ইসলামভীতির শিকার ইলহান ওমর-রাশিদা তালিব, ‘জীবন ঝুঁকিতে’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলপন্থি এডভোকেসি গ্রুপ হলো এআইপিএসি। তারা দ্বিপক্ষীয় (বাইপার্টিসান) হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করে। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যেসব সদস্য সমালোচনা করেন, তাদের বিরুদ্ধে তারা দীর্ঘদিন বিজ্ঞাপন প্রচার করে যাচ্ছে। এটা করা হচ্ছে বিশেষ করে যারা ডেমোক্রেট, তাদের বিরুদ্ধে।
ইলহান ওমরের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক জেরেমি স্লেভিন বুধবার এআইপিএসি-এর কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা একটি পোস্ট স্পন্সর করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, ইলহান ওমর যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানের মধ্যে, ইসরাইল এবং হামাস, গণতন্ত্র এবং সন্ত্রাসের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখতে পারছেন না।
জেরেমি স্লেভিন বলেছেন, কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর যেসব ঘৃণাপ্রসূত ম্যাসেজ পেয়েছেন ঠিক সেই রকমই ভাষা ব্যবহার করেছে এআইপিএসি। স্লেভিন লিখেছেন, কোনো ভুল করবেন না। ইসলামভীতি থেকে বার বার বিজ্ঞাপন প্রচার করার মাধ্যমে প্রতিনিধি ইলহান ওমরের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে এআইপিএসি। এটা বলা উচিত নয়, কিন্তু মুসলিম-আমেরিকানদের ভিত্তিহীনভাবে সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত করা হলো ইসলামভীতির একটি টেক্সটবুক উদাহরণ। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি মানবাধিকার বিষয়ক এই নারীর কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে নিয়মিতভাবে এটা করা হচ্ছে।
জেরেমি স্লেভিনের এই পোস্টের পর ওয়াশিংটনভিত্তিক নাগরিক অধিকার বিষয়ক সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে এআইপিএসির এমন বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো হয়েছে। ইলহান ওমরের বিরুদ্ধে এমন প্রচারণাকে তারা ইসলামভীতি, অসততা এবং বিপজ্জনক বিজ্ঞাপন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। কেয়ার-এর উপ নির্বাহী পরিচালক এডওয়ার্ড আহমেদ মিশেল বলেছেন, এআইপিএসির এমন ইসলামভীতির ভাষা ফেসবুকের ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রতিনিধি ইলহান ওমর ও অন্য মুসলিম আমেরিকান নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংস হুমকি উস্কে দেবে। খুব সহজভাবে বলা যায়, এআইপিএসির এই একগুঁয়েমিতে ইলহান ওমরের জীবন ঝুঁকিতে। এসব ঘৃণাপ্রসূত বিজ্ঞাপন অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা উচিত ফেসবুক কর্তৃপক্ষের। পক্ষান্তরে ইলহান ওমরের বিরুদ্ধে এভাবে ইসলামভীতি, ঘৃণা উসকে দেয়ার জন্য এআইপিএসির বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো উচিত কংগ্রেসনাল নেতাদের।
কিন্তু এই ক্ষোভ এআইপিএসির গতিবিধি পাল্টাতে পারেনি। উল্টো ইসরাইলপন্থি এই গ্রুপটি তাদের বার্তায় মিনেসোটার ডেমোক্রেট প্রতিনিধি ইলহান ওমরকে সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত বলে বার্তা প্রচার করেছে আবারও। জেরেমি স্লেভিনের প্রতিক্রিয়ার জবাবে এআইপিএসি একটি টুইট করেছে। তাতে তারা বলেছে, আপনি আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। ইলহান ওমর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে আক্রমণ করে কথা বলছেন। আপনার এই আক্রমণ আমাদেরকে ইলহান ওমরের বিষয়ে বিচ্যুত করতে পারবে না। প্রতিনিধি ইলহান ওমর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলকে তালেবান এবং হামাসের মতো একই পর্যায়ে ফেলেছেন। এটা ক্ষোভের। গণতান্ত্রিক মিত্র এবং সন্ত্রাসীদের মধ্যে কোনো নৈতিক সমতা করা চলে না। এসব সন্ত্রাসী গণতান্ত্রিক মিত্রদের টার্গেট করে।
এখানে উল্লেখ্য, ইসরাইলপন্থি এই গ্রুপটি জুনের একটি বিতর্কের দিকে ইঙ্গিত করেছে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে প্রশ্ন করেছিলেন ইলহান ওমর। আফগানিস্তান এবং ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন- এ বিষয়ে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি কংগ্রেশনাল শুনানিতে ব্লিনকেনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন- এই দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে যদি আভ্যন্তরীণ আদালত বিচার করতে না পারে, ন্যায়বিচার করতে না এবং আমরা যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরোধিতা করি, তাহলে দমিয়ে রাখার জন্য অপরাধের শিকার যেসব মানুষ তারা ন্যায়বিচারের জন্য কোথায় যাবে বলে আমরা মনে করি?
ইলহান ওমর পরে এর একটি ভিডিও পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর সঙ্গে যুক্ত করে দেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের পক্ষ থেকে কিভাবে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে, তা। ইলহান ওমর লিখেছেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শিকার সবার জন্য জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচারের জন্য সমতা বজায় রাখতেই হবে। যুক্তরাষ্ট্র, হামাস, ইসরাইল, আফগানিস্তান এবং তালেবানদের দ্বারা অচিন্তনীয় নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেছি আমরা।
তবে তিনি পরিষ্কার করেছেন যে, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সুনির্দিষ্ট কিছু মামলার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে তালেবান ও হামাসের সঙ্গে যুক্ত করেননি। এরপরই প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেট নেতারা তার এই ব্যাখ্যাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ইস্যু থেকে সরে আসেনি এআইপিএসি। তারা শুধু ইলহান ওমরকে আক্রমণ করেই ক্ষান্ত দেয়নি। তারা একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য ও ফিলিস্তিনে মানবাধিকার বিষয়ক প্রথম সারির সমর্থক রাশিদা তালিবের বিরুদ্ধেও আক্রমণ করেছে। বুধবার তার বিরুদ্ধেও নেমেছে এআইপিএসি।
জেরেমি স্লেভিনের পোস্টের জবাবে মিশিগানের এই কংগ্রেসওমেন লিখেছেন, এসব নিয়ে আমি খুবই মর্মপীড়ায়। তিনি লিখেছেন, ইসরাইল ছড়িয়ে দিচ্ছে ঘৃণার উস্কানি। বিদ্বেষপূর্ণ, বিপজ্জনক মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। এতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে না।
ওদিকে টুইটার একাউন্টের শীর্ষে রাশিদা তালিবের বিরুদ্ধে পোস্ট ‘পিন’ বা স্থির করেছে এআইপিএসি। এ অবস্থায় আমেরিকান-আরব এন্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটির (এডিসি) আইনি পরিচালক আবেদ আয়ুব এআইপিএসির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, বার বার ইসলামভীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে এআইপিএসি। ফিলিস্তিনি অধিকারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে এন্টি-আরব আক্রমণ চালাচ্ছে তারা। বার বার তারা এটাই দেখিয়েছে যে, আসলেই তারা ধর্মান্ধ ও বর্ণবাদী।
No comments