বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ঃ দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হবে কি?


ত্রুর মুখে ছাই দিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণচাঞ্চল্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন। দেশের সব প্রান্ত থেকে আসা দলীয় কাউন্সিলর, ডেলিগেট, কর্মী, সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি ছাড়াও দেশি-বিদেশি অতিথিদের সমাগমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য রূপ পেয়েছিল।
মনে হচ্ছিল, যেন এক-এগারো পরবর্তী সময়ের ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতার রেষ কাটিয়ে উঠে বিএনপি এতদিন পর আপন সত্তা ফিরে পেয়েছে। নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বাঁধভাঙা উত্সাহে গোটা দল যেভাবে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে, এ চেতনা ধরে রাখতে পারলে বিএনপির নতুন অগ্রযাত্রা গতকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে বলে অনায়াসে ধরে নেয়া যায়।

বিএনপির এবারের জাতীয় কাউন্সিলের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তৃণমূল স্তর থেকে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করার ছাড়পত্র পেয়েছেন কাউন্সিলররা। এই জটিল ও দুরূহ কাজটি সর্বাঙ্গসুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায়নি একথা ঠিক। কোথাও কোথাও কোন্দল প্রকট রূপ নিয়ে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের জন্য এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তারপরও এতবড় একটা রাজনৈতিক সংগঠনের অধিকাংশ জেলা কমিটির নির্বাচন যে সম্পন্ন করা গেছে, সে সাফল্যকেও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সর্বোপরি জেলায় জেলায় নেতৃত্বের সামনে আসার তীব্র প্রতিযোগিতা প্রমাণ করে, নানান বিপর্যয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন বলে যে গল্প বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তা মোটেও সত্য নয়। এ পটভূমিতে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের প্রশ্নাতীত সাফল্য সব ধরনের মালিন্য ঝেড়ে ফেলে দলটির সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
দলের চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার দিকনির্দেশনামূলক ভাষণে পূর্বাপর বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় হওয়ার জন্য নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। এক-এগারোর আগে রাজধানীর রাজপথে লগি-বৈঠার তাণ্ডব, এক-এগারোয় রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনতাই, তার নিজের ওপর, তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও কোকোর ওপর এবং দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর নেমে আসা নারকীয় অত্যাচারের জীবন্ত বর্ণনা যখন তিনি আপন বাচনভঙ্গিতে দিচ্ছিলেন, তখন গোটা সভাস্থলে স্তব্ধতা নেমে এসেছিল। অবশ্য রাজনৈতিক অমানিশার সেই অন্ধকার সময়ে বেগম জিয়ার অকুতোভয় ভূমিকা গণতন্ত্রের রাহুমুক্তিতে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল তার স্মৃতিচারণ তিনি যখন আবেগঘন কণ্ঠে করছিলেন তখন গোটা সভাস্থল চোখের জলে, করতালির ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে। ব্রিটেনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ভিডিও রেকর্ড করা ভাষণ প্রচার ছিল অধিবেশনে উপস্থিত সবার জন্য এক বড় পাওনা। বিদেশি অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে এ বাস্তবতা ফুটে উঠেছে, দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিএনপি বন্ধুহীন নয়। এই উদ্দীপনা, এই প্রাণচাঞ্চল্য এবং এই আস্থার প্রতিদান বিএনপি নেতৃত্ব কীভাবে দেবে সেটাই এখন দেখার।

No comments

Powered by Blogger.