জীবিত উদ্ধারে আর আশা নেই!
আইপ্যাডে স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে ডুঁকরে ডুঁকরে কেঁদে উঠছেন চেন সুহা। গড়িয়ে পড়া চোখের জলে স্মরণ করছেন মাত্র কয়েকমাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ৯ দিন স্বামীর সঙ্গে জাহাজে কাটিয়েছেন। কিউবার উদ্দেশে পাল তোলা সেই জাহাজের সুখস্মৃতি ডুবে গেছে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় নদী ইয়াংজে। ৪৫৮ আরোহী নিয়ে অথৈ পানিতে ডুবে গেছে ‘ইস্টার্ন স্টার’ নামের এক প্রমোদ তরী। গত সোমবার সন্ধ্যায় ওই জাহাজডুবির পর বুধবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় ৬.৩৭ মিনিট)
১৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা গেছে ১৪ জন। চেন সুহার স্বামীসহ ৪ শতাধিক এখনও নিখোঁজ। ৭৮ বছর বয়সী স্বামীর ছবি দেখিয়ে ৭৩ বছরের চেন বলেন, ‘দেখুন, ওকে দেখতে ৭৮ বয়সের মনে হয় না। ও খুব শক্তিশালী ভালো সাঁতার জানে।’ দুর্ঘটনার দু’দিন পার হওয়ার পর বেনের মতো অনেকেই তাদের প্রিয়জনকে ফিরে পাবেন বলে আর ভরসা করতে পারছেন না। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিভছে আশার আলো। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, সম্ভবত টর্নেডোর আঘাতে জাহাজটি ডুবে গেছে এবং এটি উল্টে যেতে এক মিনিটেরও কম সময় লেগেছে। উল্টে যাওয়া নৌযানটি থেকে শব্দ শুনতে পেরেছেন উদ্ধারকারীরা। ডুবে যাওয়ার আগে নৌযানটি থেকে কোনো ধরনের সাহায্য সংকেত পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে ওয়্যাং নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছে, সোমবার রাতের ওই ঝড় গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। এ দুর্ঘটনা গত ৭০ বছরের মধ্যে চীনের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি ফেরি ডুবে অধিকাংশ শিশুসহ মোট ৩০৪ যাত্রীর মৃত্যু হয়। পূর্ব এশিয়ায় ওই ঘটনাকেও ছাড়িয়ে যাবে চলতি দুর্ঘটনাটি, এমন আশংকাই রয়েছে। এদিকে, উদ্ধার হওয়া ক্যাপ্টেন জানান, হঠাৎ ঝোড়ো বাতাসে উল্টে গিয়ে ডুবে যায় জাহাজটি। এর অধিকাংশ যাত্রী ছিলেন ৫০ থেকে ৮০ বছর বয়সী। সঙ্গে ক্রু ও কয়েকজন ট্রাভেল এজেন্সির কর্মী। প্রমোদ বিহারে ছিলেন যাত্রীরা। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেসিয়াং জানিয়েছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে ২০০ ডুবুরির একটি দল কাজ করে যাচ্ছে। এ ঘটনা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। উদ্ধার তৎপরতার কিছু দৃশ্য টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, টেলিভিশন কর্মীরা উল্টে যাওয়া জাহাজের যে পাশটি পানির ওপরে কিছুটা ভেসে আছে, সেখানে দাঁড়িয়ে ফুটেজ নিচ্ছেন এবং ডুবুরিরা তাদের কাজ করে চলেছে।
No comments