ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দলিতদের আইনগত ও সরকারি বৈধতা কেড়ে নিচ্ছে ভূমিহীনতা by সুজাত ইয়েঙ্গদে
দলিতরা
ভারতে স্বাধীন নয়। তারা বাস্তুচ্যুত লোক, তাদের পূর্বপুরুষদের ভিটামাটি
থেকে নির্বাসিত, রাষ্ট্রহীন প্রজা হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ভূমিহীনতা
ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তাদের আইনগত, সরকারি ও সাংবিধানিক বৈধতা কেড়ে নিচ্ছে।
এই সম্প্রদায়ের প্রয়োজন দ্বিতীয় স্বাধীনতা, যা অবশ্যই হতে হবে বস্তুগত
স্বাধীনতা, কাগজে-কলমের স্বাধীনতা নয়। ক্ষমতাধারী ভারতীয় নাগরিক হওয়ার
প্রথম পদক্ষেপ হলো ভূমির মালিকানা লাভ।
নাগরিকত্বের প্রয়োজন সম্পদের অধিকার। আর ভূমি হলো মৌলিক সম্পদ। এটি মর্যাদা নিশ্চিত করে। ভূমি ছাড়া আপনি সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় থাকবেন।
ভূমির অধিকারই নিম্নবর্গের মানুষকে তাদের সীমার বাইরে চিন্তা করার আত্মবিশ্বাস দেয়। যে দেশে বেশির ভাগ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভূমি ও ভূমি-সম্পর্কিত পেশা থেকে আসে, সেখানে ভূমিহীনতা একটি স্থায়ী অসুবিধা।
বস্তুত, বর্তমানে দলিতরা যেসব সমস্যায় ভুগছে, সেগুলোর বেশির ভাগই এসেছে তাদের ভূমিহীনতা থেকে। এটি ভূমির মালিকদেরকে সবসময় দলিত ও দলিতদের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ দিয়ে আসছে। মালিকানা আসলে অস্তিত্বগত বিষয়। দলিতরা মালিকানার জন্য অব্যাহতভাবে লড়াই করে আসছে। কিন্তু ভূমির অধিকার লাভের দলিতদের প্রতিটি প্রয়াস সম্পদের মালিক তথা সুবিধাভোগী শ্রেণি প্রত্যাখ্যান করেছে। এই সুবিধাভোগী শ্রেণিই শ্রেণি-রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
২০১৫-১৬ সময়কালের কৃষি শুমারিতে দেখা যায়, ভারতের মোট কৃষি জমির মাত্র প্রায় ৯ ভাগের মালিক দলিতরা।
সেন্সাস অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক উপাত্তে দেখা যায়, ৭১ ভাগ দলিত ভূমিহীন শ্রমিক। তারা তাদের মালিকানায় না থাকা জমিতে কাজ করে। গ্রামীণ এলাকায় ৫৮.৪ ভাগ দলিত বাড়ি তাদের নিজেদের জমিতে নয়। হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও বিহারের মতো দলিত-প্রাধান্যপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ৮৫ ভাগ দলিত ভূস্বামীদের দয়ায় থাকে। আর তামিল নাড়ু, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যায় এই সংখ্যাটি ৬০ ভাগ। বিহার, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিল নাড়ু, কেরালার অনেক জেলায় দলিত কৃষকদের ৯০ ভাগ কৃষি শ্রমিক।
মহারাষ্ট্রের ৬০ ভাগের বেশি ভূমিহীন দলিতদের মধ্যে একটি হলো ‘আমার’ পরিবার। তারা দুই দশক আগে তাদের মারাথওয়াড়া গ্রাম ত্যাগ করেছিল নানদেদের মিলশ্রমিক হিসেবে নিরাপত্তা ও অধিকতর ভালো ভবিষ্যতের আশায়। তাদের মালিকানায় কোনো জমি না থাকায় তারা নিঃস্ব আম জনতা হিসেবে একটি বড় নগরীতে পাড়ি জমিয়েছিল। আর এই প্রক্রিয়াতেই ভারতে বর্তমান সময়ের বস্তিগুলোর উদ্ভব হয়েছে।
নগরীতে অভিবাসন করা দলিতরা সবচেয়ে কম বেতনের চাকরি করে। তারা গৃহকর্মী, নির্মাণশ্রমিক, নিরাপত্তা প্রহরী বা কায়িক শ্রমের কাজ করে। ২০১১ সালের সোসিও ইকোনমিক কাস্ট সেন্সাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮.৩৩ ভাগ ভূমিহীন দলিত পরিবার কায়িক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। তাদের অনেকে ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে।
তারা গ্রামীণ ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে থেকে কোনো সুবিধা পায় না। ফলে প্রায়ই তাদের সামনে একটি বিকল্পই থাকে তা হলো সেবা খাতে চাকরি পাওয়া, সেটাও অনেকাংশে সরকারি চাকরি। এ কারণেই দলিত গ্রাজুয়েটদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। কারণ দলিতদের জন্য একমাত্র এই রাস্তাটাই খোলা রয়েছে। অন্য সব খাত তাদের জন্য দরজা বন্ধ করে রেখেছে।
ভূমিহীনতার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন পরিচালক পা রানজিত। তিনি সম্প্রতি বলেছেন যে রাজা রাজা চোলা-১ দলিতদের কাছ থেকে জোরজবরদস্তিমূলকভাবে ভূমি কেড়ে নেয়ার জন্য দায়ী ছিলেন। রানজিত বিষয়টি নিয়ে জোরালোভাবে চিন্তা করতে বলেছেন দলিত ও অদলিত সবাইকে। দলিতদের জন্য আইনগত ও আইন পরিষদের যুক্তি আছে অফুরন্ত। সাবেক পরিকল্পনা কমিশন ১৯৫০-এর দশকে ভূমি সংস্কারের কথা বলেছে। ১৯৬১ সাল থেকে বেশ কয়েকটি আইন পরিষদীয় প্রস্তাবে ভূমির সীমা ১০-৫৪ একর নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু তবুও বেশির ভাগ দলিত এখনো ভূমিহীন।
অবশ্য আধুনিক ভারতে ব্রাহ্মণ-বেনিয়া (নব্য ক্ষত্রিয় ও নব্য বেনিয়াসহ) বর্ণবাদী পুঁজিবাদে আদিবাসীদের ভূমির মালিকানাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এখন সময় এসেছে বর্ণ, ধর্ম, অঞ্চল, গোত্র, মতাদর্শ-নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশজুড়ে ৭২ লাখ একর উদ্বৃত্ত জমির মালিকানা লাভের জন্য বিপ্লবী আহ্বান জানানো। এ ছাড়া সরকারি নীতি কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা যাবে না।
সব ধর্মের সাত হাজারের বেশি বর্ণ ও উপবর্ণে বিভক্ত দেশে প্রস্তাবনাটি একটি অন্যায় সমাজে চরম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মতপ্রকাশ দমনের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা, বৈষম্যপূর্ণ সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তাই সাংবিধানিক মূল্যবোধ বাস্তবায়ন করার সময় এসেছে এখন।
নাগরিকত্বের প্রয়োজন সম্পদের অধিকার। আর ভূমি হলো মৌলিক সম্পদ। এটি মর্যাদা নিশ্চিত করে। ভূমি ছাড়া আপনি সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় থাকবেন।
ভূমির অধিকারই নিম্নবর্গের মানুষকে তাদের সীমার বাইরে চিন্তা করার আত্মবিশ্বাস দেয়। যে দেশে বেশির ভাগ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভূমি ও ভূমি-সম্পর্কিত পেশা থেকে আসে, সেখানে ভূমিহীনতা একটি স্থায়ী অসুবিধা।
বস্তুত, বর্তমানে দলিতরা যেসব সমস্যায় ভুগছে, সেগুলোর বেশির ভাগই এসেছে তাদের ভূমিহীনতা থেকে। এটি ভূমির মালিকদেরকে সবসময় দলিত ও দলিতদের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ দিয়ে আসছে। মালিকানা আসলে অস্তিত্বগত বিষয়। দলিতরা মালিকানার জন্য অব্যাহতভাবে লড়াই করে আসছে। কিন্তু ভূমির অধিকার লাভের দলিতদের প্রতিটি প্রয়াস সম্পদের মালিক তথা সুবিধাভোগী শ্রেণি প্রত্যাখ্যান করেছে। এই সুবিধাভোগী শ্রেণিই শ্রেণি-রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
২০১৫-১৬ সময়কালের কৃষি শুমারিতে দেখা যায়, ভারতের মোট কৃষি জমির মাত্র প্রায় ৯ ভাগের মালিক দলিতরা।
সেন্সাস অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক উপাত্তে দেখা যায়, ৭১ ভাগ দলিত ভূমিহীন শ্রমিক। তারা তাদের মালিকানায় না থাকা জমিতে কাজ করে। গ্রামীণ এলাকায় ৫৮.৪ ভাগ দলিত বাড়ি তাদের নিজেদের জমিতে নয়। হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও বিহারের মতো দলিত-প্রাধান্যপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ৮৫ ভাগ দলিত ভূস্বামীদের দয়ায় থাকে। আর তামিল নাড়ু, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যায় এই সংখ্যাটি ৬০ ভাগ। বিহার, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিল নাড়ু, কেরালার অনেক জেলায় দলিত কৃষকদের ৯০ ভাগ কৃষি শ্রমিক।
মহারাষ্ট্রের ৬০ ভাগের বেশি ভূমিহীন দলিতদের মধ্যে একটি হলো ‘আমার’ পরিবার। তারা দুই দশক আগে তাদের মারাথওয়াড়া গ্রাম ত্যাগ করেছিল নানদেদের মিলশ্রমিক হিসেবে নিরাপত্তা ও অধিকতর ভালো ভবিষ্যতের আশায়। তাদের মালিকানায় কোনো জমি না থাকায় তারা নিঃস্ব আম জনতা হিসেবে একটি বড় নগরীতে পাড়ি জমিয়েছিল। আর এই প্রক্রিয়াতেই ভারতে বর্তমান সময়ের বস্তিগুলোর উদ্ভব হয়েছে।
নগরীতে অভিবাসন করা দলিতরা সবচেয়ে কম বেতনের চাকরি করে। তারা গৃহকর্মী, নির্মাণশ্রমিক, নিরাপত্তা প্রহরী বা কায়িক শ্রমের কাজ করে। ২০১১ সালের সোসিও ইকোনমিক কাস্ট সেন্সাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮.৩৩ ভাগ ভূমিহীন দলিত পরিবার কায়িক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। তাদের অনেকে ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে।
তারা গ্রামীণ ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে থেকে কোনো সুবিধা পায় না। ফলে প্রায়ই তাদের সামনে একটি বিকল্পই থাকে তা হলো সেবা খাতে চাকরি পাওয়া, সেটাও অনেকাংশে সরকারি চাকরি। এ কারণেই দলিত গ্রাজুয়েটদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। কারণ দলিতদের জন্য একমাত্র এই রাস্তাটাই খোলা রয়েছে। অন্য সব খাত তাদের জন্য দরজা বন্ধ করে রেখেছে।
ভূমিহীনতার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন পরিচালক পা রানজিত। তিনি সম্প্রতি বলেছেন যে রাজা রাজা চোলা-১ দলিতদের কাছ থেকে জোরজবরদস্তিমূলকভাবে ভূমি কেড়ে নেয়ার জন্য দায়ী ছিলেন। রানজিত বিষয়টি নিয়ে জোরালোভাবে চিন্তা করতে বলেছেন দলিত ও অদলিত সবাইকে। দলিতদের জন্য আইনগত ও আইন পরিষদের যুক্তি আছে অফুরন্ত। সাবেক পরিকল্পনা কমিশন ১৯৫০-এর দশকে ভূমি সংস্কারের কথা বলেছে। ১৯৬১ সাল থেকে বেশ কয়েকটি আইন পরিষদীয় প্রস্তাবে ভূমির সীমা ১০-৫৪ একর নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু তবুও বেশির ভাগ দলিত এখনো ভূমিহীন।
অবশ্য আধুনিক ভারতে ব্রাহ্মণ-বেনিয়া (নব্য ক্ষত্রিয় ও নব্য বেনিয়াসহ) বর্ণবাদী পুঁজিবাদে আদিবাসীদের ভূমির মালিকানাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এখন সময় এসেছে বর্ণ, ধর্ম, অঞ্চল, গোত্র, মতাদর্শ-নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশজুড়ে ৭২ লাখ একর উদ্বৃত্ত জমির মালিকানা লাভের জন্য বিপ্লবী আহ্বান জানানো। এ ছাড়া সরকারি নীতি কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা যাবে না।
সব ধর্মের সাত হাজারের বেশি বর্ণ ও উপবর্ণে বিভক্ত দেশে প্রস্তাবনাটি একটি অন্যায় সমাজে চরম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মতপ্রকাশ দমনের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা, বৈষম্যপূর্ণ সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তাই সাংবিধানিক মূল্যবোধ বাস্তবায়ন করার সময় এসেছে এখন।
No comments