গ্রিসের রাস্তায় পরিত্যক্ত কোলের শিশু



মানবজমিন ডেস্ক: দেশের অর্থনীতির দুরবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে অবশেষে কোলের শিশুকে বাবা-মায়েরা এবার গ্রিসের রাস্তায় ফেলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সন্তানের ভরণ-পোষণ করতে ব্যর্থ হয়ে এখন গ্রিসের বিভিন্ন পরিবারের পিতামাতারা এ পথ বেছে নিয়েছেন বলে ডেইলি মেইল এক রিপোর্টে জানিয়েছে। ইউরো সংকটের মানবিক বিপর্যয়ের এটাই প্রথম নিদর্শন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি গ্রিসে ওষুধ সংকটও দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানে এসপিরিনের মজুত শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে বলে ফার্মাসিস্টরা জানিয়েছেন। এথেন্সের আর্ক অব দি ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ সেন্টার জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে তাদের দরজায় চারটি পরিত্যক্ত শিশু পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একটি নবজাতকও ছিল। সংস্থাটি দাবি করেছে, তাদের কাছে দুই বছরের শিশু নাতাশাকে গুঁজে দিয়েই তার মা দৌড়ে পালিয়েছে। আর চার বছর বয়সী অ্যানাকে যখন পাওয়া গিয়েছিল তখন তার সঙ্গে একটি ছোট বার্তাও ছিল। তাতে লেখা ছিল: আমি আজ আর অ্যানাকে নিতে আসব না। কারণ, আমি আর তার ভরণ পোষণের খরচ জোগাড় করতে পারছি না। দয়া করে ওর দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। আরেক মা মারিয়া চাকরি হারিয়ে আট বছরের অ্যানাস্টেশিয়াকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নতুন করে কাজের সন্ধান করছিলেন। কিন্তু কোথাও কোন ব্যবস্থা করতে না পারায় তিনি এ কাজ করতে বাধ্য হযেছেন। এতদিন তিনি মেয়েকে রেখে গির্জায় বিলানো খাবার জোগাড় করে মেয়ের খাবার জোগাড় করলেও এখন তিনি সেটাও পারছেন না। তিনি বলেছেন, প্রতি রাতেই বাড়িতে আমি একা একা কাঁদি। কিন্তু আমি আর কি করতে পারি? আমার হৃদয় ভেঙে খান খান হয়ে যায়। কিন্তু এছাড়া আমার সামনে আর কোন পথই খোলা ছিল না। আর্ক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্টোনিওস পাপানিকালাউ বলেছেন, গত বছর থেকেই শত শত বাবা-মা তাদের সন্তানকে আমাদের কাছে রেখে যেতে চাইছেন। তারা বলছেন, সন্তানের জন্য তারা প্রয়োজনীয় অর্থ, আশ্রয় বা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। তারা আশা করছেন এসব সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা হয়তো আমরা করতে পারবো। গ্রিসে এখন প্রয়োজনীয় ওষুধের অপর্যাপ্ততাও সেখানকার অর্থনৈতিক দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরছে।
 সরকার ওষুধের দাম কমিয়ে দেয়ায় কোম্পানিগুলো বেশি দামে দেশের বাইরে সেগুলো বিক্রি করছে। আর সংকট সৃষ্টি হচ্ছে দেশের বাজারে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ওষুধের দোকানগুলোকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে ইউরোপের সিনিয়র ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গ্রিসে বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার অগ্রগতিও খুব একটা সন্তোষজনক নয়। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে, ইউরো জোনের সরকারদের সাহায্যের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.