প্রাধান্য পাচ্ছে সেবা খাতের অন্তর্ভুক্তি ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা অপসারণ -সাফটা নিয়ে কাঠমান্ডুতে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু BY ফখরুল ইসলাম
দক্ষিণ এশীয় মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল চুক্তি (সাফটা) নিয়ে চলতি মাসে চারটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নেপালের কাঠমান্ডুতে সার্ক সচিবালয়ে সার্কের সদস্য আটটি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীসহ শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠকগুলোতে অংশ নিচ্ছেন।
বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিরা।
সেবা খাতের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সার্ক চুক্তির ওপর প্রথম বৈঠকটি শুরু হয় গত শনিবার। শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। এ বিষয়ে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে একটি সাফটা বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়েছে। এ দলটিরই চতুর্থ সভা হলো এ দুই দিন।
পরের বৈঠকটি হলো সাফটা বিশেষজ্ঞ দলের বৈঠক। এটি বিশেষজ্ঞ দলের পঞ্চম বৈঠক। আজ সোমবার ও কাল মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে এ বৈঠক।
পাশাপাশি এই দুই দিনে অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি বৈঠক। সেটি হলো অশুল্ক প্রতিবন্ধকতার (এনটিএম) ওপর সাফটা উপকমিটির পঞ্চম বৈঠক।
সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর বুধবার অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ সাফটা মন্ত্রী পর্যায়ের কাউন্সিল। এটিই মূল বৈঠক এবং এখানে সাফটা কার্যসূচির খসড়া উপস্থাপন করা হবে। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগ দেবেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রুহুল আমিন সরকার, ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মোস্তফা আবিদ খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এস এম মনিরুল ইসলাম, নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক।
২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত হয়ে ২০০৬ সালের জুলাই থেকে বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া শুরু হয়েও সাফটা বেশিদূর এগোতে পারেনি। এর মধ্যে ২০০৬ সালেই ভারতকে সাফটার আওতায় এমএফএন (সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত জাতি) শুল্কসুবিধা দিতে অস্বীকার করে বসে পাকিস্তান।
অন্যদিকে ১০ বছর আগে ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকেও দ্বিপক্ষীয় এফটিএ করার আহ্বান জানায় ভারত। কিন্তু সে সময়ই আশঙ্কা তৈরি হয়, ভারত-শ্রীলঙ্কার ওই চুক্তি আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্যকে পেছনে ঠেলে দেবে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। সাফটা কার্যকর করা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে কেবলই বৈঠক হচ্ছে।
এদিকে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য সম্প্রসারণের বড় সমস্যা হলো অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা এবং এ প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় দেশেরই অভিযোগের মূলে রয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাফটায় স্পর্শকাতর পণ্যের দীর্ঘ তালিকার বিষয়টিও বাণিজ্য সম্প্রসারণের এক বড় বাধা।
জানা যায়, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের স্পর্শকাতর পণ্য তালিকায় রয়েছে ওভেন পোশাক, নিট পোশাক, চা ও হিমায়িত খাদ্য—যা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ। আবার বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য সাফটার পূর্বসূরি সাপটায় (দক্ষিণ এশীয় অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি) রপ্তানিযোগ্য পণ্য হতে হলে ৩০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের বিধান ছিল। অথচ সাফটায় এই ৩০ শতাংশের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে বাড়তি কিছু শর্ত। ফলে সাফটায় উত্সবিধি আরও কঠিন হয়েছে।
আবার সাপটায় যেখানে এলডিসিগুলোর জন্য শুধু ৪০ শতাংশ আঞ্চলিক উপাদানই যথেষ্ট ছিল, সেখানে সাফটায় তা করা হয়েছে ৫০ শতাংশ। যার মধ্যে অন্তত ১৫ শতাংশ হতে হবে স্থানীয় মূল্য সংযোজন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সাপটা থেকে সাফটায় উত্তরণ লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হলো।
এদিকে সাফটা নিয়ে আশাবাদী না হওয়ারও কারণ খুঁজে পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রায়হান।
প্রথম আলোকে সেলিম রায়হান বলেন, ‘আলোচিত সাফটা পণ্য বাণিজ্যকেন্দ্রিক। তাই দরকার হলো সাফটা প্লাস অর্থাত্ সেবা খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে সাফটার আওতা বাড়ানো। কারণ বাংলাদেশের পক্ষে শুধু পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে সাফটা থেকে খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই।’
তিনি আরও মনে করেন, সাফটার ফলে বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্যের গতিধারা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে খুব বেশি লাভবান হওয়ার কিছু না দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো পাওয়া যেতে পারে। সেই ফল পেতে বাংলাদেশ কতটা দক্ষতার সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিরা।
সেবা খাতের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সার্ক চুক্তির ওপর প্রথম বৈঠকটি শুরু হয় গত শনিবার। শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। এ বিষয়ে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে একটি সাফটা বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়েছে। এ দলটিরই চতুর্থ সভা হলো এ দুই দিন।
পরের বৈঠকটি হলো সাফটা বিশেষজ্ঞ দলের বৈঠক। এটি বিশেষজ্ঞ দলের পঞ্চম বৈঠক। আজ সোমবার ও কাল মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে এ বৈঠক।
পাশাপাশি এই দুই দিনে অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি বৈঠক। সেটি হলো অশুল্ক প্রতিবন্ধকতার (এনটিএম) ওপর সাফটা উপকমিটির পঞ্চম বৈঠক।
সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর বুধবার অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ সাফটা মন্ত্রী পর্যায়ের কাউন্সিল। এটিই মূল বৈঠক এবং এখানে সাফটা কার্যসূচির খসড়া উপস্থাপন করা হবে। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগ দেবেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রুহুল আমিন সরকার, ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মোস্তফা আবিদ খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এস এম মনিরুল ইসলাম, নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক।
২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত হয়ে ২০০৬ সালের জুলাই থেকে বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া শুরু হয়েও সাফটা বেশিদূর এগোতে পারেনি। এর মধ্যে ২০০৬ সালেই ভারতকে সাফটার আওতায় এমএফএন (সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত জাতি) শুল্কসুবিধা দিতে অস্বীকার করে বসে পাকিস্তান।
অন্যদিকে ১০ বছর আগে ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকেও দ্বিপক্ষীয় এফটিএ করার আহ্বান জানায় ভারত। কিন্তু সে সময়ই আশঙ্কা তৈরি হয়, ভারত-শ্রীলঙ্কার ওই চুক্তি আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্যকে পেছনে ঠেলে দেবে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। সাফটা কার্যকর করা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে কেবলই বৈঠক হচ্ছে।
এদিকে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য সম্প্রসারণের বড় সমস্যা হলো অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা এবং এ প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় দেশেরই অভিযোগের মূলে রয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাফটায় স্পর্শকাতর পণ্যের দীর্ঘ তালিকার বিষয়টিও বাণিজ্য সম্প্রসারণের এক বড় বাধা।
জানা যায়, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের স্পর্শকাতর পণ্য তালিকায় রয়েছে ওভেন পোশাক, নিট পোশাক, চা ও হিমায়িত খাদ্য—যা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ। আবার বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য সাফটার পূর্বসূরি সাপটায় (দক্ষিণ এশীয় অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি) রপ্তানিযোগ্য পণ্য হতে হলে ৩০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের বিধান ছিল। অথচ সাফটায় এই ৩০ শতাংশের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে বাড়তি কিছু শর্ত। ফলে সাফটায় উত্সবিধি আরও কঠিন হয়েছে।
আবার সাপটায় যেখানে এলডিসিগুলোর জন্য শুধু ৪০ শতাংশ আঞ্চলিক উপাদানই যথেষ্ট ছিল, সেখানে সাফটায় তা করা হয়েছে ৫০ শতাংশ। যার মধ্যে অন্তত ১৫ শতাংশ হতে হবে স্থানীয় মূল্য সংযোজন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সাপটা থেকে সাফটায় উত্তরণ লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হলো।
এদিকে সাফটা নিয়ে আশাবাদী না হওয়ারও কারণ খুঁজে পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রায়হান।
প্রথম আলোকে সেলিম রায়হান বলেন, ‘আলোচিত সাফটা পণ্য বাণিজ্যকেন্দ্রিক। তাই দরকার হলো সাফটা প্লাস অর্থাত্ সেবা খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে সাফটার আওতা বাড়ানো। কারণ বাংলাদেশের পক্ষে শুধু পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে সাফটা থেকে খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই।’
তিনি আরও মনে করেন, সাফটার ফলে বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্যের গতিধারা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে খুব বেশি লাভবান হওয়ার কিছু না দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো পাওয়া যেতে পারে। সেই ফল পেতে বাংলাদেশ কতটা দক্ষতার সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
No comments