তিন দিনেই শেষ!

ন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের যখন অভিষেক হয়েছিল তখন জন্মও হয়নি নিউ সাউথ ওয়েলসের মিচেল স্টার্কের। ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন শচীনের অভিষেক হয়েছিল তার ঠিক ৬৫ দিন পর জন্ম নিয়েছিলেন স্টার্ক। ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ২১ বছর ৩৪৯ দিন। শচীন এখনও ক্রিকেট ছাড়েননি। মিচেল স্টার্কও এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায়।


শচীনের তুলনায় মিচেল স্টার্ক এখনও বলা যায় একেবারে 'পুঁচকে'। পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে কাল সেই 'পুঁচকে' ছেলেটার বলেই বোকার মতো এলবিডবি্লউ হয়ে ফিরে গেলেন শচীন। শততম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বপ্ন বিসর্জন দেওয়াই নয় শুধু, একই সঙ্গে ভারতীয়দের ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায় ফেলে দিয়ে মাত্র ৮ রানে ফিরলেন শচীন। স্বাগতিকদের চাইতে এখনও ১২০ রান পিছিয়ে ভারত। হাতে আছে মাত্র ৬ উইকেট এবং পুরো তিনটি দিন।
রাহুল দ্রাবিড় আর বিরাট কোহলি কতটুকু স্বপ্ন দেখাতে পারেন ভারতীয় সমর্থকদের? ৫১ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দু'জন মিলে যে জুটি গড়ে তুলেছেন সেটার বয়স মাত্র ৩৭ রানের। শেষ বিকেলে অসি পেসারদের চোখ রাঙানি সহ্য করে তারা যে ৭৭ বল (১২.৫ ওভার) মোকাবেলা করলেন তাতে অন্তত ইনিংস হার এড়ানোর স্বপ্ন তো দেখতে পারে ভারত! তবে কঠিন সময়টা অপেক্ষা করছে আজ। ওয়াকায় সকালের শিশির ভেজা উইকেটে সিডল, স্টার্ক, হ্যারিস কিংবা হিলফেনহাসদের কতক্ষণ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন দ্য ওয়াল আর কোহলি, তা এখনও প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। সব মিলিয়ে পার্থ টেস্টেও যে ভারত হারছে এবং এক ম্যাচ হাতে রেখেই যে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জিতে নিচ্ছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত।
আজ যখন দ্রাবিড় আর কোহলি ৮৮ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামবেন, তখন টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু হবে মাত্র। কাল শেষ বিকেলে যেভাবে ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ চারজন আউট হয়েছেন, তাতে আজই টেস্ট শেষ হয়ে যায় কি-না সেটাও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসের চাইতে এখনও ১২০ রান পিছিয়ে ভারত। হাতে আছে আর মাত্র ৬ উইকেট। এর মধ্যেই যদি অল আউট হয়ে যায় ধোনি অ্যান্ড কোং তাহলে ইনিংস ব্যবধানে চরম পরাজয়ের লজ্জা বরণ করতে হবে। কিছু লিড দিলেও স্বাগতিকদের সামনে সেটা বড় কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারবে না। আর যদি টেস্টকে শেষ দিন পর্যন্ত টেনে নিতে হয়, তাহলে দ্রাবিড় আর কোহলিকেই বড় দুটি ইনিংস খেলে দেখাতে হবে। চার অসি পেসারের রুদ্রমূর্তি উপেক্ষা করে কতক্ষণ তারা টিকতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।
সিডনি টেস্ট শেষ হওয়ার পরই অস্ট্রেলিয়ার কোচ মিকি আর্থার মন্তব্য করেছিলেন, 'আমাদের হাতেই রয়েছে বর্তমান বিশ্বের সেরা বোলিং অ্যাটাক।' কথাটা সম্ভবত মিথ্যা বলেননি। বরং প্যাটিনসন, প্যাট কামিন্স, মিচেল জনসনরা যদি ইনজুরিতে না পড়তেন তাহলে অসি টিম ম্যানেজমেন্টকে মহাবিপদে পড়তে হতো সেরা একাদশে পেসার নির্বাচন নিয়ে। কাকে বাদ দিয়ে কাকে নেবেন তারা? এ যেন পেসারদের মিছিল। পার্থের গতিময় উইকেট বলে স্পিনার নাথান লিয়নকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছে তরুণ পেসার মিচেল স্টার্ককে। সেই স্টার্কই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন স্বাগতিকদের। ২০৮ রানের লিড নেওয়ার পর ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে আগুন ঝরিয়েছেন তো তিনিই। গম্ভীর আর শচীনের মতো মূল্যবান দুটি উইকেট দখল করেছেন মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলা স্টার্ক। বাকি দুটি নিয়েছেন হিলফেনহাস এবং সিডল। ভিভিএস লক্ষ্মণ আবারও আউট হলেন রানের খাতা না খুলেই।
ভারতকে প্রথম দিন ১৬১ রানে অল আউট করে দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ১৪৯ রান। দু'ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর এড কাওয়ান মিলে যে দেয়াল গড়ে তুলেছিলেন তাতে কাল দিনের শুরুতেও চিড় ধরাতে পারেননি ভারতীয় পেসাররা। ২১৪ রানের জুটি গড়ার পরই তারা বিচ্ছিন্ন হন উমেশ যাদবের বলে। এরপর বাকি ১৫৫ রানে অল আউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে কিছুটা দুর্ভাগ্য বলতে হবে ওয়ার্নারের জন্য। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় গিয়ে মাত্র ২০ রান দূরে থাকতে আউট হয়েছেন তিনি। ১৫৯ বলে তার ১৮০ রানের ইনিংস সাজানো ছিল ২০টি চার আর ৫টি ছক্কায়। পরের ব্যাটসম্যানরা শুধু আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন। উমেশ যাদব ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো দখল করলেন ৫ উইকেট।

No comments

Powered by Blogger.