নিজেদের ‘গালফম্যান’ ভাবেন দুবাইয়ের কেরালাবাসী by কাজী আলিম-উজ-জামান
১৮ অক্টোবর রোববার দুপুর একটায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বার দুবাই এলাকায় কান্ট্রি ক্লাব হোটেলে ট্যাক্সিতে যেতে সময় লাগল ১০ মিনিটের মতো। হোটেলে ঢুকে মুখোমুখি হতে হলো এক তরুণ অভ্যর্থনাকারীর। তার বুকে সেঁটে থাকা একটি সুন্দর চাপরাশ, তাতে নাম লেখা—সত্যম। কৃষ্ণবর্ণের যুবক সত্যমের পাশেই কাজ করছেন দুই তরুণী। সবাইকে ভারতীয় মনে হলো। জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল ধারণা সঠিক। সত্যম ও ওই দুই তরুণী কেরালার। তবে তাঁদের একজনের জন্ম দুবাইয়ে।
হোটেলে ফিরে নিজের কক্ষে গিয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিলাম। এর ঘণ্টা দুই পরে লবিতে বসতেই কথা হলো হোটেলের এক বিপণন নির্বাহীর সঙ্গে। দুবাইয়ের ভালোমন্দসহ নানা বিষয়ে আলোচনার পর ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ আসতেই জানা গেল মধ্যবয়সী ওই ভদ্রলোক ছয় বছর ধরে এখানে আছেন এবং তিনিও কেরালার। তিনি জানালেন, চার তারকা ওই হোটেলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপক পর্যন্ত যত কর্মী আছেন, তার ৯০ ভাগ ভারতীয়; যাঁদের প্রায় ৮০ ভাগই আবার কেরালার।
পরদিন একটু সকাল সকাল পোর্ট রশিদের বিপরীতে মিনা রোড হয়ে নিউ গোল্ড সুক সেন্টার ছাড়িয়ে কিছুদূর যেতেই কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষের দেখা মিলল। তাঁরা প্রায় সবাই উপমহাদেশীয়। ভারতেরই বেশি।
১৮ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর—পাঁচ দিন দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারে ২৯তম ‘জিটেক্স টেকনোলজি উইক’-এ যোগদান উপলক্ষে সেখানে অবস্থানকালে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হয়। বর্তমানে সেখানে স্থানীয়দের চেয়ে বিদেশিরা সংখ্যায় বেশি। এদের মধ্যে আবার ভারতের কেরালার মানুষ বেশি।
কেরালা কেন? ভারতের অন্য রাজ্য কেন নয়? এ প্রশ্নের জবাব দিলেন দেরা এলাকার ক্লক টাওয়ারের পাশে অবস্থিত হোটেল ক্যারাভানের সহযোগী ব্যবস্থাপক জুনায়েদ হাসান। তিনি অবশ্য মুম্বাইয়ের মানুষ। তবে গত দুই দশক ধরে দুবাইয়ে আছেন। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। তাঁরা দুবাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বুধবার জুনায়েদ হাসানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপে জানা গেল, কেরালার মানুষ কেবল দুবাইয়ে নয়, মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই আছেন এবং অর্থনৈতিকভাবেও সাবলম্বী। এর কারণ এদেশে এসেই তারা প্রথমে আরবী ভাষা বোঝা ও জানার চেষ্টা করেছে। ভারতের অন্য অঞ্চল থেকে যাওয়া মানুষেরা এটা করেনি। কেরালার মানুষেরাই প্রথম রক্ষণশীল আরবদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করেছে এবং পরবর্তীতে সফল হয়েছে। এ কারণে আজ হোটেল, জুয়েলারি, পরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের উদীয়মান ব্যবসায় তারা পড়ালেখায় ভালো করছেন।
জুনায়েদ হাসানের তথ্যের সূত্র ধরে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং ইন্টারনেটে সংশ্লিষ্ট একাধিক ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা গেল, ‘কেরালা গালফ বুম’ বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। এর অর্থ হলো উপসাগরীয় অঞ্চলে কেরালার লোকজনের সংখ্যাধিক্য। মূলত ১৯৭২ থেকে ১৯৮৩, এই ১১-১২ বছরে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্য থেকে ব্যাপকসংখ্যক মানুষ দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যে যায় কাজের সন্ধানে, এখনো অব্যাহত আছে। ২০০৮ সালে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে কেরালার মানুষ আছে ২৫ লাখ। বছরে তাঁরা ৬৩০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠায়।
মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৩০-এর দশকে জ্বালানি তেলের খনি আবিষ্কৃত হওয়ার পর পঞ্চাশের দশকে কিছু কিছু করে উত্তোলন শুরু হয়। আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ষাট ও সত্তরের দশকে। এ কাজের জন্য অসংখ্য কর্মীর দরকার ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আরব দেশগুলোর তেমন কর্মী না থাকায় তারা বিদেশি শ্রমিকদের জন্য দরজা খুলে দেয়। এ সুযোগটা বেশি করে নেয় ওই সময়ে তীব্র বেকারত্বে জর্জরিত ভারত। এখানে এগিয়ে থাকে কেরালার মাপ্পিলারা। মাপ্পিলারা মুসলমান হওয়ায় তারা মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য বেশি অনুভব করে।
‘রাষ্ট্র পথ তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু কেরালার মানুষ ভাগ্য গড়েছে পরিশ্রম করে।’ বলছিলেন দেরার গোল্ড সেন্টারের এক বিক্রয়কর্মী। ‘আজ কেরালা ভারতের সমৃদ্ধিশালী রাজ্যগুলোর একটি, যেখানে শিক্ষার হার ৯১ শতাংশ, যা ভারতে সর্বাধিক।’ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
তবে দুবাইয়ে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কেরালার লোকদের সমালোচনাও আছে। তাঁরা নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে কারও সহযোগিতা করেন না। আর স্বার্থের জন্য হীন কাজও তাঁরা করতে পারেন—এমন অভিযোগ অনেকে করেছেন।
এসব নিয়ে এখানকার কেরালাবাসী মোটেই চিন্তিত নন। তাঁরা বরং নিজেদের মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দা বা ‘গালফম্যান’ ভাবতে পছন্দ করেন। আকর্ষণীয় আয়ের কারণে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনেক ধনাঢ্য পরিবারে তাঁরা বিয়েও করছেন। আর কেরালার কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে অনেক উপহার মেলে, এমন ধারণা আছে অভিবাসী তরুণদের মধ্যে।
হোটেলে ফিরে নিজের কক্ষে গিয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিলাম। এর ঘণ্টা দুই পরে লবিতে বসতেই কথা হলো হোটেলের এক বিপণন নির্বাহীর সঙ্গে। দুবাইয়ের ভালোমন্দসহ নানা বিষয়ে আলোচনার পর ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ আসতেই জানা গেল মধ্যবয়সী ওই ভদ্রলোক ছয় বছর ধরে এখানে আছেন এবং তিনিও কেরালার। তিনি জানালেন, চার তারকা ওই হোটেলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপক পর্যন্ত যত কর্মী আছেন, তার ৯০ ভাগ ভারতীয়; যাঁদের প্রায় ৮০ ভাগই আবার কেরালার।
পরদিন একটু সকাল সকাল পোর্ট রশিদের বিপরীতে মিনা রোড হয়ে নিউ গোল্ড সুক সেন্টার ছাড়িয়ে কিছুদূর যেতেই কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষের দেখা মিলল। তাঁরা প্রায় সবাই উপমহাদেশীয়। ভারতেরই বেশি।
১৮ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর—পাঁচ দিন দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারে ২৯তম ‘জিটেক্স টেকনোলজি উইক’-এ যোগদান উপলক্ষে সেখানে অবস্থানকালে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হয়। বর্তমানে সেখানে স্থানীয়দের চেয়ে বিদেশিরা সংখ্যায় বেশি। এদের মধ্যে আবার ভারতের কেরালার মানুষ বেশি।
কেরালা কেন? ভারতের অন্য রাজ্য কেন নয়? এ প্রশ্নের জবাব দিলেন দেরা এলাকার ক্লক টাওয়ারের পাশে অবস্থিত হোটেল ক্যারাভানের সহযোগী ব্যবস্থাপক জুনায়েদ হাসান। তিনি অবশ্য মুম্বাইয়ের মানুষ। তবে গত দুই দশক ধরে দুবাইয়ে আছেন। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। তাঁরা দুবাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বুধবার জুনায়েদ হাসানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপে জানা গেল, কেরালার মানুষ কেবল দুবাইয়ে নয়, মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই আছেন এবং অর্থনৈতিকভাবেও সাবলম্বী। এর কারণ এদেশে এসেই তারা প্রথমে আরবী ভাষা বোঝা ও জানার চেষ্টা করেছে। ভারতের অন্য অঞ্চল থেকে যাওয়া মানুষেরা এটা করেনি। কেরালার মানুষেরাই প্রথম রক্ষণশীল আরবদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করেছে এবং পরবর্তীতে সফল হয়েছে। এ কারণে আজ হোটেল, জুয়েলারি, পরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের উদীয়মান ব্যবসায় তারা পড়ালেখায় ভালো করছেন।
জুনায়েদ হাসানের তথ্যের সূত্র ধরে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং ইন্টারনেটে সংশ্লিষ্ট একাধিক ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা গেল, ‘কেরালা গালফ বুম’ বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। এর অর্থ হলো উপসাগরীয় অঞ্চলে কেরালার লোকজনের সংখ্যাধিক্য। মূলত ১৯৭২ থেকে ১৯৮৩, এই ১১-১২ বছরে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্য থেকে ব্যাপকসংখ্যক মানুষ দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যে যায় কাজের সন্ধানে, এখনো অব্যাহত আছে। ২০০৮ সালে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে কেরালার মানুষ আছে ২৫ লাখ। বছরে তাঁরা ৬৩০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠায়।
মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৩০-এর দশকে জ্বালানি তেলের খনি আবিষ্কৃত হওয়ার পর পঞ্চাশের দশকে কিছু কিছু করে উত্তোলন শুরু হয়। আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ষাট ও সত্তরের দশকে। এ কাজের জন্য অসংখ্য কর্মীর দরকার ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আরব দেশগুলোর তেমন কর্মী না থাকায় তারা বিদেশি শ্রমিকদের জন্য দরজা খুলে দেয়। এ সুযোগটা বেশি করে নেয় ওই সময়ে তীব্র বেকারত্বে জর্জরিত ভারত। এখানে এগিয়ে থাকে কেরালার মাপ্পিলারা। মাপ্পিলারা মুসলমান হওয়ায় তারা মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য বেশি অনুভব করে।
‘রাষ্ট্র পথ তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু কেরালার মানুষ ভাগ্য গড়েছে পরিশ্রম করে।’ বলছিলেন দেরার গোল্ড সেন্টারের এক বিক্রয়কর্মী। ‘আজ কেরালা ভারতের সমৃদ্ধিশালী রাজ্যগুলোর একটি, যেখানে শিক্ষার হার ৯১ শতাংশ, যা ভারতে সর্বাধিক।’ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
তবে দুবাইয়ে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কেরালার লোকদের সমালোচনাও আছে। তাঁরা নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে কারও সহযোগিতা করেন না। আর স্বার্থের জন্য হীন কাজও তাঁরা করতে পারেন—এমন অভিযোগ অনেকে করেছেন।
এসব নিয়ে এখানকার কেরালাবাসী মোটেই চিন্তিত নন। তাঁরা বরং নিজেদের মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দা বা ‘গালফম্যান’ ভাবতে পছন্দ করেন। আকর্ষণীয় আয়ের কারণে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনেক ধনাঢ্য পরিবারে তাঁরা বিয়েও করছেন। আর কেরালার কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে অনেক উপহার মেলে, এমন ধারণা আছে অভিবাসী তরুণদের মধ্যে।
No comments