নেট জিওতে একদিন by শেখ রোকন
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওয়েবসাইটের চমৎকার সব আলোকচিত্র দেখে এমনিতেই মন ভরে যায়। গতকাল (১৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশি ভিজিটরদের গর্বও হবে। সাইটটিতে 'ফটো অব দ্য ডে' নির্বাচিত হয়েছে বান্দরবান এলাকার একটি আলোকচিত্র। ঘন সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ ও কুয়াশার পটভূমিতে কয়েকটি সোনালি চূড়া। পাহাড় ভরা পাকা জুম ধান রোদ পড়ে আরও সোনালি হয়ে উঠেছে।
ক্ষত-বিক্ষত, ন্যাড়া, ধূসর উচ্চভূমি দেখে অভ্যস্ত চোখ প্রথম দফায় ধাক্কাই খেতে পারে। প্রশ্নও জাগে_ এমন একটি মুহূর্ত ক্যামেরার কারসাজিতে স্থায়ী করে তুলতে আলোকচিত্রী এম ইউসুফ তুষার কতটা সময় ও শ্রম দিয়েছেন? খরচ যাই হোক, তা সার্থক।
বলাবাহুল্য নয়, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের বাংলাদেশি দর্শনার্থী যদি এর 'এনভায়রনমেন্ট' সেকশন পরিদর্শন করেন, আরও একটি চমৎকার ছবি দেখতে পাবেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদীর উৎস অংশের যে আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে, তা দেখতে অনেকটা ফুলের মতো। মনে হতে পারে, কেউ যেন বালিতে চমৎকার ফার্ন গাছ এঁকেছেন। মনে হতে পারে আরও অনেক কিছু। বলে না দিলে কারও পক্ষে ধরা কঠিন যে, এটি একটি শক্তিশালী নদীর ছবি। প্রকৃতি কীভাবে বিরাট পটভূমিতে নিজেকে সাজিয়ে তোলে_ এই স্যাটেলাইট ইমেজ তার নজির। নজির মানুষের প্রকৃতিবিনাশী কার্যক্রমেরও।
কলোরাডো নদীর অদ্ভূত সুন্দর ছবিটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক প্রকাশ করেছে একটি প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে। সেখানে বলা হচ্ছে, সারা দুনিয়ার আটটি শক্তিশালী নদী শুকিয়ে যেতে বসেছে মাত্রাতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে। সঙ্গে ধুঁকতে থাকা ওই আট নদীর 'ভয়ঙ্কর সুন্দর' আলোকচিত্র। ওই প্রতিবেদনে কলোরাডো ছাড়াও স্থান পেয়েছে পাকিস্তানের সিন্ধু নদ, সাবেক সোভিয়েত অঞ্চলের আমু দরিয়া নদী, উজবেক অঞ্চলের সির দরিয়া নদী, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত রিও গ্রান্ডে, চীনের ইয়েলো নদী, অস্ট্রেলিয়ার মারে নদী এবং আমাদের তিস্তা।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উদ্ভূত হয়ে ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ এবং আমাদের রংপুর অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারীর কাছে ব্রহ্মপুত্রে পতিত ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ 'প্রমত্তা' তিস্তার অপুষ্টিতে ভোগা আলোকচিত্রটি দেখে বেদনাই জাগে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সময় সিকিমের প্রাণপ্রবাহ হিসেবে পরিচিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেচ ও অন্যান্য কাজে এতটাই ঠেসে ধরা হয়েছে যে, খোদ নদীটিরই প্রাণ যায় যায়। তিস্তার ওপর নির্ভরশীল জেলেরা হয়তো খুব বেশিদিন মাছ পাবে না, কৃষিকাজের পানি পাবে না তীরবর্তী হাজার হাজার কৃষক। তা সত্ত্বেও ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীটিতে আরও এক সারি আড়িবাঁধ দিতে যাচ্ছে। ভূতাত্তি্বকরা হুশিয়ার করে দিয়েছেন, এর ফলে ভূমিকম্পপ্রবণ ওই অঞ্চলে বড় ধরনের ওলটপালট হয়ে যেতে পারে।
এমন খবর প্রকাশ নদীগুলোর ব্যাপারে মানুষকে খানিকটা হলেও যে ভাবিয়ে তুলবে_ তাতে সন্দেহ নেই। কেবল তিস্তা কিংবা কলোরাডো নয়, আমাদের চারপাশের ছোট ছোট নদীও কি একইভাবে মানবিক আগ্রাসনের মুখে পড়েনি? এসব নদীকে যদি নদীর মতো থাকতে দেওয়া যায়, তাতে আর কিছু না হোক, কোনো একদিন একটা সুন্দর ছবি হয়তো ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতো মাধ্যমে ছাপা হতে পারে। তিস্তার মতো বেদনা নয়, বান্দরবানের সোনালি পাহাড়ের মতো গর্বমিশ্রিত মুগ্ধতাই জাগিয়ে রাখবে দিনভর।
skrokon@gmail.com
বলাবাহুল্য নয়, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের বাংলাদেশি দর্শনার্থী যদি এর 'এনভায়রনমেন্ট' সেকশন পরিদর্শন করেন, আরও একটি চমৎকার ছবি দেখতে পাবেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদীর উৎস অংশের যে আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে, তা দেখতে অনেকটা ফুলের মতো। মনে হতে পারে, কেউ যেন বালিতে চমৎকার ফার্ন গাছ এঁকেছেন। মনে হতে পারে আরও অনেক কিছু। বলে না দিলে কারও পক্ষে ধরা কঠিন যে, এটি একটি শক্তিশালী নদীর ছবি। প্রকৃতি কীভাবে বিরাট পটভূমিতে নিজেকে সাজিয়ে তোলে_ এই স্যাটেলাইট ইমেজ তার নজির। নজির মানুষের প্রকৃতিবিনাশী কার্যক্রমেরও।
কলোরাডো নদীর অদ্ভূত সুন্দর ছবিটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক প্রকাশ করেছে একটি প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে। সেখানে বলা হচ্ছে, সারা দুনিয়ার আটটি শক্তিশালী নদী শুকিয়ে যেতে বসেছে মাত্রাতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে। সঙ্গে ধুঁকতে থাকা ওই আট নদীর 'ভয়ঙ্কর সুন্দর' আলোকচিত্র। ওই প্রতিবেদনে কলোরাডো ছাড়াও স্থান পেয়েছে পাকিস্তানের সিন্ধু নদ, সাবেক সোভিয়েত অঞ্চলের আমু দরিয়া নদী, উজবেক অঞ্চলের সির দরিয়া নদী, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত রিও গ্রান্ডে, চীনের ইয়েলো নদী, অস্ট্রেলিয়ার মারে নদী এবং আমাদের তিস্তা।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উদ্ভূত হয়ে ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ এবং আমাদের রংপুর অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারীর কাছে ব্রহ্মপুত্রে পতিত ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ 'প্রমত্তা' তিস্তার অপুষ্টিতে ভোগা আলোকচিত্রটি দেখে বেদনাই জাগে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সময় সিকিমের প্রাণপ্রবাহ হিসেবে পরিচিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেচ ও অন্যান্য কাজে এতটাই ঠেসে ধরা হয়েছে যে, খোদ নদীটিরই প্রাণ যায় যায়। তিস্তার ওপর নির্ভরশীল জেলেরা হয়তো খুব বেশিদিন মাছ পাবে না, কৃষিকাজের পানি পাবে না তীরবর্তী হাজার হাজার কৃষক। তা সত্ত্বেও ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীটিতে আরও এক সারি আড়িবাঁধ দিতে যাচ্ছে। ভূতাত্তি্বকরা হুশিয়ার করে দিয়েছেন, এর ফলে ভূমিকম্পপ্রবণ ওই অঞ্চলে বড় ধরনের ওলটপালট হয়ে যেতে পারে।
এমন খবর প্রকাশ নদীগুলোর ব্যাপারে মানুষকে খানিকটা হলেও যে ভাবিয়ে তুলবে_ তাতে সন্দেহ নেই। কেবল তিস্তা কিংবা কলোরাডো নয়, আমাদের চারপাশের ছোট ছোট নদীও কি একইভাবে মানবিক আগ্রাসনের মুখে পড়েনি? এসব নদীকে যদি নদীর মতো থাকতে দেওয়া যায়, তাতে আর কিছু না হোক, কোনো একদিন একটা সুন্দর ছবি হয়তো ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতো মাধ্যমে ছাপা হতে পারে। তিস্তার মতো বেদনা নয়, বান্দরবানের সোনালি পাহাড়ের মতো গর্বমিশ্রিত মুগ্ধতাই জাগিয়ে রাখবে দিনভর।
skrokon@gmail.com
No comments