বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল ও জনপ্রত্যাশা by মাহফুজ উল্লাহ
দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও অনিশ্চয়তা শেষে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৫ম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন। দীর্ঘ প্রতীক্ষা এই কারণে যে, সর্বশেষ কাউন্সিল অধিবেশন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। সে সময় দলটি ক্ষমতায় ছিল। পরবর্তী সময়ে বিরোধী দলে থেকে উপেক্ষিত হওয়ার ও মর্যাদাবঞ্চিত হওয়ার বেদনাও উপলব্ধি করেছে।
কিন্তু গত ষোল বছরের মধ্যে দুই বছরের অনিয়মতান্ত্রিক সরকারের সময়টুকু বাদ দিলে বাকি চৌদ্দ বছরে দলটি কাউন্সিল অধিবেশনের আয়োজন করেনি। এ বিষয়ে দু’রকমের মত আছে—কেউ বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কাউন্সিলের আয়োজন করা হয়নি। আবার কেউ মনে করেন, কাউন্সিল করার মতো প্রয়োজনীয় সংগঠিত সাংগঠনিক শক্তি ছিল না। এ তো গেল প্রতীক্ষার কথা। অপরদিকে অনিশ্চয়তার বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য। বর্তমান বছরের প্রায় পুরোটা সময় ধরে দলটি বিভিন্ন পর্যায়ে আত্মসমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। কর্মীরা অতীতকে মূল্যায়নের সুযোগ পেয়েছেন। পেয়েছেন হতাশা ও উষ্মা প্রকাশের অধিকার। অপরদিকে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর পুলিশি অনুমতি, সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা ও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে সঙ্কটের সম্ভাবনার কারণে নির্ধারিত তারিখে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল। নেতাদের অনেকেই ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তাদের সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে দলের চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার নিশ্চিত ঘোষণার পর অনিশ্চিতির মেঘ কেটে যায়।
জাতীয় কাউন্সিল একটি রাজনৈতিক দলের জীবনীশক্তির বহিঃপ্রকাশ। একটি দল যে নির্জীব দল নয় কাউন্সিল তা প্রমাণ করে। বাংলাদেশে অবশ্য এই বক্তব্য পুরোপুরি প্রযোজ্য নয়। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত না হলেও এ দল দুটির জীবনীশক্তির কোনো ঘাটতি ছিল না। অবশ্য বাংলাদেশে অনেক নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল আছে যাদের কাউন্সিল করার মতো ক্ষমতা নেই অথবা থাকলেও সেটা এতই সীমিত আকারের যে তা জাতীয় জীবনে কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। শুধু সংবাদপত্রের পাতায় পাঠক তার উপস্থিতি টের পায়। কিন্তু যে দুটি দল ১৯৯১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেশ শাসন করে আসছে তাদের সম্মেলন এক বিরাট কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়। সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হলেই রাতারাতি প্রাণস্পন্দন ফিরে আসে কর্মীদের মনে।
দলের কাউন্সিল বা সম্মেলনে দলের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন যেমন হয় তেমনি কর্মীরাও বিনিময় করতে পারে ভাবের। সেখানে বসে প্রাণের মেলা। সারা দেশের কর্মীরা একসঙ্গে এসে প্রায় সব নেতার সান্নিধ্য লাভ করেন, যা কর্মীদের অনেক সময় সুযোগ হয় না। অপরদিকে নেতৃবৃন্দও কর্মীদের চিন্তার জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। তবে অতীতে যেভাবে একটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতো অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সে ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। মাত্র এক দিনের সময়সীমার মধ্যে জাতীয় কাউন্সিলকে সীমাবদ্ধ রাখা একটু অবাক করা বিষয় মনে হয়। কারণ, দিনের একটা বিরাট অংশ চলে যায় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে। বাকি যে সময়টুকু থাকে তা কাউন্সিলরদের মত প্রকাশ বা আলাপ-আলোচনার জন্য যথেষ্ট নয়। দলের নেতৃবৃন্দ সেটা জানেন এবং এ কারণেই অনেক সিদ্ধান্ত এককেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। বিএনপির রাজনীতির একটি বড় প্রবণতা হচ্ছে তা বহু থেকে একে গিয়ে শেষ হয়, এক থেকে বহুতে প্রবাহিত হয় না।
জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও এর বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই কোন্দলের একটি নগ্ন চেহারা টেলিভিশন দর্শকরা প্রত্যক্ষ করেছেন। এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এমন একটি বড় দলের নেতৃত্বে যাওয়ার জন্য অনেকেই উত্সাহী হবেন—এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে একটি ছোট ক্লাব বা স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়েও প্রচুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। ব্যয় হয় প্রচুর অর্থ। আর সেখানে একটি বড় দলের কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য আগ্রহ থাকাটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। নিয়মিত কাউন্সিল হলে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে যে জট বেঁধেছিল তা কেটে যেত। এটা সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রযোজ্য। সাধারণভাবে, নেতৃত্বকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে—অগণতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক। নির্বাচনের মাধ্যমে অপরের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের মধ্য দিয়ে অগণতান্ত্রিক নেতৃত্ব তৈরি হয় না। বিভিন্নভাবে এর উত্পত্তি ঘটতে পারে। অনেক সময় অগণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের মতো প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা লাভ করে। অগণতান্ত্রিক নেতৃত্বে অনেক সামাজিক নেতাকেও প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যায়। অপরদিকে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের উত্পত্তি হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। যারা এদের নির্বাচিত করেন তাদের কাছে এই নেতৃত্ব দায়বদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে বড় দুটি দলের নেতৃত্বের মধ্যে অগণতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক এই উভয় প্রক্রিয়ার এক আশ্চর্য সম্মিলন ঘটেছে। দুটি দলের দুই প্রধান তাদের আকর্ষণীয় ক্ষমতা ও মোহিনী ব্যক্তিত্ব দিয়ে লাখ লাখ কর্মীকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বন্দি করে রেখেছেন এবং এ প্রবণতা আরও দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির জাতীয় সম্মেলনের কাছে জনপ্রত্যাশা কি? সে বিষয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। এসব প্রশ্নের জবাবের আগে ভিন্ন কয়েকটি বিষয়ের অবতারণা করা উচিত। বিএনপিকে মূল্যায়ন করতে গেলে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে মূল্যায়ন করতে হবে। একটি রাষ্ট্র যখন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা বলে যাত্রা শুরু করে এবং সময়ের বিবর্তনে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন রকমের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত গিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পদদলিত করে তখন বিরোধিতা ও প্রতিবাদের যে বীজ অঙ্কুরিত হয় তা তৈরি করে নতুন রাজনৈতিক ভিত্তির প্রেক্ষাপট। আওয়ামী লীগের ওই সময়ের শাসনামলে সে ঘটনাই ঘটেছিল—যদিও আজ তা লুকিয়ে রাখার এক অদ্ভুত প্রবণতা লক্ষণীয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে তাতে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কয়েকটি বিষয়কে পুঁজি করে হঠাত্ আলোর ঝলকানির মতো নতুন আদর্শের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করে জনগণকে উদ্দীপ্ত করে তোলেন। সমাজের বিভাজনকে দূর করা ও বাস্তবতাকে সর্বজনগ্রাহ্য করার জন্য তিনি দুটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসেন। এর একটি হচ্ছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও অপরটি হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া লিখেছেন, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন শত শত বর্ষ ধরে এ দেশের আপামর জনগণের অন্তরে চির জাগরুক রয়েছে। যুগ-যুগান্তরের দেশপ্রেমিকদের হৃদয়ের মর্মমূলে নিহিত তাদের সর্ব উত্সাহ-উদ্যোগ ও প্রেরণার উত্স এই দর্শন। এই দর্শনে নিহিত রয়েছে বাস্তব আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি যা দেশের ঐক্যবদ্ধ জনগণকে সমকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উপযোগী বাস্তবমুখী ও সময়োচিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংবদ্ধ করবে, জাতিকে সুনিশ্চিতভাবে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে এবং বিশ্ব জাতির দরবারে বাংলাদেশকে মর্যাদা ও গুরুত্বের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে। আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মোটামুটি সাতটি মৌলিক বিবেচ্য বিষয় রয়েছে। তা হচ্ছে বাংলাদেশের ভূমি অর্থাত্ আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যবর্তী আমাদের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক এলাকা, ধর্ম ও গোত্র নির্বিশেষে দেশের জনগণ, আমাদের ভাষা, বাংলা ভাষা, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা-উদ্দীপনা ও আন্তরিকতার ধারক এবং বাহক আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, দু’শত বছরের ঔপনিবেশ থাকার প্রেক্ষাপটে বিশেষ অর্থনৈতিক বিবেচনার বৈপ্লবিক দিক, প্রত্যেকটি নারী ও পুরুষের অবাধে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতিনীতি পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন বাস্তব ও চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে।’ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট জিয়ার এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করে তিনি কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। এই চেতনার কারণেই সেদিন তার নেতৃত্বে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন ব্যাপক জনগোষ্ঠী। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া যায় প্রেসিডেন্ট জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করতে আপত্তি করেছিলেন তাহলে ১৯৭৫ সালে মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে একদলীয় শাসনের প্রবর্তকরাই নিজেদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিয়াবিরোধী আন্দোলনে শরিক হতেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন তৈরি করা সম্ভব হয়নি বলেই সমস্যা তৈরি করা হয়েছিল তার দলের ভেতরে। আরেকটি ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে। বাংলাদেশের জনগণের মনোজগতে আধুনিকতার ছোঁয়া দেয়ার জন্য তিনি যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন পরবর্তী সময়ে তা জনকল্যাণকর হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। জিয়ার বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করে যার প্রায় সবটাই অর্ধসত্য। অপ্রাসঙ্গিকভাবে বক্তব্য উদ্ধৃতি করে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টাও লক্ষণীয়। কিন্তু ইতিহাসের যে ধারা জিয়াউর রহমান তৈরি করে গেছেন সে ধারাই বিএনপির প্রতি বাংলাদেশী জনগণের আনুগত্যকে এতদিন পর্যন্ত লালন করেছে।
বিএনপির বর্তমান কাউন্সিল অধিবেশনকে সামনে রেখে এই আনুগত্যের বিষয়টি নতুন দ্যোতনা নিয়ে মানুষের সামনে এসেছে। যদি প্রশ্ন করা হয় এই কাউন্সিলের কাছে জনগণের প্রত্যাশা কি, তাহলে কয়েকটি সহজ জবাব পাওয়া যাবে। শত সহস্র মানুষের কাছ থেকে এসব প্রশ্নের জবাব আসবে প্রায় অভিন্ন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল সে সময়ে সবচেয়ে বেশি চরিত্র হনন, নির্যাতন ও নিষ্পেষণের শিকার হয়েছে এই দলের নেতা-কর্মী ও অনুগতরা। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান, চেয়ারপার্সনের দ্বিতীয় পুত্র আরাফাত রহমান যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা শুধু অমানবিক নয়, প্রতিহিংসার নির্মম বহিঃপ্রকাশ। রাজনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করলে এর জবাব হচ্ছে, জনসমর্থিত একটি দল, যা রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথা বলে তাকে বিপর্যস্ত করে দেয়া, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
এই কাউন্সিলের মাধ্যমে যদি বিএনপি অত্যাচারিত ও নিগৃহীত হওয়ার জড়তা কাটিয়ে উঠতে না পারে তাহলে ভবিষ্যতে পথচলা অনেক কষ্টকর হবে। এই প্রথম সংখ্যার হিসেবে দলটি রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। অতীতে এমন অবস্থা আর কখনও হয়নি। বিরোধী দলে অবস্থান করলেও সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। বিএনপির দাবি অনুযায়ী ২৯ ডিসেম্বরের সাজানো নির্বাচনে যে বিপর্যয় দলটিকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করেছে সে অবস্থাও কাটিয়ে উঠতে হবে। একটি সজীব, সক্রিয় রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে অভিমানের সুযোগ নেই। এ কারণেই সংসদ অধিবেশনে যোগদান করাও বিএনপির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
কাউন্সিল অধিবেশনের আগে ৫ ডিসেম্বর দলের চেয়ারপার্সন যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ৮ তারিখের পর সবাই এক নতুন বিএনপি দেখতে পাবেন। এ কথা বিএনপির সাধারণ কর্মী ও সমর্থকদের অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। এ বক্তব্য যেভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, তা হচ্ছে, প্রায় প্রত্যেকটি বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দলের নেতৃত্ব পুনর্গঠিত হবে, অপেক্ষাকৃত নবীনরা বয়সের ভারে ন্যুব্জদের স্থান দখল করবেন, দুর্নীতিবাজ হিসেবে অভিযুক্তরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন না, অগণতান্ত্রিক সরকারের আমলে যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছেন তারা ক্ষমার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এ ছাড়াও, জনগণ প্রত্যাশা করে বেগম জিয়া প্রতিহিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলবেন, অতীতমুখী না হয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মতো দেশবাসীকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাবেন ও প্রতিশ্রুতি দেবেন। সর্বোপরি কাউন্সিল অধিবেশনের পর বিএনপির রণনীতি ও রণকৌশলে আসবে মেধা এবং জ্ঞানভিত্তিক এবং বাস্তবায়নযোগ্য পরিবর্তন।
লেখক : পরিবেশবিদ ও সাংবাদিক
No comments