্ত্রী স্বল্প খরচে টেকসই যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা নির্মাণ এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বিকল্প জ্বালানি ও জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন এবং স্বল্প ব্যয়ে বাড়িঘর নির্মাণ কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর জোর দেন। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও শস্য সংরক্ষণে উন্নত পদ্ধতি গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়। তিনি এ অপচয় হ্রাসের উপায় খুঁজে বের করতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রযুক্তি বিশেষ করে নদী ভাঙন রোধ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে প্রকৌশলীদের মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। আইইবি সভাপতি প্রকৌশলী নূরুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আইইবি সভাপতি নূরুল হুদা প্রধানমন্ত্রীর হাতে আইইবি’র ৫৩তম সম্মেলনের ক্রেস্ট তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ উন্মোচন করেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কয়েকটি দ্রুত ও বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করায় গত তিন বছরে জাতীয় গ্রিডে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, কোন দেশই তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রেখে এগিয়ে যেতে পারে না। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হিসেবে ‘ভিশন টুওয়ার্ডস রিজিওনাল কানেক্টিভিটি’ নির্বাচন করায় তিনি আইইবি’র প্রশংসা করেন। অব্যাহত গণতান্ত্রিক অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া কোন দেশই তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না এবং জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কে ক্ষমতায় যাবে, আর কে যাবে না। তিনি বলেন, ‘সামরিক ও সেনা-সমর্থিত সরকারের শাসনের কারণে দেশের গণতন্ত্র বারংবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ২০১১ সালে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১২ প্রকৌশলীকে পদক ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন।
No comments