সেচের জ্বালানি-কৃষির স্বার্থ সবার ওপরে
আসন্ন 'সেচ মৌসুমে জ্বালানি তেল নিয়ে বিপাকে সরকার'_ শনিবার সমকালের এ শীর্ষ প্রতিবেদনে উদ্ব্বেগ স্পষ্ট। বোরো মৌসুমের উৎপাদন থেকে মেটানো হয় খাদ্যশস্যের চাহিদার বড় অংশ। শীত শেষ হতে না হতেই শুরু হয় সেচনির্ভর বোরো ধানের চাষ। জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্নের কারণে এ ধানের উৎপাদনে যেন সমস্যা সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ মনোযোগ থাকতেই হবে। প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাহত হলে তার প্রতিক্রিয়া হবে নানামুখী।
বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে খাস্যশস্যের বাজারে অস্থিরতার কথা। আমাদের কৃষকরা দেশের খাদ্যশস্য চাহিদার প্রায় সবটাই জোগান দেন। এজন্য প্রয়োজন সার, সেচ, কীটনাশক ও উপকরণ সুবিধা। এর সরবরাহ যে কোনো মূল্যে নির্বিঘ্ন রাখা চাই। এটা জানা যে সেচের যন্ত্র চালাতে চাই ডিজেল ও বিদ্যুৎ। বোরো চাষের মৌসুমেই গরম বাড়তে থাকে এবং স্বভাবতই বাড়ে বিদ্যুতের চাহিদা। গত তিন বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে এবং এজন্য সর্বমহল থেকে সরকার সাধুবাদ পেয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় জোগানে এখনও ঘাটতি। তাছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার জন্য চাই প্রচুর পরিমাণ ডিজেল। আবার এই জ্বালানি চাই সেচযন্ত্র চালানোর জন্যও। বোরো মৌসুমে ধান চাষের সেচের জন্যও বিদ্যুতের বিশেষ ব্যবস্থা করতে হয়। এই বহুমুখী চাহিদার কারণে বাড়ে লোডশেডিং। গরমে পাখা ও এয়ারকন্ডিশন্ড মেশিন না চললে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, এটা সরকারের অজানা নয়। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত কৃষি খাতে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৮ লাখ টন। একই সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য প্রয়োজন আরও সাড়ে তিন লাখ টন জ্বালানি। দুই খাত মিলিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের জ্বালানি তেল প্রয়োজন পড়ে ১১ লাখ টনেরও বেশি। এর বাইরেও এই সময়ের জন্য রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টন জ্বালানির চাহিদা। এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি আমদানি, মজুদ রাখা এবং চাহিদার স্থানগুলোতে সময়মতো পেঁৗছানো এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। তদুপরি বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য চড়া। ইতিমধ্যেই এ খাতের আমদানি ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে টান পড়েছে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকেও জ্বালানি আমদানির সুযোগ প্রদানের কথা বলা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে তা সম্ভব না হলেও এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালক্ষেপণ না করাই ভালো। মহাজোট সরকারের অনেক মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা ও উদ্যমহীনতা থাকলেও কৃষি খাত সম্পর্কে সেটা বলা যাবে না। আমরা আশা করব, বোরো মৌসুমে সেচ কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহও মোটামুটি নির্বিঘ্ন থাকবে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো কাজেই কিন্তু অবহেলা করা যাবে না। এমনটি ঘটলে তার পরিণতি আমাদের জানা_ বাজারে চালের অগি্নমূল্য ঘটবে, কৃষক-দিনমজুরদের একটি অংশের কাজের সুযোগ হ্রাস পাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আরও টান ফেলিয়ে খাদ্য আমদানি বাড়বে। অতীতে একাধিকবার এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতি সরকারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে, যার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এর পুনরাবৃত্তি কেউ চায় না।
No comments