চলচ্চিত্র রক্ষায় ঐক্যের আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার: সমগ্র চলচ্চিত্রের প্রতি সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি সাঈদুর রহমান সাঈদ। বুধবার সন্ধ্যায় বিনোদন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি ‘আমরাই আমাদের সঙ্কট’ দাবি করে চলচ্চিত্র নামক ডুবন্ত জাহাজকে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্যে টেনে তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট বিনোদন সাংবাদিক কাহিনীকার আহমদ জামান চৌধুরী, সাংবাদিক পরিচালক রফিকুজ্জামান ও পরিচালক চিত্র সম্পাদক আবু মুসা দেবু উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের উদ্দেশে অসংখ্য হিট সুপার হিট ছবির পরিচালক সাঈদুর রহমান সাঈদ বলেন, চলচ্চিত্রের সঙ্গে আমার ৪০ বছরের সম্পর্ক। প্রযোজনা-পরিচালনা ছাড়াও চলচ্চিত্রের সুদিন-দুর্দিনে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমি নিজেকে খুঁজে পেতাম। এখনও পাচ্ছি। চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাহী সদস্য থেকে পরিচালক সমিতির সহসভাপতি এবং সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছি। চলচ্চিত্রের সুসময় দেখেছি। অতিক্রম করে এসেছি এর প্রাণোচ্ছল রমরমা দিনগুলো। আজ পরিচালক সমিতির নির্বাহী সদস্য হিসেবে চলচ্চিত্রের দুঃসময়কে বিশ্লেষণ করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি। সাঈদুর রহমান সাঈদ বলেন, কেউ বলেন অশ্লীলতা, কেউ বলেন পাইরেসি, কেউ আবার বলেন প্রেক্ষাগৃহ, আবার অনেক বিদগ্ধজন বলেন, মেধার অভাবই সিনেমাকে সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু আমার উপলব্ধি ভিন্ন। আমি আপনাদের মাধ্যমে বলতে চাই, ‘আমরাই আমাদের সঙ্কট’। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের শিল্পী, কুশলী, পরিচালক, প্রযোজক- সবার মুখেই একটাই সুর, সেটা হতাশার। সিনেমা বুঝি শেষ হয়ে গেল। কিন্তু আমি বলি সিনেমা আছে। সিনেমা থাকবে। এতো বড় একটা সংস্কৃতির অবকাঠামো তিল তিল করে গড়ে ওঠা একটা শিল্পসৌধ সামান্য ক’জন হঠকারী বেনিয়ার অদূরদর্শী ফুঁৎকারে ধসে পড়বে- তা হয় না, হতে পারে না। আমাদের সংস্কৃতির টাওয়ারটি, সিনেমা নামক শিল্পসৌধটি কিসের আঘাতে হেলে পড়েছে? নানাজন নানাভাবে বিশ্লেষণ করবেন। তিনি বলেন, হেলে পড়েছে, এটা সত্যি। তবে সিনেমার এই কাত হয়ে পড়াটাকে সোজা এবং সুসংহত করা কি খুবই কঠিন? সাঈদুর রহমান সাঈদ বলেন, সবার আগে চলচ্চিত্রের কর্মী, কুশলী, শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক- সবার সর্বস্ব শক্তি দিয়ে শিল্পের এই হেলে পড়া সৌধটাকে সোজা করে দাঁড় করাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ একটা প্রচেষ্টা। অথচ আমাদের মাঝে এই ঐক্যটারই বড় অভাব। অশ্লীলতা, পাইরেসি, সিনেমা হল, আকাশ সংস্কৃতি- এসব কিছুর পচা জল আমাদের শিল্পসৌধের ভিতটাকে দুর্বল করে ফেলে দিতে চাইছে। কিন্তু একে পুনর্গঠন, সুসংহত করাও কঠিন কিছু নয়। এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। অথচ আমরা এটাই পারছি না। কে বড়? নেতৃত্ব কে দেবে- এ নিয়েই আমরা নিজেরা যুদ্ধে লিপ্ত। সাঈদুর রহমান সাঈদ বলেন, প্রযোজকদের ভাবনা, তিনি টাকা দেন তিনিই নেতৃত্ব দেবেন। শিল্পীদের ভাবনা ওদের জন্যই প্রেক্ষাগৃহ দর্শকমুখর হয়। প্রযোজক তার লগ্নি ফিরে পান। তারাই বা কম কিসে। আবার ক্যামেরাম্যান মনে মনে ভাবছে তারাই তো সব। গিল্ডের সম্পাদকের কথা, সিনেমা তো টেবিলেই তৈরি হয়। আর পরিচালক তো ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ। আসলে আগে কেন আমরা এই প্রতিযোগিতাতেই দৌড়াচ্ছি। সবাই মুখে বলেন, পরিচালকরাই ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’। আর ওই শিপ বা জাহাজের মালিক প্রযোজক। সুতরাং তার কমান্ডই আগে। কিন্তু ডুবন্ত জাহাজকে ভাসমান রাখবে কে? নিশ্চিতভাবেই তার ক্যাপ্টেন। এটাই যদি সত্যি হয় তাহলে তার ক্যাপ্টেনসিটা মেনে নিতে বাধা কোথায়? লাভবান তো প্রযোজকরাই হবেন। আপনার ক্রুরাও বেঁচে যাবেন। তিনি বলেন, আজ জাহাজে অনেক ফুটো। টগবগ করে পানি উঠছে। মাস্তুল হেলে পড়েছে। আসুন না সবাই মিলে ক্যাপ্টেনকে অনুসরণ করি। তার পেছনে দাঁড়িয়ে সব হাত একত্রিত করে জাহাজটিকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করি।
No comments